মাংস তো মাংসই হয়

হিন্দুদের গরুর মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ কেন?

হিন্দুদের গরুর মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ কেন? হিন্দুরা কেন গো-মাংস ভক্ষণ করে না এই বিষয় নিয়ে অনেক দিনের দি:মত হয়ে আসছে। হিন্দুধর্মে গো হত্যা নিষিদ্ধ নয়, পূর্বে হিন্দুরা গো মাংস ভক্ষণ করত এসব

কথা গুলি বলে হিন্দুদের বিভ্রান্ত করতে ব্যস্ত ধর্মান্ধরা ।

চলুন প্রথমেই দেখা যাক আমাদের আদি ধর্মগ্রন্থ বেদে গো-হত্যা ও ভক্ষণের ব্যাপারে কি বলে,

১. Ghrtam duhaanaamaditimjanaayaagne maa himsiheeh
(Yajurveda 13.49)
Do not kill cows and bulls who always deserve to be protected.

২. Aare gohaa nrhaa vadho vo astu
(Rigveda 7.56.)
ঋগবেদে গোহত্যাকে মানুষ হত্যার সমকক্ষ বলা হয়েছে ও এর সাথে জড়িতদের শাস্তি দিতে বলা হয়েছে ।

৩. Sooyavasaad bhagavatee hi bhooyaa atho vayam bhagvantah syaama
Addhi trnamaghnye vishwadaaneem piba shuddhamudakamaachar antee
(Rigveda 1.164.40 or Atharv 7.73.11 or Atharv 9.10.)
The Aghnya cows – which are not to be killed under any circumstances- may keep themselves healthy by use of pure water and green grass, so that we may be endowed with virtues, knowledge and wealth.
বেদে আঘ্ন্যা . অহি , ও অদিতি হচ্ছে গরুর সমপদ ।
আঘ্ন্যা মানে যাকে হত্যা করা
উচিত নয় । অহি মানে যার
গলা কাটা / জবাই করা উচিত নয় । অদিতি মানে যাকে টুকরো টুকরো করা উচিত নয় ।
(Source: Yaska the commentator on Nighantu)

এখানে স্পষ্ট বলা আছে, গো-হত্যা করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
বলবে, হত্যা করতে নিষেধ করেছে, খেতে তো নিষেধ করে না !!!!!
যেখানে হত্যা করতেই নিষেধ করা হয়েছে সেখানে ভক্ষণ করার প্রশ্নই ওঠে না ।

এছাড়া আমরা জানি, শ্রীমদ্ভগবদগীতায় কেবল গরু নয় আমিষ খাবার গ্রহণই সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যারা আমিষ খাবার গ্রহণ করে তাদের পিশাচের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে । আমরা জানি, আমিষ খাবার শরীরের জন্য যেটুকু উপকারী তার চেয়ে বহুগুণ ক্ষতিকর । এছাড়া নিরামিষ খাবার আমিষের চাহিদা
পূরণে সক্ষম । বর্তমানে শুধু হিন্দু নয় অনেক বিধর্মীও কেবল নিরামিশ খাদ্য গ্রহণ করে থাকে এবং এর হার দিন দিন বেড়েই চলেছে ।

এবার আসা যাক,

গরু হিন্দু কিরুপে দেখে:

ছোট বেলায় বাড়ীর মা, ঠাকুরমাগন খুব ভোরে ঘুম থেকে গরু ঘরের গোবর ঘটিতে নিয়ে পরিস্কার জলে গুলে তা বাড়ী আঙ্গিনায় ছিটাতেন, পূজো কিংবা সন্ধ্যা আহ্নিকের জায়গা গোবর মিশানো জল ছিটানো কিংবা ঘরের ভিটি লেপন করতেন,আসলে গোবর জল ছেটাবার জন্যই পোকামাকড় এর উপদ্রব কম হয়।

প্রাচীন আর্যঋষিদের ভাবনা নির্দেশনা হলেও আধুনিক বিজ্ঞানে প্রমানিত সত্য হিসাবে প্রকাশ পাচ্ছে। গাভী বিষ্ণুর বাহন, ষাড় শিবের বাহন এবং গোজাতি হত্যা মহাপাপ।

পৃথিবীতে সম্ভবত গো-জাতিই একমাত্র প্রাণী যা খায় ঘাষ, দেয় দুধ, মল ও মুত্র ত্যাগের মাধ্যমে প্রকৃতিতে তথা আমাদেরকে দেয় জৈব সার ও জীবানু নাশক উপাদান। সম্ভবত একসঙ্গে এধরনের একাধিক উপযোগীতা পৃথিবীর অন্য কোন পশুকুলের মধ্যে দেখা যায় না।

কৃষি সভ্যতার শুরু থেকে গরুই একমাত্র প্রানী যা মানুষকে কোটি কোটি বছর অবধি চাষের ভূমি কর্ষন করে সহজে অধিক ফসল ফলাতে সাহায্য করেছে।এত উপকারী একটি প্রাণী কে মা বলে সম্মান জানানো কেন যায়না এটাই বোধগম্য নয়।

ॐ卐 ●●গরু

ইতিহাস তাকালে:-

গরু হিন্দুদের মা,গরুর পেট থেকে তো গরুর বাচ্চা হয় মানুষের বাচ্চা তো হয়না তাহলে গরুকি করে মানুষের মা হয়?

☆—গরু হিন্দুদের মা এটা কোন গ্রন্থে বলা আছে কী? অতি সুপ্রাচীনকাল হতে ভারতবর্ষের অনেক রাজা-মহারাজার গোপালন করতেন। মহাভারতে বর্ণিত, বিরাট রাজার ষাট হাজার গাভী ছিল।

কে কত বেশী ধনশালী ও সমৃদ্ধশালী তা ঐ রাজ্যের গোশালা ও গরুর সংখ্যার উপর নির্ভর করতো। আইন-ই-আকবরী পাঠে জানা যায়, মুঘল সম্রাট আকবরেরও শতশত গাভী ও বলদ ছিল। তিনি মুসলমান হয়েও ভারতবর্ষে গোহত্যা নিষিদ্ধ করেছিলেন।

এখন আসি গরুর মাংস খাই না কিন্তূ চামড়ার জুতা কেন পড়ি, চামড়ার তৈরী জুতা পরা আর জবাই করে মাংস খাওয়া দুই ভিন্ন জিনিস।

একটা গরুর আয়ুষ্কাল ২০/২২ বছর, এর ভিতরে সে মারা যাবে, আর মরা গরুর চামড়া তুলে নিলে সে নিশ্চই আবার মারা যাবে না এবং কষ্টও পাবে না, সুতরাং চামড়ার তৈরী জিনিস পরা আর এর মাংস খাওয়া কখনো এক হতে পারে না, এবং চামড়ার তৈরী জুতা পরা ও দোষের কিছু না ।আমরা কুমিরের মাংস কেউ খাই না কিন্তূ এর চামড়ার তৈরী জিনিস ব্যবহার করি যা খুবই বেয়বহুল ।

গরুর চামড়া অপবিত্র । অথচ গোচর্মের তৈরি মৃদঙ্গ বৈষ্ণবরা ব্যবহার করেন কেন ?
উত্তর: বহু জিনিস অপবিত্র হলেও বেদ নির্ধারিত বিশেষ বিশেষ দ্রব্য পবিত্র বলেই গৃহীত হয়। যেমন, চামড়া অপবিত্র, কিন্তু হরিণের চর্মের আসন পবিত্র ।

অস্থি অপবিত্র, কিন্তু শঙ্খ পবিত্র। দাঁত অপবিত্র, কিন্তু হাতির দাঁত পবিত্র। মরা পাখির পালক অপবিত্র, কিন্তু ময়ূরের পাখা শুদ্ধ পবিত্র।বৃদ্ধ বা অসুস্থ হয়ে কোন গরু মারা গেলে বা কোন দূর্ঘটনায় নিহত গরুর চামড়া হাড়ের ব্যবহার বৈদিক যুগ থেকেই প্রচলিত ।

বৈদিক ঋষিরা পূর্ব থেকেই মৃত গরুর চামড়া নানা কাজ ব্যবহার করতো । তাই মৃত গরুর চামড়া দিয়ে বানানো জুতা শাস্ত্রবিরোধী নয়।

যায় হোক, আমরা চাই যার যার ধর্ম সে সে পালন করুন । আমরা চাই না মুসলমানরা আমাদের ধর্মীয় নিয়োম-কানুনের ব্যাপারে নাক গলাক। আর নাক গলালে কিন্তু আপনারাই লজ্জা পাবেন । লজ্জা হউক অজ্ঞান হউক আমরা তা শিখতে আগ্রহী হবো।