ইতিহাসের দানব”

“ইতিহাসের দানব”
ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ

ভুমিকা

কবে এই পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাব হয়ে ছিলো সেটা স্থির করার দ্বায়িত্ব যারা ইতিহাস ভালোবাসেন তাদের কাজ নয়। ইতিহাস প্রেমিকদের কাজ মানুষ যবে থেকে গুহা ছেড়ে প্রকৃতির বুকে চোখ মেলে তাকালো, আস্তে আস্তে নুইয়ে পড়া ন্যুব্জ শরীর টাকে সোজা করে দাঁড়িয়ে চলতে শুরু করলো। তারা দেখা পেলো পথ চলতি আরো একই ধরনের প্রাকৃতিক প্রানী যাদের কোনো বোধগম্য ভাষা ছিলো না। অন্য প্রানীদের মতোই কিচির মিচির করে কি সব বলতো। চেহারায় সাদৃশ্য থাকায় বুঝলো ওরা আমার ই মতো। ধীরে ধীরে সখ্যতা হলো,হয়তো বা এক সংগে মিলে মিশে দু পা হাটলো, বিশ্রাম নিলো, পশু শিকার করে কাচা খেলো। ওদের কেউ একজন হঠাৎ আগুন আবিষ্কার করে ফেললো। আগুন দেখে প্রথমে ভীতি হলো।পরে দেখলো ওদের আর ঠান্ডা লাগছে না। তার পর বুঝলো ওই আগুনে মাংস গুলো একটু ঝলসে নিলে খেতে ভালো লাগে।

উদর পুর্তির ব্যাবস্থার পর পরই এসে দাড়ালো আদিম প্রবৃত্তির অমোধ পীড়ন-যৌন নিবৃত্তি। সেই সঙ্গে চিন্তা এসে দাড়ালো এতো লোকে এক সংগে চললে শিকার পাওয়া যাবে কোথায়?? উদর পুর্তি হবে কি করে ? শুরু হলো ‘গোষ্টি তন্ত্র’। পাশাপাশি গুহা থেকে বেরিয়ে আসা এবং একই রকম’কিচির মিচির ভাষা” বলা লোক গুলো ভাগ হয়ে গেলো এক এক দলে। যার মাথায় একটু বুদ্ধি বেশী আছে তাকে “গোষ্টী প্রধান’ করে শুরু হলো অন্য গোষ্টির সংগে প্রতিযোগিতা। অঞ্চল দখলের প্রতিযোগিতার সংগে সঙ্গী দখলের প্রতিযোগীতা। এই দুই প্রতিযোগীতা ধীরে ধীরে পরিনত হলো মানব গোষ্টি গুলোর মধ্যে এক তীব্র রেষারেষি মুলক অমানুষের খেলা ।সেই খেলার নাম যুদ্ধ। মানুষের সেই আদিম  খেলা আজো সমানে চলছে সারা পৃথীবী জুড়ে।

অঞ্চল কে বলা হলো রাজ্য—নিজ নিজ রাজ্য। যুদ্ধ বাজদের মধ্যে যে সব চেয়ে বুদ্ধিমান এবং শারীরিক ক্ষমতায় তুলনা মুলক ভাবে গোষ্টির অন্যদের থেকে একটু এগিয়ে রইলো তিনি হলেন “রাজা” বাকি রা অর্থ্যাত তার সমর্থক রা হোলো তার প্রজা। প্রজারা তাদের জান মাল রক্ষার দ্বায়িত্ব দিলো রাজাকে। সেই কাজের জন্য তাকে দেওয়া হতো নজরানা। এই নজরানার নাম ‘কর’।

কালে কালে এক এক রাজ্যে এলেন নানা বুদ্ধিমানের দল। তারা নানা ভালোকথা বলতে শুরু করলেন। মানূষের মনের গহনে যে ‘পাপ বোধ’ কাজ করে তাদের প্রতিদিনের গর্হিত কাজ করার জন্য, সেই পাপ বোধকে কাজে লাগিয়ে এবং মানুষের মনের মধ্যে, অন্তরের মধ্যে “আরো পাবার’ যে লোভ কাজ করে, সেই লোভকে ভাঙ্গিয়ে, সর্বশক্তিমানের কোপের দোহাই দিয়ে নানা ধার্মিক তত্ব তৈরী করে ফেললো। সেই ধর্মের বেড়াজালে পড়ে অগুনতি মানুষ ধোকা খেলো, ফুলে ফেপে উঠলো ধর্ম গুরুদের খাজানা আর তাদের লালষার পুর্তির ব্যাবস্থা হলো। মানুষকে মানুষের কথা বলা হলো না। বলা হলো শুধু নিজেদের কথা, নিজের মতো করে। যারা সাধারন মানুষের কথা, তাদের শুভবুদ্ধির উদয়ের কথা বলেছেন এবং মানূষকে মানুষের কথা বলে গেলেন তারা হয়ে গেলেন ব্রাত্য। তাদের কথা ধীরে ধীরে চলে গেলো অবলুপ্তির গভীর খাদে। সেই থেকে মানুষ আর মানুষ রইলো না। রাজারা, ধর্ম গুরুরা এক একজন হলেন এক একটি দানব।

সেই এক একজন দানবের কাহিনী। যা লিপিবদ্ধ করা আছে ইতিহাসের পাতায়, সেই সত্য ইতিহাস ঘাটা ঘাটি করে সকলের জন্য তৈরী করেছি “ইতিহাসের দানব” দের কাহিনী। (আমার লেখার সোর্স জিজ্ঞাষা করলে বলা মুশকিল হবে। নানা লেখা পড়ে যা পেয়েছি তাই তুলে ধরছি। কারো পছন্দ না হলে বা দ্বীমত থাকলে আমার এই লেখা পড়ার দরকার নেই বা মতান্তর সৃষ্টি করার দরকার নেই।)