শ্রেষ্ঠতম বেহায়া, নির্লজ্জ, চুতিয়া জাতির পুরস্কার।

এই তথ্যগুলো  আমাদের মত নতুন প্রজন্মদের জানা বিশেষ জরুরী।  স্বাধীনতার পর ধর্ষিতা বাঙালী মহিলাদের চিকিৎসায় নিয়োজিত অষ্ট্রেলিয় ডাক্তার জেফ্রি ডেভিস গনধর্ষনের ভয়াবহ মাত্রা দেখে হতবাক হয়ে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে আটক এক পাক অফিসারকে জেরা করেছিলেন এই বলে- যে তারা কিভাবে এমন ঘৃণ্য কাজ করেছিলো। তাদের সরল জবাব ছিলো;
“আমাদের কাছে টিক্কা খানের নির্দেশনা ছিলো, যে একজন ভালো মুসলমান কখনোই তার বাবার সাথে যুদ্ধ করবে না। তাই আমাদের যত বেশী সম্ভব বাঙালী মেয়েদের গর্ভবতী করে যেতে হবে।আমাদের এসব উশৃঙ্খল মেয়েদের পরিবর্তন করতে হবে, যাতে এদের পরবর্তী প্রজন্মে পরিবর্তন আসে। তারা যেন হয়ে ওঠে ভালো মুসলিম এবং ভালো পাকিস্তানী।”

আজ কেন যেন মনে হয় টিক্কা খান এবং নিয়াজীরা একাত্তরে হেরে গেলেও আসলে জিতে গেছে। আজ রাস্তা-ঘাটে পাকিস্তানীদের অসংখ্য সমর্থক পাওয়া যায়, যারা চিৎকার করে স্লোগান তোলে ম্যারি মি আফ্রিদি, অনলাইনে পুরান ঘটনা ভুলে গিয়ে পাকিস্তানীদের শীতল ঘৃণার পরিবর্তে উষ্ণ ভালোবাসা দেবার পরামর্শ দেন কিছু আধুনিক তরুণ, অযুতনিযুত শহীদের শবের উপর দাঁড়িয়ে। তাদের দৃষ্টিতে ইকবালের কাছে রবীন্দ্রনাথ কিছুই না, পাকিস্তানী জাল ব্যান্ডের গানের কাছে সোনার বাংলা ক্ষ্যাতফসল, ইসলামাবাদ বা করাচীর সৌন্দর্যের কাছে বান্দরবান বা রাঙ্গামাটি বোগাস, লাহোর বা করাচীর কামিজ পড়া একজন সাদা চামড়ার মেয়ের তুলনায় বাঙ্গালী নারীরা এসব তরুণদের কাছে নিতান্তই নীরস।
মনেপ্রাণে পাকিস্তানী এসব তরুণেরা কি জানে একাত্তরের মার্চে মিরপুরের সেই বীভৎসতার কথা বাড়ি থেকে পরিবারের সবাইকে ধরে এনেছিল পাকিস্তানীরা, কাপড় খুলতে বলেছিল সবাইকে? রাজি না হওয়ায় বাবা ও ছেলেকে আদেশ করা হয় যথাক্রমে মেয়ে এবং মাকে ধর্ষণ করতে। এতেও রাজি না হলে প্রথমে বাবা এবং ছেলে কে টুকরো টুকরো করে হত্যা করা হয় এবং মা মেয়ে দুজনকে দুজনের চুলের সাথে বেঁধে উলঙ্গ অবস্থায় টানতে টানতে ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। পাকিস্তানী নারীদের দেখে কামোত্তেজিত এসব তরুণেরা কি জানে, একাত্তরে বাঙ্গালী নারীদের পাকিস্তানী সেনারা ধরে এনে কি পৌশাচিক নির্যাতন করতো? রাজারবাগে পুলিশ লাইনে ধরে আনা বাঙ্গালী নারীদের উপর একসাথে ঝাঁপিয়ে পড়ত ওরা, ধর্ষণ করতে করতে হঠাৎ ছুরি দিয়ে স্তন কেটে, পশ্চাৎদেশের মাংস কেটে, যোনি ও গুহ্যদ্বারের মধ্যে সম্পূর্ণ ছুরি চালিয়ে দিয়ে অট্টহাসিতে ফেটে পড়তো ওরা, মাঝে মাঝে বন্দুকের নল, বেয়নেট ও ধারালো ছুরি ঢুকিয়ে যোনি থেকে গলা পর্যন্ত চিরে ফেলতো, তারপর এ সকল মেয়ের লাশ অন্যান্য মেয়েদের সম্মুখে ছুরি দিয়ে কেটে কুচি কুচি করে বস্তার মধ্যে ভরে বাইরে ফেলে দিত। আর ছোট ছোট বালিকাদের যখন ধর্ষনে সুবিধা করতে পারতো না, তখন ওদের অসার রক্তাক্ত দেহ বাইরে এনে দুজন দু পা দু দিকে টেনে ধরে চড়চড়িয়ে ছিঁড়ে ফেলে দিত। এরা কি জানে, ধর্ষণের তীব্রতায় জেনারেল নিয়াজি শেষ পর্যন্ত বলতে বাধ্য হয়েছিল,

“It is not uncommon in history when a battle has been lost because troops were over indulgent in loot and rape.”

এই তরুণেরা কেমব্রিজ আর অক্সফোর্ডের পাকিস্তানীদের দেখে অবাক হয়, গর্ববোধ করে। অথচ এরা ডাঃ মোহাম্মদ ফজলে রাব্বীকে চেনে না। স্কটল্যান্ডের এডিনবরা থেকে কার্ডিওলজিতে এমআরসিপি ডিগ্রী অর্জন করেন ১৯৬২ সালে! ডা. রাব্বী মেডিসিনে নোবেল পেতে পারতেন! মনে হচ্ছে আবেগে একটু বেশি বলছি? ‘A case of congenital hyperbilirubinaemia (DUBIN-JOHNSON SYNDROME) in Pakistan’ এই টাইটেলে ‘Journal o Tropical Med Hyg.’ নামক বিখ্যাত জার্নালে সেই ১৯৬৪ সালেই পাবলিশ করেছেন ডঃ রাব্বী! ‘Spirometry in tropical pulmonary eosinophilia’ নামে আরেকটা ফাইন্ডিংস ছাপা হয়েছিল ব্রিটিশ জার্নাল ‘অফ দা ডিসিস অফ চেস্ট’-এ ১৯৭০ সালে! একাত্তরের নয় মাস গোপনে হাজারো মুক্তিযোদ্ধার চিকিৎসা করার অপরাধে এই ফজলে রাব্বীকে ১৪ই ডিসেম্বর তুলে নিয়ে গিয়েছিল আলবদর আর পাকিস্তানীরা। তাকে কীভাবে মারা হয়েছিল জানেন? হাত-পা আর চোখ বেঁধে ব্রাশফায়ার করে খুবলে তুলে নিয়েছিল তার হার্টটা। কার্ডিওলজিস্ট ছিলেন কিনা, একটু রসিকতা করা আর কি!

ঠিক যেভাবে আরেক বিশ্ববিখ্যাত চক্ষুবিশেষজ্ঞ ডাঃ আবদুল আলীম চৌধুরীর চোখ দুটো উপড়ে নিয়েছিল নরপিশাচগুলো! শহীদুল্লাহ কায়সার, মুনীর চৌধুরী, আনোয়ার পাশা, হুমায়ূন কবীর (ইংরেজি সাহিত্য), রাশিদুল হাসান (ইংরেজি সাহিত্য), সাজিদুল হাসান (পদার্থবিদ্যা), ফজলুর রহমান খান (মৃত্তিকা বিজ্ঞান), এন এম মনিরুজ্জামান (পরিসংখ্যান)– একাত্তরের ১০ থেকে ১৫ ডিসেম্বর নরপিশাচরা এমন ৯৯১ জন শিক্ষাবীদ, ১৩ সাংবাদিক, ৪৯ চিকিৎসক, ৪২ আইনজীবী এবং ১৬ শিল্পী, সাহিত্যিক ও প্রকৌশলীকে উলঙ্গ করে, চোখ বেঁধে, বেয়নেটে খুচিয়ে খুচিয়ে, মলদারে লাঠি ঢুকিয়ে মেরে ফেলেছিলো। এই তথ্যগুলো অবশ্য বাংলাদেশ নিবাসী এইসব আধুনিক পাকিমনাদের মনে কোন ছাপ ফেলে না। তারা বরং এক হাতে তালি বাজে না টাইপের ইঙ্গিত দিয়ে বোঝাতে চান একাত্তরে বাঙ্গালীদেরও দোষ ছিল, ইনফ্যাক্ট সবচেয়ে বেশি।

২৪ বছর ধরে বাঙ্গালীদের পায়ের তলে রেখে একটু পিষলোই বা শোষণই করলো! তাই বলে পাকিস্তান ভেঙ্গে বের হয়ে যাইতে হবে? সালে মছুয়া বাঙ্গাল! হারামজাদে! পৃথিবীর কোন মানুষ যদি ব্রেকফাস্ট থেকে ডিনার তিনবেলা ননস্টপ গ্রেনেড খাওয়া পাকিস্তানের পক্ষে কথা বলে, তাহলে ধরে নিতে হবে সেই মানুষের মানসিক সমস্যা আছে। একমাত্র বদ্ধ উন্মাদ ছাড়া পাকিস্তানকে কোন নিম্নশ্রেণীর পশুও পছন্দ করার কথা না। কারণ তারা যে নির্মম হত্যাজজ্ঞ চালিয়েছিলো এই দেশে, সেটা হার মানিয়ে ছিলো হিটলার, মুসলিনি, গেস্টেপোদেরও।

গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড অনুসারে পৃথিবীর সবচেয়ে নির্মমতম গণহত্যাটি হয়েছিলো বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের হাতে। ওরা পৃথিবীর জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের পুরস্কারটা পাকিস্তানকে দেয়। যদি গিনেস জানতো সেই নিপীড়িত জাতির মানুষরাই এখনো পাকিস্তানের জন্য হেগেমুতে আস্ফালন করে, শহীদের রক্তে পাড়া দিয়ে দাঁড়িয়ে প্রিয়জনের উপর চালানো বর্বরতার কথা ভুলে যেতে আহ্বান জানায়, ক্ষমা চাওয়া তো দূরে থাক, আজো চিৎকার করে গণহত্যা অস্বীকারকারী পাকিস্তানীদের ভাই হিশেবে বুকে টেনে নিতে চায়, তাহলে হয়তো আমাদেরও একটা পুরস্কার দিতো। শ্রেষ্ঠতম বেহায়া, নির্লজ্জ, চুতিয়া জাতির পুরস্কার।

তো এই জমিনের আলো হাওয়ায় বেড়ে উঠে যারা মনেপ্রাণে এখনো পাকিস্তানকে ভালোবাসেন, বিন্দুমাত্র আত্মসম্মানবোধ থাকলে, পেয়ারা পাকিস্তানের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকলে, জানের প্রতি বিন্দুমাত্র মায়া থাকলে তাদের অবিলম্বে পাকিস্তান চলে যাওয়া উচিৎ। যদি কেউ পাকিস্তানকে ভালোবাসার একশো একটা কারণ দেখায়, আমরা তাকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলার ৩৪ লাখ কারণ দেখাতে পারবো। একটা-দুইটা না, চৌত্রিইইইইইইইশ লাখ!
ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার জন্য অনুরোধ রইল
#সংগ্রহ