বাংলায় নাকি গণেশপূজার রীতি নেই। তা, সমস্ত মঙ্গলকাব্যের শুরু গণেশবন্দনা দিয়ে হয় কেন ? কবিকঙ্কণ মুকুন্দরাম চক্রবর্তী চণ্ডীমঙ্গলকাব্য শুরুই করলেন এইভাবে,
“গণপতি দেবের প্রধান
ব্যাস আদি যত কবি
তোমার চরণ সেবি
প্রকাশিলা আগম পুরাণ।”
ওদিকে রায়গুনাকর ভরতচন্দ্র অন্নদামঙ্গল শুরু করছেন কি বলে ? না
“গণেশায় নমো নমঃ আদি ব্রহ্ম নিরুপম
পরমপুরুষ পরাৎপর।
খর্ব্বস্থূল কলেবর গজমুখ লম্বোদর
মহাযোগী পরম সুন্দর।।…
আমি চাহি এই বর শুন প্রভু গণেশ্বর
অন্নপূর্ণামঙ্গল রচিব।
কৃপাবলোকন কর বিঘ্নরাজ বিঘ্ন হর
ইথে পার তবে যে পাইব।।…”
প্রাচীন বাংলার সাহিত্যে গণেশের স্তুতি ছড়িয়ে আছে পাতায় পাতায়, অজস্র নিদর্শন, কত বলবো ? কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশিত, অমরেন্দ্রনাথ রায় সম্পাদিত, শাক্ত পদাবলীতে দেখছি দশরথি রায় বলছেন,
“বসিলেন মা হেমবরণী, হেরম্বে ল’য়ে কোলে।
হেরি গণেশ-জননী-রূপ, রাণী ভাসেন নয়ন-জলে।
ব্রহ্মাদি বালক যার, গিরি-বালিকা সেই তারা।
পদতলে বালক ভানু, বালক চন্দ্রধরা।
বালক ভানু জিনি তনু, বালক কোলে দোলে।।
রাণী মনে ভাবেন- উমারে দেখি, কি উমার কুমারে দেখি,
কোন্ রূপে সঁপিয়ে রাখি নয়নযুগলে।
দাশরথি কহিছে, রাণী, দুই তুল্য দরশন
হের, ব্রহ্মময়ী আর ঐ ব্রহ্ম-রূপ গজানন,
ব্রহ্ম-কোলে ব্রহ্ম-ছেলে বসেছে মা বলে।”
শেষে বলি বাংলার কবি কৃত্তিবাস ওঝা যে রামায়ণ রচনা করেন, সেটিতে উনি বাল্মীকি বর্ণিত কার্তিকের জন্মবৃত্তান্ত বাদ দিয়ে ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ ও বৃহদ্ধর্ম পুরাণে-এ উল্লিখিত কাহিনির মিশেলে গণেশের জন্মবিষয়ক একটি উপাখ্যান লেখেন, যা আমরা অনেকেই ছোটবেলায় পড়েছি। মনে পড়ে ?
“কোপদৃষ্টে সুদৃষ্টে যাহা পানে চাই।
দেব দৈত্য নাগ নর হৈয়া যায় ছাই।।
পূর্ব্ব কথা কহি রাজা তাহে দেহ মন।
যেমতে শিবের পুত্র হৈল গজানন।।”
তা বলি মহাবিজ্ঞ কমিগণ, গনেশপুজার প্রাচীন ঐতিহ্য বাঙালিজীবনে ফিরে আসছে, তাতে আপনাদের এত গাত্রদাহ হচ্ছে কেন ? আপনারা তো পন্থকে আফিম বলে বাঙালির ধর্মচেতনার ইতি টানতে চেয়েছিলেন, হেরে ভূত হয়ে গেলেন। এখন যদি আপনার পাড়ার লোক লাউডস্পিকার বাজিয়ে আপনাদের গণেশবন্দনা শোনান, মনে করুন এটা আপনাদের চিত্তসুদ্ধিকরণের প্রথম ধাপ, মেনে নিন মশাই, নাহলে বুড়োবয়েসে সুভাষ চক্রবর্তী আর রেজ্জাক মোল্লার দশা হবে।