বাংলাদেশর স্বাধীনতা

৫০ বছরে বাংলাদেশ; কুরুক্ষেত্রে আলাপ।-দুরর্ম

৫০ বছরে বাংলাদেশ; কুরুক্ষেত্রে আলাপ। আগানি ২৬ মার্চে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ হচ্ছে। ১৯৭১ সালের ভয়াল ২৫ মার্চে পাকিস্তান উপনিবেশ তার হিংস্র সেনা লেলিয়ে দিয়েছিলো গণহত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্নটিকে গুঁড়িয়ে দিয়ে এই বদ্বীপটিকে পুড়িয়ে দেবার কাজে। জ্বলে-পুড়ে ছারখার তবু মাথা নোয়াবার নয়  বাংলাদেশ রুখে দিয়েছিলো সে ঘৃণ্য প্রচেষ্টা।

৩০ লাখ মানুষ মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিয়েছেন। চারলাখ নারী নির্যাতিতা হয়েছেন ঘাতক পাকিস্তানের বিকৃত নপুংসক সেনা ধর্ষকদের থাবায়। বাংলাদেশের জন্মযন্ত্রণার অকথ্য সে বেদনার ক্ষত আজো ছোপ ছোপ লাল রক্তের মত জমাট বেঁধে আছে সবুজ ভালোবাসার জমিনে।

 

১৯৭০ সালে পাকিস্তানের ব্যাংক রিজার্ভ সবল ছিলো; হৃষ্টপুষ্ট জিডিপি গ্রোথ ছিলো। ২০১৬ সালে পাকিস্তান পোড়োবাড়ী, রিক্তমাঠ, ব্যর্থ জনপদ। এর কারণ সর্বব্যাপী দুর্নীতি, সেই দুর্নীতি লুকাতে “ইসলাম” ধর্মের যথেচ্ছ অপব্যবহার, বিচারহীনতার সংস্কৃতি, উচ্ছেদ হয়ে যাওয়া অন্য সম্প্রদায়ের মানুষের অভিশাপ।

আর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে গণহত্যা সংঘটন ও তা আজো অস্বীকারের পাপের আগুনে পুড়ছে এই অভিশপ্ত রাষ্ট্রটি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উপলব্ধি করেছিলেন; যে রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এতো রিজার্ভ, মুদ্রামান এতো শক্তিশালী; বার্ষিক উন্নয়ন প্রবৃদ্ধির হার এতো ভালো; যেখানে পাঞ্জাবে নব্যসামন্ত শ্রেণীর বাড়ীতে এতো আলোকসজ্জা, সেনানিবাসগুলোতে এতো কুচকাওয়াজ; সেখানে বাংলাদেশে (ততকালীন পূর্বপাকিস্তান) এতো অন্ধকার কেন।

মুক্তিযুদ্ধে
পাক-বাহিনির অত্যচার

কেন বেলুচিস্তান, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, সিন্ধু প্রদেশের বেশীর ভাগ জায়গা অন্ধকারে বিলীন। কেন যাবতীয় সম্পদ মুষ্টিমেয়র হাতে থাকবে; কেন দরিদ্র ক্রমশঃ দাসজীবনটিকে মেনে নেবে। সাম্যবাদী মানবিক নেতা বঙ্গবন্ধু প্রথমে গণতান্ত্রিক উপায়ে পাকিস্তানের ক্ষমতা দখল করে দারিদ্র্যে বিশীর্ণ মানুষকে মুক্ত করার চেষ্টা করেন।

 

১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ট আসন পেয়ে সরকার গঠনের যোগ্য হয়ে ওঠে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনটি খুব সম্ভব আমাদের স্মরণকালের সুষ্ঠুতম নির্বাচন। জনবিজয়ের এমন চিহ্ন আর চোখে পড়ে না। তখন প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে সেই পশ্চিম পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এবং নব্য ধনীরা বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়।

বঙ্গবন্ধু নিজের জীবন উতসর্গের প্রস্তুতি নেন। বাংলাদেশের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করেন। বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধারা সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশকে  মুক্ত করেন। বঙ্গবন্ধু বেঁচে যান জননেতা হিসেবে তাঁর সততার শক্তিতে। আমরা ইতিহাস পড়ি কিন্তু সেখান থেকে শিক্ষা নেইনা; এ কারণে একই রকম ভুলের পুনরাবৃত্তি ঘটতে দেখা যায়।

একটি যুদ্ধাহত স্বাধীন দেশের পরিস্থিতির সঙ্গে অন্যান্য সময়ের কোন তুলনা চলেনা। সে কারণে স্বাধীনতার ৪৫ বছরের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির হিসাব নিকাশে ১০ জানুয়ারী, ১৯৭২ থেকে ১৫ অগাস্ট, ১৯৭৫-কে সম্পৃক্ত করা যৌক্তিক নয়। বঙ্গবন্ধুর অনেক সিদ্ধান্তের সঙ্গে ভিন্নমত অনেকের থাকতে পারে। আমার পর্যবেক্ষণে আমি উনার সিদ্ধান্তগুলোর সঙ্গে একমত।

বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের ঘাতকরা হত্যার সাহস পায়নি; বাংলাদেশের ঘাতকরা হত্যা করেছে; এই একটি বিষয় কৃতঘ্নতার এক অমোচনীয় কালি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেহেতু বাংলাদেশের ঘাতকদের ব্রাশফায়ারে পুরো পরিবারকে হারিয়েছেন; তাই উনার সমালোচনা করার মতো নৈতিক শক্তি কোন বাংলাদেশীর থাকার কথা নয়।

কারণ যে অপরাধ পাকিস্তান বাংলাদেশের সঙ্গে করেছে; একই অপরাধ বাংলাদেশ করেছে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার পরিবারের সঙ্গে। তবু নৈর্ব্যক্তিক আলোচনার স্বার্থে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কিছু সমালোচনা এ লেখার শেষ দিকে আসবে।

৫০ বছরে বাংলাদেশ; কুরুক্ষেত্রে আলাপ
৫০ বছরে বাংলাদেশ

বঙ্গবন্ধুর সপরিবারে হত্যাকান্ডটি ঘটিয়ে উদ্দেশ্যহীন বিপ্লবীদের কথিত বিপ্লবের পর ঠিক সেই পাকিস্তান স্টাইলে জিয়াউর রহমান “ইসলাম”-কে রাজনীতিতে অপব্যবহার করেন। নিজের ক্ষমতা ধরে রাখার নেশায় জামাতের একাত্তরের ঘাতকদের পুনর্বাসিত করেন। বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে বিএনপির একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী সেটলার প্রবেশ করিয়ে “পাহাড়ে পাকিস্তান” রচনা করেন।

জিয়া নিহত হলে আরেক সেনা শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ পাকিস্তানের ফটোকপি হিসেবে বাংলাদেশে দুর্নীতি এবং তা লুকাতে ইসলাম ধর্মকে ব্যবহার করতে থাকেন অবিরাম। সব বিশ্বাসের মানুষ মিলে মিশে বসবাসের স্বপ্ন নিয়ে যে বাংলাদেশ তৈরী হয়েছিলো; সেখানে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করে এরশাদ প্রকারান্তরে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে ইসলামী প্রজাতন্ত্র করে তোলেন।

তার ব্যক্তিগত জীবনে সর্ববিধ দুর্নীতিতে ইসলাম ধর্ম ও নৈতিকতার কোন চর্চা না থাকলেও রাজনীতির বাজারে তিনি ইসলাম- এর ফেরিওয়ালা হয়ে পড়েন। ১৯৯০ সালে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ ও খালেদা জিয়ার বিএনপি এরশাদের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরশাসক এরশাদের পতন ঘটায়।

স্বৈরশাসকটি অবশ্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিশেষ দূত হিসেবে বর্তমানে ক্ষমতা কাঠামোতে উপস্থিত; দুর্নীতি-ধর্ম  অপব্যবহার-বিচারহীনতার প্রত্ন প্রতীক হয়ে। ১৯৯১ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার বিএনপি ক্ষমতায় আসে। এসময় গার্মেন্টস সেক্টরটি বিকশিত হয়। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল হয়।

 

বেশ কিছু মানুষের কর্মসংস্থান হয়। তবে ক্ষমতার চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের নেশায় একদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে বিএনপি। আওয়ামী লীগ যেন কোনভাবেই ক্ষমতায় আসতে না পারে তারজন্য ব্যবস্থা পাকা করতে গিয়ে ক্ষমতা হারান খালেদা। বলা বাহুল্য সেসময় দুর্নীতি, রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার, বিচারহীনতার পাকিস্তান রোগকে সযত্নে লালন করা হয়।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য সংগ্রাম সফল করে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের মাধ্যমে ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার আওয়ামী ক্ষমতায় আসে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের সবুজ বিপ্লবটি এসময় সাধিত হয়। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল থাকে। কিন্তু ঐ যে দুর্নীতি, রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার, বিচারহীনতার পাকিস্তান ক্যানসার কিন্তু সমাজে-রাষ্ট্রকাঠামোতে লালিত হয়।

নিজের দলটি সারাদেশে যথেষ্ট কাজ করেছে এমন একটি ধারণা শেখ হাসিনার মাঝে ছিলো। তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ক্ষমতা ছেড়ে দিলে ২০০১-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি ঘটে। দলীয় প্রার্থীদের দুর্বলতার পাশাপাশি ঐ সময়ের তত্ত্বাবধায়ক সরকারটি বর্তমানের নির্বাচন কমিশনের মতো  অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন পরিচালনা করায় আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ফলাফল এতো খারাপ হয়। ঐ নির্বাচনে সমসাময়িক নির্বাচনগুলোর মতই কারচুপি ঘটেছিলো।

খালেদার বিএনপি যখন ক্ষমতায় এলো তখন পাকিস্তান ক্যানসার আরো ছড়িয়ে পড়ে সমাজ ও রাষ্ট্র সবজায়গায়। একাত্তরের ঘাতকেরা মন্ত্রী হয়ে যায়। অন্যসম্প্রদায়ের মানুষের ওপর হুবহু পাকিস্তান স্টাইলে নির্যাতন ও উচ্ছেদের খড়গ নেমে আসে। ওদিকে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন কিন্তু থেমে নেই। জিডিপি গ্রোথ ৬ শতাংশ।

১৯৭১ সালের ভয়াল ২৫ মার্চে পাকিস্তান উপনিবেশ তার হিংস্র সেনা লেলিয়ে দিয়েছিলো গণহত্যার মাধ্যমে
১৯৭১ সালের ভয়াল ২৫ মার্চে পাকিস্তান উপনিবেশ তার হিংস্র সেনা লেলিয়ে দিয়েছিলো গণহত্যার মাধ্যমে

কিন্তু ধনী আরো ধনী হতে থাকে; গরীব হতে থাকে আরো গরীব। সেই ১৯৭০ সালের পাকিস্তানের মতো প্রবণতা। এসময়  শেখ হাসিনাকে হত্যার প্রচেষ্টা চলে যেভাবে পরে পাকিস্তানে বেনজীর ভুট্টোকে হত্যা করা হয়েছে। জঙ্গীবাদের প্রসার এ সময়ের পাকিস্তান ক্যানসারের আরেকটি ধাপে পৌঁছে দেয় জটিল কর্কট রোগে আক্রান্ত বাংলাদেশকে।

এইসময় আরেক উপসর্গ হাজির হয় খালেদাপুত্র তারেক।  তিনি গড়ে তোলেন হাওয়া ভবন। আওয়ামী লীগের ওপর দমন নিপীড়ন চলতে থাকে; আর তারেক ক্রিকেট খেলেন। পাকিস্তানের বেনজীর ভুট্টোর স্বামী জারদারীর মতো দুর্নীতিগ্রস্ত টেন পার্সেন্ট হিসেবে কুখ্যাতি লাভ করেন তারেক। তিনি ধরাকে সরা জ্ঞান করে ইলেকশান ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মাধ্যমে “ভিশন ক্ষমতার চিরস্থায়ী বন্দোবস্তির” নেশায় দিশেহারা হয়ে পড়েন।

 

ফলাফল ওয়ান ইলেভেন। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ক্ষমতা দখল। শেখ হাসিনা এই পরিবর্তনকে স্বাগত জানান।সর্বদলীয় দুর্নীতিগ্রস্তরা গ্রেফতার হয়। ওয়ান ইলেভেন সরকারটি মাইনাস টু (মাইনাস হাসিনা ও খালেদা) বাস্তবায়নে দিশেহারা হয়ে পড়লে শেখ হাসিনা সম্বিত ফিরে পান। গ্রেফতার হন হাসিনা ও খালেদা।

নিজের দুর্নীতির কথা স্বীকার করতে নারাজ তারেক গ্রেফতারকৃত অবস্থায় হাসপাতালে বাথরুমে পা পিছলে পড়ে মেরুদন্ড ভেঙ্গে যাবার পর অবশেষে দোষ স্বীকার করেন। রাজনীতি করবেন না এমন মুচলেকা দিয়ে লন্ডনে চলে যান চিকিতসার উদ্দেশ্যে।শেষপর্যন্ত ২০০৮ এর ডিসেম্বরে নির্বাচন হয়। ২০০১-০৬ দুঃশাসনের ক্ষত নিয়ে বাংলাদেশ খালেদার বিএনপিকে প্রত্যাখান করে।

শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ প্রাপ্য বিজয় অর্জন করে। দুটো খুব ভালো কাজ এ সরকার করে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারাধীন আসামী ও একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের আসামীদের বিচার করে শাস্তি দেয়। বাংলাদেশের মানুষ এই প্রথম ন্যায়বিচারের স্বাদ পায়। এসময় অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাকা সচল থাকে।

 

জিডিপি গ্রোথ ৬ শতাংশের ওপরে চলে যায়। প্রবাসী শ্রমিক আর দেশের কৃষক-শ্রমিকের শ্রমে ও ঘামে বাংলাদেশ ব্যাংকের রেকর্ড রিজার্ভ তৈরী হয়। ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রকল্পের মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তি বিপ্লবের বিশ্বসরণিতে যুক্ত হয় বাংলাদেশ। কিন্তু ঐ যে পাকিস্তান স্টাইলের দুর্নীতি-ইসলাম ধর্মকে রাজনীতিতে ব্যবহার-ধনী-গরীবের ব্যবধান বাড়ার প্রবণতা সক্রিয় থাকে।

এবার শুরু হয় শেখ হাসিনার একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা। যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আওয়ামী লীগ আন্দোলন করে আদায় করেছিলো; সেটি তারা বাতিল করে দেয় অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে। ফলে “ভিশন ক্ষমতার চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে” আওয়ামী লিগ এখন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

শেয়ার বাজার লুন্ঠনে লাখ লাখ মানুষ ক্রমঃমৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায় । ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়ে যায় নানা ঋণ কেলেংকারিতে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টাকা চুরি হয়েছে। এই সময়টাতে ক্ষমতাসীন দলকে খুব মুখে আল্লাহ আল্লাহ করতে দেখা যাচ্ছে। ইসলাম ধর্মের রাজনীতিতে  অপব্যবহারের সেই পাকিস্তান ক্যানসারে আক্রান্ত বাংলাদেশের সারা শরীরে দুর্নীতির থকথকে ঘা।

 

ওপরে  উন্নয়নের রেশমী পোশাক পরানো এই রাষ্ট্রটিতে গুম-ধর্ষণ-মুক্তিযোদ্ধা হত্যা-লেখক হত্যা-অন্যসম্প্রদায়ের মানুষের উচ্ছেদ চলছে ঠিক পাকিস্তানের আদলে। এমনকি সেনানিবাসের নিরাপদ এলাকায় এক দরিদ্র পিতার সোহাগী কন্যা ধর্ষিতা ও নিহত হয়েছে অতি সম্প্রতি। ২০১৬ সালের মার্চটি প্রতীকি অর্থে ১৯৭১-এর মার্চের মতো ভয়াল। ওদিকে পাহাড়ে পাকিস্তান তো আছেই।

 

সামরিক ও বেসামরিক আমলা নির্ভর সরকার, পাঞ্জাব শব্দটির সঙ্গে কাকতালীয় অনুপপত্তির গোপালগঞ্জ (পঞ্জ-গঞ্জ, পা) সাদৃশ্যতে গোপালগঞ্জের নেতা-কর্মী, সরকারী কর্মচারী ক্ষমতাসীন দলের উপনিবেশের পাঞ্জাবী হয়ে ছড়ি ঘোরাচ্ছে। এসব অনাসৃষ্টির বেশীরভাগই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জ্ঞাতসারে ঘটছে না বলেই মনে করি।

জানিনা কোন কেমো থেরাপি দিয়ে পাকিস্তান ক্যানসার আক্রান্ত বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে দুর্নীতি-তা ঢাকতে ধর্মের  অপব্যবহার-বিচারহীনতায় ধুঁকতে থাকা এ অবস্থায় বাঁচানো সম্ভব। প্রধানমন্ত্রী, সৎ নীতি নির্ধারকেরা, জনমানুষ বিশেষতঃ তারুণ্য অর্থাৎ বাংলাদেশের সামষ্টিক সমাজের হাতে সময় খুব বেশী নেই।

 

এখনই নীরবতা ভেঙ্গে সবার ইতিবাচক সক্রিয়তা জরুরী। রাষ্ট্রের বাহিরী চটক, ধণিক শ্রেণীর জেল্লা, কিছু উজ্জ্বল পরিসংখ্যান দিয়ে সমসাময়িক মানবতাবিরোধী অপরাধের মড়ক ঢেকে রাখা অসম্ভব। অপরাধ অস্বীকার প্রবণতায় ভেঙ্গে পড়ার চিহ্নগুলো ক্রিকেটের ওপিয়ামে অদৃশ্য করে রাখলে কী হয়; তার ভয়ংকর দৃষ্টান্ত আজকের মৃত  পাকিস্তান। বাংলাদেশকে যে বাঁচাতেই হবে।

WRITER-MASKWAITH AHSAN(USA)

আরো পড়ুন…