কী খবর ভোলা? মুখটা বাংলা পাঁচের মত করে রেখেছিস কেন?
মন মেজাজ খারাপ স্যার। মনে হচ্ছে রক্তগঙ্গা বইয়ে দিই! পুচকি ল্যাঙ মারার পরেও এমন মাথা গরম হয়নি৷
বলিস কী! ব্যাপার তবে গুরুতর মনে হচ্ছে! একটু খুলে বল তো বাবা ভোলা!
আর কী বলব স্যার! নিজেই তো দেখছেন, শুনছেন! এমন অকথ্য গালিগালাজ! কদর্য মন্তব্য! সমালোচনা হতেই পারে, তাই বলে খুনের হুমকি! অপছন্দ হতেই পারে, তাই বলে এসব! হাজার হলেও দেশের প্রধানমন্ত্রী! জনগণের দ্বারা নির্বাচিত। মানুষই তো ভোট দিয়েছে। দেশের জনপ্রিয়তম নেতা!
এই যে আবার ভুল বকা শুরু করেছিস! তুই কি আবার ভর সন্ধেতেই হোমিওপ্যাথি করা শুরু করলি বাবা! নাকি গাঁজা টেনেছিস?
কেন স্যার? ভুল তো বলিনি।
ভুল বলিস নি মানে! পুরোটাই তো জল! দুধ আর কতটুকু! জনগণের দ্বারা নির্বাচিত! জনপ্রিয়তম প্রধানমন্ত্রী! হা হা হা! মগজে গোবর ঢুকলে কি এমন পরিণতিই হয়? জনগণ! আরে বাবা প্রথমে ভোটারের সংখ্যা ভাব। তারপর ভাবতে হবে তাদের মধ্যে কতজন ভোট দিতে হাজির হয়েছিল। তারপর আবার ভাবতে হবে তাদের মধ্যে কতজন মুক্তমনে কারও চাপ, প্রভাবের পরোয়া না করে নিজেই নিজের ভোটটা দিতে পেরেছিল। এমন ভোটাররাই তো সত্যিকারের নাগরিক। তাঁরা ভোট কেন্দ্রে গেলেন। প্রথমেই সি পি এমকে ভোট দিলেন। তারপর কেউ কংগ্রেসকে দিলেন৷ এরপর কেউ আর জে ডি , কেউ আর এস পি, কেউ এস ইউ সি, কেউ জে ডি এস, কেউ শিবসেনা, কেউ এস পি, কেউ বি এস পি, কেউ এইমা, কেউ টি আর এস কে ভোট দিলেন।
মানে? বিজেপিকে কেউ ভোট দেয়নি?
দিয়েছে তো! অন্য সব দলকে দেওয়ার পর দিয়েছে। শতকরা মাত্র ৩৭ জন! অর্থাৎ ৩৭% ভোট পেয়ে এত হম্বিতম্বি! তুই-ই বল এটা জানার পর কীভাবে বলি উনি দেশের প্রধানমন্ত্রী। জনপ্রিয়তম ব্যক্তি! ভাবলেই হাসি পায়! এসব কথা ভেবে চিন্তে বলতে হয়, বুঝলি! দেশটা অনেক বড়!
সত্যিই তো! এভাবে তো ভাবিনি স্যার। আপনি কত জানেন! এবার বুঝতে পারলাম, বুঁচকি কেন মাঝেমধ্যেই আপনার প্রেমে পড়ে!
বুঁচকি আমার প্রেমে পড়ে! তাই নাকি! শুনেই কেমন একটু ইয়ে ইয়ে লাগল। বুকের ভেতর কুলুকুলু! এত বড় খবরটা ভোলা এতদিন চেপে রেখেছিল! স্বাভাবিক। নিজের বউয়ের পরকীয়া বলে কথা! যাক, ভোলাকে তবে কাত করা গেছে। এবার সরে পড়া যাক। হাতে অনেক কাজ।
এই যে স্যার। একটু দাঁড়িয়ে যান। কাল যে আপনিও একটা ছাড়লেন! সেটার কী হবে!
মানে? আমি আবার কী বললাম!
ওই যে আপনার কোন কমরেড দাদার কমরেড ছেলে নাকি দেশ সেরা হয়েছে। কী গর্ব! চাড্ডি বলে ঠেঁস দিতেও ভোলেন নি!
আলবাত হয়েছে। All India competition বুঝিস! সর্বভারতীয় পরীক্ষা! সেখানেই প্রথম হয়েছে। লক্ষ লক্ষ প্রতিযোগীদের পেছনে ফেলে দিয়েছে। দেশের সেরা তো বটেই৷
তাই নাকি স্যার! দেশের সেরা! ব্যাপারটা একটু ইয়ে হয়ে গেলনা! যে দেশে এত দারিদ্র্য অপুষ্টি!
মানে এসব কী বলছিস ভোলা! অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তা!
একদমই প্রাসঙ্গিক স্যার। আপনিই বলুন এদেশের কত শিশু জন্মানোর কয়েকদিনের মধ্যেই মারা যায়! Infant mortality rate বলে একটা হিসেব আছে। নিশ্চয় জানেন স্যার। এইসব শিশুর মধ্যে যারা সাবালক, যাদের উচ্চশিক্ষা নেওয়ার মত ক্ষমতা হল, যাদের পেটে পুষ্টিকর খাবার পড়ল, ডজন ডজন সর্বভারতীয় পরীক্ষার মধ্যে ওই বিশেষ পরীক্ষাটির জন্য যারা ফর্ম ফিল আপ করল, তাদের মধ্যে যত সংখ্যক যানজট, অসুখ বিসুখ ইত্যাদি কাটিয়ে পরীক্ষার হল অবধি পৌঁছতে পারল, তাদের মধ্যে যারা আগের রাতে প্রেমিক প্রেমিকার ল্যাঙ খায়নি অথবা খেলেও ঠিকঠাক পরীক্ষা দিয়েছে, তাদের মধ্যে যারা পরীক্ষার হলে খুজলিতে আক্রান্ত হয়নি, হলেও চুলকানোর জন্য সময় বরাদ্দ করেও প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছে, বা চেষ্টা করেছে, তাদের মধ্যে যাদের উত্তপত্রের সঠিক মূল্যায়ন হয়েছে, তাদের মধ্যে ফার্স্ট হয়েছে! ঠিক বললাম তো স্যার! দেশের সেরা! হা হা হা! দেশটা অনেক বড় স্যার! এসব ভাব চক্কর নেওয়ার সময় আপনিও একটু খেয়াল রাখবেন, কেমন!