ঘটনা হচ্ছে ভারতে বর্তমানে ‘হিন্দুত্ববাদীরা’ ক্ষমতায় আছে। অপরদিকে পাকিস্তান বাংলাদেশ যারা তাদের সংবিধানকে যথাক্রমে শরীয়া আইন ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বসিয়ে দেশের মুসলিম ব্যাতিত বাকীদের তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করেছে- তাদের পরিচয়টা কি হবে? বিবিসি আসামের শওকত আলীকে নিয়ে প্রতিবেদন করেছে যাকে কিছুদিন আগে গরুর মাংস বেচার অপরাধে মারধরসহকারে জোর করে শুকরের মাংস খাওয়ানো হয়েছিলো। যদিও নন্দিুকরা বলে লোকটি খাসির মাংস বলে গরুর মাংস খাওয়াতো তাই তার উপর চড়াও হয়েছিলো উত্তেজিত জনতা। আমি নিন্দুকদের কথাকে পাত্তা দিচ্ছি না। ধরে নিচ্ছি কেবলমাত্র গরুর মাংস বিক্রির অপরাধে লোকটিকে মারধোর ও শুকরের মাংস খাওয়ানো হয়েছিলো। বিবিসির কাছে শওকত আলী শুকরের মাংস খাওয়ানোর বিষয়ে বলেন, ‘এটি আমার বিশ্বাসের উপর আঘাত’।
আপনাদের কি মনে আছে বাংলাদেশের দিনাজপুরে বিরল কলেজের শিক্ষিকার হিন্দু ছাত্রীদের কৌশলে গরুর মাংস খাইয়ে দেয়া বা পঞ্চগড়ের আওয়ামী লীগ নেতা হিন্দুদের গরুর মাংস খাওয়ানোর ঘটনাটি? মনে আছে সরকারী একটি ব্যাংকের ক্যালেন্ডারে মন্দিরের ছবি থাকায় তীব্র আপত্তির কারণে সেটি বাতিল করা হয়েছিলো? রমজান মাসের ভাবগাম্ভির্যের কারণে দূর্গাপুজার ঢাকঢোলকে তারাবির নামাজের পর বাজানোর সরকারি নির্দেশ কি কারোর মনে আছে? শত্রু সম্পত্তি আইন হবার পর পূর্ব পাকিস্তান-বাংলাদেশে ২৬ লাখ একর জমি দখল হয়েছে মুসলমানদের হাতে। এই ২৬ একর জমির মধ্যে ৮২ শতাংশই কৃষি জমি, ২৯ শতাংশ বসতভিটা, ৪ শতাংশ বাগান, ৩ শতাংশ পতিত, ১ শতাংশ পুকুর ও ১৯ শতাংশ অন্যান্য জমি বেদখল হয়েছে। মুসলমান ও বাঙালী না হওয়ার কারণে আদিবাসী পাহাড়ীদের জমি দখল করে সেটেলাদের জোরপূর্বক সরকারী আশ্রয়দান প্রকল্র যারা করেছিলো তারা কেউ মোদীর হিন্দুত্ববাদীদের মত বিশ্ব মিডিয়ায় সাম্প্রদায়িকভাবে পরিচিত হয়নি। ভারতের গরুর মাংস খেয়ে গরুর মাংসের প্রতি হিন্দুত্বাদীদের বিদ্বেষের প্রতিবাদ করেছে প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীরা। পক্ষান্তরে বাংলাদেশের দুইজন বুদ্ধিজীবী হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতন নিয়ে বিদেশের কাছে মুখ খোলাকে তাদের দেশপ্রেমহীনতা হিসেবে বাকী বুদ্ধিজীবীরা প্রচার করেছিলো। পাকিস্তানের হিন্দুদের সম্পত্তি দখলের এক অভিনব পদ্ধতি বের করা হয়েছে। হিন্দু মেয়েদের তুলে নিয়ে বিয়ে করে মেয়ের বাপের সম্পত্তি দাবী করে দখল করা হয়। কাস্মিরের কঠুয়া অঞ্চলের একটি মুসলিম বালিকাকে মন্দিরে বন্দি করে গণধর্ষণের ঘটনায় সারা ভারত তোলপাড় হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু পূর্ণিমা শীলের মত যত হিন্দু নারী বাংলাদেশে পলিট্রিক্যাল কারণে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলো তাদের কোন বিচার বাংলাদেশ সরকার করেনি। বিবিসি কি এরকম ঘটনা নিয়ে কোন রিপোর্ট করেছিলো? বাংলাদেশের চরম সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি নিয়ে তসলিমা নাসরিনের ‘লজ্জ্বা’ উপন্যাসের কারণে লেখিকাকে দেশ ছাড়তে হয়েছিলো। তার বইটি ব্যান করা হয়। দেশের বুদ্ধিজীবীরা বইটিকে অতিরঞ্জিত দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার অভিযোগ তুলেছিলেন। কারণ বইটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের হিন্দুদের প্রতি সাম্প্রদায়িক আগ্রাসনকে দেখানো হয়েছিলো।
গোটা উপমহাদেশে পাকিস্তান বাংলাদেশের সৃষ্টিলগ্ন থেকেই তাদের সাম্প্রদায়িক আচরণ, সংখ্যালঘুদের ভীত হবার মত সরকারী পদক্ষেপ নেয়ার শত শত ইতিহাস থাকার পরও কখনই বলা হয়নি, এসব দেশের ‘মুসলিমত্ববাদীদের’ কারণে সংখ্যালঘুরা বিপন্ন। আমি কখনই এখানে একটি অন্যায়কে দিয়ে আরেকটি অন্যায়কে সাফাই গাইতে আসিনি। আমি কেবল ন্যায় বিচারটি চাইছি। ভারতে এখন হিন্দু মৌলবাদীরা ক্ষমতায়, পাকিস্তান বাংলাদেশের সরকারগুলোকে সেরকম ভাবেই চিহ্নিত করা হোক। যদি একজন শওকত আলীকে গরুর মাংস বিক্রির অপরাধে পেটানো হয় তাহলে গোটা স্কুলের হিন্দু ছাত্র-ছাত্রীদের খাসি বলে গরুর মাংস খায়ানোটা কি তাদের ‘বিশ্বাসের উপর আঘাত’ নয়? স্কুল কর্তৃপক্ষ যখন এই ঘটনার পর বলেছিলো, একদিন গরুর মাংস খেলে কিছু হয় না।… না খেলে পিকনিকে আসলি কেন?… এরকম ঘটনা নিয়ে বিবিসি বিশ্লেষণমূলক নিউজ করবে না তাহলে বাংলাদেশে তাদের বাজার নষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু ভারতে এখনো সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ধর্মকে দূরে রেখে মানুষের মানবিক পরিচয়কে বড় করে দেখার পক্ষে- তাই বিবিসি এরকম ফিচার তৈরি করে। তারা জানে এতে তাদের বাজার নষ্ট হবে না। বাংলাদেশ পাকিস্তানের জন্মের পর থেকেই সব সরকারই মোদী সরকার। নরেন্দ মোদীকে কি একটু বেশি দায় নিতে হচ্ছে না? পাকিস্তান বাংলাদেশের সরকার প্রধানদের মধ্যে দুই-তিন জনের নাম আলাদা করে নেয়া যাবে যাদের তুলনায় মোদী নেহাত শিশু মাত্র! তাদের সাম্প্রদায়িক মনোভাবে বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে হিন্দুরা জান নিয়ে পালিয়েছিল……….