“ঋষি এবং মনু সমহিতা নিয়ে আরো কিছু কথা”

“ঋষি এবং মনু সমহিতা নিয়ে আরো কিছু কথা”
ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ।

প্রাচীন কালের ঋষিদের রিসার্চ এবং জ্ঞান নিয়ে আমরা কিছুটা জেনেছি। যারা সনাতন দর্শন নিয়ে একটু পড়াশুনা করেন তারা জানেন যে, এই ঋষিদের আপ্ত্য জ্ঞান বিজ্ঞানের সমস্ত বিষয়ে ছিলো। জ্যোতির্বিদ্যা, পদার্থ বিদ্যা, রসায়ন্ বিদ্যা এমন কি শরীর এবং রোগ আরোগ্য বিদ্যা।

তাদের ভৌগলিক জ্ঞান দিয়ে তারা এই পৃথিবীর জল স্থল সম্বন্ধে বলেছেন “সপ্ত সিন্ধু”, সপ্ত দ্বীপের কথা এবং সেই সপ্তদীপে সাত জাতির মানুষের কথা। সাতটি মহাসাগর, সাতটি মহাদেশ এবং সাত জাতি তো আমাদের বর্তমান বিজ্ঞানীরাই বলেন। এই সাতটি দ্বীপের একটি দ্বীপ হচ্ছে ‘জম্বু দ্বীপ’, যার মধ্যে পড়ে আমাদের ভারত। যারা পুজো পাঠ করেন তারা জানেন যে পুরোহিত বলেন—— “জম্বু দ্বীপে ভারত খন্ডে” এই কথা টা আছে। আরো আছে সৃষ্টির আদি থেকে সাল গননার কথাও। আছে তিথি নক্ষত্রের কথা।

তা সনাতন শাস্ত্র বলে, এই সাতটি দ্বীপে বিভিন্ন সময়ে সাতটি জাতি সতন্ত্র ভাবে উদ্ভুত (Evolved) হয়েছিলো।  প্রত্যেকটি জাতির একজন করে ‘মনু” ছিলেন। তাদের নাম ও উল্লেখ আছে মনু সমহিতায়। তারা হলেন— স্ব্যয়ম্ভু,  স্বারচি, উত্তমি,তামসা,রৈবত,চক্ষুষ, বৈবাষত্ব ।

ভারত জম্বুদ্বীপের অংশ এবং জম্বু দ্বীপের ‘মনু’ র নাম বৈবাষত্ব। তিনি দশ জন প্রশাসক নিযুক্ত করেছিলেন। তাদের নাম—

মারীচী, অত্রি,অংগিরা,পুলস্ত্য,পুলহ,ক্রুতু,প্রচেতা,বশিষ্ট, ভৃগু এবং নারদ। এরা সবাই ছিলেন সাধক ঋষি।

এই দশ জনের মধ্যে ‘বৈবাষত্ব’ মুখ্যত ভৃগু কে বিশেষ দ্বায়িত্ব দিয়েছিলেন, মনু সমহিতা প্রচার এবং প্রয়োগের জন্য। ভৃগু মুনির দ্বায়িত্বে ছিলো উত্তরে তিব্বত (ভৃগুর মাথা), সমস্ত উত্তর ভারত (ভৃগুর বুক), দক্ষিন ভারত (ভৃগুর পেট) শ্রী লঙ্কা এবং জলের তলায় ডুবে যাওয়া লিমুরিয়া নামক অঞ্চল (ভৃগুর উরু এবং পা্‌) বর্তমান আফগানিস্থান, ইরান ইরাক (ভৃগুর ডান হাত), বার্মা-ব্রহ্ম দেশ, লাওস, থাইল্যান্ড (শ্যাম দেশ), কম্বোডিয়া –কম্বোজ এবং ভিয়েতনাম (চম্পা দেশ) ভৃগুর বা হাত।

বৈবাষত্ব মনু, মহর্ষি ভৃগুকে সমস্ত আধ্যাত্মিক, সামাজিক , বৈজ্ঞানিক এবং পরমার্থিক জ্ঞান শিক্ষা দেন এবং অন্য ৯ জন প্রশাসককে সেই শিক্ষায় শিক্ষিত করার আদেশ দেন। পরবর্তি কালে মহর্ষি ভৃগু মনু সমহিতা আরো সংক্ষিপ্ত আকারে সংকলিত করেন। প্রাচীন কালের অনেক পন্ডিত ব্যাক্তি এই কথা মেনে নিয়েছেন যে মহর্ষি ভৃগুই মনু সমহিতার সংকলক। আধুনিক পন্ডিত “গোবিন্দা চার্য্য’ ও সেই কথা মেনে নিয়েছেন।

ওপরের এবং আগের সমস্ত আলোচনা থেকে এটা পরিষ্কার হিয়ে যায় যে মহর্ষি ভৃগুই সনাতনী হিন্দুদের মধ্যে, উপরে বর্নিত জম্বুদ্বীপে মনু সমহিতার প্রচলন করেন। মনু সমহিতায় আছে আধ্যাত্মিক , সামাজিক , অর্থনৈতিক এবং রাজনিতীর জ্ঞান, যে জ্ঞান অনেক প্রাচীন সাধকদের সাধনা লব্ধ ‘যৌথ জ্ঞান ভান্ডার’।

না জেনে না বুঝে সেই জ্ঞান ভান্ডারের সমালোচনা, নিন্দা মুর্খামি ছাড়া আর কিছুই নয়।