সৌদি আরবের ইসলাম পূর্ববর্তী (এবং পরবর্তী )

সৌদি আরবের ইসলাম পূর্ববর্তী (এবং পরবর্তী )  প্রত্নতাত্বিক বিষয়ের  উপর কিঞ্চিৎ আলোচনা
শুরুতেই বলছি , কারোর কোনো সৌদি বা অন্য অনুভূতি আহত হলে যুক্তি নিয়ে আসবেন অকারণে ঈমান বা অন্য কিছু খাড়া করার চেষ্টা করে লাভ নেই। যা লিখেছি সব তথ্যসূত্র নিয়ে বলেছি। দেওয়া ও আছে ,চাইলে মিলিয়ে নেবেন
এই ভার্চুয়াল জগতের অন্যতম পুরোনো বন্ধু মিলন এর একটি অনুরোধের উপর লিখতে গিয়ে একটু অন্য রাস্তায় হাঁটলাম। উনি বলেছিলেন , তেলের পয়সা আসার আগের আরব দুনিয়ার উপর একটু আলোকপাত করতে ,আমি আর একটু পিছনের ছবি হাটকালাম। ইসলাম আসার আগের সৌদি আরবের ইতিহাস আর প্রত্নতাত্বিক বিষয়গুলো কি ছিল তার উপর একটু খোঁজ করা শুরু করলাম। যা পেলাম তা আপনাদের কাছে তুলে ধরছি। নিজেরাই বুঝে যাবেন কেন সৌদি রাজতন্ত্র বা অন্য আরো অনেকে এই বিষয়ে কিছু বলে না। জাহেলিয়াত এর হাঁড়ি একদম হাঁটে ভাঙার ভয় বড্ড প্রকট হয়।
মুশকিল হলো , ইন্টারনেট আর আধুনিক প্রযুক্তি বা বিজ্ঞান ভীষণ পাজি ,এর খোঁজ এনে দেয় আর দিয়ে একদম বাজারের মাঝে কি সব খুলে ফেলে। যাই হোক , লাইনে আসি , আসুন একটু সৌদি আরবের ইতিহাস ধরে টানাটানি করি।
আমরা অনেকেই এই আরব প্রত্নতাত্বিক বিষয়ের উপর দুটো জায়গা সমন্ধে জানি , একটা মিশরীয় পিরামিড আর দ্বিতীয়টা জর্ডনের পেট্রা। অথচ আমরা জানতে পারি না সৌদি আরবে ওই সময় এবং তার আগের ইতিহাস এবং প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন সমন্ধে। আমাদের জানতে দেওয়া হয় না।
প্রথমে বাইজেন্টাইন এবং রোমান ঐতিহ্যের পেট্রার ছবি দেওয়া হলো। এটি তৈরী করে নাবাতিয়ান গোষ্ঠী অথচ আমরা এদের তৈরী সৌদি আরবে মাদইয়ান সালেহ তে  একই রকম   অসাধারণ নিদর্শন এর সমন্ধে জানি না। দ্বিতীয় ছবি দেখুন।

এই কাজের কারণ হলো সৌদি রাজতন্ত্র এবং মোল্লা তন্ত্র সপ্তম শতকের আগের পৌত্তলিক , ইহুদি এবং ক্রিশ্চানদের তৈরী কোনো নিদর্শন কে সামনে আসতে দেয় না। এখন কথা হলো ,তা হলে আসছে কি করে ? দুটো কারণে , এক তেলের টাকা কমছে , সামনের দুর্দিন এর অভ্যাস এসে গেছে আর দ্বিতীয়ত এই বিষয়টা অন্য ভাবে টাকা কমানোর রাস্তা হতে পারে তাই আর -” উপায় নেই আবু হোসেন ” অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
তবে ওতেও ঝামেলা , প্যাগান মানে মূর্তিপূজার নিদর্শন যাও বা বাইরে দেখানোর মতো একটু সুযোগ আছে কিন্তু ইহুদি বা ক্রিশ্চান কোনো চার্চ /উপাসনালয় অথবা কোনো নিদর্শন এর প্রকাশ একদম নিষিদ্ধ ! এ প্রসঙ্গে বলা যায় যে পূর্ব সৌদি আরবে চতুর্থ /পঞ্চম শতকের একটি খুঁজে পাওয়া ক্রিশ্চান চার্চ একদম ঘিরে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জেনে রাখুন , সৌদি আরবে কোনো অন্য ধর্মের চিহ্নের , নিদর্শন বা প্রতীক ইত্যাদি প্রকাশ্যে রাখা যাবে না। এমনকি ওটা ঐতিহাসিক হলেও যাবে না। এ প্রসঙ্গে সৌদি ধর্মবিদ (মুখপাত্র ও বলা চলে ) শেখ মহম্মদ নৌযামি বাকি ধর্ম গুরুর সহমতে বলেন যে ওই সব ঐতিহাসিক জিনিস তুলে ধরার কোনো দরকার নেই ,যে ভাবে আছে ঐভাবে থাকুক। অনেকটা ওই ‘কিছু কথা থাক না গোপন ‘ স্টাইলের। না , আবার বেলাইনে যাচ্ছি , আবার লাইনে আসি ! তিনি এ ও বলেন যে যীশু ক্রুশে মারা গেছে ওটাই তো মুসলিমরা বিশ্বাস করে না তাহলে আবার ক্রুশ আসে কেন ? মামলা ডিসমিস !

২০০০ সালের আগে কোনো প্রত্নতত্ববিদ (পশ্চিমের ) সৌদিতে কোনো কাজ করার সুযোগ পেতেন না। এখন দেওয়া হচ্ছে , কারণ পর্যটন কে বৃদ্ধি করে দেশের আয় মানে ট্যাকাটুকা আয় এর রাস্তা বের করা। ওটা বেশ ভালো পরিবর্তনের কাজ করে। তা , যা বলছিলাম , ওই মাদইয়ান সালেহ যেটা ইউনিস্কো একটি হেরিটেজ সাইট ঘোষণা করেছিল , ওটা আবার খুলে দেওয়া হচ্ছে পর্যটকদের জন্য। এই ঐতিহাসিক নিদর্শনটি ২০০০ বছরের পুরোনো।

এই প্রসঙ্গে বলা যায়  ক্রিশ্চিয়ান রবিন ,একজন প্রখ্যাত ফরাসি প্রত্নতাত্বিক ,যিনি দক্ষিণ পশ্চিম সৌদি আরবের নাজরান অঞ্চলের উপর তার কাজ করছেন ,তিনি রামাহ বলে একটি ঐতিহাসিক জায়গা খুঁজছেন তা বাইবেলে বর্ণিত। এটি ছিল ইহুদি এবং ক্রিশ্চানদের ওই অঞ্চলের রাজধানী। ইন্টারেস্টিং ! তাই  না ? প্রসঙ্গত এই রাজকীয় প্রত্নতাত্বিক বিভাগের প্রধান দাইফালাহ বলেন যে এই ধরনের অন্তত ৪০০০ নিদর্শন এ পর্যন্ত  পাওয়া গেছে। ভাবুন একবার ইতিহাস নতুন করে লিখতে হবে।

নাজরান এর প্রত্নতাত্বিক নিদর্শনের খোঁজ পাওয়া যায় ১৯৫০ এ , নবীর জন্মের ১০০ বছর আগের ধু নাওয়াজ বলে এক ইয়েমেনি রাজার ক্রিশ্চান অধিবাসীদের উপর বিজয় ইত্যাদির নিদর্শন পাওয়া যায় তার পাথরের স্তম্ভের খোদাই থেকে। এই ব্যক্তি ইহুদি ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন এবং তারপরই ওই আক্রমন। একই ট্র্যাডিশন চলেছে ,খেয়াল করে ! এর পাশেই জুরাস বলে একটি জায়গায় ডেভিড গ্রাফ , মায়ামির প্রত্নতত্ববিদ খনন করছেন  আর একটি ঐতিহাসিক নগরের উপর যা খ্রষ্টপূর্ব ৫০০ বছর আগের এক সংযোগ শহর ছিল ইয়েমেনের ওই সুগন্ধি এবং অন্য ব্যবসার যোগাযোগের। ইরান থেকে এই আরব প্রান্তের সুদীর্ঘ সিল্ক রুটের একাংশ ছিল ওই অঞ্চল।  এর পুনরাবিষ্কার ওই অঞ্চলের ওই সময়ে এবং পরের ১০০০ বছরের ইতিহাস তুলে আনবে আশা করা যায়।

আবার মাদইয়ান সালেহ র উপর ফিরে আসি।  এখন এই অঞ্চলের নাম আল-হিজর ,এটি ঐতিহাসিক পেট্রা থেকে ৪৫০ মাইল দূরে। নাবেতিয়ান সাম্রাজ্যের দক্ষিণাংশ ছিল ওই অঞ্চল। এই প্রত্নতাত্বিক নিদর্শনটি ১৩০টি মিনার পাহাড় কেটে বানানো হয়েছে। এর তৈরির একাংশ দ্বিতীয় শতকের রোমান সম্রাট মার্কাস এর সম্মানে করা হয় ওটা ও জানা গেছে ২০০০ সালের খনন থেকে। ছবি দেখুন , তিন নম্বর।

এই নিদর্শনগুলো খুঁজে বের করা হলেও তার উপর কোনো ঘোষণা নেই ,এমনকি দেশের নাগরিকরা ও এড়িয়ে যাচ্ছেন কারণ তাদের বিশ্বাস ওই দেশ গুলো বা ওই প্রাতিষ্ঠানিক নিদর্শন ধ্বংস হয়েছে আল্লাহর রোষে। কি সাংঘাতিক ! এই খনন এর উপর স্থানীয় এবং ধর্মীয় বাধা ও আসছে কারণ খুব সহজ , যদি অন্য ধর্মের নিদর্শন ইত্যাদি সামনে চলে আসে তবে তা বড় অসস্থির কারণ হবে সৌদি ধর্মগুরু এবং ওই ‘বিশ্বাসের ‘ ট্যাবলেট এর প্রসারের। জাহেলিয়াত তো অন্য কথা বলতে শুরু করবে। যাই হোক আবার বেলাইনে যাচ্ছিলাম ,লাইনে আসি !

রিয়াদের রাজকীয় জাদুঘরের নিদর্শনের উপর ও সেন্সর বজায় আছে। কিছু ইসলামের আগমনের আগের মূর্তি , মুখোশ (ছবি দেওয়া হলো ) , পৌত্তলিক ধর্মের মন্দিরের একটি নিদর্শন ইত্যাদি আছে তবে তালিকাতে থাকা মহিলা দেবীর কোনো নিদর্শন কিন্তু প্রকাশ্যে রাখা হয় নি। মজার হলো  ব্রোঞ্জের নগ্ন হারকিউলিস আছে। ওই সময়ের ভাস্কর্য যে অন্য দেশের মতোই নগ্ন কোনো কিছু নিদর্শন তৈরিতে বাধা দিতো না তার প্রমান রয়ে গেলো।
এই ধরণের একটি চার্চ যার কথা আগে বলেছিলাম , ওই পূর্ব সৌদিআরবে , ওটার ভিতরে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল ফয়সাল জামিল বলে এক সৌদি ব্যবসায়ী এবং শখের প্রত্নতাত্বিকের। তিনি অবাক হয়ে যান যখন তিনি তার অভিজ্ঞতা লিখতে চেয়েও ছাপতে পারেন নি।

প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন গুলোর উপর ছবি পরপর দেওয়া হলো
৪ : মহিলা দেবীদের একটি প্রস্তর মূর্তি
৫ : নগ্ন হারকিউলিস এর উর্ধাঙ্গ (এর বেশি দেখতে চাইলে ইন্টারনেটে খুজুন )
৬. : সোনালী মুখোশ

এরপরের বোমা : রামেসিস এর নাম সমন্ধে  সৌদি আরব অবগত ছিল ইসলামের আগের থেকে !!!!

৭.ছবি : রামেসিস এর নামের উল্লেখের স্মারক

ল্যুভর এর সৌদি ঐতিহাসিক বস্তুর প্রদর্শনী এবং নিদর্শন ইত্যাদি থেকে অতীব ইন্টারেস্টিং একটি বিষয় উঠে এসেছে। ফারাও সমন্ধে কি করে কোরান জানলো ওটা কিন্তু প্রমাণ হয়ে গেল। রামেসিস এর নাম উল্লেখিত ফলক পাওয়া গেছে সৈদিতে। অর্থাৎ এই সিল্ক রুট এর লোকজন এই ফারাও সমন্ধে ভালোই অবগত ছিল। কি বুঝলেন মোমিন ?

এবার একটু আরো পিছনের দিকে যাই , হরপ্পা মহেনজোদারোর সময়ের সভ্যতার নিদর্শন ও পাওয়া গেছে। একটি পাথরের খোদাই করা ঘোড়ার প্রতিরূপ পাওয়া যায় যা আজ থেকে প্রায় ৭ হাজার খ্রিস্টপূর্বাব্দের মানে প্রায় ৯ হাজার বছর আগের বলা হচ্ছে। এই অঞ্চলেই বুনো ঘোড়ার পোষ মানানোর কাজ করা হয় বলছেন বিশেষজ্ঞরা। ছবি দেওয়া হলো :ছবি নাম্বার ৮

এই বাণিজ্য পথ মূলতঃ ছিল সুগন্ধির কারবারের। ইয়েমেন এবং সৌদি এক বিশেষ গাছের আঠা (আগের ইয়েমেনের উপর লেখা দেখুন ) ছিল অতীব মূল্যবান , মন্দির ইত্যাদিতে প্রচুর চাহিদা ছিল। তখনকার তেলের বদলে ওটাই ছিল মূল টাকা রোজগারের বস্তু।

এছাড়া ও ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ,আরো খনন চালালে মমি ইত্যাদি পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। দুটো ছবি দিচ্ছি , একটা ওই কবর/সংরক্ষণ এর মিশরীয় প্রতিচ্ছবি পরিষ্কার দেখা যায় এবং আর একটি হলো মিশরীয় কায়দায় বালিপাথরের তৈরী একটি পুরুষ মূর্তি ,স্বাভাবিক ভাবে ওই বানিয়ান ধাঁচে মুখ উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তবু সংস্কৃতি যে এক তার প্রমান থেকে যায়।
৯. :  মৃতদেহের উপরের ছবি 
১০. : পুরুষ মূর্তি , ভাস্কর্যের সাথে মিশরীয় আর্ট এর হুবহু মিল পাবেন যদি ইন্টারনেটে মিশরীয় পিরামিডের উপর ছবি দেখেন

এরপরের ভাস্কর্যটি দেখুন , এটি খ্রিষ্টাব্দ ১ম /২য় শতকের তৈরী একটি পুরুষ মানুষের অবয়ব। চুলের সজ্জা এবং বিন্যাস পুরো রোম সভ্যতার দ্বারা  প্রভাবিত ওটা দেখা যায়।
ছবি নম্বর : ১১

শেষ করতে চাই একটু সংক্ষেপে আরো কিছু বলে। ইতিহাস শুধু ইসলামের আগের না ,ইসলাম পরবর্তী পর্বের গুলো ও মুছে ফেলা হচ্ছে।
মক্কার পবিত্র কাবা শরীফের আসে পাশের আলোর তীর্থযাত্রীর জায়গা বানাতে (পড়ুন আরো ভিড় বাড়িয়ে রোজগার বাড়াতে ) এই কাবা শরীফের বিস্তার বৃদ্ধি আর সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজের নাম একের পর এক ঐতিহাসিক নিদর্শন নষ্ট করছে সৌদি সরকার। এর কয়েকটার বিবরণ দিলাম সংক্ষেপে।
১. নবীর চাচা হামজার বাড়ি ধূলিস্যাৎ করে মক্কা হোটেলের জায়গা করা হয়েছে
২. নবীর প্রথম স্ত্রী খাদিজার বাড়ি মিশিয়ে দিয়ে তৈরী হয়েছে গন শৌচালয়
৩. ইসলামের প্রথম খলিফা আবু বকরের বাড়ির উপর দাঁড়িয়ে আছে হিল্টন হোটেল
৪. ওহুদের যুদ্ধের পাশ্ববর্তী জোড়া পাহাড়ের অঞ্চল যেখানে নবী আহত হয়েছিলেন ওই অঞ্চল ঘিরে দেওয়া হয়েছে। সতর্কবাণী দেওয়া হয়েছে যে ওটা খালি একটা পাহাড় মাত্র , ইবাদত এর না। ওয়াহাবি মতের একদম শব্দ ধরে মেলানো হয়েছে।
৫. মদিনার ৬টি মসজিদ আছে যা ঐতিহাসিক ভাবে নবী মহম্মদ ওখানে প্রার্থনা করতেন বলা হয়। ঐগুলো তালা মারা এবং সপ্তমটি যা ছিল আবু বকরের ,ওটা ভেঙে হয়েছে এটিএম। কি মোমিন , কোনো আন্দোলন হলো না কেন ?
৬. কাবার ধার ঘেঁষে তৈরী হয়েছে আকাশ চুম্বি অট্টালিকা যার ছায়া পড়ছে কাবার উপর। তৈরী করেছে লাদেন গোষ্ঠী। প্রতিবাদ ? না , কোনো প্রতিবাদ নেই।

২১ বিলিয়ন এর প্রজেক্ট হয়েছে সৌদি রাজার , টার্গেট ২৫ লক্ষ হাজি কে আনা। তেলের পরবর্তী রোজগারের রাস্তা এটাই। কারোর কোনো অনুভিতিতে আঘাত লাগলে বলবেন , একদম রাজার এই মিশন এবং এই কাজের মিল দেখিয়ে দেবো। তথ্যসূত্র নিচে দেওয়া হলো।

পরিশেষে বলি : ঐভাবে ইতিহাস চেপে রাখা যায় না। চেষ্টা নিরর্থক !

১২ নম্বর থেকে বাকি কয়েকটা ছবি ওই প্রত্নতত্বের বাকি কিছু অমূল্য ছবি।
তথ্যসূত্র :
http://time.com/3584585/saudi-arabia-bulldozes-over-its-heritage/
http://www.bbc.com/news/world-us-canada-20351085
http://latimesblogs.latimes.com/babylonbeyond/2010/11/saudi-arabia-history-archeology-islam.html
http://www.huffingtonpost.com/sabria-jawhar/saudis-struggle-with-how_b_275217.html
http://www.arabhumanists.org/arab-women-pre-islam/
http://www.arabhumanists.org/blog/
http://www.smithsonianmag.com/smithsonian-institution/roads-of-arabia-presents-hundreds-of-recent-finds-that-recast-the-regions-history-127324646/
http://etc.ancient.eu/interviews/the-wealthy-kingdoms-of-ancient-arabia/

http://www.alaintruong.com/archives/2014/04/27/29747238.html