সস্তা জনপ্রিয়তা পাওয়ার সেরা উপায়।
জয়া চ্যাটার্জি, শর্মিলা বসু আর অরুন্ধতী রায়- এই তিনজন ভারতীয় লেখক বুদ্ধিজীবী বাংলাদেশে হিন্দি সিনেমা ও টিভি সিরিয়ালের মতই জনপ্রিয়।
বাংলাদেশের মানুষ ভারত বিরোধী কিন্তু ভারতীয় সিনেমা টিভির ভক্ত এটা সবাই জানে। ঠিক তেমন করেই এই তিনজন লেখক বুদ্ধিজীবী এন্টিইন্ডিয়ান বাংলাদেশীদের কাছে জনপ্রিয়।
শিবিরের সদস্য রিকুটমেন্টে তাদের পাঠ্য তালিকায় জয়া চ্যাটার্জি ও শর্মিলা বসুর বই বাধ্যতামূলক।
আহমদ ছফা থেকে সলিমুল্লাহ খান, এই বলয় দেশভাগের জন্য হিন্দুদের দায়ী করে, দ্বিজাতি তত্ত্বকে লঘু করে সমস্ত দোষ হিন্দুদের উপর চাপানোর রেফারেন্স স্রেফ জয়া চ্যাটার্জি! ছফা এই রেফারেন্স দিয়েছে যেন জয়ার লেখা বাইবেল! এরপর আর কোন কথা চলে না।
সলিমুল্লাহ খান বা ছাত্র শিবিরের কোন বুদ্ধিজীবী, আসিফ নজরুল কিংবা ফারুক ওয়াসিফ- সকলের দেশভাগ প্রশ্নে হিন্দুদের দায়ী করার জন্য জয়া চ্যাটার্জি ছাড়া গতি নেই। মজাটা হচ্ছে এই এরাই ‘অখন্ড ভারত’ বিতর্কে দাবী করেন, ভারতীয় বলতে কোন জাতি নেই, অখন্ড ভারত আসলে অনেকগুলো স্বাধীন জাতি দেশকে জোর করে বেধে রাখা। হিন্দুত্ববাদীরা এই অখন্ড ভারত চেয়েছিলো ৪৭ সালের আগে থেকে। সেই চক্রান্ত থেকে পূর্ববঙ্গ যুদ্ধ করে বেরিয়ে এসেছিলো…। ডয়েচ ভেলেতে এই কিছুদিন আগে সলিমুল্লাহ খান এমন দাবী করেছিলো। এর মানে হচ্ছে, একবার বলছে দেশভাগের জন্য হিন্দুত্ব্ববাদীরা দায়ী, আবার বলছে অখন্ড ভারত করার ষড়যন্ত্রের জন্যও হিন্দুত্ববাদীরা দায়ী! কেন এমনটা হচ্ছে?
কারণটা হচ্ছে বাংলাদেশী যারা এমন স্ববিরোধীতায় আক্রান্ত তারা যেমন অসৎ, তেমনি এই তিনজন ভারতীয় লেখক বুদ্ধিজীবীও অসৎ। তারা যদি সৎ হতেন তাহলে তাদের লেখা ইতিহাস এমন করে স্ববিরোধীতার কাজে লাগানো যেতো না। তারা তাদের সততা ও নির্মোহতা রক্ষা করতে পারেনি। যাদেরকে তারা পছন্দ করেন না তাদের পক্ষে সত্য বলতে তারা দ্বিধা করেছেন। জয়া চ্যাটার্জির দেশভাগ নিয়ে লেখা অন্তত কোন বাংলাদেশীর কাছে সত্য মনে হবে না যদি সে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা হবার ১৫-২০ বছরের মধ্যে লেখা আমাদের লেখক বুদ্ধিজীবীদের বই পড়ে থাকেন। সেসব বইতে কেন ও কি কারণে, কারা পাকিস্তান গঠন করেছিলো তার জবানবন্দি রয়েছে সেইসব বইতে গর্বিত দম্ভিত কন্ঠস্বরে। কিন্তু যেহেতু ইতিহাসের একটা প্রশ্ন উত্থাপন পর্ব থাকেই, কারা মূলত দেশভাগ কিংবা বাংলা ভাগ করেছিলো, যেহেতু জানে ধর্মীয় পরিচয়ে পাকিস্তান গঠন হয়েছিলো তাই মুসলমানদের সাম্প্রদায়িক পরিচয় ঢাকতে জয়া চ্যাটার্জি ছাড়া গতি নেই। কিন্তু জয়া চ্যাটার্জি বাংলাদেশীদের কথা ভেবে এসব লিখেন নাই। তিনি হিন্দুত্ববাদীদের বিরোধী। অবশ্যই তাদের দায় বা ভূমিকা ছিলো দেশভাগের জন্য। কিন্তু জয়া তার বিরোধীদের প্রতি ক্ষোভ থেকে হোক বা অন্য কিছু থেকে- তিনি নির্মোহ থাকতে পারেননি। একতরফা হিন্দুদের দায়ী করে লেখা ইতিহাস তাই একতরফা হিন্দুদের দায়ী করতে উন্মুখ হয়ে বসে ছিলো যারা তাদের সুবিধা করেছিলো। আবার ‘অখন্ড ভারত’ বিতর্কে জয়া চ্যাটার্জি যে মিথ্যা হয়ে যাচ্ছে সে খেয়াল নেই। একইভাবে শর্মিলা বসু ভারতের প্রতি তার ক্ষোভ থেকেই বাংলাদেশে পাকিস্তানের অপরাধ আড়াল করে ভারতকে ভিলেন বা পাকিস্তান ভাঙ্গার জন্য দায়ী করেছে। সেটা শিবির লুফে নিয়েছে তাদের অপরাধ আড়াল করতে। তাই বলে শিবিরের টাকা খেয়ে শর্মিলা বসু বই লিখেছে এমন দাবী ছেলেমানুষি। অরুন্ধতি একজন কাল্ট কমিউনিস্ট। সেই স্পেস থেকেই তিনি কথা বলেন। যে কারণে তিনি বুর্জোয়া ভারতকে ভেঙ্গে খান খান করে দিতে চান। তিনি যেমন মাওবাদীদের সঙ্গে গোপন স্থানে গিয়ে সাক্ষাৎ করার কথা স্বীকার করেছেন, আমি অবাক হবো না যদি কখনো শুনি তিনি গোপনে আইএসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এসেছিলেন…।
এই তিনজনই কিন্তু আবার নিজেদের অবস্থান, তাদের প্রকাশিত বই দিয়েই ভারত যে শক্তিশালী গণতন্ত্র, সহিষ্ণুতার উদাহরণ তার প্রমাণ করেছে। কারণ এই তিনজন ভারতে আসতে থাকতে কোন বাধা নেই। তাদের বই ভারতে নিষিদ্ধ নয়। ভারতে বসেই তারা তাদের বইয়ের প্রচার করতে পারেন। এমনটা কিন্তু বাংলাদেশ পাকিস্তানে সম্ভব হবে না। এই প্রশ্নটা বাংলাদেশের লেখক আনিসুল হক অরুন্ধতিকে করেছিলেন, অরুন্ধতি সরাসরি কথাটার আর জবাব দেননি…। ঐ যে বললাম, সততা নেই…।