দাদা, কাকে খুশি করতে আপনার এই দৈন্যতা?
শ্রী স্বদেশ রায়: নমস্কার। আপনার লেখা ‘সিন্হা, হিন্দু সম্প্রদায় ও অন্যান্য’ (বিলম্বিত প্রতিক্রিয়া) পড়লাম। ইচ্ছে করেই এটিকে ‘কলাম’ বললাম না, কারণ কোন কলামে এতটা ‘কুৎসা ও তেল’ থাকেনা, আর থাকলে তা কলাম হয়না। হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর ‘তৈল’ প্রবন্ধটি আমি পড়েছি, কিছুই শিখিনি। আপনি হয়তো বহুবার পড়েছেন, সত্যি বলছি, ওটা আপনি বেশ ভালোই রপ্ত করেছেন।
আপনি মাননীয় প্রধান বিচারপতিকে (সিজে) ধুইয়ে দিয়েছেন। আপনি জানেন সিজে রাজাকার নন। আপনি জানেন তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে অসম্মান করেননি। আপনি এও জানেন পাকিস্তান প্রসঙ্গ টেনে তিনি কাউকে হুমকি দেননি এবং এটর্নি জেনারেল সেটি পরিষ্কার করেছেন। তারপরও আপনি সিজে-র চৌদ্ধগোষ্ঠী উদ্ধার করেছেন। ইতিহাস বলে, কাজী বিচার করেন আল্লাহ’র নামে কিন্তু রায় দেন সম্রাটকে খুশি করার জন্যে? দাদা, কাকে খুশি করতে আপনার এই দৈন্যতা!
আপনি জগন্নাথ হলকে কাঠ গড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। জগন্নাথ হলে আপনি ছিলেন কিনা জানিনা, কিন্তু আমি ছিলাম। প্লীজ জগন্নাথ হল নিয়ে মস্করা করবেন না। সিনহাকে জগন্নাথ হল নিয়ে ওরা যথেষ্ট ভালো কাজ করেছে এবং ভবিষ্যতেও নেবে। কারণ সিজে আমাদের মাথাটা উঁচু করে দিয়েছেন। আপনি ও আরো কিছু নেতার ‘তেল’ আমাদের মাথাটা নিচু করে দেয় বটে? রানা দাশগুপ্তের বিরুদ্ধেও আপনি বিষোদ্গার উচ্চারণ করেছেন। রানা দাশগুপ্ত, বা ঐক্য পরিষদ, বা হিন্দু মহাজোট বা অন্যান্য সংখ্যালঘু সংগঠন যা করছে তা কি অন্যায় না অসত্য? আপনি উদাসীন হলেও, বাংলাদেশে নিত্যদিন সংখ্যালঘু অত্যাচার কি কোন সচেতন মানুষ অস্বীকার করতে পারেন? দাদা, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বিরুদ্ধেও আপনার বিষোদ্গার আমরা ভুলিনি।
আজ সকালে (২৪শে আগষ্ট ২০১৭) একটি পোস্টিং দিয়েছিলাম, তাতে বলেছিলাম, ‘প্রধান বিচারপতি কি লম্বা ছুটিতে যাচ্ছেন?’ আধা ঘন্টার মধ্যে ঢাকা থেকে আমার এক ঘনিষ্ট বন্ধু, যিনি কট্টর আওয়ামী লীগ, ফোন করে বিরক্তি প্রকাশ করলেন। বললেন, সিন্হা পদত্যাগও করছেন না, লম্বা ছুটিতেও যাচ্ছেন না। দেশের ৮০% মানুষ সিজের পক্ষে। বললাম, আপনার মুখে ফুল-চন্দন পড়ুক। দাদা, আপনার জ্ঞাতার্থে বলছি, যিনি ফোন করেছিলেন তিনি হিন্দু নন, দেশে ওপরতলায় সবাই তাকে চেনে, আপনিও চেনেন, এই ভদ্রলোকের কথা কি সত্য নয়? সত্য হলে আপনার লেখাটি কি মিথ্যে হয়ে যায়না?
দাদা, বাংলাদেশে আপনি স্বদেশ রায়, বা কামরুল ইসলাম বা খায়রুল হক হয়তো অনেক আছেন, কিন্তু সিন্হা-দের সংখ্যা খুব কম। সিজেকে আপনারা যত গালিই দেন না কেন, তার একমাত্র অপরাধ তিনি তার মাথাটা উঁচু করে রাখতে চাইছেন। চাইছেন, বিচার বিভাগটা দ্বাধীন রাখতে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম একজন প্রধান বিচারপতি এই সাহস দেখাচ্ছেন। তাকে অভিনন্দন জানান। তিনি জাতীয় বীর। তিনি কারোই বিরুদ্ধে নন, তিনি বিচার বিভাগের পক্ষে। সিন্হা সৎ, তার লড়াইটি সৎ, দেশের পক্ষে, দেশের মানুষের পক্ষে এবং বিচার বিভাগের পক্ষে। না চাইলেও তিনি ইতিমধ্যে ইতিহাস সৃষ্টি করে ফেলেছেন।
রাজনীতিকরা যখন সিজের বিরুদ্ধে বলেন, তাদের ব্যাপারটা আমরা বুঝি। কিন্তু যে ভাষায় তারা সিজেকে আক্রমণ করেছেন, আপনি কিন্তু তাদের ব্যাপারে টু-শব্দটি উচ্চারণ করেননি। কেন? একটি মাত্র একুশে পদকের কি এতই চমৎকারিত্ব? বছর দুই-তিনেক আগে নিউয়র্কের একজন টিউটোরিয়াল ব্যবসায়ী শিক্ষাক্ষেত্রে একুশ পেয়েছেন, কারণ ওপর মহলে তার যোগাযোগ ভালো। তার বাবাকে আমি চিনতাম, তিনি রাজাকার ছিলেন? দাদা, যাদের পক্ষে আপনার কলম অবিরাম চলছে, একটু তাদের সমালোচনা করে দেখুন না? আপনি তখন বিএনপি সমর্থক বা রাজাকার হয়ে যাবেন। আপনার একুশ ছিনিয়ে নেয়া হতে পারে? আমি নিজেকে আওয়ামী লীগার ভাবি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু এবং তার সুযোগ্য কন্যার প্রতি আমার শ্রদ্ধার কোন ঘাটতি নেই, কিন্তু সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবাদ করি দেখে হাইব্রিডরা মাঝেসাঝে আমাকে ‘সরকার বিরোধী’ তকমা লাগিয়ে দিতে চেষ্টা করে? অথচ, ২০০১-এর পর বিএনপি-জামাতের বিরুদ্ধে আমরা যে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলাম, তখন আমরা ছিলাম, বিশাল দেশপ্রেমিক!
দাদা, আওয়ামী লীগ জিতলে আপনারা জেতেন, কিন্তু হারলে আমরা, দেশবাসী হারি? এও সত্য, আওয়ামী লীগকে বাইরের কেউ হারায় না, আওয়ামী লীগই হারায়। আমরা এখন বাইরে, সামনে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যদি হারে, সেটি আপনাদের মত অতি-উৎসাহীদের কারণেই হারবে। দাদা, আপনার লেখায় আপনি অনেকের ওপর দায় চাপিয়েছেন, কিন্তু নিজের ওপর অর্পিত দায় না মেনে ঠিকই ‘হলুদ সাংবাদিকতা’ চালিয়ে যাচ্ছেন। আপনি ঢাকেশ্বরী মন্দিরের প্রসঙ্গও এনেছেন, আপনি কি জানেন, ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির নয়? বিশ বিঘার মধ্যে সতের বিঘা জমি এর বে-দখলে? পারবেন কি কিছু করতে? না পারলে, আর যাই হোক, যারা মাথা উঁচু করে বাঁচতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে কুৎসা করবেন না, প্লীজ।
ধন্যবাদ।
শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: লেখাটি না ছাপালে বুঝবো, আপনাদের সৎসাহসের যথেষ্ট অভাব রয়েছে।