মহরম স্পেশাল: হযরত ফাতেমার গর্ভপাতে মৃত্যু ও পুরো নবী বংশের অপঘাতে মৃত্যু ইসলামকে আমাদের সামনে কিভাবে উপস্থাপন করে?
…………………………………………………………………
হযরত ফাতেমার মৃত্যু নিয়ে আলেমদের লুকোচুরি আমাকে ভাবতে বাধ্য করেছিলো ডালমে কুচ কালা হ্যায়…। কেঁচো খুড়তে গিয়ে দেখি সাপ বেরিয়ে এলো! কি মর্মান্তিক, হযরত ফাতিমার গর্ভপাতে মৃত্যু ঘটেছিলো! তবে সন্তান ভুমিষ্ঠ হতে গিয়ে নয়, হযরত উমার ও হযরত আবু বককের মিলিত আক্রমনে ফাতেমা মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে গর্ভপাতের সৃষ্টি হয়। সরাসরি হাদিস থেকে পড়ুন- মুহাম্মদ ইবনে জারির ইবনে রুস্তম তাবারি (মৃ: চতূর্থ হিজরি) বর্ণনা করেন:
[عَن أبِیبَصِیرٍ عَن أبِی عَبدِاللهِعلیهالسّلام: قالَ:]
وَ کانَ سَبَبُ وَفاتِها أنَّ قُنفُذاً مَولی عُمَرَ لَکَزَها بِنَعلِ السَیفِ بِأمرِهِ، فَأسـقَطَت مُحسِناً وَ مَرِضَت مِن ذلِکَ مَرَضاً شَدِیداً…
ইমাম আবু আব্দিল্লাহের কাছ থেকে আবু বাছির বর্ণনা করেছেন : ওমরের নির্দেশে তার ভৃত্য ‘কুনফুয’ তরবারির গিলাফ দিয়ে ফাতেমাকে আঘাত করেছিলো, যে কারণে মুহসিনের গর্ভপাত ঘটে এবং সে কারণেই ফাতেমা আ. মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন… (দালায়েল উল ইমামাহ/৪৫)।
বিষয়টা কিন্তু সুন্নি আলেমরা এড়িয়ে যান। ফাতেমার মৃত্যু কিভাবে হয়েছিলো এই বিষয়ে তাদের মুখে কোন রা নেই। নবীর মৃত্যুর মাত্র তিন মাসের মধ্যে ফাতেমার কি এমন হলো যে এত অল্প বয়েসে মারা গেলেন? তাবারসি বর্ণনা করেছেন এভাবে-
وَ حالَت فاطِمَةُعلیهاالسّلام بَـینَ زَوجِها وَ بَـینَهُم عِندَ بابِ البَیتِ فَضَرَبَها قُنفُذٌ بِالسَوطِ عَلی عَضُدِها، فَبَـقِیَ أثَرُهُ فِی عَضُدِها مِن ذلِکَ مِثلَ الدُملُوجِ مِن ضَربِ قُنفُذٍ إیّاها فَأرسَلَ أبوبَکرٍ إلی قُنفُذٍ إضرِبها، فَألجَـأها إلی عِضادَةِ بَـیتـِها، فَدَفَعَها فَکَسَرَ ضِلعاً مِن جَنبِها وَ ألقَت جَنِیناً مِن بَطنِها، فَلَم تَزَل صاحِبَةَ فِراشٍ حَتّی ماتَت مِن ذلِکَ شَهِیدَه …
হযরত ফাতেমা তাঁর স্বামি ও আক্রমনকারী ব্যক্তিদের মাঝে দাঁড়িয়ে প্রতিরোধ করেছিলেন, তখন ‘কুনফুয’ ফাতেমার উরুতে এমন আঘাত হানল যে, তার দাগ বেন্ডেজের আকার ধারণ করল। আবুবকর কুনফুযকে ফাতেমাকে মারার জন্য পাঠিয়েছিল! তাই কুনফুয ফাতেমাকে ঘর থেকে আছার দিয়ে ফেলে দিল, তখন তাঁর উরুর হাড় ভেঙ্গে গেল ও পেটের সন্তানের গর্ভপাত ঘট।অতঃপর দীর্ঘ শয্যাশায়ী হল এবং সে অবস্থাতেই শহীদি মৃত্যু বরণ করলেন …(এহতেজাজ, ১/৮৩)।
হায় হায়, জান্নাতের মহিলাদের সর্দার্নী ফাতেমা তুজ জোহরা কেন এমনভাবে অপঘাতে মারা যাবেন? আর তার মৃত্যুর জন্য দায়ী উমার ও আবু বকর! কি এমন ঘটেছিলো যে আলীকে হত্যা করতে আবু বকর উমারকে পাঠিয়েছিলেন দলবল নিয়ে? কারণ গোপন খবর ছিলো আলীর ঘরে খিলাফতের বিরুদ্ধে চক্রান্ত হচ্ছে। সেই সংবাদ পেয়ে হামলা চালানো হয় আলীর বাড়িতে। ফাতেমা স্বামী আর শত্রুদের মাঝখানে পড়ে মারাত্মক আঘাত পান। নিতান্তই ক্ষমতা নিয়ে এই ঝগড়া মারামারি কেন সৃষ্টি হয়েছিলো। ইসলামের যদি উদ্দেশ্য থাকে সত্য ধর্ম প্রচার করার তাহলে তার মধ্যে মসনদ বা সিংহাসন এসে যায় কিভাবে? ইসলাম যে সাম্রাজ্যবাদী একটা ধর্ম তার কিছু প্রমাণ এক্ষুণি দিবো। কেমন করে গদির নেশায় পুরো নবী বংশ একের পর এক অপঘাতে মৃত্যু ঘটেছিলো। শুরুটা হয়েছিলো খোদ নবী মুহাম্মদকে দিয়ে। ইহুদীদের উপর চালানো গণহত্যা, দেশ ত্যাগে বাধ্য করা, তাদের পুরুষদের হত্যা ও নারীদের গণিমতের মাল করে যৌনদাসী হতে বাধ্য করার প্রতিশোধ নিতে একজন ইহুদী বৃদ্ধা নবীকে বিষ খাইয়ে হত্যার পরিকল্পনা করে। তার দুই পুত্রের হত্যার প্রতিশোধ নিতে বিষ মাখানো বকরির মাংস খেতে দেন মুহাম্মদ ও তার দুই সঙ্গীকে। খয়বর দখল করার পর বিষ মাখানো মাংস পরিবেশন করা হয়। মাংস মুখে দিয়েই মুহাম্মদের দুই সঙ্গী ঢলে পড়লেও মুহাম্মদ মাংস গেলার আগেই কিছু একটা আঁচ করতে পেরে মুখ থেকে মাংস ফেলে দেন। ইহুদী বুড়িকে ডেকে এনে জেরা করার পর সে স্বীকার করে বিষ মাখানোর কথা। মুহাম্মদের পেটে পর্যাপ্ত বিষ না গেলেও সেই বিষের যে পরিমাণ অংশই গিয়েছিলো তাতে ধীরে ধীরে তাকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। খয়বরের এই ঘটনার পর থেকে মুহাম্মদ অসুস্থ হতে থাকেন। জ্বর ও শরীর দুর্বল হতে থাকে। মৃত্যুর সময় মুহাম্মদ তীব্র মাথার যন্ত্রণায় সহ্য করতে না পেরে আয়েশাকে বলেছিলেন, হে আয়েশা, আমার মাথার মধ্যে যেন সব ছিড়ে যাচ্ছে… খয়বরে যে বিষ মাখানো মাংস খাওয়ার জন্যই যে তিনি অসুস্থ সেটা আয়েশাকে বলে গিয়েছিলেন। মুহাম্মদের প্রিয় সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসাউদ বলেছিলেন, ‘আমি দরকার হলে ৯ বার কসম খেয়ে বলতে পারব, রাসুল (স)-কে হত্যা করা হয়েছে, কারণ আল্লাহ্ তায়ালা তাঁকে নবী করেছেন, আর করেছেন শহীদ’। (দেখুন: সহি বুখারী, খন্ড-৭, অধ্যায়-৭১, হাদিস- ৬৬৯, যাদুল মায়াদ, ২য় খণ্ড, পৃ. ১৩৯, ফতহুল বারী, সপ্তম খণ্ড, পৃ. ৪৯৭ ইবনে হিশাম, ২য় খণ্ড, পৃ. ৩৩৭ )।
নবীর এই মৃত্যুর পর ফাতেমার গর্ভপাতে মৃত্যু। এরপর আলীর খুন হন মসজিদে। আলী সেজদা দেওয়া অবস্থায় তাকে হত্যা করেন আবদুর রহমান ইবনে মুলজাম। এই আবদুর রহমানও একজন আল্লাঅলা পাক্কা মুমিন মুসলমান। এখানে ইহুদীনাসারাদের কোন কারবার নেই। গোটা নবী বংশ হত্যা করেছে নামাজী পাক্কা ঈমানদার মুসলমান। আলীর মৃত্যু হয় জানুয়ারি ২৬, ৬৬১ খ্রিস্টাব্দ। বিস্তারিত দেখুন-: https://en.wikipedia.org/wiki/Assassination_of_Ali#Death
তারপর আলী ফাতেমার দুই পুত্র যথাক্রমে হাসানকে তার স্ত্রী বিষ পান করিয়ে হত্যা করে কারণ মুয়াবীয়া (তিনি ছিলেন মুহাম্মদের রাজনৈতিক সচীব) চক্রান্ত করেছিলো হোসেনকে মারতে পারলে পুত্র ইয়াজিদের সঙ্গে তার বিয়ে দেয়া হবে। হবু খলিফা ইয়াজিদ খলিফা হলে হোসেনের স্ত্রী হবেন খলিফার স্ত্রী। হাসান নিজে ধোয়া তুলসি পাতা ছিলো না। অলসতা বিলাসী জীবন যাপন আর লাম্পট্য করাই ছিলো তার কাজ। বিয়ে করে নারী ভোগ করা ছিলো তার প্রধান খেলা। স্বয়ং আলী তার পুত্র সম্পর্কে কুফাবাসীকে সতর্ক করে বলেছিলেন, তোমরা হাসানের কাছে তোমাদের মেয়েদের বিয়ে দিয়ো না কারণ সে অতিশয় তালাক দানকারী ব্যক্তি…। বিশিষ্ট তাফসিরকারক ইবনে কাসির লিখেছেন হাসান ৮০টির উপর বিয়ে করেছিলেন। এদের বেশির ভাগই বসরঘরের পর তালাক প্রাপ্ত হন। যাই হোক, এই বিষয়ে আলাদা বিস্তারিত লেখা আগেই লিখেছি বলে এখানে ক্ষ্যান্ত দিলাম। এবার আসা যাক ইমাম হোসেনের কথা। তাকে হত্যা করা হয় কারবালায় ইয়াজিদের নির্দেশে। তার মাথা ধর থেকে আলাদা করা হয়। তার মাথা দিয়ে সাহাবীরা ফুটবল খেলেছিলেন। তার ধুলি মলিন মাথা ইয়াজিদের সামনে হাজির করা হয়েছিলো। ইয়াজিদের লোকেরা হোসেনের কাটা মাথা পিছনে রেখে আসরের নামাজও আদায় করেছিলেন। ঘটনা কিন্তু এরপেও থেমে থাকেনি। নবী বংশের অপমৃত্যুর এখানেই শেষ নয়। হুসাইনের ছেলে জইনুল আবেদীনকেও বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয় ৭১২ খ্রিস্টাব্দে। তার ছেলে আল বাকিরকেও বিষ খাইয়ে হত্যা করা হয় ৭৩৩ সালে। বাকির ছেলে জাফর সাদিক, তার ছেলে মুসা আল কাজিম, কাজিমের ছেলে আর রিযা- এদেরকেও বিষয় প্রয়োগে হত্যা করা হয়েছিল। এরপর আরো তিন-চার প্রজন্ম নবী বংশের ইমামদের বিষ খাইয়ে হত্যা করা হয়েছিল। এর কারণ কি? এই অভিশপ্ত বিষ প্রয়োগের ধারাবাহিকতা শানে নাযুলটা কি মুমিন ভাইয়া? ইসলাম নামের যে বিষবৃক্ষটার জন্ম দিয়েছিলেন নবীজি- একি তারই প্রায়শ্চিত্ত? মক্কা-মদিনার অসংখ্যা মায়ের কোল খালি করার যে খেলা ইসলাম শুরু করেছিল একি তারই সচেতন প্রতিশোধ ছিল?
আরো কিছু রেফারেন্স-
https://en.wikipedia.org/wiki/Ali_al-Hadi#Death
https://en.wikipedia.org/wiki/Hasan_al-Askari#Death
https://en.wikipedia.org/wiki/Muhammad_al-Baqir#Death