আশ্বিন ইউরাথু নামের এক উগ্র বৌদ্ধ বিক্ষুর কথা কম-বেশি সবাই জানে। তাকে বিন লাদেনের সঙ্গে তুলনা করা হয়। রোহিঙ্গাদের বার্মা থেকে খেদিয়ে দেয়ার উশকানি সে নিয়মিতই দিয়ে আসছে। কিন্তু আশ্বিন ইউরাথু কি ত্রিপিটক থেকে লাইন ধরে ধরে দেখিয়ে বলেছে, এখানে বুদ্ধ বলেছেন, তোমরা রোহিঙ্গাদের বা অবৌদ্ধদের বের করে দাও তোমাদের দেশ থেকে? বৌদ্ধদের এমন কোন ধর্মীয় মহাপুরুষের রচনা থেকেও কি দোহাই দিয়ে বলেছে বার্মাতে এরা থাকতে পারবে না? না, আশ্বিন ইউরাথু বৌদ্ধ ধর্মীয় কোন উছিলাই ব্যবহার করতে পারেনি। সে সরাসরি জাতীয়তাবাদের আশ্রয় নিয়েছে। তার কাছে রোহিঙ্গারা আরাকানে ‘বিদেশী’, ‘বাঙালী’। তারা বিচ্ছন্নতাবাদী। তারা বার্মার জন্য ক্ষতিকর…। বিন লাদেন সুরা তাওবা, আনফাল থেকে অনুপ্রাণিত ছিলো। নির্দেশ পেয়েছিলো কুরআনের সুরা থেকে। কিন্তু দুটোই নিকৃষ্ট কাজ। বিন লাদেনের দায় এক্ষত্রে ইসলাম এড়াতে পারে না। কিন্তু দৃশ্যত আশ্বিন গেরুয়া পরিহিত একজন বৌদ্ধ সন্ন্যাসী হলেও তার আশ্রয় বার্মিজ জাতীয়তাবাদ। এতে তার অপরাধ লঘু হয়ে যায় না। যেমন হিন্দুত্ববাদীদের অপরাধও লঘু হয়ে যায় না। কিন্তু তারাও হিন্দু ধর্মের কোন অথেনটিক সোর্স ব্যবহার করতে পারে না। হিন্দুদের একক কোন মান্যবর অবতার নেই। তাদের একক কোন নবীর নির্দেশ পালন করতে হয় না। হিন্দুত্ববাদ আসলে পাকিস্তানের জন্মের সঙ্গে জড়ানো একটি দানব। এটি তাই লোকায়েত হিন্দুধর্ম নয়, রাষ্ট্রীয় জাতীয়তাবাদই ক্রীড়নক হিসেবে কাজ করে। ইসলামী মৌলবাদ এখানেই অনন্য…।
২.
কিন্তু বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ইস্যু পুরোটাই ধর্মীয়! পুরো দেশের মানুষ রোহিঙ্গাদের পাশে। এই সমর্থনের কারণ যে মুসলমানিত্ব সেটা তো কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। এদেশে তাহলে রোহিঙ্গা বিরোধী কারা? ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে বাকী ১০ ভাগ অমুসলমানদের রোহিঙ্গা বিষয়ে সে অর্থে ধর্মীয় কোন টান থাকবে না বলাই বাহুল্য। শ’পাঁচেক হিন্দু বার্মা থেকে পালিয়ে আসার পর দেখা গিয়েছিলো তাদের ত্রাণ এবং আশ্রয় দিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ ছুটে গিয়েছিলো। পুরো ব্যাপারটিই করা হয়েছিলেন সাম্প্রদায়িক বিবেচনায়। রোহিঙ্গারা ধর্মে হিন্দু হলে যে ৩ লাখ এখন আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে এদের দেখতে এরাই দৌড়ে যেতো। একইভাবে রোহিঙ্গারা হিন্দু হলে বাংলাদেশে ঠাই-ই পেতো কিনা সন্দেহ। আর দেশজুড়ে তাদের জন্য যে আহাজারি তার বিন্দু পরিমাণও দেখা যেতো না।
৩.
বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের প্রতি সব সময় মানবিক আচরণ করেছে। তাদের বিরাট একটা অংশ এইদেশে আশ্রয় পেয়েছে। কুটনৈতিক এবং রাজনৈতিক কারণে রোহিঙ্গাদের জন্য সীমান্ত খুলে দেয়ার ঘোষণা দেয়া সম্ভব নয়। তাই প্রশাসন রোহিঙ্গা স্রোতের দিকে চোখ বুজে থাকার কৌশল নিয়েছে। ট্রাকে ট্রাকে করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশের নানা জায়গায় থাকার জায়গা করে দিচ্ছে। বক্সবাজারের স্থানীয় সাধারণ জনগণ রোহিঙ্গা বিরোধী একটা মনোভাব নিয়ে আগে থেকেই ছিলো। কারণটি শ্রমবাজারে রোহিঙ্গাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে যাওয়া। সারাদেশের রোহিঙ্গা প্রীতি বক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরের আশেপাশে বসবাসকারীদের মধ্যে নেই। এক্ষেত্রে রোহিঙ্গারা মুসলমান বলে স্থানীয়দের মোটেই মুসলমানিত্বে কোন সুরসুরি লাগছে না। এটাই পৃথিবীর সমস্ত ধর্মীয় জাতিগত ঐক্যের হাস্যকর চিত্র। পেটই আসলে আমাদের কখনো জাতীয়তাবাদী, কখনো ধর্মবাদীর দিকে ঠেলে দেয়।
৪.
সর্বশেষ রোহিঙ্গাদের নিয়ে রাজনৈতিক খেলার খবর হচ্ছে টেকনাফের চাকমা পল্লীতে রোহিঙ্গাদের পুশইন করা হচ্ছে ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগের মাধ্যমে। কয়েকশ রোহিঙ্গা পরিবারকে সেখানে ঘর তুলে দেয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতাদের মদতে। এখানে বড় ধরণের পাহাড়ী পলিট্রিক্স ঘটানো হচ্ছে। সেটেলার রাজনীতির বিষাক্ত প্লাণকেই এখানে বাস্তবায়িত করা হলো। তা চাকমারা মরল কি বাঁচল সেটা দেখে আমাদের কি লাভ? ওরা তো মুসলমান না!