হিন্দু কারা? আরব পৌত্তলিক ও সেমিটিক নবীদের সূর্য পুরাণ। আরবরা হিন্দু ছিলো না। হিন্দু কেবল মাত্র সিন্ধু সভ্যতার মানুষজনকে বুঝানো হয়। মুসলমান বর্গিরা আসার পর সিন্ধু সভ্যতার স্থানীয়দের তারা ‘হিন্দু’ নামে ডাকতে থাকে। আজকের ‘হিন্দু ধর্ম’ কিছুতেই ‘হিন্দুদের ধর্ম’ নয়। এটি পৌত্তলিক ধর্ম।
তাই আরব পৌত্তলিকদের ধর্ম ভারতবর্ষের পৌত্তলিকদের জ্ঞাতি কিনা তার কিছু পর্যালোচনা দেখা যেতে পারে। যেহেতু শ্রীকৃষ্ণ এবং মুসা নবীর কাহিনীটি হুবহু এক কাজেই গায়ের জোরে নিশ্চয় সব কিছু উড়িয়ে দেয়া যাবে না…।
কাবাঘরের ভেতর থেকে রাজা বিক্রমাদিত্যের একটা স্বর্ণের উপর লিপি খোদাই করা পাত পাওয়া গিয়েছিল যেখানে লেখা ছিল, মহান রাজা বিক্রমাদিত্য এই আরব জাতিদের যারা অন্ধকার ধর্মহীন অজ্ঞতায় নিমজ্জিত ছিল, তাদের মাঝে তার পবিত্র ধর্ম ছড়িয়ে দিয়ে সূর্যের মত আলোকিত করেন।
তিনি পাঠিয়েছিলেন পন্ডিতদের যারা ছিল ঈশ্বরের প্রতিনিধি। তারা এসেছিলেন ধর্ম প্রচার করতে আরবদের মুক্তি দিতে…। মোটামুটি এরকম কৃতজ্ঞতাসূচক স্মৃতিফলক নির্দেশ করে ভারতবর্ষের ধর্ম আরবদেশে রাজা বিক্রমাদিত্যের শাসনকালে রাজশক্তির পৃষ্ঠপোষকতায় প্রচারিত হয়েছিল।
কাবা যে প্যাগন মন্দির সে বিষয়ে আগেই জানা গিয়েছিল। বিক্রমাদিত্যের নামে কাবায় রক্ষিত স্মৃতিফলকটি এই ধারণা প্রতিষ্ঠিত করে আরব পৌত্তলিকরা যে ধর্ম পালন করত সেটি ভারতের হিন্দুদের একটি শাখা ছিল।
কাবাঘরকে কেন্দ্র করে সাতবার পাঁক খাওয়া, মাথা ন্যাড়া করা, সেলাই ছাড়া সাদা কাপড় পরা সবই ভারতের বড় বড় তীর্থের মন্দিরকে ঘিরে ভক্তদের আনুষ্ঠানিকতার সঙ্গে হুবহু মিল।
এখন বিক্রমাদিত্যের ফলকটি বিবেচনায় ধরলে প্রমাণ হয় কাবাঘর সম্ভবত বিক্রমাদিত্যের সময়ই তৈরি হয়েছিল। ভারত থেকে যে ঋষিরা বিক্রমাদিত্যের রাষ্ট্রীয় ধর্ম প্রচারের অংশ হিসেবে এখানে এসেছিলেন, তারাই মন্দিরটি তৈরি করেন সম্ভবত। তারপর স্বর্ণফলকটি স্মৃতি হিসেবে কাবার ভেতরে রাখা হয়।
এ বিষয়টি তুরষ্কের ইস্তাম্বুলের “Makhtab-e-Sultania” লাইব্রেরিতে রক্ষিত “‘Sayar-ul-Okul” ৩১৫ পৃষ্ঠায় নথিভুক্ত আছে।
Sayar-ul-Okul লেখা আছে, “Fortunate are those who were born (and lived) during king Vikram’s reign. He was a noble, generous dutiful ruler, devoted to the welfare of his subjects. But at that time we Arabs, oblivious of God, were lost in sensual pleasures.
Plotting and torture were rampant. The darkness of ignorance had enveloped our country. Like the lamb struggling for her life in the cruel paws of a wolf we Arabs were caught up in ignorance.
The entire country was enveloped in a darkness so intense as on a new moon night. But the present dawn and pleasant sunshine of education is the result of the favour of the noble king Vikramaditya whose benevolent supervision did not lose sight of us – foreigners as we were.
He spread his sacred religion amongst us and sent scholars whose brilliance shone like that of the sun from his country to ours. These scholars and preceptors through whose benevolence we were once again made cognisant of the presence of God,
introduced to His sacred existence and put on the road of Truth, had come to our country to preach their religion and impart education at king Vikramaditya’s behest.”
For those who would like to read the Arabic wording I reproduce it hereunder in Roman script: “Itrashaphai Santu Ibikramatul Phahalameen Karimun Yartapheeha Wayosassaru Bihillahaya Samaini Ela Motakabberen Sihillaha Yuhee Quid min howa Yapakhara phajjal asari nahone osirom bayjayhalem.
Yundan blabin Kajan blnaya khtoryaha sadunya kanateph netephi bejehalin Atadari bilamasa- rateen phakef tasabuhu kaunnieja majekaralhada walador. As hmiman burukankad toluho watastaru hihila Yakajibaymana balay kulk amarena phaneya jaunabilamary Bikramatum”.
(Page 315 Sayar-ul-okul).
আরব পৌত্তলিক
রাজা বিক্রমাদিত্য হিন্দু পুরাণের একজন রাজা। তবে বেশ কয়েকজন শাসক (যেমন:চন্দ্রগুপ্ত–২, ধর্মপাল, সম্রাট হেমু) “বিক্রমাদিত্য” উপাধি ধারণ করায় ঠিক কোন বিক্রমাদিত্য’র সময় আরবদেশে ভারতের ধর্ম প্রচারকরা গিয়েছিলেন বলা মুশকিল।
কবি কালিদাস তার “রঘুবংশ” কাব্যে রাজা চন্দ্রগুপ্ত একুশটি রাজ্য অধিকার করতে সক্ষম হন বলে লিখেছেন। কালিদাস ও ক্ষেমেন্দ্র’র বৃহৎকথামঞ্জরী কাব্যের বর্ণনা মতে, বিক্রমাদিত্য শক, ম্লেচ্ছ, কম্বোজ, যবন, তুষার, পারসিক, হুণ প্রভৃতি বর্বর জাতিদের হত্যা করে পৃথিবীকে ভারমুক্ত করেছিলেন। ম্লেচ্ছ-যবন দেশ বলতে আরবদেশকে বুঝানো হয়েছিল মনে হয়…।
ইসলাম ধর্মের মত খ্রিস্টান ধর্মটিও মূলত পৌত্তলিক ধর্ম থেকে বিবর্তিত হয়ে এসেছে। কথিত যীশুর জন্ম সময়কালে ইহুদীরা তিনটি গোষ্ঠিতে বিভক্ত ছিল- ফারিসিজ, এসেনিজ ও সাদুসিজ। এই সাদুসিজরাই ছিল মুসা নবীর অনুসারী। ফারিসিজ ও এনেসিজরা ছিল গৌতম বুদ্ধের অনুসারী।
খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দিতে সেলুসিড ও টলেমী রাজ্যে যে বুদ্ধবাদ প্রতিষ্ঠিত ছিল তা সম্রাট অশোকের অধ্যাদেশ সম্বলিত শিলাখন্ডে থেকে জানা যায়। বহু প্রমাণ রয়েছে গবেষকদের হাতে এসেনিজ গোষ্ঠিরাই পরে খ্রিস্টান ধর্মের সূচনা করে। বৌদ্ধবাদের যে অহিংস মতবাদ যীশুর চরিত্র নির্মাণে তার ছোঁয়া খুঁজে পাওয়া যায়।
তার কুমার জীবন, খ্রিস্টান ফাদার-সিস্টারদের বৈরাগ্য সবই প্রাচীন এনেসিজদের ধর্মীয় বিশ্বাস ছিল। এনেসিজরা বুদ্ধবাদের অনুসারী হলেও তারা ইহুদী হিসেবেই পরিচিত ছিল। খ্রিস্টান ধর্মটিকে গড়েপিঠে তুলেন মূলত সাধু পল।
তিনি এসেনিরা যে ধর্মমত বিশ্বাস করত সেটাই থিম হিসেবে ধরে সুসমাচার প্রচার শুরু করেন। এসেনিজরাই ফেরেস্তা, বেহস্ত-দোযগ, পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা, ক্রুশ বিদ্ধ ঈশ্বর পুত্রের পাপমোচন ইত্যাদিতে বিশ্বাস করত। এসেনিজরা বিশ্বাস করত গৌতম বুদ্ধ ভবিষ্যত বাণী করেছিলেন তার মৃত্যুর ষোলশো বছর পর একজন অবতার পৃথিবীতে আসবেন।
সেই সময়কাল পার হলে এসনিজ ইহুদীরা যারা বুদ্ধিস্ট ছিল তারাই যীশুর আবির্ভাবের ঘোষণা দেন। পরে যীশুর জন্ম কাহিনীটি আর্যদের সূর্য কিংবদন্তির সঙ্গে জুড়ে দেয়া হয়।
সূর্য কিংবদন্তি ছিল পৌত্তলিক আর্যদের ধর্মের নিউক্লিয়াস। এই বিশ্বের সমস্ত শক্তির উৎস সূর্যকে ধরে তাকেই ঈশ্বররূপে আর্যরা গণ্য করত। বেদের আর্যরা মনে করত রাশিচক্রের অশ্ব (মেষ) সূর্য দেবতা। তিনি মৃত্যুবরণ করেন মানবজাতির পাপের কারণে।
এই কারণে অশ্বমেধ যজ্ঞের প্রচলন হয়। এসেনিজরাও শুরুতে ক্রাইস্টের যে পুজা করত তা ভেড়ার আকৃতি বানিয়ে। কারণটি ঐ রাশিচক্রের মেষ (ভেড়া) রাশিকে আকৃতি দেয়া। প্রাচীনকালে এই ভেড়াকে বলা হত ইশ্বরের ভেড়া যে পৃথিবীর পাপ মোচন করতে এসেছেন।
কনস্ট্যান্টাইন পোগোনেটাস রাজত্বকালে ষষ্ঠ সিনোড দ্বারা সিদ্ধান্ত হয় প্রাচীন প্রতীক মেষের পরিবর্তে একটি মানুষ্যাকৃতি ক্রুশ বিদ্ধ অবস্থায় দেখানো হবে। ষষ্ঠ সিনোডের এই সিদ্ধান্ত পোপ আড্রিয়ান-১ কর্তৃক স্বীকৃত করা হয় (Quoted is Higgin’s Anacalypsis, vol ii P.3)।
প্রাচীন পৌত্তলিক ধর্মে ক্রুশ ছিল পবিত্রতম ধর্মীয় প্রতীক। প্রাচীন মিশরিয়ানরা ক্রুশকে পবিত্র চিহৃ বলে বিশ্বাস করত। তাদের বহু দেবতার গায়ে বা হাতে এই চিহৃ অংকিত থাকত। মিশরের অন্যতম দেবতা হোরাসের হাতে ক্রস ধরা চিহৃ দেখা যায়।
মূলত প্রাচীন মশিরীয়ানরাই ক্রসের ব্যবহার শুরু করে বলে ধরা হয়। আলেকজান্ডার যখন সম্রাট সেরাপিসের মন্দির ধ্বংস করেন সেই মন্দিরের পাথরের ভিত্তি ছিল ক্রসের উপর যেটা বর্তমান গির্জাগুলোতেও হয়ে থাকে।
প্রাচীন মিশরীয় দেবতা ওসিরিস ক্রুশ ধারণ করে মানুষের দিকে দৃষ্টিপাত করলে মানুষ অমরত্ব লাভ করত। এছাড়া গ্রীক, ব্যবিলীয়ন, পার্শিয়ানদের মধ্যে ক্রুশের ব্যবহার ছিল।
প্রাচীন ভারতে ব্রাহ্মণদের কাছে ক্রুশ ছিল একটি রহস্যময় পবিত্র চিহৃ। হিন্দুদের অগ্নি দেবের চিহৃ হচ্ছে ক্রুশ। বেনারস ও মথুরায় দুটি প্রধান মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ত্রুশের উপর। এমনকি হিন্দুদের ঈশ্বর শ্রীকৃষ্ণকে ক্রুশে চড়িয়ে হত্যা করা হয়েছিল বলে প্রাচীন ধর্মীয় তথ্য থেকে জানা যায় (Bible Myth, page 187, fiaure 7)।
পৃথিবীর ধর্মগুলোর একটি ধারাবাহিক ইতিহাস রয়েছে। প্রাচীন আর্যদের সূর্য কিংবদন্তি থেকেই পৌত্তলিক ধর্মগুলো পড়ে উঠেছিল হাজার হাজার বছর ধরে লালন পালনের মাধ্যমে। পরবর্তিকালে একেশ্বরবাদ যা সেমিটিক ধর্ম রূপে বিকাশিত হয়েছিল সেগুলোও ছিল পৌত্তলিক ধর্মের উৎস থেকে ধার করা।
খ্রিস্টান ধর্মটি এসেনিজ ইহুদীদের সৃষ্টি সেটি উপরে লিখেছি। রাশিচক্রের মেষ রাশি ২৫ ডিসেম্বর সূর্যকে অতিক্রম করে, তাই ঈশ্বরের মেষ ২৫ ডিসেম্বর পূর্ণ জীবন লাভ করে। এটাই যীশুর জন্মদিন যা এক সময় একটি ভেড়ার আকৃতিতে পুজিত হত।
খোদ খ্রিস্টান চার্চই তাদের গোপন নথিতে ভেড়ার বদলে একটি মানুষ্যাকৃতিতে ক্রাইস্টের আদল দেয়ার সিদ্ধান্ত হয় সেকথা জানা যায়। এইরকম একটি কাল্পনিক চরিত্রকে ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হযরত মুহাম্মদ নবী হিসেবে স্বীকার করেছেন এবং সাত আসমানে গিয়ে যীশুর সঙ্গে সাক্ষাতের দাবী পর্যন্ত করেছেন! এত বড় ধাপ্পাবাজির কথা ধর্মের ইতিহাসে সম্ভবত দ্বিতীয়টি নেই। ভেবে রীতিমত ভিড়মি খেতে হয়…।
(সূত্র: এরিয়ান সান-মাইথ: দ্য অরিজিন অব রিলিজিয়ন্স)
আর পড়ুন…..