বাঙালির জয় হোক, জয় গৌড়, জয় বঙ্গ। ছোটবেলায় একটা গানে শুনেছিলাম, সোনার বাংলা দুটি ভাগ হল, স্বাধীনতার নামে। গানটা নেহাতই মামুলি, গানটার বাদবাকি আর কিছু মনেও নেই। কিন্তু এই পংক্তিটা মনে থেকে গেছে, আর আজও প্রত্যেক স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে মনে পড়ে।
প্রত্যেক চোদ্দই অগাস্ট মনে পড়ে, এইদিনে পূর্ব পাকিস্তান তৈরি হয়েছিল বাংলা ভেঙে (নামটা অবশ্য তখনও পূর্ব বঙ্গ ছিল, পূর্ব পাকিস্তান কিছুদিন পরে নামকরণ হয়)। আমি বাঙাল কি না, তাই আরও বেশি করে মনে পড়ে। দাদু চট্টগ্রামের লোক, দিদিমা ঢাকার। ঠাকুরদা আর ঠাকুমা বরিশালের। এ জায়গাগুলো আমরা ছেড়ে দিয়েছি, কারণ বাংলা ভাগ হয়ে গেছে সাতচল্লিশে।
কিন্তু বাংলা ভাগ কবে হয়েছিল? ১৯৪৭-এ? ঠিক। কিন্তু ১৯০৫-এ যখন হয়েছিল, সেটা কি এই সাতচল্লিশের জন্য গ্রাউন্ড তৈরি করে যায়নি? এবার পিছিয়ে যান আরও। তিতুমীরের ওয়াহাবি আন্দোলন (এই তিতুমীরকে কার্ল মার্ক্স বলেছিলেন ফ্যানাটিক) আর দুদু মিয়ার ফরাজী আন্দোলন কি বাংলাকে ভাগ করেনি, কাফের আর বিশ্বাসীতে? কাফের মারতে শেখায়নি, হিন্দুধর্মের সমস্ত নিদর্শন মুছে ফেলতে শেখায়নি? বাংলার গ্রামে তো এই বিভাজন আমদানি করা হয়েছে ওয়াহাবির দ্বারা।
তিতু যখন গাজোয়ারি করে বলছে সব মুসলমানকে দাড়ি রাখতে হবে, সবার নাম আরবী ফার্সিতে রাখতে হবে, মন্দিরে গিয়ে গরু কাটতে হবে, হিন্দুনারীকে ধর্ষণ করতে হবে, বাংলাভাগ তো তখনই হয়ে গেছিল।
আরও পিছিয়ে যাই
নালন্দা যখন পুড়ে গিয়েছিল, যখন বিধ্বস্ত বিক্রমশীলা (ধর্মপালের আরেক নাম ছিল বিক্রমশীল, এই বিশ্ববিদ্যালয় তাঁরই স্থাপনা), যখন ওদন্তপুরী গুঁড়িয়ে দেওয়া হল, যখন জ্বলে গেল জগদ্দল আর সোমপুর মহাবিহার, তখন বাংলাভাগ হয়নি? যখন রাজা গণেশের ছেলেকে জালালুদ্দিন হতে হল, তখন বাংলাভাগ হয়নি?
বখতিয়ার যখন অষ্টাদশ অশ্বারোহী দুর্বৃত্তকে নিয়ে নদীয়ায় অতর্কিতে ঘোড়াব্যবসায়ীর ছদ্মবেশে ঢুকে গণহত্যা চালাল, যেদিন শেখ জালালুদ্দিন তাব্রেজি লক্ষ্মণসেনের রাজসভায় আশ্রয় পেল, যেদিন শাহজালাল সিলেটে গিয়ে গৌরগোবিন্দের রাজ্যে হামলা করল, যেদিন কালুগাজী সুন্দরবনে মুকুটরায়কে হত্যা করে চম্পাবতীকে ধর্ষণ করল আর দক্ষিণরায় পালটা অস্ত্র ধরলেন, সেদিন বাংলাভাগ হয়নি?
বাংলাভাগ অনেকদিন আগেই হয়ে গেছিল, বাস্তবিকপক্ষে
কার্ল মার্ক্সের সেই প্রফেটিক বক্তব্য, এর আগে বহুবার শেয়ার করেছি, আজ আবার করলাম। “কোরান এবং তা থেকে উদ্ভূত মুসলমানি আইন বিভিন্ন জনমানুষের নিজস্ব ভৌগলিক ও সাংস্কৃতিক সত্ত্বাকে নামিয়ে আনে এক সুবিধাবাদী দ্বি-জাতীয় ও দ্বি-দেশীয় বিভেদেঃ যারা ইসলামে বিশ্বাসী, আর যারা অবিশ্বাসী বা কাফের। অবিশ্বাসী বা কাফের হল হার্বি, বা শত্রু। ইসলামিজম কাফেরদের জাতিকে নিষিদ্ধ করে, যার ফলে এক চিরস্থায়ী শত্রুতা তৈরি হয় মুসলমান ও অবিশ্বাসীর মধ্যে।”
মার্ক্সের মত মানলে বলতে হবে, বাংলাভাগ সেদিনই হয়ে গেছিল যেদিন ইসলাম বাংলায় পা রাখতে পেরেছিল। সেকুলাররা গায়ের জোরে অস্বীকার করতেই পারেন, তাতে ইতিহাসের এই চরম সত্যটা মিথ্যা হয়ে যাবে না, যে সাতচল্লিশের পনেরোই অগাস্ট যা হয়েছিল, তা শুধু একটা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা।
বাংলাভাগ! দুর্ভাগা বাঙালি জাতি চোদ্দই অগাস্টের কালরাত্রিতে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে করার চেষ্টা করুক, বাংলাভাগ বহুদিন আগেই হয়ে গেছিল। নিশ্চয়ই প্রশ্ন জাগছে, এই কি ভবিতব্য? ফেরানো যায় না, জোড়া যায় না? যায়। রিকনকুইস্তা, যা স্পেনে হয়েছিল।
তার আগে, বাম-জেহাদী আর তৃণ জেহাদীদের বাংলা থেকে উৎখাত করতে হবে। সেটা আমরা পারব কি না, সময় বলবে। আজ স্বর্গ থেকে আমাদের গঙ্গারিডি পূর্বসূরীরা, ধর্মপাল আর শশাঙ্ক, দেবপাল আর প্রতাপাদিত্য, বঙ্কিম আর ঈশ্বর গুপ্ত অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছেন আমাদের দিকে। প্রথমবারের জন্য বাঙালি জাতির ডিসকোর্স নির্মাণে কেউ মেথডিক্যালি নেমেছে, সপ্তডিঙার কাজ ফলো করলেই বুঝবেন। সঙ্গে থাকুন, পাশে এসে দাঁড়ান। সাতাশে আগস্ট মহাবোধিতে আসুন।
বাঙালির জয় হোক। জয় গৌড়, জয় বঙ্গ।
আরো পড়ুন….