লিখেছেনঃ জয় বন্দোপাধ্যায়
ধর্মনিরপেক্ষতার মেকি বুলি আমাদের কোন রকমনিরাপত্তা দিতে সেদিনও পারেনি আর আজও পারছেন।
মহাভারতের শল্য পর্ব- কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের আঠারোতমতথা শেষ দিন। দুর্যোধন যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়েসরোবরের নিচে লুকিয়ে আছে। তাকে খুঁজতে খুঁজতেশ্রীকৃষ্ণ ও ধৃষ্টদুম্ন্য সহ পঞ্চপাণ্ডব সেখানে উপস্থিত হয়এবং ভীম দুর্যোধন কে গদাযুদ্ধের আহবান জানায়। এমনসময় শ্রীকৃষ্ণ-র দাদা বলরাম তাঁর তীর্থযাত্রা সেরেসেখানে এসে পৌঁছান। ঘটনাচক্রে ভীম এবং দুর্যোধনদুজনই তাঁর গদাযুদ্ধের শিষ্য ছিল সুতরাং তাঁকে যুদ্ধেরবিচারক হিসেবে মেনে নিতে কেউই আপত্তি করলনা।
অতঃপর গদাযুদ্ধ শুরু হল। বেশ কিছুক্ষণ সমানে সমানেলড়াই চলার পর যুদ্ধের গতি ধীরে ধীরে দুর্যোধনের পক্ষেযেতে লাগল। ভীম ক্রমেই নিয়ন্ত্রণ হারাতে লাগল। এমনসময় শ্রীকৃষ্ণ ভীমকে হস্তিনাপুর রাজসভায় করা তারপ্রতিজ্ঞা মনে করিয়ে দিতে নিজের জঙ্ঘার দিকে ইঙ্গিতকরলেন। এরপর, ভীম গদাযুদ্ধের নিয়মের বিরুদ্ধে গিয়েসজোরে দুর্যোধনের জঙ্ঘাতে আঘাত করে এবং তাকেধরাশায়ী করে ফেলে।
গদাযুদ্ধের নিয়ম অনুসারে লড়াইয়ের সময় কাউকেকোমরের নিচে আঘাত করা যায়না কিন্তু সেই নিয়মেরপালন না করে ভীমের এই প্রহারে বলরাম অত্যন্ত ক্রুদ্ধহন এবং ভীমকে আক্রমণ করতে আসেন। তখন শ্রীকৃষ্ণএগিয়ে এসে বলরামকে প্রতিহত করেন এবং তাঁরভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করেন। শ্রীকৃষ্ণ বলেন- আজ ভীমেরআক্রমণের ঔচিত্য নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করা বলরাম তখনকেন নীরব ছিলেন যখন হস্তিনাপুর রাজসভায় কূলবধূদ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ করা হয়েছিল? তখন কেন নীরবছিলেন যখন জতুগৃহে পাণ্ডবদের পুড়িয়ে মারারপরিকল্পনা করা হয়েছিল? তখন কেন নীরব ছিলেন যখনঅভিমন্যুকে সপ্তরথী মিলে একসাথে অন্যায় যুদ্ধে হত্যাকরেছিল? একপক্ষ বিনা প্রতিবাদে একের পর একঅন্যায় করেই যাবে আর তাদের বিরুদ্ধে অপরপক্ষক্রমাগত নীতি মেনে লড়াই চালাবে এটা কী ধরনেরন্যায়? এরপর শ্রীকৃষ্ণ বলরামকে ভৎর্সনা করে বলেন যে, কুরুক্ষেত্রের ধর্মযুদ্ধ শুরু হবার আগে যুধিষ্ঠির ওদুর্যোধন দুজনই তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল নিজ নিজপক্ষে যোগদান করার জন্য। কিন্তু তিনি সেই সময় কোনপক্ষেই যোগ না দিয়ে তীর্থভ্রমণে বেরিয়ে যান। দেশেযখন ধর্ম আর অধর্মের মধ্যে লড়াই হচ্ছে তখন সেই যুদ্ধেকেউ নিরপেক্ষ থাকতে পারেনা, হয় সে ধর্মের পক্ষেঅথবা অধর্মের। তখন যুদ্ধক্ষেত্রই একমাত্র তীর্থক্ষেত্র।
আজ পশ্চিমবঙ্গে আবার কি সেই ধর্ম আর অধর্মের মধ্যেলড়াই-র পথে এগিয়ে চলছেনা? জেহাদি সন্ত্রাস একেরপর এক অন্যায় করেই চলেছে আর আমরা চোখেধর্মনিরপেক্ষতার ঠুলি এঁটে শান্তির হাঁপু বাজিয়ে চলেছি।কামদুনি, মধ্যমগ্রাম সহ সারা রাজ্যে কত শত বোনেরসম্মান দ্রৌপদীর মত লুণ্ঠিত হচ্ছে। বনগাঁর দীপঙ্করেরমত কত শত যুবক অভিমন্যুর মত জেহাদি সপ্তরথীদেরআক্রমণের শিকার হচ্ছে। ক্যানিং, পাঁচলা সহপশ্চিমবঙ্গের কত গ্রাম জিহাদি আগুনে বারনাবরতেরজতুগৃহের মত পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে আর আমরা পুণ্যকরতে গঙ্গাসাগরে গিয়ে ডুব দিচ্ছি বা মন্দিরে মন্দিরেপূজা দিচ্ছি যাতে “ঠাকুর রক্ষা করেন”। কিন্তু ইতিহাসবলছে যে ঠাকুর আমাদের ১৯৪৭এ রক্ষা করেননি।জেহাদি সন্ত্রাসের সামনে নিজেদের বাপ-ঠাকুর্দার ভিটেছেড়ে, মা-বোনেদের ইজ্জত খুইয়ে আমরা উদ্বাস্তুর হয়েচলে আসতে বাধ্য হয়েছিলাম। ধর্মনিরপেক্ষতার মেকিবুলি আমাদের কোন রকম নিরাপত্তা দিতে সেদিনওপারেনি আর আজও পারছেনা। কারন আমরা ভুলেগেছি যে ঠাকুর নিজে বলেছেন যে “যখন ধর্ম আরঅধর্মের মধ্যে লড়াই হচ্ছে তখন যুদ্ধক্ষেত্রই একমাত্রতীর্থক্ষেত্র”।