হিন্দুরা কেন গরুর মাংস খায় না। কারণ গরু দুধ খায়। কিন্তু ছাগলের দুধ ও মানুষ খায় তার পর ও হিন্দুরা ছাগলের মাংস খায়।

হিন্দুরা কেন গরুর মাংস খায় না? এই নিয়ে অন্য ধর্মের মানুষ অনেক সমালোচনা হাসি ঠাট্টা করে । বর্তমানে কিছু হিন্দু নিজেদের খুব বেশি স্মার্ট প্রমাণ করার জন্য তারাও এর বিরুদ্ধে কথা বলে। আমাদের পশ্চিম বঙ্গের মমতা দিদিতো আরও এক ধাপ এগিয়ে এই ব্যাপারে।
বেশ কিছু দিন আগে শোভা_দে নামের এক প্রখ্যাত লেখিকা লিখেছিলেন—


” মাংস তো মাংসই হয়, গরুর হউক, আর ছাগলের, বা অন্য কোন প্রানীর……..। তাহলে হিন্দুরা জানোয়ারের প্রতি আলাদা আলাদা ব্যবহার করে কেন নাটক করে যে, ছাগল কাটো, কিন্তু গরু কেটো না। এটা কি তাদের মূর্খতা নয় ???


উত্তর – ০১
একদম ঠিক বলেছেন শোভা জী আপনি। পুরুষ তো পুরুষই হয়….. ভাই হউক, বা স্বামী, বা পিতা, বা পুত্র। তাহলে চারজনের সাথে আপনি আলাদা আলাদা ব্যবহার কেন করেন?????????
সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য, বা যৌন সুখ পাবার জন্য কি স্বামীর প্রয়োজনীয়তা আছে ???
ভাই, পুত্র, বা পিতার সাথেও কি এই একই ব্যবহার করা যেতে পারে, যা আপনি আপনার স্বামীর সঙ্গে করেন। এটা আপনার মূর্খতা আর আপনার নাটক নয়….??????

উত্তর – ০২
ঘরে আপনি আপনার বাচ্চা আর আপনার স্বামী কে খাবার জন্য দুধ নিশ্চয় দেন, বা চা কফি তো তৈরি করেন………নিশ্চিত ঐ দুধ গাভীরই হবে। নাকি আপনি কুকুরের দুধ দিতে পারেন, বা বিড়ালের দুধেরও চা কফি বানাতে পারেন….???
দুধ তো দুধই, যে কোন প্রানীরই হউক….!!!৷। ৷  ৷  ৷ ৷   ৷    ৷        ৷   ৷   ৷    ৷৷  ৷        ৷৷  ৷ 
 এটা আপনার মূর্খতা আর আপনার নাটক নয়…??????
প্রশ্ন মাংসের নয়…… প্রশ্ন হল আস্থা আর ভাবনার…। যে ভাবে ভাই, স্বামী, পুত্র, পুত্রী, বোন, মায়ের সাথে আমরা ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হই। এই ভালোবাসা আমরা তাদের দেই, কারণ তারা আমাদের ভালোবাসা দেয়। আমাদের সম্বন্ধ মাত্র একজন পুরুষ বা মাত্র একজন স্ত্রী হওয়ার আধারে না চলে ভাবনা আর আস্থার আধারে সঞ্চালিত হয়….. ঠিক একই প্রকারে গরু, ছাগল বা অন্য পশুও আমাদের ভাবনা আর আস্থার আধারে ব্যবহৃত হয়। এখন প্রশ্ন তুলতে পারেন কেন গাভীর প্রতি ভাবনা আর আস্থা অন্যদের থেকে বেশী হতে যাবে৷ য়,৷ হ৷।৷৷৷৷।  ন৷ ।।   ,      উ,,৷ ৷ ৷ হ জ৷ হ৷৷৷৷৷৷ হ,হ৷ হ ব৷  হ৷ ৷ ৷ হ৷   ?

উত্তর – ০৩
শাস্ত্র অনুসারে গর্ভধারিনী মাতাই আমাদের একমাত্র মাতা নয়। উনি ছাড়াও আমাদের আরও ৬ জন কে মাতার স্থান দেওয়া উচিত। কারণ জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের অনেক জানা-অজানা চাহিদা পূরণে তারাও এগিয়ে আসে। তাদের থেকেও আমরা পাই স্নেহ ভালোবাসা।
০১) জন্মদায়িনী মাতা ঃ আমাদের সকলের গর্ভধারিণী মাতা ।
০২) ধাত্রী মাতা ঃ যিনি আমাদের প্রথম ধারণ করেন ।
০৩) পৃথিবী ঃ এই ধরিত্রী মাতা আমাদের সারা জীবন ধারণ করেন।
তার কোলে আমরা মলমূত্র ত্যাগ থেকে শুরু করে
খেলাধুলা চাষ-বাস, ছুটা-ছুটি কত কিনা করে চলছি ।
নিজের গর্ভ ধারিণী মায়ের মত তিনি আমাদের ধারণ
এবং পালন করছেন ।

০৪) শাস্ত্র ঃ যিনি আমাদের সকল জ্ঞান নিয়ম নীতি শিক্ষা দিচ্ছেন।
আমাদের আদি শিক্ষকও বটে। তিনিও মাতৃস্থানীয়।

০৫) গুরুদেবের পত্নী ঃ যিনি আমাদের সেই সকল শাস্ত্র নীতি
সম্পর্কে জ্ঞান দান করছেন এবং শিক্ষা প্রদান করছে।
শাস্ত্রকে জানতে হলে এবং জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য
বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের গুরু পরম্পরায় যুক্ত
সদগুরুর শরণাপন্ন হতে হবে। গুরুদেবের পত্নী
আমাদের মায়ের মতই ভালোবাসে। এই জন্য তিনিও
আমাদের মাতৃস্থানীয়।

০৬) রাজার পত্নী ঃ যে রাজার দেশে আমরা বাস করছি সেই রাজ
পত্নী আমাদের মাতার মতই। রাজা প্রজাদের
পুত্রের মত পালন করেন তাই তার পত্নী মাতৃ সম
হয়। (বিঃদ্রঃ যদিও বর্তমানে সব রাজাই স্বার্থপর।)

০৭) গাভী ঃ আমরা যখন জম্মগ্রহন করি তখন গর্ভধারিণী মা
অজ্ঞান থাকেন ,তাই তিনি অনেক সময় আহার দানে
অক্ষম থাকায় দাইমা আমাদের গোদুগ্ধ প্রদান করেন ।
অনেক সময় মায়েরা দুগ্ধ দানে অক্ষম থাকায় গো মাতা
আমাদের সেই অভাব পূরণ করেন ,শুধু জন্মের পর নয়,
সারাজীবন আমরা এইভাবে গোমাতার প্রতি নিভর
থাকি। তাই সপ্ত মাতার মধ্যে গোমাতা শ্রেষ্ঠ ।

এইবার আপনারা যদি এই মাতাদের অস্বীকার করতে চান এটা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ব্যপার। সত্যি একটু কটু হলেও তা উপলব্ধির ব্যাপার। যে গাভীকে আমাদের শাস্ত্র মায়ের স্থান দিয়েছে, তাহার গায়ের মাংস খাওয়ার কথা ভাবা কিভাবে সম্ভব? মায়ের বুকের দুধ খাওয়া আর গায়ের চামড়া ছিঁড়ে মাংস খাওয়া কি এক হতে পারে? আমাদের ধর্ম আমাদের এই ভাবে কৃতজ্ঞ হতে শেখায়, আর অকৃতজ্ঞ হওয়ার শিক্ষা আমরা সমাজ থেকে পাই।

তাছাড়া আমাদের আদি ধর্ম গ্রন্থ বেদ এ সুস্পটভাবে গো হত্যাকে নিষিদ্ধ করেছে, যেখানে হত্যা নিষিদ্ধ সেখানে খাওয়ার তো প্রশ্নই আসে না । পৃথিবীর প্রত্যেক ধর্ম যদি তাদের শাস্ত্রকে জীবনের একমাত্র আঁধার করে নিতে পারে, ধর্মীয় শাস্ত্রগ্রন্থ দিয়ে যদি তাদের জাতি গঠিত হতে পারে তাহলে আমাদের শাস্ত্র কি দোষ করল। 
আমাদের শাস্ত্র পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ শাস্ত্রের দাবি রাখে। কি নেই আমাদের শাস্ত্রে? জীবনে চলার প্রত্যেকটা উপকরণ এই মহান শাস্ত্রে দেওয়া আছে। কিন্তু ঐ যে বললাম……………জ্ঞান সম্পূর্ণ উপলব্ধির ব্যপার I
প্রসঙ্গ : গরু নিয়ে করা কুটুক্তি ! হিন্দুরা গরুর মাংস খায় না ঠিক আছে, কিন্তু গরুর চামড়া দিয়ে তৈরি জুতা পড়ে কেন ???
..
মুসলমান : আপনারা হিন্দুরা গরুর মাংস খান না কেন ?
হিন্দু : আপনারা শুয়োরের মাংস খান না কেন ?
– আমাদের ধর্মে নিষেধ আছে, তাই।
– গরুর মাংস খাওয়াও হিন্দু ধর্মে নিষেধ আছে। বরাবর ?
– হুম, কিন্তু আপনারা গরুর মাংস না খেলেও তো গরুর দুধ খান ?

– এজন্যই তো গরু কেটে তার মাংস খাই না। গরু জাতির প্রতি এটা আমাদের হিন্দুদের কৃতজ্ঞতা। ছোট বেলায় মায়ের দুধের পাশাপাশি গরুর দুধ খেয়েছি, তাই গরু আমাদের দুধমাতা। হালিমা যেমন ছিলো আপনাদের নবীর দুধমাতা, নবীর কাছে তার যথেষ্ট সম্মান ছিলো। 
আমাদের কাছেও তেমনি গরুর সম্মান। তাছাড়াও সারা বছর গরুর দুধ খাই, যা আদর্শ খাদ্য। খাওয়ার জন্য নির্বিচারে গরু কেটে খেয়ে ফেললে, এই আদর্শ খাদ্য পাবেন কোথা থেকে ? 
আপনারাও তো এই গরুর দুধ ছোটবেলায় খেয়েছেন, এখনও খান; তাহলে গরুর প্রতি আপনাদের কোনো কৃতজ্ঞতা নেই কেন ?
এটাও মনে রাখবেন, মানুষ মায়ের দুধ খায় মাত্র এক বছর, কিন্তু গরুর দুধ খায় সারাজীবন। এই সূত্রে, গরু শুধু মাতৃসমতুল্যই নয়, মায়ের চেয়েও বেশি।

-হুম, তা না হয় বুঝলাম। গাই গরু না হয় দুধ দেয়, তাই তার মাংস খান না; কিন্তু বলদ গরু তো আর দুধ দেয় না, তার মাংস খান না কেন ?– আপনার জন্ম নিশ্চয় আপনার মা একা দেয় নি ? আশা করি আর বেশি কিছু বলতে হবে না। তাছাড়া চাষের কাজে বলদ গরু এখনও অপরিহার্য। 
আর এই উপমহাদেশে গরুর মাধ্যমেই শুরু হয়েছিলো কৃষিকাজ, যা আমাদের বেঁচে থাকার প্রধান অবলম্বন, আরব্য মরুভূমির সংস্কৃতির প্রভাবে সেটা আপনারা ভুলে যেতে পারেন, আমরা হিন্দুরা কিন্তু সেটা ভুলি নি। 
সবচেয়ে বড় কথা, আপনারা শুকর খান না, শুকরকে ঘৃণা করেন বলে; আর আমরা গরু খাই না, গরুকে শ্রদ্ধা করি বলে, দুটোর মধ্যে কিন্তু আকাশ পাতাল প্রভেদ। আচ্ছা, বলতে পারবেন, এমন কোন প্রাণী আছে, যাকে আপনারা শ্রদ্ধা করেন এবং কিন্তু তাকে হত্যা করে তার মাংস খান না ?
এরপর দেখবেন, ধর্ম নিয়ে চুলকানোর জন্য, যে মুসলমান আপনাকে প্রশ্ন করেছিলো, সে চুপ মেরে গেছে। কিন্তু এরপরও যদি কেউ আপনাকে এই প্রশ্ন করে যে, সবই তো বুঝলাম। গরুর মাংস খান না, ঠিক আছে, কিন্তু গরুর চামড়া দিয়ে তৈরি ঢাক পূজায় বাজান কেনো, আর গরুর চামড়ার জুতা পায়ে পরেন কেনো ? 

গাছ কাটলে কাঠ হয়, আর কাঠ পুড়লে হয় কয়লা । একটা বাচ্চাও এই গাছ, কাঠ ও কয়লার পার্থক্য বুঝবে। কিন্তু সীলগালা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী মুসলমানরা এটা কখনো বুঝবে না। গাছের, কাঠের এবং কয়লার ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য সম্পূর্ণ আলাদা। এ তিন জিনিস কখনোই এক নয়, তাই তাদের আলাদা আলাদা নাম। একই ভাবে গরু, গরুর মাংস এবং গরুর চামড়া তিনটিই সম্পূর্ণ পৃথক জিনিস।

আপনি যদি জঙ্গলে গিয়ে বাস করতে বাধ্য হন, তাহলে জংলীদের কিছু বৈশিষ্ট্য আপনাকে পালন করতেই হবে, না হলে আপনি জঙ্গলে টিকতে পারবেন না। তেমনি মুসলমানদের দেশে বাস করতে গেলে, ইসলামিক সংস্কৃতির কিছু অংশ আপনাকে যেমন পালন করতেই হবে, তেমনি তার কিছু কিছু রেশ আপনার অজান্তেই আপনার কালচারে ঢুকে যাবে। 
গরুর চামড়া দিয়ে জুতা বা ঢাক বানানোর ব্যাপারটিও এই রকম। মুসলমানরা এই উপমহাদেশে আসার আগে থেকেই হিন্দুরা তাদের পূজা-প্রার্থনা এবং তাতে গান-বাজনা করে আসছে। তখন কি ঢাক এ গরুর চামড়া ব্যবহার করা হতো ? আর গরুর চামড়া ব্যবহার করলেও তাতে করতো মৃত গরুর চামড়া, কোনো কারণে যে গরু মারা গিয়েছে, তাকে হত্যা করা হয় নি, 
এই কাজটি করতো হিন্দু সম্পদ্রায়েরই মুচি বা ঋষিরা। মহাদেব শিবও বাঘের চামড়া পরিধান করতেন, এর অর্থ হলো মৃত পশুর চামড়া ব্যবহার শাস্ত্র সম্মত এবং তাতে কোনো দোষ নেই।এখানে বলে রাখি, ঢাকের এক পাশে বর্তমানে ব্যবহার করা হয় গরু বা মহিষের মোটা চামড়া, অন্য পাশে ছাগল বা ভেড়ার পাতলা চামড়া; চিকন এবং মোটা এই দুই ধরণের শব্দ তৈরির জন্যই এই ব্যবস্থা।

বাংলাদেশে যেহেতু গরুর চামড়ার ব্যবহার বেশি এবং প্রক্রিয়াজাত করণের পর কোনটা কিসের চামড়া তা বোঝা যায় না, সেহেতু ঢাক তৈরির কারিগরদের অজ্ঞাতে মহিষের চামড়ার পরিবর্তে গরুর চামড়া ব্যবহার হয়ে থাকতে পারে বা গরুর চামড়ার সহজলভ্যতার জন্যও এটা ঘটতে পারে। 
কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে বা ভারতে যে ঢাকে মহিষ এবং ছাগলের চামড়াই ব্যবহার হয় তাতে কোনো সন্দেহ নেই।উপরের আলোচনা থেকে এটা পরিষ্কার যে, হিন্দুরা গরুর মাংস খায় না এবং তা থেকে উৎপন্ন কোনো জিনিসও সজ্ঞানে ব্যবহার করে না। যেটুকু ব্যবহার করে বা করতে বাধ্য হচ্ছে, তা মুসলমানদের কারণেই। 
কারণ, মুসলমানরা আছে বলেই গরু জবাই হচ্ছে, তা থেকে চামড়া আসছে, আর সেই চামড়ার তৈরি ঢাক বা জুতা হিন্দুদের ব্যবহার করতে হচ্ছে। মুসলিমরা না থাকলে এর কোনোটিই হতো না।