কারা এই রোহিঙ্গা? কি তাদের ইতিহাস?
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘শ্রীকান্ত’ উপন্যাস পড়লে দেখবেন, রেঙ্গুনে (আজকের ইয়াঙ্গুন) কিছু মানুষের ভাষার সঙ্গে চট্টগ্রামের ভাষার বেশ মিল। শরৎচন্দ্র যখন বার্মায় (আজকের মায়ানমার) যান তখন উনিশ শতক চলছে। উইকিপিডিয়া ও এনসাইক্লোপিডিয়া থেকে জানা যায়, ষোল শতক থেকে মজুর হিসেবে বাংলা থেকে কিছু গরীর মানুষ (যারা ধর্মীয় পরিচয়ে মুসলিম) বার্মায় পাড়ি জমানো শুরু করে। সে সময় রেঙ্গুন যাওয়ার বিষয়টা যে চট্টগ্রামের মানুষের কাছে আজকের দুবাই যাওয়ার মতো ছিল, তার প্রমাণ পাওয়া যায় চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানে। ‘ও শ্যাম রেঙ্গুন ন যাইও/ কনে খাইব রেঙ্গুনের কামাই/ রেঙ্গুন যাইবা ডিংগাত করি/ কাঁইনতে কাঁইনতে আঁই যাইউম গই মরি…’ এমন গানের কথা চট্টগ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠদের মুখে এখনও জনপ্রিয়।
এই বাঙালি রোহিঙ্গারা পরে আরাকান রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে দাঁড়ায়। পনেরো শতকের শেষ দিকেই আরাকান রাজ্যের মুদ্রায় রোহিঙ্গাদের ক্ষমতায়নের পরিচয় মেলে। নিজেদের রোহিঙ্গা (অর্থ স্থানীয়) নামে পরিচয় দিলেও দেশটিতে তাদের বঙ্গাল বলেই ডাকা হয় এখনও। ব্রিটিশ শাসিত (১৮২৪-১৯৪৮) বার্মার আরাকান রাজ্যে রাখাইন ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে জাতিগত দাঙ্গার ইতিহাস আজকের না।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ১৯৪২ সালের দাঙ্গার মধ্য দিয়ে বার্মায় জাতিগত বিভক্তির সুত্রপাত। ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে অস্ত্র নিয়ে জাপানি সৈন্যদের মোকাবেলা করার বদলে রোহিঙ্গারা ২০,০০০ আরাকানিকে হত্যা করেছিল। অন্যদিকে রাখাইন ও রেড কারেনদের পাল্টা আক্রমণে মিনবিয়া ও মারুকুতে ৫,০০০ রোহিঙ্গা নিহত হয়েছিল।
ব্রিটিশ আমলে রোহিঙ্গারা অর্থনৈতিক পশ্চাৎপদতা ও ধর্মীয় গোড়ামীর কারণে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত ছিল। ১৯৪৮ সালে বার্মা স্বাধীন হবার পরেও তাদের অবস্থার মৌলিক কোনও পরিবর্তন ঘটেনি। বার্মা স্বাধীন হবার আগেই রোহিঙ্গা নেতারা পাকিস্তানের কায়েদে আজম মোহম্মদ আলি জিন্নাহর সঙ্গে দেখা করে এবং আরাকান মুসলিম লিগ গঠন করে। পরবর্তিতে তারা পাকিস্তানের সঙ্গে একীভূত হওয়ার ঘোষণাও দেয়, কিন্তু জিন্নাহ বার্মার অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে মাথা ঘামাতে রাজি না হওয়ায় তারা সফল হয়নি। ১৯৫০ সালে তারা সশস্ত্র আন্দোলন শুরু করলে সেনাবাহিনী তা কঠোর হস্তে দমন করে। বার্মা থেকে আলাদা না হলেও এসব কারণে বার্মার রাজনৈতিক সঙ্কট ঘনিভূত হতে থাকে। ১৯৮২ সালে বার্মার নাগরিক আইন পাশ হয় রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব সরাসরি অস্বী