মুসলিমদের বৃহৎ এই বর্বর পশুহত্যা বন্ধ করতে সাহসের সঙ্গে সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে…।

নেপালের গঢ়িমাঈ মন্দিরে পশুবলী নিষিদ্ধ করার আগে অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার নেটওয়ার্ক নেপাল এবং হিউম্যান সোসাইটি ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডিয়া নামে দুটি পশু অধিকার সংগঠন ধর্মীয় এই প্রথার বিরুদ্ধে সরব হয়। একদিনে ৫ লাখ পশু বলী দেয়া হত নেপালের গঢ়িমাঈ মন্দিরে। তাও সেটা ৫ বছর পর পর হত। অথচ মুসলমানদের কুরবানী প্রতি বছর ঘটে এবং শুধুমাত্র বাংলাদেশে প্রতি বছর কুরবানীর সংখ্যা ১ কোটির উপরে! প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী এ বছর  ঈদুল আজহা উপলক্ষে ১ কোটি ১০ লাখ কোরবানির পশুর চাহিদা পূরণের জন্য সারাদেশে প্রায় ১ কোটি ১৭ লাখ ৮৮ হাজার ৫৬৩টি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। গত বছর কুরবানী হয়েছিলো সরকারী হিসেবে ১ কোটি ৪ লাখ। অর্থ্যাৎ ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে পশু হত্যা। যদি মুসলিম প্রধান বাংলাদেশেই এই পরিমাণ পশুহত্যা ঘটে থাকে তাহলে সারা বিশ্বের কুরবানীতে পশুহত্যা সংখ্যাটা কি পরিমাণ আন্দাজ করা যায়। কিন্তু এত বিপুল বিভৎস পশুবধের মুসলিম এই প্রথার বিরুদ্ধে কি মানবিক সংগঠনগুলো কখনো সরব হয়েছে?

নেপালের মন্দিরে ৫ বছর পর পর ঘটা পশুবলীর বিরুদ্ধে কিন্তু আন্দোলন চলছিলো এবং কোর্টে মামলা ঠুকে দিয়েছিলো মানবাধিকার সংস্থাগুলো। হিন্দু প্রধান নেপালে এসব কারণে কোথাও ‘হিন্দু বিদ্বেষ’ রব উঠেনি। হিউমেইন সোসাইটি ইন্টারন্যাশনালের উপ অধিকর্তা আলোকপর্ণা সেনগুপ্ত মন্দির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসেছিলেন এবং বলী প্রধা উঠিয়ে দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। আশ্চর্য তবু কেউ আলোকপর্ণার মাথার দাম হাঁকায়নি। ‘ইসলাম বিদ্বেষী’ বলার মত নেপালের কোন প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীও ছিলো না? আমাদের দেশে কবি শিল্পী সেলিব্রেটি বুদ্ধিজীবী লেখকরা গরু কুরবানীর জন্য কিনে তার ছবি ফেইসবুকে পোস্ট করেন। সেখানে ভারতে হিউমেইন সোসাইটি ইন্টারন্যাশনাশ ইন্ডিয়া এবং পিপল ফর এনিমাল নামে দুটি সংগঠন বলীর বিরুদ্ধে ভারতে সর্বচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করে ২০১৪ সালে। সেই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালে নেপালের গঢ়িমাঈ মন্দির কর্তৃপক্ষ সব রকমের বলী প্রথা মন্দিরে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। যেহেতু এটি ধর্মীয় বিশ্বাস ও রেওয়াজ ছিলো তাই যদি মন্দির কর্তৃপক্ষ না চাইত তাহলে এটি বন্ধ করা কঠিন ছিলো। প্রতি ৫ বছর অন্তর মাত্র ৫ লাখ পশুবলীতে গোটা বিশ্ব মর্মাহত হয়েছে এবং এই বর্বর প্রথা শেষতক বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে। অথচ বাংলাদেশের মত ছোট একটি দেশে প্রতি বছর ১ কোটির উপরে পশুহত্যা করা হয়, সারা বিশ্বে কুরবানীর নামে যে পরিমাণ পশু একইদিনে হত্যা করা হয়- তাতে আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর কোন হুঁশ নেই কেন? তারা কি ‘ইসলামোফোবিয়া’ গালি খাওয়ার ভয়ে ভীত?

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগ-নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের পরিচালক বলেছেন, এবছর ডেঙ্গুর কারণে পশু কোরবানীতে যথেষ্ঠ উদ্বেগের কারণ রয়েছে। পশুর রক্তের পানি কোথাও জমে থাকলে ডেঙ্গু এখন যে পরিমাণ রয়েছে তা বেড়ে যাবে বহুগুণে। যে দেশে যেখানে সেখানে পশু ফেলে কুরবানী দেয়া হয় ১ কোটির উপরে সেদেশে কিছুতেই পরিবেশ রক্ষা সম্ভব হবে না। এটি সিটি কর্পোরেশন কেন, সেনাবাহিনী নামিয়েও সুফল পাওয়া সম্ভব নয়। কারণ বজ্য অপসারণই এখানে মূল কথা নয়, পশুর রক্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থায় গিয়ে যেখানে জমাট হয়ে পড়বে সেখানেই মশা তার বংশবিস্তার করবে। বিগত কয়েক বছর ধরে সরকার থেকে ম্রিয়মান কন্ঠে বলার চেষ্টা করছে যেখানে সেখানে যততত্র কুরবানী দেয়া যাবে না- কিন্তু ইসলামপ্রেমি জনতা বিরূপ মনোভাব প্রকাশ করায় সরকার পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে। ভারত ভেঙ্গে পাকিস্তান করা হয়েছিলো কি গরু কুরবানী কসাইখানায় নিয়ে গিয়ে করার জন্য? ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশ বাংলাদেশ স্বাধীন করা হয়েছিলো হিন্দু বাড়ির সামনে তাদের দেখিয়ে দেখিয়ে গরু জবাই করার জন্য। এসব দেখে হিন্দুদের যাতে খুব জ্বলে। আর বাংলাদেশের হিন্দুরা যেহেতু চরম মাত্রায় ধর্মান্ধ তাই তারাও মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত হতে থাকে। সব মিলিয়ে কুরবানী একটা সাম্প্রদায়িক বিচ্ছিরি অবস্থা। যাই হোক, মুসলমানরা যদি নিজেদের ভালোর কথা চিন্তা করার মত সভ্য হত তাহলে তারা এভাবে কুরবানী দেয়া নিজেরাই বন্ধ করে দিতো। তাদের বাপের দেশ সৌদি আরবে কেউ প্রকাশ্যে কুরবানী দিতে দেখেছে? হজ করতে যাওয়া হাজিদের জিজ্ঞেস করে দেখুক, কোথাও বাংলাদেশের মত কুরবানী দেয়া হয়? তাছাড়া হজ করতে যাওয়া হাজিরা কুরবানী দিবে- এমন রেওয়াজই ছিলো আরবে। হজ করতে যাওয়া হাজি ছাড়া বাকীরা কুরবানী না দিলে কি হবে- তেমন কোন মাসালা প্রতিষ্ঠিত নয় ইসলামে। এই প্রশ্নটা জোরেশোরে উঠানো উচিত। কারণ হজের আনুষ্ঠানিকতার নিয়মই ছিলো পরদিন কুরবানী করা। যারা হজ করতে মক্কায় যেতো না তারা কেউ কুরবানী দিতো না।

একদিনে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি পশুবধের অনুষ্ঠানের নাম কুরবানী। বিশ্বের পশু অধিকার সংগঠন ও অন্যান্য সোসাইটির উচিত এই বৃহৎ বর্বর ধর্মীয় হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে জোরেশোরে আওয়াজ তোলা। আদালতে মামলা করা যাতে নিরহ পশুগুলোর প্রতি কথিত আল্লাহর সন্তুষ্ঠুর অজুহাতে বলী দেয়া না হয়। কুতর্ক করতে আসা লোকজন এখন বলবেন, সারা বছর যে পশুগুলোকে জবাই করে বাড়িতে হোটেলে রান্না করা হয় সেটা বর্বরতা নয়? যারা মাংস খাওয়ার জন্য কসাই খানায় পশু হত্যা করে বাজারজাত করাকে কোন ধর্মীয় বিশ্বাসে বিপুল সংখ্যায় মানুষের পশুহত্যায় মেতে উঠার মধ্যে বিপদ নিষ্ঠুরতা মানবিকতাহীনতার তফাত দেখতে পান না তাদের এরকম যুক্তি নির্থক কুযুক্তি মাত্র। মুসলিমদের বৃহৎ এই বর্বর পশুহত্যা বন্ধ করতে সাহসের সঙ্গে সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে…।