সৌদির দীর্ঘ একাত্তর বছর পর ইজারায়েলের জন্য airspace উন্মুক্ত।

তেল থেকে তাল / দেবাশিস লাহা

এয়ার ইণ্ডিয়ার ফ্লাইট যাতে দ্রুত তেল আভিভ পৌঁছতে পারে, সেই উদ্দেশ্যে সৌদি আরব ইতিমধ্যেই তার আকাশপথ উন্মুক্ত করে দিয়েছে। এতে যাত্রী ভাড়াও বেশ কিছুটা হ্রাস পাবে। আন্তর্জাতিক প্রক্ষাপটে এটি যে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ সেবিষয়ে সন্দেহ নেই। বিশেষ করে যারা ইসলামিক বিশ্ব তথা আন্তর্জাতিক রাজনীতির কিঞ্চিৎ খোঁজখবর রাখেন। দীর্ঘ একাত্তর বছর পর ইজারায়েলের জন্য airspace উন্মুক্ত করা! তাও আবার অন্য কোনো দেশ নয়, সৌদি আরব!  যাকে এতদিন ইসলামিক জনতা নেতা এবং নয়নের মণি ভাবতেই অভ্যস্ত ছিল!  অনুসন্ধানী পাঠক মাত্রেই জানেন একজন মুসলমানের চোখে ( বিশেষ করে কট্টরপন্থী)  ইজরায়েল তথা ইহুদিদের স্থান ঠিক কি রকম!  পবিত্র ইসলামিক ধর্মগ্রন্থে অন্য বিধর্মীদের নাম স্পষ্ট উল্লেখ না থাকলেও চরম শত্রু হিসেবে ইহুদিদের কথা বার বার বলা হয়েছে। এই কারণেই মুসলিম বিশ্বের উল্লেখযোগ্য অংশ ইজরায়েল নামক রাষ্ট্রটির সঙ্গে কোনো কূটনীতিক সম্পর্ক স্থাপন তো করেইনি, বরং দিবারাত্র এই রাষ্ট্রটির ধ্বংস কামনা করে। ইরান নামক ইসলামিক দেশটি তো প্রকাশ্যেই ইজরায়েলকে নিশ্চিহ্ন করার কথা বলে আসছে। সৌদি আরবের অবস্থানও এব্যাপারে প্রায় একইরকম ছিল। কিন্তু কী এমন ঘটল যে সৌদি আরব চিরশত্রু ইজরায়েলকে আকাশপথ খুলে দিল যাতে ভারতের মাটিতে উড়ান আরও মসৃণ হয়? একটু ভাবলেই এর অপরিসীম গুরুত্ব অনুধাবন করা সম্ভব। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরেই প্যালেস্টাইনে ইজরায়েলি অত্যাচার নিয়ে সৌদি আরব নীরব হয়েছে। যা একান্তই অস্বাভাবিক, অন্ততঃ কট্টরপন্থী মুসলমানেরা এটিকে ভাল ভাবে নেয়নি। শুধু তাই নয়, ইয়েমেনে সৌদি হামলা থেকে শুরু করে মধ্য এশিয়ার একাধিক ইস্যুতে সৌদি শাসককুলের ভূমিকা কট্টরপন্থীদের উষ্মার কারণ। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে আধুনিকীকরণের উত্তাপ। সাম্প্রতিককালে সেদেশে যে পদক্ষেপগুলি নেওয়া হয়েছে, হচ্ছে যেমন নারী স্বাধীনতার অনুমোদন, বিশেষ বিশেষ প্রমোদ উদ্যানে নারীদের বিকিনি পরিধানের অনুমতি ইত্যাদিকে কট্টরপন্থীরা হারাম বলে অভিহিত করছেন। তাঁরা মনে করছেন ইসলামের সূতিকাগার সৌদি আরব কর্তব্য থেকে বিচ্যুত হচ্ছে। কিন্তু কেন এই পদক্ষেপ? একটি কারণ অবশ্যই ইরান নামক শিয়া দেশটির ক্রমবর্ধমান প্রভাব।  মধ্য এশিয়ার একটি সামরিক এবং অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে শুধু নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এমনকি মুসলিম বিশ্বে ইরানের কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং উপস্থিতি প্রশংসার দাবি রাখে। আরব বিশ্বের সিরিয়া, লেবানন, ইরাক এবং কুয়েতের সঙ্গে তার সম্পর্ক যেমন ভাল, তেমনই রাশিয়ার সঙ্গে সামরিক এবং স্ট্রাটেজিক এলায়েন্স! সিরিয়া, ইরাক সংকটে রাশিয়া তার পাশেই ছিল  যা সৌদি আরবের শিরঃপীড়ার কারণ। এছাড়াও চীন ইরানের সবচেয়ে বড় তেলের খরিদ্দার।  দরকারে তাকেও পাশে পাওয়া যেতে পারে। লেবাননের কথা ছেড়েই দিলাম। হেজবুল্লা নামক জিহাদি সংগঠনটির মূল পৃষ্ঠপোষক ইরান। তুর্কীর সঙ্গেও সম্পর্ক মন্দ নয়। ইয়েমেনের বিদ্রোহীরাও ইরানের সঙ্গে। আবার ভারতের সঙ্গেও ইদানীং বেশ ইয়ে ইয়ে ভাব। কৃতিত্ব অবশ্যই এদেশের তুখোড়  প্রধানমন্ত্রীর, তাঁর “কুখ্যাত, ব্যয়বহুল ” বিদেশ সফরের অন্যতম ফলশ্রতি।  সৌদির পাশে জর্ডন, আরব আমিরশাহি ছাড়া মধ্য এশিয়ার কোনো দেশ সেভাবে নেই। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কোনঠাসা সৌদি যে প্রভাবশালী  ভারতের good books এ প্রবেশ করতে চাইছে, আহাম্মকেও বুঝবে। তাতে যদি ইজরায়েল নামক তেতো বড়িটি গিলতে হয়, উপায় কি!  অসুখ বিসুখ হলে এমন কত তেতো ওষুধ খেতে হয় বলুন তো! নরেন্দ্র মোদি নামক ব্যক্তিত্বটি আন্তর্জাতিক  দামোদর হয়ে উঠলে এমন অনেক কিছুই ঘটে!  তা কিসের অসুখ!  ওই যে কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতা, এবং তার সঙ্গে অবশ্যই  তেলের দাদাগিরির সংকট, ফসিল ফুয়েলের বিকল্পের আবহে যা আরও ভয়ংকর আকার নিতে পারে। কারণ সৌদি জি ডি পি-র নব্বই ভাগই তেল নির্ভর আর বাকি ১০% হজ থেকে উপার্জন।  বুঝুন কাণ্ড!  সে বেচারা এখন যাবে কোথায়!  ধম্মগ্রন্থ মাথায় থাক বাপু। আগে নিজে তো বাঁচি!  শেষে বাঘ সিংহ ছেড়ে নেড়িকুত্তা পুষতে না হয়!  সোনার কোমোড ভোগে গেলে সেরামিকে হাগু!  বাপরে!  সে হাভাতে মুমিনেরা করে !  আমরা হলাম খানদানি সৌদ রাজবংশ! 

তবে কী দাঁড়াল?  কট্টরপন্থী মুসলিম দুনিয়ায় সৌদির গুরুত্ব ক্রমে পড়তির দিকে গেলে কে তার জায়গা নেবে?  কেন পাকিস্তান!  কান পাতলেই সেই মুমিনীয় কোরাস শুনতে পাবেন। সৌদি নয়,এখন পাকিস্তানই দার উল ইসলামের স্বপ্নসম্ভবের ঘোড়া!  লড়াইয়ের ময়দানটিও রাতারাতি বদলে গেছে। প্যালেস্টাইন নয়, কাশ্মীর!  মুমিন স্বর্গ পাকিস্তানকে নেতা বানিয়েই এখন ইসলাম বিশ্ব বিজয় তথা গাজওয়াতুল হিন্দের খোয়াব দেখছে!  মূল কারণ অবশ্যই তিনটি। ১) পাকিস্তানই একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর ইসলামিক রাষ্ট্র ২) এই উপমহাদেশেই বিশ্বের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলমানের বাস, যাদের সম্মিলিত সংখ্যা ( ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান সহ) প্রায় ষাট থেকে সত্তর কোটি। বিশের কোনো অংশেই পরস্পর সন্নিহিত এত সংখ্যক মুসলমানের বসবাস নেই।

কিন্তু টমেটো সমস্যায় জেরবার এক নিধিরাম সর্দার,  ভিখারি হিসেবে গুগুলও যাকে মান্যতা দিয়েছে, এই গুরুদায়িত্ব কিভাবে  সামলাবে? প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক বিশ্বে সংখ্যা কখনও যুদ্ধ বিজয়ের শর্ত হতে পারেনা। আর পরমাণু বোমার ব্যবহারেও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পূর্বশর্তটি জরুরি।  কিন্তু এই বাস্তবতা কি কট্টরপন্থী মুমিনকুল বোঝে?  অবশ্যই নয়। নইলে সেফটিপিন সম্বল করে তিমি শিকারের বাসনা জাগত কী?  ২০৭৮ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে পাকিস্তানের নেতৃত্বে দার উল ইসলামের স্বপ্ন দেখা মুমিন ঠিক কত ছটাক মগজের অধিকারী, আপনারাই বুঝে নিন। 

কিন্তু তেলবাজ নেতা ( পড়ুন সৌদি) থেকে তালপাতার সেপাই ( পড়ুন পাকিস্তান) — দার উল ইসলাম নেতৃত্বের  এই করুণ  বিবর্তনে মূল ভূমিকাটি কার? 

তাও বলে দিতে হবে? ভাবুন, ভাবা প্র‍্যাকটিস করুন।

Scroll to Top