ভারতের বিপজ্জনক ও পক্ষপাতদুষ্ট সংখ্যালঘু নীতি।

ভারতের বিপজ্জনক ও পক্ষপাতদুষ্ট সংখ্যালঘু নীতি
                            ।প্রথম পর্ব। 
ভারতের সংখ্যালঘু নীতি,দেশটিকে আরেকটি বিভাজনের দিকে এগিয়ে নিচ্ছে। শুনতে ভাল লাগবে না ঠিকই, কিন্তু এটাই বাস্তবতা। ভারতের সংখ্যালঘু নীতি একতরফা ভাবে অন্যান্য সংখ্যালঘুদের উপেক্ষা করে, কেবলমাত্র ভারতের দ্বিতীয় ধর্মীয় সংখ্যাগুরু মুসলমানদের একচ্ছত্র সুযোগ-সুবিধা প্রদান করছে। এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কিছুই হতে পারে না।

সংবিধানের কিছু ধারা দিয়ে সংখ্যাগুরুদের ‘নির্যাতন’ থেকে সংখ্যালঘুদের রক্ষা করার নামে যে বিধান প্রণয়ন করা হচ্ছে – তার চেয়ে বৈষম্য ও আতঙ্কের আর কিছু হতে পারে না।  
২০০৪ সালে বিজেপিকে হারিয়ে সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকার (ইউপিএ ) যেটা করেছিল, সেটাকে এক কথায় প্যান্ডোরার বাক্স খুলে ফেলা বললে কিছুই বলা হয় না।
যেমনটা আশা করা গিয়েছিল, তৎকালীন বিজেপি দল সোনিয়া গান্ধীর সরকারের নির্লজ্জ সংখ্যালঘু-তোষণ নীতিকে যতটা পারা যায় বিরোধিতা করে গেছে। সে সময়ে বিরোধী দলীয় নেতা শ্রী লালকৃষ্ণ আদবানি বলেছিলেন, “দেশে দারিদ্র নামে একটি বীভৎস জিনিস আছে। আমাদের দেশ এখনও অনেক ব্যাপারে পিছিয়ে আছে,এ ব‍্যাপারে কোন প্রকার সন্দেহ নেই। সমাজের প্রত্যেক মানুষ যাতে সমানভাবে অগ্রসর হতে পারে, সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার এবং জনকল্যাণমূলক কর্মসূচি সমস্ত সম্প্রদায়ের জন্য সমান হওয়া উচিত। সেই কাজটা করতে গিয়ে ধর্মের নামে এমন কিছু করা উচিত নয়, যাতে সমাজে ধর্মীয় ভেদাভেদ বাড়ে। আমার অভিযোগ হল, সোনিয়া গান্ধীর সরকার ঠিক সেটাই করছে। এটাকে বলে ভোট ব‍্যাংক পলিটিক্স। এটা সম্পূর্ণ রূপে অনভিপ্রেত।”
তৎকালীন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী, মুসলিমদের জন্য ইউপিএ সরকারের বিভিন্ন পক্ষপাতিত্বপূর্ণ উন্নয়নমূলক যোজনাকে ‘কমিউনাল বাজেট’ বলে কটাক্ষ করেছিলন। মোদীজি বলেছিলেন, “এই ধরণের পক্ষপাতিত্বপূর্ণ উন্নয়নমূলক যোজনা ভারতকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে আরও পিছিয়ে দেবে। এমন বৈষম্যমূলক যোজনা সমাজের কোনও উপকার করবে না।”
কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, যখন মোদীজি প্রথম দফায় প্রধানমন্ত্রী হলেন, তিনি এই ‘কমিউনাল বাজেট’ শুধু যে অব্যাহত রাখলেন তা-ই নয় ; বরং মুসলমানদের জন্য অর্থ বরাদ্দ আরো বাড়িয়ে নিলেন। তিনি দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হবার পরে মুসলমানদের জন্য বাজেটের পরিমাণ বিস্ময়কর ভাবে অত‍্যাধিক বাড়িয়ে দিয়েছেন। হাজার বছরের দুর্ভাগ্যপীড়িত হিন্দুজাতি অনেক আশায় বুক বেধে যে দল ও নেতার দিকে তাকিয়ে আছে – তাদের কাছ থেকে এহেন তোষণ মূলক আচরণ ভীষণ হতাশার।
যদিও শ্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন NDA সরকার অনেক ভালো কাজ করেছে। যেমন কাশ্মীরের চরম বৈষম্যমূলক ৩৭০ ধারা বিলোপ করেছে। উদ্বাস্তু হিন্দুদের প্রাণের দাবী CAA বাস্তবায়ন করেছে। এই সব ভালো কাজের জন্য আমরা যেমন বিজেপির ভূয়সী প্রশংসা করে যাচ্ছি ;  পাশাপাশি যদি কোন সিদ্ধান্ত জাতি ও রাষ্ট্রের স্বার্থের পরিপন্থী মনে হয় – তা হলে ঐ প্রসঙ্গে আলোকপাত করা অত্যন্ত জরুরী মনে করি। এজন্য কিছু জ্বলন্ত সমস্যা তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে নামের ধুম্রজাল সৃষ্টি করে আসলে সংখ্যালঘু উন্নয়নের বদলে, মুসলিমদের প্রতি সুস্পষ্ট তোষণ নীতি চলছে। এখানে সংখ্যালঘুদের জন্য বরাদ্দকৃত স্কলারশিপের প্রসঙ্গ তুলে ধরা যেতে পারে। ভারতে ছ’টা সরকারী জাতীয় সংখ্যালঘু ধর্ম আছে — মুসলিম, খ্রিষ্টান, শিখ, জৈন, পার্সি ও বৌদ্ধ। এদের পেছনে স্কলারশিপের নামে যে বার্ষিক কয়েকশ’ কোটি টাকার শ্রাদ্ধ হচ্ছে, তার পুরো লাভটাই মুসলিমরা নিয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে মোট স্কলারশিপের প্রায় ৮০% অর্থ পায় মুসলিমরা। অথচ ভারতের সংবিধানের যে সংখ্যালঘু সংজ্ঞা আছে, সেটা মানলে মুসলিমদের কোনও স্কলারশিপ পাওয়ার কথাই নয়। এমনকি সংখ্যালঘুদের জন্য বরাদ্দকৃত জনকল্যাণমূলক যোজনার ভাগ পাওয়ার কথাই নয়। সেই জন্যই আমি একে কমিউনাল স্কিম বলতে বাধ্য হচ্ছি। কল্পনা করুন, যদি ভারতের বর্তমান জনসংখ্যা অনুসারে সরকার ৮০% টাকা হিন্দু ছাত্রদের জন্য রাখতো, আর ১৪% টাকা রাখতো মুসলিমদের জন্য; তাহলে সেক‍্যুলার সমাজে কী ভয়ঙ্কর আলোড়ন সৃষ্টি হতো বলুন তো! কিন্তু যখন বিজেপি সরকার,পূর্ববর্তী কংগ্রেস সরকারের ‘কমিউনাল বাজেট’ একই রেখে দিচ্ছে; তখন সেক‍্যুলার গোষ্ঠী একদম চুপ!
সম্পাদনা:
কৃত্তিবাস ওঝা
ফুলিয়া, পশ্চিম বঙ্গ,ভারত
(ক্রমশ)