পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে একটা পট পরিবর্তন হতে চলেছে, আজ একটু বিস্তারে বলবো। অবশ্যই আপনারা সহমত নাও হতে পারেন, কিন্তু তাও ভেবে দেখতে তো ক্ষতি নেই।
১. ২১শে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে তৃণমূল নেত্রী যেভাবে একটা ৩ জন বিধায়কের দলকে ক্রমাগত আক্রমণ করে গেলেন তাতে এটা পরিষ্কার যে সরকারপক্ষ চাইছেন বিজেপি অপসিশন স্পেসটা দখল করুক।
২. যে প্রধান প্রতিপক্ষের সাথে এত লড়াই করে ক্ষমতায় এলেন, ওটাই ওনার একমাত্র ইউএসপি ছিল বললে অত্যুক্তি হবে না, সেই সিপিএমকে আজ উনি অপসিশন হিসেবে আর দেখছেন না, ভবিষ্যতে হয়তো তাদের সাথে কোনো ইলেক্টরাল এলায়েন্স হলেও হতে পারে।
৩. কংগ্রেস ছেড়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করে বেড়িয়ে এসে যে দলের গোড়াপত্তন, আজ সেই কংগ্রেসের প্রার্থীকে রাজ্যসভায় পাঠাবার জন্য তৃণমূল তৈরি, অর্থাৎ কংগ্রেস এখন সরকার পক্ষে।
৪. তাহলে ব্যাপারটা দাঁড়ালো কি ? যে সেক্যুলার ফ্রন্টের খোঁজে উনি নীতিশ থেকে কেজরিওয়াল, মুলায়ম থেকে নবীনবাবু, সবার দরজায় ঘুরে ঘুরেও খুব একটা হিল্লে করতে পারেন নি, পশ্চিমবঙ্গে উনি সেইটি করতে চাইছেন, ইন হার ওন টার্মস।
৫. অপসিশন স্পেসে বিজেপিকে ঠেলে তুলে দিতে পারলে ওনার কম্যুনাল কার্ড খেলতে সুবিধে হবে কারণ ওনার সংখ্যালঘু ভোট ব্যাংক তাতে অক্ষুন্ন থাকবে।
৬. আবার কংগ্রেস ও বামেদের যে সেক্যুলার ভোট আছে, সেগুলো আসলে হিন্দু ভোট, যত বিজেপির থেকে কাটে তত তৃণমূলের সুবিধা, সুতরাং তার পেছনে সরকার পক্ষের প্রচ্ছন্ন মদত থাকবে।
৭. এরপর বাজারে হিন্দু সংহতি গোছের কাউকে ছেড়ে দিলে আরো কিছু হিন্দু ভোট কাটা যাবে, আর তারা যদি দু একটা সিট জিতেও যায়, অসুবিধে নেই।
৮. এখন যদি বিক্ষুব্ধ তৃণমূল প্লাস বিক্ষুব্ধ কংগ্রেস প্লাস বিক্ষুব্ধ বাম মিলে কোনো নতুন স্যেকুলার দল করেন, হয় তাদের মুসলিম লীগের মতন হতে হবে যাতে তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোটে ভাগ বসানো যায় অথবা চূড়ান্ত স্যেকুলার হতে হবে যাতে বাম এবং কংগ্রেসের ভোট কাটা যায়। বড়জোর এদের একটা নুইসেন্স ভ্যালু থাকবে। সত্যি কথা বলতে এর কোনোটারই সম্ভবনা আমি দেখতে পাচ্ছি না, থাকলে মুকুল রায় এতদিন বসে থাকতেন না।
৯. বিজেপির সংগঠন তৈরি করতে এখনো ১০ বছর লাগবে সুতরাং বিজেপি হলো সেফ অপসিশন। ১০ বছর পর দেশের রাজনীতি কোন খাতে বইছে দেখে নিয়ে তখন আবার নতুন সমীকরণ ভাবা যাবে।
১০. এখন অবধি যা যা বললাম সব তৃণমূলের দৃষ্টিকোণ থেকে। ধরুন যদি বিজেপি এই চ্যালেঞ্জটা লুফে নিলেন এবং ভয়, ভক্তি, ভালোবাসা, বিভাজন সব নীতি প্রয়োগ করে সত্যি সত্যি শক্তিশালী অপসিশন হয়ে উঠলেন তখন কিন্তু সব হিসেব গোলমাল হয়ে যাবে। বিজেপির একটা সুবিধে আছে যা তৃণমূলের নেই আর সেটা হলো মুসলিম ভোটের ওপর অনির্ভরশীলতা। আরো একটা সুবিধে আছে, সেটা প্রায় ১.২৫ কোটি অবাংলাভাষী ভোট যারা বিজেপি স্বমূর্তি ধরলেই একাট্টা হয়ে যাবেন। মোদীজির প্রভাব কিন্তু জনমানসে প্রচন্ড, বাম বা কংগ্রেসে ওঁকে টক্কর দেওয়ার মত ধারেকাছে কেউ নেই, তার ন্যাচারাল এডভান্টেজও বজেপির। আর সব শেষে, বিজেপির ঘরে নীরবে জমছে মার খাওয়া হিন্দুদের ভোট, যেটা হিন্দু সংহতিকে মাঠে নামিয়ে মমতা কাটতে চাইবেন, কিন্তু হবে কি ? ভোট বিভাজনের রাজনীতি কিন্তু শাঁখের করাত, আসতেও কাটে, যেতেও কাটে। শাঁখাটা কার হাতের মাপের হবে, তার ওপর এখন সবকিছুই নির্ভর করছে।