Akbar Hussain
যখন মানুষের বাড়িঘর জ্বলে উঠে
অন্যের অবস্থানে নিজেকে এনে দেখা সহজ কাজ নয়। আমি দূরে বসে থেকে যখন সাম্প্রদায়িক হিংসায় নিরপরাধ, দরিদ্র আর অসহায় মানুষের বাড়িঘর দাউ দাউ করে জ্বলে উঠতে দেখি অনুভব করার প্রয়াস করি যদি আমারো সামান্য সহায় সম্পত্তি এমনি ভাবে জ্বলে পুড়ে নিঃশেষ হয়ে যেতো আমার কেমন লাগতো? আর এই ভীতি নিয়ে প্রতি রাতে শুতে যাওয়া, মাঝরাতে আমার ঘরে হামলা হতে পারে, আমার বোন, স্ত্রীকন্যা আমারি সামনে ধর্ষিতা হতে পারে অথবা আমাকেও একদিন বাপ দাদার ভিটে ছেড়ে দেশান্তরী হতে বাধ্য করা হতে পারে। আমি যখন এমনটি ভাবি তখন পরম নিরাপদ স্থানে বসে থেকেও আমার ভয় লাগে। আমি শিউড়ে উঠি।
এই ভীতির আর প্রাত্যহিক শঙ্কার মাঝেও যারা বাস করে যায় তারা সেই অনাদিকালের কৃষকের মতো। যারা খরা, বন্যা, শিলাবৃষ্টি আর পঙ্গপালের কথা জেনেও আশায় বুক বেঁধে গান গেয়ে জমিতে চাষ করে আর বুনে যায় বীজ আরেক নূতন ফসলের আশায়। খড়ের ঘরে আর হিজলের ছায়ায় বসে এরা আগুন নিভে গেলে নূতন খড় কুটোর সন্ধানে নামে আর নির্মাণ করে আরেক ভবিষ্যৎ। এখন বিম্বিসার অশোকের জগত নেই, আরো নেই সম্রাট হর্ষবর্ধনের রাজসভা তবে এখনো রয়ে গেছে সেই সব মানুষেরা যারা হিংসাকে দলিত করে নবজীবনের গান গায়।
ইতিহাস বার বার আমাদের মনে করিয়ে দেয়, তোমার হিংসা তোমারি সর্বনাশের রনভেরী। তোমরা একবার মৃতকে নয় জীবিত মানুষকে ভালোবেসে দেখ।