ইন্দোনেশিয়ার ঐ পরিবারটিকে কে ও কি প্ররোচিত করেছিলো গির্জায় হামলা করতে?

আমরা এরকম শুনেছি যে আমেরিকার উপর অভিমান করে লোকজন জঙ্গি হয়ে উঠে। তবে সেই জঙ্গিগুলো কেন কেবল আল্লাহো আকবর শ্লোগান দিয়ে হামলা চালায়, কেন তারা কেবল মুসলমান হয় সে উত্তর কখনো পাইনি।… আমরা আরো শুনেছি যে যারা বাংলাদেশে মন্দির ভাঙ্গতে যায় তারা হাতেনাতে ধরা পড়লে মানসিক ভারসাম্যহীন বলে পরে জানা যায়। তবে কেন মানসিক ভরাসাম্যহীনরা কেবল মন্দির ভাঙ্গতে যায়, কেন তারা কখনো মসজিদ ভাঙ্গতে যায় না সে উত্তরও আমরা কখনই পাইনি।

আন্তর্জাতিক বামাতী সংঘ ও মডারেট মুসলমান ইন্দোনেশিয়ায় গির্জাতে বোমা হামলার পর তাদের ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। এই হামলার পিছনে ইসলামের কোন রকম ভূমিকা যে নেই, বরং এই হামলার পিছনে আমেরিকার ফরেন পলেসি, ফিলিস্তিনীদের প্রতি ইজরাইলদের আগ্রাসন, কাস্মিরের ভারতীয় সৈন্যদের জবরদস্তিই যে ইন্দোনেশিয়ার একই পরিবারের সাতজনকে ক্ষুব্ধ করে প্রতিশোধ প্ররায়ণ করে তুলেছিলো তা নোয়াম চমস্কির লেখা থেকে কোট করে করে প্রমাণ করে দেখানো কম হ্যাপা নয়! এতেও কাজ না হলে মডারেট মুসলমানরা তো আছেই। ইসলাম গির্জায় হামলাকে সমর্থন করে না। আন্তর্জাতিক ইহুদী চক্র নিজেরাই গির্জাতে হামলা করে মুসলমানদের বদনাম করতে চাইছে ইত্যাদি…।

আমরা যা জানি না, খোদ আল্লাহ নিজে একটা মসজিদ ধ্বংস করার আদেশ দিয়েছিলেন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করতে। কুরআনের সেই আয়াত দিয়েই আজকে গির্জা পেগোডা মন্দিরে হামলা সংগঠিত হচ্ছে। কুরআনের আয়াত দিয়ে মন্দির বা গির্জাই কেবল ভাঙ্গা জায়েজ নয়, প্রয়োজনে মসজিদকেও ভাঙ্গা যাবে! যেমন শিয়া মসজিদ, কাদেয়ানি মসজিদকে মুমিনরা আক্রমন করে ভেঙ্গে ফেলে।

এখন দেখি সেই আয়াতটি কোনটি। “১০৭. আর যারা মসজিদ বানিয়েছে ক্ষতিসাধন, কুফরী ও মুমিনদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এবং ইতোপূর্বে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যে লড়াই করেছে তার ঘাঁটি হিসেবে। আর তারা অবশ্যই শপথ করবে যে, ‘আমরা কেবল ভালো চেয়েছি’। আর আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, তারা অবশ্যই মিথ্যাবাদী। ১০৮. তুমি সেখানে কখনো (সালাত কায়েম করতে) দাঁড়িও না। অবশ্যই যে মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাকওয়ার উপর প্রথম দিন থেকে তা বেশি হকদার যে, তুমি সেখানে সালাত কায়েম করতে দাঁড়াবে। সেখানে এমন লোক আছে, যারা উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করতে ভালোবাসে। আর আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন।” [সূরা আত-তাওবাহ: ১০৭-১০৮]

মদিনাতে মুহাম্মদের সঙ্গে যারা দ্বিমতকারী ছিলেন তারা সবাই ইসলামের ভাষায় ‘মুনাফেক’। যেমন আবদুল্লাহ ইবন উবাই, আবু আমির ইত্যাদি। দ্বিতীয়জন একটি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন দুরান্তের মুসল্লিদের সুবিধার জন্য। মসজিদের উদ্বোধন করার কথাও ছিলো নবী মুহাম্মদের। কিন্তু পরবর্তীতে মত পরিবর্তন করেন মুহাম্মদ। তাবুক যুদ্ধ থেকে ফেরার পর মুহাম্মদ তার কথিত জিব্রাইলকে দিয়ে এই আয়াত নাযিল করেন। মুহাম্মদের মদিনাকালীন সময়ে তার নবীত্ব স্বীকার করে নেয়া শিষ্যদের অনেকে তার জিহাদী কার্যক্রমে দ্বিমত পোষণ করতে থাকে। যেমন আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ইহুদীদের উপর জুলুম করতে বাধা দিতো। তিনি বেঁচে থাকতে মদিনার বহু ইহুদী প্রাণে বেঁচে যায় তার বদন্যতায়। আবু আমির সেরকমই একজন ছিলেন। প্রভাবশালী এই ব্যক্তির নির্মাণ করা মসজিদকে কেন্দ্র করে ইসলামের মধ্যে বিভক্তি ভবিষ্যতে হতে পারে ভেবেই মুহাম্মদ এই মসজিদকে মুমিনদের মধ্যে কুফরি ও ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে বানানোর দাবী করে সেটিকে বাতিল করে দেন। আবু আমির প্রভাবশালী হওয়ায় তৎক্ষণাত সেই মসজিদের কিছু ক্ষতি করতে না পারলেও ৬২৮ খ্রিস্টাব্দে তার মৃত্যুর পর মুহাম্মদের নির্দেশে তার সঙ্গীরা এই মসজিদ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলে এবং সে স্থানে মলমূত্রের স্থান বানায়!

এই কুখ্যাত আয়াতটি এখন খোদ মুসলমানরাই নিজেরা নিজেদের উপর প্রয়োগ করে একে অন্যকে হত্যা করছে। আয়াতে বলা কথাগুলো খেয়াল করুন, ‘যারা মসজিদ বানিয়েছে ক্ষতিসাধন, কুফরী ও মুমিনদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে’, এখন হুবহু এই অভিযোগ সুন্নিরা শিয়াদের উপর, শিয়ারা সুন্নিদের উপর, উভয়ে আহমদিয়াদের উদ্দেশ্য  করে একে অপরের মসজিদে আত্মঘাতি হামলা চালায়। আহমদিয়া (কাদেয়ানী) মসজিদে আক্রমন করে, আগুন লাগায়। ভয়ংকর ব্যাপার হচ্ছে আয়াতে ‘কুফরি’ করা উদ্দেশ্যে মসজিদ বানানোতে তার প্রতি চরম বিশেষেদাগার করা এবং পরবর্তীতে আবু আমিরের মসজিদ ধ্বংস করার রেফারেন্স ধরে মিশরসহ মধ্যপ্রাচ্যে গির্জাগুলোতে ফান্ডামেন্টালিস্ট মুসলিম দলগুলো হামলা চালায়। কারণ তারা বিশ্বাস করে মন্দির গির্জা পেগোডা কুফরিকে প্রতিষ্ঠা করে চলেছে।

ইন্দোনেশিয়ার ঐ মুসলিম পরিবারটি জান্নাত প্রত্যাশী ছিলো। এখন বলা হবে আত্মহত্যা করে তো কেউ জান্নাতে যেতে পারবে না। ব্যাপারটা এমন, কাফের হত্যা করলে জান্নাতে যাবেন কিন্তু আত্মহত্যা করলে জান্নাতে যেত পারবেন না। অন্যকে হত্যা করা ইসলামে জায়েজ কিন্তু আত্মহত্যা জায়েজ নয়। কিন্তু আত্মঘাতি হামলাকে আত্মহত্যা বলা চাতুরিতা মাত্র। যে অপারেশনে গিয়ে আপনার বেঁচে আসার সম্ভাবনা শূন্য কিন্তু শত্রু নির্মূল হবে তা কোন মতেই ইসলামে নিষেধ নয়। তবে আত্মহত্যা কঠরভাবে নিষিদ্ধ। বুখারী শরীফে আছে একজন সাহাবী বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করে জখমে অতিষ্ঠ হয়ে সহ্য করতে না পেরে নিজের তলোয়ার দিয়ে আত্মহত্যা করলে রাসূল (ছাঃ) তাকে জাহান্নামী বলে আখ্যায়িত করেন (বুখারী হা/৪২০৩ ‘খায়বর যুদ্ধ’ অনুচ্ছেদ)।

কাজেই আত্মহত্যার বিষয়টি পরিস্কার ইসলামে। এবার দেখুন নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও জিহাদের ময়দানে শত্রুর উপর ঝাপিয়ে পড়ে যে আত্মঘাতি হামলা চালানো হয় তা কিভাবে ইসলাম অনুমোদন দিয়েছে-
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ “মুশরিকরা (এখন আমাদের দিকে) এগিয়ে আসল, আর রসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “উঠ এবং জান্নাতে প্রবেশ কর, যার প্রস্থ আসমান ও জমিনের সমান ।” উমাইর বিন আল-হুমাম আল- আনসারী (রাঃ) বললেনঃ হে রসূলুল্লাহ (সঃ)! জান্নাত কি আসমান ও জমিনের সমান?” তিনি বললেনঃ “হ্যাঁ” । উমাইর বললেনঃ “ভাল, ভাল!” রসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “কিসে তোমাকে এই শব্দগুলো উচ্চারণ করতে উদ্বুদ্ধ করল? (অর্থাৎ “ভাল, ভাল!”)” তিনি (উমাইর) বললেন, “হে রসূলুল্লাহ (সঃ)! অন্য কিছু নয় বরং এই ইচ্ছা যে, আমি যেন তার (জান্নাতের) অধিবাসীদের একজন হতে পারি ।” তিনি (রসূলুল্লাহ (সঃ)) বললেনঃ “তুমি (নিশ্চয়ই) তাদের একজন ।” এরপর উমাইর (রাঃ) নিজের থলি হতে কিছু খেজুর বের করে খেতে লাগলেন । এরপর বললেন, “যদি এই সবগুলি খেজুর খাওয়া পর্যন্ত আমি বেঁচে থাকি তবে তা হবে একটি দীর্ঘ জীবন।” (বর্ণনাকারী বলেন): “সে তার সাথে যত খেজুর ছিল সব ফেলে দিল এবং শত্রুর সাথে যুদ্ধ করতে করতে নিহত হয়ে গেল” (বুখারীঃ ৪০৪৬, মুসলিমঃ ১৮৯৯)।

যাদের হাদিস চলবে না তাদের কুরআন থেকে আত্মঘাতি হামলার অনুমোদন দেখাই-
“আর মানুষের মধ্যে এমন আছে যে নিজেকে বিক্রয় করে দেয়, আল্লাহর সন্তুষ্টির খোঁজে, আর আল্লাহ নিশ্চয়ই নিজের বান্দাদের ব্যাপারে পরিপূর্ণরূপে অনুগ্রহশীল”(২:২০৭)। ইবনে কাথির তার তাফসিরে এই্ আয়াত সম্পর্কে বলেন, “সংখ্যাগরিষ্ঠ আলেমদের মত যে এই আয়াতটি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী প্রতিটি মুজাহিদের ব্যাপারে নাজিল হয়েছে … ‘আর যখন হিশাম ইবনু আমির শত্রুদলের মধ্যে ঝাপিয়ে পড়লেন, কিছু লোক এ ব্যাপারে আপত্তি করল। তারা বলল এ তো আত্মহত্যা। তখন উমার বিন খাত্তাব এবং আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) এই আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন।”(তাফসীর ইবনে কাথির, খন্ড ১ম, ২য়, ৩য়, সুরা বাকারা, পৃষ্ঠা-৫৮০)।

ইন্দোনেশিয়ার ঐ পরিবারটিকে কে ও কি প্ররোচিত করেছিলো গির্জায় হামলা করতে তারপরও আপনাদের ভেঙ্গে বলে দিতে হবে?