বেদ

বেদ- একটা গল্প ও তার কাটাছেঁড়া, শ্রেণীসংগ্রাম অর্থাৎ ইতিহাস কিন্ত থেমে নেই, থেমে নেই পথ খোঁজাও!

বেদ – একটা গল্প ও তার কাটাছেঁড়া, শ্রেণীসংগ্রাম অর্থাৎ ইতিহাস কিন্ত থেমে নেই, থেমে নেই পথ খোঁজাও! বেদের ছান্দোগ্য উপনিষদের একটি আখ্যান (১.১২) এইরকম – “কুকুর সংক্রান্ত উদ্-গীথ (Udgitha) – বক দালভ্য বা গ্লাভ মৈত্রেয়, যিনি বেদশিক্ষার জন্য ভ্রমণ করছেন। “তাঁর সামনে একটি সাদা কুকুর (শ্ব শ্বেত) আবির্ভূত হল। অন্য কুকুরেরা ঐ কুকুরটির চারপাশে জড়ো হয়ে বলল – আপনি গানের দ্বারা আমাদের জন্য খাবার (অন্ন) জোগাড় করুন, সত্যিই আমরা ক্ষুধার্ত।

“তখন সাদা কুকুরটি তাদের বলল – সকালে এখানে আমার সাথে দেখা করো। এই শুনে বক দালভ্য বা গ্লাভ মৈত্রেয়ও নজর রাখলেন, অপেক্ষা করতে থাকলেন। “(পরের দিন) সকালে তিনি দেখলেন – যেভাবে ‘বহিস্পবামন’ সামগান গাইবার সময় পুরোহিতরা গোল হয়ে ঘোরে, সেইভাবে কুকুররা একে অপরের লেজ আরেকজন মুখে ধরে চক্রাকারে প্রদক্ষিণ করল এবং তারপর তারা উপবেশন করে উচ্চারণ করল – ওঁ। তারা গাইতে থাকল – ওম্, আমাদের খেতে দাও! ওম্, আমাদের পান করতে দাও! ওম্, দেব বরুণ, প্রজাপতি, সাবিত্রী আমাদের জন্য অন্ন নিয়ে এস! হে অন্নের প্রভু, এখানে অন্ন আনয়ন কর, হ্যাঁ, এখানে নিয়ে এস, ওম্!”

 

এখন এই আখ্যানটির অর্থ কী? ভারতের ইতিহাসে এই আখ্যানের কোন গুরুত্ব আছে কি?

আমাদের দেশে বেদ আছে, রামায়ণ মহাভারত আছে, কিন্তু সেই অর্থে লিখিত প্রাচীন ইতিহাস নেই, সালতারিখ ধরে ধারাবিবরণী নেই। সিন্ধু সভ্যতার লিপির এখনও পাঠোদ্ধার হয়নি, হলে অনেক কিছু জানার সুযোগ মিলত। বেদ ছিল শ্রুতি, শুনে মুখস্হ রাখতে হত, পরে লিখিত হয়, কিন্তু কালানুক্রম অনুসারে নয়। ঋগ্বেদ যদিও প্রাচীনতম, কিন্তু তারও কিছু অংশ অর্বাচীন। রামায়ণ মহাভারতে সবকিছু এত ফোলানো ফাঁপানো যে হিসেব গুলিয়ে যাওয়ার সামিল। আর বহু বছর ধরে এ কাহিনী রচিত, নতুন পুরনো সব মিশে আছে।

ফলে ইতিহাস রচনার হাতিয়ার হয়ে দাঁড়ায় প্রত্নতাত্ত্বিক খনন, শিলালিপি, তাম্রলিপি ইত্যাদি। অথচ সুবিপুল সাহিত্যভাণ্ডার আমাদের। এই বেদ বা রামায়ণ-মহাভারত কি ইতিহাস রচনায় আমাদেরর কোন উপাদান হতে পারে? নাকি এগুলো শুধু মনোরঞ্জন বা উপদেশমূলক শিক্ষা বা দার্শনিক মতের উৎস?

বেদ নিয়ে দেশবিদেশে বহু চর্চা হয়েছে। কাহিনীটি ছান্দোগ্য উপনিষদের ১.১২ সূক্ত থেকে নেওয়া। বেদের যে ভাগগুলো আছে সংহিতা ব্রাহ্মণ ইত্যাদি তার মধ্যে উপনিষদের বয়স নবীন। উপনিষদের মধ্যে ছান্দোগ্য আবার অপেক্ষাকৃত প্রাচীন। মোটামুটি ধরা যেতে পারে এই উপনিষদ কমপক্ষে ৬০০ খ্রিষ্টপূর্ব বা তার আগের রচনা, বুদ্ধের জন্মের আগে।

তো আমাদের আখ্যানটি একজন ব্রাহ্মণ প্রত্যক্ষ করছেন। বেদ ও তার যাগযজ্ঞ ইতিমধ্যেই বিশাল আকার নিয়েছে, আবার পাশাপাশি উপনিষদের মধ্যে জগতের কিছু প্রশ্নের উত্তর খোঁজা শুরু হয়েছে, কিছুদিন পরেই বুদ্ধদেব বৈদিক যাগযজ্ঞাচারের বাহুল্যতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করবেন।

তো এই আখ্যানটির অর্থ করলেন পাশ্চাত্যের বিভিন্ন মানুষ। বললেন যে, এখানে বেদের যাগযজ্ঞের আনুষ্ঠানিকতাকে ব্যঙ্গ করা হয়েছে। সারসত্য না বুঝে যদি কেউ শুধু আচার পালন করে, তা নিরর্থক, তাই ব্যঙ্গার্থে কুকুরের উপমা,তারাও অর্থবোধহীন ব্রাহ্মণের মতো যাগযজ্ঞ করছে। সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ, যিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন, তাঁর বইতে বললেন, এটা যাগযজ্ঞহোমের বাহ্যিক আঙ্গিকের বিরুদ্ধে এক প্রহসনমূলক প্রতিবাদ। তার উদ্দেশ্য হল অন্তর্মুখী করা, আত্মিক জীবনের দিকে নজর ফেরানো।

এই বিশ্লেষণে পৌঁছতে তারা পরোক্ষ সাহায্য পেলেন ঠিক আগের শ্লোকদুটি (১.১০ ও ১.১১) থেকে। সেখানে এক ঋষি তার শস্যক্ষেত ধ্বংস হয়ে গেলে, বাধ্য হয়ে খাদ্যের সন্ধানে বেরিয়ে এক নতুন জায়গায় পৌঁছন। সেখানে এক হাতি (ইভ্য) সূচক নিম্নজাতির মানুষের এঁটো নিম্নমানের খাবার ভিক্ষা করে তাকে খেতে হয়। পরে সে অঞ্চলে যে পুরোহিতরা যাগযজ্ঞ করছিল, তাদেরকে এক এক করে জিজ্ঞাসা করেন, আপনাদের প্রার্থনা, গীত, প্রস্তাবনা ও সিদ্ধান্ত – এসবের অর্থ কী? তারা না বলতে পারায় ঋষিকে সে অঞ্চলের রাজন্ পুরোহিত নিয়োগ করেন এবং তিনি সেই যাগযজ্ঞের ব্যাখ্যা দেন।

এর থেকে অনেকে সিদ্ধান্ত টানছেন যে আমাদের আখ্যানের ব্যাখ্যা হল অর্থ না বুঝে অনুষ্ঠান বা আচার ফলহীন। আনুষ্ঠানিকতা নয়, অন্তর্নিহিত গূঢ়ার্থই হল সার। উপনিষদে দার্শনিক প্রশ্নের উত্তর খোঁজা শুরু হয়েছিল, এই ব্যাপারটাও তাদের এই সিদ্ধান্তে পৌঁছতে উৎসাহিত করছে।

কিন্তু এই ব্যাখ্যায় কি ধরা পড়ল, একটি কুকুর শ্বেতবর্ণের কেন? বা, এটার উপলব্ধির জন্য অন্যদেশে যেতে হবে কেন? পরের দিন সকালে আসতে বলা কেন? নাকি, এগুলোর কোন তাৎপর্য নেই, স্রেফ গল্প!

তখন কেউ কেউ বললেন, ওটি একটি দেবতা, বায়ু, ঋষিকে শিক্ষা দেবার জন্য ঐরূপে আবির্ভূত হয়েছেন। কেউ বললেন ঐ কুকুরটিকে দিয়ে ব্রাহ্মণকে বোঝানো হয়েছে, বাকিরা সাধারণ মানুষ, তারা ক্ষুধার্ত।

বিশ্লেষণের কায়দাটা খেয়াল করুন। একটি শ্লোকের তাৎপর্য তার মধ্যেই খোঁজা হচ্ছে, বা বড়জোর আগের শ্লোক, সমাজের মধ্যে নয়। রাহুল সাংকৃত্যায়ন ছিলেন এক মহাপণ্ডিত ব্যক্তি। তিনি প্রথম জীবনে আর্যসমাজী, পরে বৌদ্ধভিক্ষু, তারও পরে মার্কসবাদী হন। এই দীর্ঘ পথপরিক্রমায়, বহুভাষাজ্ঞানী ও বহু ভ্রমণকারী রাহুল বৌদ্ধ হয়ে তিব্বতে সোয়া দুবছর কাটান, সেখানকার ভাষা শেখেন, বহু গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধগ্রন্হ তিনি ভারতে নিয়ে আসেন। ‘ভোলগা সে গঙ্গা’ তাঁর বহুপঠিত বই।

‘দর্শন দিগদর্শন’ গ্রন্হে তিনি লিখছেন – “এই কৌতুক নকশায় যে পুরোহিত সকল শুধু দানদক্ষিণার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে সামগান করে তাদের বিদ্রূপ করা হয়েছে, তাদের মনোযোগ দেবার্চনায় নয়, নিজ স্বার্থসিদ্ধির প্রতি” (পৃ. ২৬)।

রাহুল সাংকৃত্যায়ন একটি নতুন বিষয় যোগ করলেন – ব্রাহ্মণ শ্রেণীর স্বার্থসিদ্ধি, শ্রেণীস্বার্থের কথা। উত্তর খুঁজতে চাইলেন শ্লোকের বাইরে, বেদের বাইরে, সমাজের মধ্যে। কিন্তু যারা সংস্কৃতির মধ্যেই এই শ্লোকের অর্থ খুঁজছিলেন, রাধাকৃষ্ণণ বা অন্যান্য পশ্চিমী প্রাচ্যবিদরা, তাদের থেকে খুব বেশিদূর এগোতে পারলেন কি?

এবার আমরা একটু পেছনে ফিরে যাব, বেদান্তের সুবিখ্যাত ভাষ্যকার আদি শংকরাচার্য কী বলছেন দেখব।

শংকরাচার্যের ভাষ্য বা ব্যাখ্যা – “পূর্বের শ্লোকটিতে দেখানো হয়েছে, খাদ্যের অভাবে একজন কী অবস্হায় পড়ে – এমন অবস্হা যেখানে অখাদ্য ও অপরিষ্কার খাবার খেতে বাধ্য হতে হয়। এরকম অবস্হা যাতে না হয়, তার জন্য খাদ্য পেতে হবে, এবং সেই উদ্দেশ্যেই, বর্তমান শ্লোক কুকুরের উদ্-গীথ বর্ণনা করছে : অর্থাৎ কুকুররা সামগান উচ্চারণ করছে – বক, যে কিনা দালভের পুত্র, সে-ই গ্লাভ, মিত্র-এরও পুত্র – ‘ভ’ শব্দখণ্ডটি ‘চ’ বোঝাচ্ছে : অর্থাৎ ‘ও’, দালভের পুত্র মিত্রের’ও’ পুত্র, একই ব্যক্তি, যে দুই পরিবারের সদস্য (একটি জন্মের দ্বারা, অপরটি গ্রহণের দ্বারা) – শ্লোকটির মানে দুটি বিকল্প নাম হতে পারে না, কারণ বিকল্প কার্যের হতে পারে, বস্তুর বিকল্প হয় না। ‘স্মৃতি’-তে এমন ব্যক্তির উল্লেখ আছে, যার দুটো নাম আছে, যারা দুই গোত্রের মধ্যে পড়ে, এটাও দেখা যায় যে তারা দুই পরিবার থেকেই উৎসর্গীকৃত দ্রব্য পায় – অথবা এটাও হতে পারে যে উদ্-গীথটির মূল বিষয় নিয়ে শ্লোকটি এত ভাবিত যে খেয়াল থাকেনি এক বা একাধিক ঋষির কথা বলা হয়ে গেল কিনা, সেক্ষেত্রে ‘ভ’টি শ্লোক উচ্চারণে সহায়তার জন্য এসেছে।

“বেদ পাঠের জন্য ঐ ঋষি গ্রামের বাইরে, নদীর ধারে শান্ত জায়গায় গেলেন। তিনি বেরোলেন এবং অপেক্ষা করলেন – ক্রিয়াপদে একবচনের ব্যবহার পরিষ্কার দেখিয়ে দিচ্ছে যে ঋষি একজনই, যার নাম দুটো। দেখে মনে হচ্ছে, ঋষি কুকুর সংক্রান্ত উদ্-গীথের জন্য যে অপেক্ষা করছেন, সেটা তার বেদপাঠ যে খাদ্যলাভের উদ্দেশ্যে তা ইঙ্গিত করছে। 

“বেদ শিক্ষায় সন্তুষ্ট হয়ে এক ঋষি বা দেবতা কুকুরের রূপ নিলেন এবং এভাবেই এক শ্বেত কুকুর আবির্ভূত হল – মানে, আবির্ভাব ঘটানো হল – তার সামনে – মানে, তার ওপর কৃপার উদ্দেশ্যে। অন্য কুকুরেরা – আকারে ছোট – কুকুরটির চারপাশে জড়ো হয়ে – তাকে বললো – ‘মহন্, আমাদের জন্য খাদ্য গান করুন – অর্থাৎ গানের মাধ্যমে আমাদের জন্য খাদ্যের ব্যবস্হা করুন’। এসব থেকে যে প্রকৃত অর্থ বুঝতে হবে তা হল বাণী বা বাক্য এবং বাকিরা, যারা শ্বাস নেওয়ার সময় খাদ্য গ্রহণ করে, তারা মুখগহ্বরের শ্বাসকে এ’কথা বললো : এর গূঢ়ার্থ হল, বেদশিক্ষায় সন্তুষ্ট হয়ে, তারা শ্বাসকে নিজ রূপের মাধ্যমে সহায়তা করবে – ‘আমরা সত্যিই ক্ষুধার্ত’।

“এইভাবে সম্বোধিত হয়ে, শ্বেত কুকুরটি ক্ষুদ্রতর কুকুরদের বলল – ‘এইখানে – এই একই জায়গায় – সকালে আমার সাথে দেখা করো।’ ‘সমীয়ত’-র দীর্ঘ স্বরবর্ণটি বৈদিক কালের খাপছাড়া অমিল, অথবা ওটা ভুল পাঠও হতে পারে। সকালে সাক্ষাতের অর্থ হল যে, তিনি যা করতে চলেছেন তা সকালেই সবচেয়ে ভাল করে সম্ভব; কারণ সূর্য, যে খাদ্যদাতা, সে পূর্ণ আকারে অপরাহ্নে হাজির নেই – এসব দেখে বক-দালভ্য বা গ্লাভ-মৈত্রেয় অপেক্ষা করতে লাগলেন – তাদের পুনরাবির্ভাবের অপেক্ষা।

“ঐ কুকুরগুলি ঐ স্হানে এসে, ঋষির সামনে, চারপাশে গোল হয়ে ঘুরতে থাকলো; যেভাবে মানুষরা, যারা উদ্গাতা পুরোহিতের সহকারী, একে অপরের সাথে সংযুক্ত হয়ে ‘বহিষ্পবামন’ স্তোত্র গায়, সেইভাবে কুকুররা গোল হয়ে ঘুরতে থাকল, প্রত্যেকে তার সামনের কুকুরটির লেজ নিজের মুখে ধরে, এবং এইভাবে ঘুরে, তারা উপবেশন করল, এবং উপবেশন করে, তারা উচ্চারণ করল স্বর – ওঁ।

“ওঁ, আমাদের খেতে দাও! ওঁ, আমাদের পান করতে দাও! – দেব, সূর্যকে এরকম বলা হয় কারণ তিনি বিচ্ছুরিত হন; তিনি বরুণ, কারণ তিনি পৃথিবীতে বৃষ্টি নিয়ে আসেন; তিনি প্রজাপতি, কারণ তিনি মানুষের পুষ্টিসাধন করেন; তিনি সাবিত্রী, কারণ তিনিই সবকিছুর আদিকর্তা – এই সমার্থক শব্দগুলো দিয়ে সূর্যকেই বোঝানো হয়েছে। সূর্য, যিনি এই সবকিছুই, তিনি যেন আমাদের জন্য অন্ন নিয়ে আসেন – এই বলে তারা আবারও বললো – হে, অন্নের প্রভু – তাঁকে অন্নের ‘প্রভু’ বলা হল, কারণ তিনিই সমস্ত অন্নের উৎপাদন করেন, এর অর্থ হল – যে, সূর্যের রশ্মির কারণে পক্ক না হলে, জীবিত প্রাণীর জন্য অন্ন উৎপাদন হয় না, এমনকি অতি কম পরিমাণেও না; সেজন্যই অন্নদাতা প্রভু – হে, অন্নদাতা প্রভু! এখানে অন্ন নিয়ে এস – আমাদের জন্য – হ্যাঁ, নিয়ে এস – একই কথা পুনররাবৃত্তির অর্থ হল ওঁ-এর প্রতি গুরুত্ব আরোপ।”

শঙ্করের এই ভাষ্য অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক, বুদ্ধিদীপ্ত, তীক্ষ্ণ, প্রতিটি খুঁটিনাটি বিষয়েও তাঁর নজর। কিন্তু ইতিহাস কতটা?

কোন কিছুর অর্থ বা ব্যাখ্যা শুধু সংস্কৃতির মধ্যে বা ভাবজগতে খোঁজার এই পদ্ধতি ছেড়ে আমরা এবার চলে আসব ১৯৫০-র দশকে, কোসাম্বির ব্যাখ্যায়। দামোদর ধর্মানন্দ কোসাম্বি। একজন গণিতজ্ঞ, পরিসংখ্যানবিদ, বিভিন্ন ভাষায় পারদর্শী, শেষত একজন মার্কসবাদী ইতিহাসবিদ, কিন্তু কোনদিন কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেননি, ডাঙ্গের লেখা ভারতীয় ইতিহাসের সমালোচনায় যিনি বলছেন, মার্কসবাদ চিন্তনের বিকল্প নয়, বরং তা আরও কঠোর ও বিশদ চিন্তা দাবী করে।

‘An Introduction to the Study of Indian History’-র ১৩৩-৩৪ পৃষ্ঠায় ব্রাহ্মণদের প্রতি রাজাদের দানসামগ্রীর প্রাচুর্যের উল্লেখ বা প্রচুর দানের কর্তব্য তুলে ধরে তিনি বলছেন যে ব্রাহ্মণরা (সে সময়ে) শ্রেণী হিসাবে গরীব ছিল আর তাই এত দানসামগ্রীর উল্লেখ।

“আমরা যেটুকু বলতে পারি, তা হল, ব্রাহ্মণরা ছিল গরীব, পুরনো প্রথাগুলোর বিস্তার ঘটানো বা প্রথাগুলোকে নতুন করে লেখা বা নতুন প্রথাকে আত্মসাৎ করে চালাতে তারা কোন দ্বিধা করেননি, যতদিন তারফলে অর্থাগম ঘটেছে।” এরপর ছান্দোগ্য উপনিষদের ১.১০ – ১.১১ শ্লোকের (আমাদের আলোচ্য শ্লোকের আগের দুটি) উল্লেখ করে বলছেন, “কুরুদেশের এক বিপর্যস্ত ব্রাহ্মণ উসস্তি চক্রায়ণের গল্প তার একটা উদাহরণ। শিলাবৃষ্টি বা ঐরকম কোন বিপর্যয়ে তাঁর শস্যক্ষেত্র ধ্বংস হওয়ায় স্ত্রীকে সাথে নিয়ে পৃষ্ঠপোষকের খোঁজে তাঁকে দেশান্তরী হতে হল। পথে, তাঁকে ভিক্ষা করতে হল কুলমাস (মাষকলাই), অর্ধভুক্ত, পড়ে থাকা অংশ, এক নীচু জাতির মানুষের কাছ থেকে, কোন ব্রাহ্মণই এরকম খাবার খেতে চাইবে না। ঐ খাবার খেয়ে তিনি তরতাজা হলেন, এবং পরের দিন রাজসভায় সাফল্য পেলেন।

“নতুন পুরোহিতকুল আর্য এবং অনার্য জনজাতি (tribe) থেকে এক সমাজ গড়ে ওঠাকে প্রভাবিত করেছিল। এটা কোন সুপরিকল্পিত, সচেতন, উদ্দেশ্যপূর্ণ কার্যক্রম ছিল না, ছিল ক্ষুধার ফল। একমাত্র লক্ষ্য ছিল জীবিকা চালানো। বেদশিক্ষার জন্য যে দীর্ঘ ও সুদৃঢ় প্রশিক্ষণ ব্রাহ্মণদের মধ্যে নিজ জনজাতির গণ্ডীর বাইরেও এক ধরনের ঐক্য গড়ে তুলেছিল, তাদেরকে সাহায্য করেছিল জনজাতিসুলভ বন্ধনগুলোকে শিথিল করে এক সমাজ গড়ে তুলতে, তা-ই আবার তাদেরকে লাঙল বা ধনুক চালাতে অক্ষম করে তুলেছিল। নতুন পুরোহিতদের সংখ্যা এত বেড়ে গেছিল যে জনজাতির বা গোষ্ঠীর (tribal clan) অধিপতিদের জন্য আচার-অনুষ্ঠান করেই জীবননির্বাহ করা আর ভালোভাবে যাচ্ছিল না।

দারিদ্র্য তাদের অনেককেই দরিদ্র জাতিগুলির জন্য সহানুভূতিশীল করে তুলেছিল। তারা এমন এক সমাজ গড়ে তুলতে সাহায্য করল যা সম্পত্তির পুরোন ধারণার চেয়ে নতুন ধারণার সাথে বেশি খাপ খায় – এই ধারণা জনজাতির সবার জন্য নয়, কারণ এই সম্পত্তি সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল (যেমন পালিত পশুর দল) ছিল না – এ হল কৃষিজাত সম্পত্তির ধারণা। বক দালভ্য বা গ্লাভ মৈত্রেয়-র গল্প (ছা. উপ. ১.১২) দেখায় যে, যদি অবশ্য এই গল্পের কোন যৌক্তিক অর্থ আদৌ থাকে, কীভাবে ব্রাহ্মণরা অনার্য জনজাতির মধ্যে ঢুকে পড়তে পারত, নতুন প্রথা-আচার গ্রহণ করত, এবং এইভাবে খাদ্যসংগ্রহকারীদেরকে খাদ্য-উৎপাদনকারীতে পাল্টে দিতে পারতো। এই দুই-নামধারী ব্রাহ্মণ (যার এরকম বিকল্প নাম সম্ভব যদি একটি হয় পিতৃতান্ত্রিক, অন্যটি মাতৃতান্ত্রিক) শিক্ষার জন্য ভ্রমণের সময় এক রাতে কয়েকটি ‘কুকুর’কে আড়াল থেকে দেখেন।

এই কুকুররা তাদের নেতা, এক সাদা কুকুরকে বলে ‘প্রভু, আমাদের জন্য কিছু খাবারের বন্দনা করুন’। সকালে সাদা কুকুরটি এক প্রথাগত বন্দনার আচার পালন করলো, প্রয়োজনীয় বৃত্তাকার প্রদক্ষিণ এবং ব্রাহ্মণসুলভ আচার সহ। এই গল্পটির কোন মানে দাঁড়াতে পারে একমাত্র যদি এটাকে কুকুর-টোটেম জনজাতির বা গোষ্ঠীর কোন আচারের বর্ণনা ধরা হয়। নিশ্চুপ ব্রাহ্মণের উপস্হিতিও কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ। দুর্ভাগ্যবশত, এই অনুসন্ধান চালিয়ে যাওয়ার মতো উপাদান নগণ্য।

“যদিও লোভতাড়িত কিন্তু ব্রাহ্মণদের এই নমনীয়তা হিংসার ন্যূনতম ব্যবহার করে আত্মীকরণের কাজে এসেছিল,…।”

[টোটেম, totem – কোন গোষ্ঠীর সাধারণ লক্ষণচিহ্ন ও পরিচয়, কোন পশু, ফুল, ফল, যা সেই গোষ্ঠীর কাছে অবধ্য বা অভক্ষ্যণীয় হয়ে দাঁড়ায়, ক্রমে ট্যাবু (taboo)] কোসাম্বি পরে, তাঁর ‘Combined Methods of Indology’ বইতে আবার বক দালভ্য-র গল্পে ফিরে আসছেন (পৃ. ১৯৯) –

“ক্ষুধার্ত ব্রাহ্মণ ভ্রমণকারী বক দালভ্য (বা গ্লাভ মৈত্রেয়) ছান্দোগ্য উপ.-র ১.১২ সূক্তে এক কুকুরের দলকে আড়াল থেকে দেখেন, এক সাদা কুকুরের (শ্ব শ্বেত) নেতৃত্বে, তারা হাতধরাধরি করে খাদ্যের জন্য উদ্-গীথ বন্দনা করে। এর একমাত্র অর্থ হতে পারে, এ হল কোন কুকুর টোটেম বিশিষ্ট গোষ্ঠীর (clan) উর্বরাশক্তির আচার-রীতি (fertility rite); আমি একেবারে নিম্নতম জনজাতি-জাতির মধ্যে ঐরকম বন্দনা ও নাচ দেখেছি। অর্থশাস্ত্র.১১ তে শক্তিশালী সামরিক জনজাতির তালিকায় একটি ‘কুকুরক’ (কুকুর) জনজাতির নাম আছে; ‘অটবিকাশ’দের (জঙ্গলবাসী) চেয়ে একধাপ ওপরে কিন্তু রাজশক্তির পক্ষে বিপজ্জনক। বিহারের রাঁচীর আশেপাশের অঞ্চলের নাম ‘কোকেরাহ’ ঐ কুকুরক থেকেও আসতে পারে।”

অর্থাৎ কোসাম্বি বলছেন এমন এক সমাজের কথা, ক্ষুধাতাড়িত ব্রাহ্মণ, দীর্ঘ ও কঠোর বেদশিক্ষার ফলে জনজাতির গণ্ডী ছাপিয়ে যেতে সক্ষম, কিন্তু নিজের খাবার জোগাড়ে বা উৎপাদনে অক্ষম, অন্যের প্রস্তুত খাদ্যের ওপর যাকে নির্ভর করতে হয়, এমন এক সমাজ যেখানে শ্রেণীভেদ দেখা দিয়েছে, উদ্বৃত্ত উৎপাদন স্বল্প হলেও সম্ভব হচ্ছে, নাহলে নিজে খেয়ে ব্রাহ্মণকে খাওয়াবে কী, এমন এক সমাজ যেখানে মাতৃতান্ত্রিক পরিচয় পুরো মুছে যায়নি, সেই ব্রাহ্মণ নতুন নতুন গোষ্ঠীর সংস্পর্শে আসছে,

তার মধ্যে অনুপ্রবিষ্ট হচ্ছে, তার আচার গ্রহণ করছে, তার পুরোহিতকে সরিয়ে নিজে সেই জায়গা নিচ্ছে এবং ফলমূল ও শিকার সংগ্রহকারী জনজাতির মধ্যে কৃষির প্রসার ঘটাচ্ছে, কৃষিভিত্তিক সভ্যতার বিস্তার ঘটছে, উদ্বৃত্ত উৎপাদন ও শ্রেণীবিভাজন আরও সুলভ হচ্ছে, শুষ্কভূমি থেকে নদীভিত্তিক কৃষিসভ্যতা গড়ে উঠছে, গঙ্গা-যমুনার দোয়াব হয়ে এই সভ্যতা ক্রমশ পূর্বে ও দক্ষিণে আত্মীকরণ ও ন্যূনতম রক্তপাতের মধ্য দিয়ে এগোচ্ছে। এটাই বুদ্ধ-পূর্ববর্তী সমাজের এক খণ্ডচিত্র, কোসাম্বির বিশ্লেষণে।

লক্ষণীয় যে শঙ্করাচার্যের সময় কিন্তু বুদ্ধপরবর্তী যুগ। সেসময় ভারতের ইতিহাসে বুদ্ধ এসে গেছেন, বৈদিক যাগযজ্ঞের জটিল, সুদীর্ঘ ও কঠোর প্রথা ও আচারের বিরুদ্ধে ক্ষত্রিয়জাত এক মহান মানুষ বিপুল প্রভাব বিস্তার করেছেন, জৈনমতও হাজির। উভয়েই বেদবিরোধী। মৌর্যবংশের প্রথম স্হাপনাকারী শেষ জীবনে জৈন, পরবর্তীরা বৌদ্ধ। খনিজ আকরিক সমৃদ্ধ ছোটনাগপুরের মালভূমির অতি নিকটে তাদের রাজধানী। বিশেষত লোহা আর তামার ওপর সুদৃঢ় নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে গোটা উত্তর-পশ্চিম-ক্রমে মধ্য-দক্ষিণ-পূর্ব ভারতে তাদের দাপট ও বৌদ্ধধর্মের প্রসার ঘটেছে। 

বুদ্ধ মারা যাবার পর বৌদ্ধমত হীনযান ও মহাযানে ভেঙে যাচ্ছে। বিজ্ঞানবাদ হয়ে বৌদ্ধ মাধ্যমিক মতবাদ পৌঁছে যাচ্ছে নাগার্জুনের শূন্যবাদে, যা চরম ভাববাদী। ভারতীয় প্রেক্ষাপটে এই নাস্তিক (বেদবিরোধী) মতের মোকাবিলায় হাজির হচ্ছেন পূর্ব-মীমাংসা গোষ্ঠী, কুমারিল, প্রভাকর প্রমুখ। তাঁরা বেদকেই চরম বলে ধরে বৈদিক আচারের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের ধারণাকে অস্বীকার করছেন। 

এই সময়ে শঙ্করাচার্য আসছেন। সারা ভারত জুড়ে কৃষিভিত্তিক সভ্যতা, ধাতুর নিষ্কাষণ ও ব্যবহার, ব্যবসা সবই দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত। বৌদ্ধ শূন্যবাদ ও মীমাংসাকে প্রতিহত করতে তাঁকে বিপুল পরিশ্রম করতে হচ্ছে। বৈদিক আচার-আচরণের বাহ্যিক রূপ থেকে তিনি পৌঁছনোর চেষ্টা করছেন গূঢ়তায়, ক্রমশ পৌঁছে যাচ্ছেন রহস্যময়তায় এবং মায়াবাদে। কিন্তু লক্ষণীয়, বেদের ভাষ্য দিতে গিয়ে কোন খুঁটিনাটি তাঁর চোখ এড়াচ্ছে না, দুটি নাম না দুটি ব্যক্তি, ক্ষুধা না শিক্ষার জন্য ভ্রমণ, সাদা কুকুর কেন, ক্ষুধা মিটতে পারে একদিকে যেমন সূর্য, বরুণ, প্রজাপতি, সাবিত্রীর দ্বারা, তেমনি জ্ঞানের ক্ষুধা মিটতে পারে শ্বাস-বাণী-উচ্চারণ দ্বারা, আত্মা ক্ষুধার্ত, এই হল তাঁর ব্যাখ্যা।

এই ব্যাখ্যা চমকপ্রদ, অত্যন্ত মনোগ্রাহী, বুদ্ধিদীপ্ত, বিকশিত ও চিত্তাকর্ষক কিন্তু অনৈতিহাসিক। সমাজের বিশেষ অবস্হাকে নজরে রেখেও, গূঢ় অর্থ বের করতে গিয়ে, সমাজের লক্ষণ ও চিহ্নগুলোকে সমাজের প্রেক্ষিতে ব্যাখ্যা না করে মনোজগতে তার উত্তর খুঁজছেন শঙ্কর, তার বিপরীতে কোসাম্বির বিশ্লেষণ।

তবুও লক্ষণীয় যে পরবর্তী প্রাচ্যবাদী পশ্চিমী ব্যাখ্যাকার বা ঐ শিক্ষায় শিক্ষিত স্বদেশী সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের মতো তিনি ঐ শ্লোকটিকে ব্যঙ্গার্থে নেননি। নেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভবও ছিল না। কারণ বেদ ও ব্রাহ্মণ শ্রেণীকে রক্ষাই তাঁর ভূমিকা। অনেক যুগ পরে যখন আচার-অনুষ্ঠানগুলি বাস্তব জীবনে নিষ্প্রাণ হয়ে পড়েছে, তাদের প্রয়োজন ফুরিয়েছে, তখন পাশ্চাত্যশিক্ষায় শিক্ষিত বেদান্তবাদীরা এই শ্লোকের ব্যঙ্গাত্মক ব্যাখ্যা করেছেন, তারা আর শঙ্করের মতো পরিশ্রম করেননি, বা তাদের করতে হয়নি, আনুষ্ঠানিকতাকেকে ব্যঙ্গ করে তারা সরাসরি পৌঁছে যাচ্ছেন মায়াবাদী বেদান্তমতে, আরও বেশি অনৈতিহাসিক ভাবে।

আর রাহুল ও কোসাম্বি চেষ্টা করছেন সমাজের মধ্যে ঐ শ্লোকের অর্থ খুঁজতে। কোসাম্বি অসাধারণ বিশ্লেষণে দেখাতে চাইছেন ভারতীয় সমাজের নিজস্বতা।

ক’জন শেষ অবধি পড়ছেন বা পড়বেন জানি না। তবু একটা উদাহরণ দিয়ে শেষ করি। মনে পড়ছে মদমহেশ্বরে শোনা গল্পটি, যা এখানে আগে লিখেছি, কিন্তু সেটা নয়। এ লেখা যারা পড়ছেন, তাদের অনেকের ঘরেই আধুনিক প্রযুক্তির মিক্সার, গ্যাস ওভেন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন আছে, পাশাপাশি আছে সুপ্রাচীন নব্য প্রস্তর যুগের একটি হাতিয়ার, শিল-নোড়া (নীচের ছবি, কোসাম্বির বই থেকে নেওয়া)। সে যুগে শষ্য পেষাই করে খাবার বা আটা-ময়দা তৈরী হত। কল তার জায়গা নিয়েছে, তাই কাজের ধরন পাল্টানোয় আকারও পাল্টেছে, আগেকার বাঁকানো, একদিক সরু আর একদিক মোটা শিল পাল্টে এখন চ্যাপ্টা হয়েছে, হয়েছে আগাগোড়া সমান। এখনও দক্ষিণ ভারতের কয়েক জায়গায় শিশুর নামকরণের সময় স্ত্রী-আচারের মাধ্যমে ঐ নোড়াকে সাজিয়ে শিশুর পায়ের কাছে রেখে পাথরের মতো শক্তিশালী হওয়ার কামনা করা হয়। 

ভারতের স্তরে স্তরে, জীবনের পরতে পরতে এরকম বহু আচার পালিত হয়ে চলেছে, যা তার আসল অর্থ হারিয়ে ফেলেছে, হয়তো সেগুলো দিয়ে ইতিহাসের নতুন দরজা খুলতে পারে, অতীতের দিকে, ভবিষ্যতের দিকেও। পশ্চিমবাংলায় এ চেষ্টা করে গেছেন আরেকজন মার্কসবাদী। তার নাম বিনয় ঘোষ – ‘পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি’ বইটি তার ফসল – দুঃখের বিষয় তার এই প্রচেষ্টাও সাবেকী মার্কসবাদী ঘরানার বাইরে। 

শ্রেণীসংগ্রাম আর সভ্যতার ইউরোপীয় মডেলকে অন্ধভাবে অনুসরণ করে রাশিয়ার বিপ্লব হয়নি, চীনের বিপ্লবও রাশিয়ার বিপ্লবের অন্ধ অনুকরণ নয়। ভারতীয় সমাজে জাতিবর্ণ, সামন্ততন্ত্র ও শ্রেণীর সম্পর্ক না বুঝে ভারতীয় বিপ্লবের সম্ভাবনা একদিকে পশ্চিমী সভ্যতার আদলে গড়ে তোলা সংসদীয় চোরাগলিতে পাক খেয়েছে, অন্যদিকে উদীয়মান ফ্যাসিবাদ মোকাবিলায় অক্ষম হয়ে পড়ছে, সে বিপ্লব অবশ্য চীনের অন্ধ অনুকরণেও হবার নয়।

শ্রেণীসংগ্রাম অর্থাৎ ইতিহাস কিন্ত থেমে নেই, থেমে নেই পথ খোঁজাও!
( ছবি দুটি কোসাম্বীর বই থেকে নেওয়া)
সুত্র গুলো ভিতরে ভিতরে দিয়ে দিয়া হয়েছে।

 

লেখক-অধ্যাপক, অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
সামাজিক ও পারিপাশক বিশ্লেষক।

আরো পড়ুন