ভারতীয় হিন্দুদের বেচে থাকার সংগ্রাম
ডা; মৃনাল কান্তি দেবনাথ
ভারতে যে ক’টি রাজনৈতিক দল আছে তাদের বিচার বিশ্লেষন করলে এক অদ্ভুত অবস্থা খুব সহজেই বোঝা যায়। অদ্ভুত এই জন্য বলছি, গনতন্ত্রের নামে এমন তরো জগা খিচুড়ি পৃথিবীর অন্য গনতান্ত্রিক দেশে বিরল।
আমার দেখা বা জানার মধ্যে, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের গনতান্ত্রিক ব্যাবস্থা সর্বোত্তম। আমেরিকার কথা ছাড়ুন, আমাদের দেশের কোন নেতা ভাবতেও পারে না যে ৮ বছরের বেশী তাদের রাজনৈতিক জীবন প্রায় থাকেই না। একমাত্র সেনেটর রা ছাড়া কোনো মুখ্য প্রশানিক পদে দুই বারের বেশী নির্বাচন লড়া যায় না। জেলে বসে নির্বাচন লড়া, বা কোনো বিশেষ কারনে দুর্নীতির সামান্য তম সন্দেহ থাকলে আমেরিকার মানুষ জন তাকে চিরতরে রাজনৈতিক নির্বাসনে পাঠিয়ে দেবে।
ভারতের গনতন্ত্র ব্রিটিশের তৈরী গনতন্ত্র, যার নাম “ওয়েষ্ট মিনিষ্টার গনতন্ত্র”, ওয়েষ্ট মিনিষ্টার লন্ডনের যেখানে পার্লামেন্ট সেই জায়গার নাম, পাশেই বিগ বেন। সেই দেশে রানীর শাসন, রাজন্য প্রথা আজো বিদ্যমান আমাদের দেশে রাজা রানী আর নেই, আছেন রাষ্ট্রপতি, যার প্রশানিক দ্বায়িত্ব খুব কম। শাসক দল যা বলবে তাতেই সায় দিতে হয়। কিন্তু সেখানে ,অর্থ্যাত গ্রেট ব্রিটেনে, মাত্র তিনিটি দল। প্রাধান মন্ত্রীর পদ ঘুরে ফিরেই পায় যে দল জেতে।
ভারত খাতা কলমে বিশ্বের সর্বোবৃহত্তম গনতান্ত্রিক দেশ। তার মুল কারন রাজনৈতিক ব্যাবস্থা গনতান্ত্রিক এবং লোক সংখ্যা চীনের চেয়ে সামান্য কম। দল কতোগুলো? আমি জানি না, সহজে কেউ বলতেও পারবেন না, একমাত্র নির্বাচন কমিশন ছাড়া।
দল গুলোর ধরন কেমন? তাদের সবার একটি দলীয় সংবিধান আছে। কিন্তু সেই মতো চলে কোন দল? একটিও না।
কংগ্রেস ১২৫ বছরের প্রাচীন দল। এক সময় দলীয় নির্বাচন হতো, আজ অনেক বছর সেই প্রথা চালু নেই। এখন এটি একটি “জাতীয় পরিবার তান্ত্রিক দল”— একজন ম্যাডামের কথায় চলে, বাকীরা তাবেদার। আঞ্চলিক দল গুলোর অবস্থা তথৈবচ। উত্তর থেকে দক্ষিন, পুব থেকে পশ্চিম, সব খানেই এক এক জন ‘মসিহা’ আছেন, সেই মসিহা নিজ নিজ পরিবার নিয়ে দল চালান, সংগে রাখেন কিছু মোসাহেন, তাবেদার যারা নেতা নেত্রীর কথায় ওঠা বসা করেন, নিজস্ব কোনো কথা বা মন্ত্রনা দেবার ক্ষমতা বা সেই সুযোগ একেবারেই নেই। পাড়ায় পাড়ায় মাইক লাগিয়ে নেতা বা নেত্রীর মহানতার চল্লিশা পাঠ করেন, মিথ্যার ঝুড়ি উগরে দেন। নেতার সামনে হাত জোড় করে অপরাধীর মতো দাঁড়িয়ে বা বসে থাকে, কুকুরের মতো লেজ নাড়ে ছুড়ে দেওয়া এক ছিটে রুটির আশায়। সিধান্ত নেন সেই ম্যাডাম, নেতাজী, তার ছেলে, মেয়ে বা ভাইপো। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তার জামাই, এক সময়ের রক্ষিতা ( তিনি আর বেচে নেই)।।
এর মধ্যে একমাত্র ব্যাতিক্রম পুর্বতন জনসংঘ বা বর্তমান বিজেপি। কিন্তু যতোদুর জানি আমাদের পশ্চিমবঙ্গে ( আমি বাংলা নামে কোনোদিন ডাকবো না, এর নাম পরিবর্তন করা হলেও) দু চার বছরের মধ্যে এই দলের, যার একজন সক্রিয় সদস্য আমিও, কোনো দলীয় নির্বাচন হয়েছে বলে জানি না। তবুও এটা জানি সর্বভারতীয় স্তরে শুধু মাত্র এক জনের কথায় এই দলটি চলে না। আর সেটাই বিজেপির আভ্যন্তরীন শক্তি। ‘ভারতীয় জাতীয়তাবাদ” এই দলের আদর্শ , বি বি সি বলে “হিন্দু জাতীয়তা বাদী দল”।।
একটি মাত্র লোকের কথায় বা মতে যে দল চলে, সে রাজনৈতিক হোক বা ধর্মীয় হোক বা সামাজিক হোক তা বেশীদিন চলে না। নদীর যেমন নিজস্ব স্রোত না থাকলে, অববাহিকা অঞ্চল থেকে বৃষ্টির জলের ধারা এসে না পৌছালে সেই নদী বেশী দিন স্রোতস্বিনী থাকে না ,শুখিয়ে যায়, ঠিক তেমনি একটি রাজনৈতিক দল শুধু মাত্র একটি লোকের অঙ্গুলি হেলনে বেশীদিন চলে না। সেই তিনি যতোদিন আছেন ,হয়তো চলবে, তিনি না থাকলে কিছুদিনের মধ্যেই শেষ। এটাই কালের ধর্ম। এর ব্যাত্যয় হয় না ,হবে না ,হতে পারে না। দেখছেন তো, কার্ল মার্ক্সের দর্শন শুধু মাত্র লেলিনের হাত ধরে সারা পৃথবীর এক তৃতীয়াংশে রাজত্ব করেছিলো, আর আজ তাদের অনুবীক্ষন যন্ত্র দিয়ে দেখতে হয়।
তবে মানুষ যতোদিন প্রকৃত জ্ঞানের আলোয়, শিক্ষার আলোয় উদ্ভাসিত না হবে, ‘তমসো মা জ্যোতির্গময়’ এর জগতে না পৌছাবে, ততোদিন সমাজে লোভী থাকবে, অশিক্ষা কু শিক্ষার প্রভাবে, কিছু না কিছু পাওয়ার লোভে এই সব রাজনৈতিক দলের নেতা নেত্রীর সামনে হাত জোড় করে দাড়াবে, তাদের তল্পিবাহক হবে, দল ভারী করতে ছোটা ছুটি করবে, মাইক লাগিয়ে মিথ্যার ঝুড়ি বলে সাধারন মানুষকে দলে টানবে। আমাদের পশ্চিম বংগেও আজ তাই চলছে। কিন্তু এর শেষ হবেই, অন্যত্র ও শেষ হবে। বেশ কিছু ধর্মের মধ্যেও ঠিক এই জিনিষ আছে,তারাও একদিন “কালের কপোল তলে” শেষ হবে। এই আপদ মার্কা দলীয় নেতা নেত্রীরা যতোদিন আছে বা থাকবে তোতদিন ভারতের উন্নতি আশা করা বৃথা। এরা শুধু চায় ক্ষমতা লাভ করে তার অপব্যাবহার, আর কিচ্ছু না। এরা কাকের ময়ুরপুচ্ছে ধারী প্রতারক। জনগনের শ্ত্রু।
বিজেপি যতোদিন ভারতীয়তা বা হিন্দুত্ব নিজের অন্তরে ধরে রাখবে, বেচে থাকবে। ভারতীয় দর্শন ভারতের অন্তরাত্মা। বিদেশী দর্শন, ধর্ম তত্ব ভারতের বা ভারতীয়দের ধংসের কেন্দ্র বিন্দু। ভারতীয় দর্শন ভিত্তিক যে জাতীয়তা বাদ, সেই আদর্শকে মুল মন্ত্র হিসাবে নিজের অন্তরে গ্রহন করে, তার সুষ্ট রুপায়নে নিরলস কাজ করে নেবার প্রতিজ্ঞা করতে হবে বর্তমান প্রজন্মের ছেলে মেয়েদের। কারন ভারত হিন্দুদের আদি বাস ভুমি, ভারতীয় দর্শন সেই আদি ভুমির জ্ঞানী মুনি ঋষিদের বুদ্ধিদীপ্ত অনুভুতির ফসল। একে বাদ দিয়ে “হিন্দু জাতিয়তাবাদ কে বাদ দিয়ে”, কিছু বস্তা পচা বৈদেশিক রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং সামাজিক প্রথা নিয়ে চললে, ভারত বাচবে না। কোনো মিশ্রন আসল বস্তু হতে পারে না, সেটা নানা জিনিষের মিলে মিশে এক সংকর জিনিষ। সোনায় খাদ মেশানোর মতো। খাদ বেশী হলে ভেংগে যায়, এটা পদার্থের ধর্ম। জাতির মধ্যে খাদ বেশী হলে সেই জাতি থাকে না। এটা পরিক্ষীত সত্য, ঐতিহাসিক ভাবে সত্য।
ভারতকে রক্ষা করার এই দ্বায়িত্ব নবীন ছেলে মেয়েদের, যারা শিক্ষিত, পরিশিলীত, যাদের সংষ্কার আছে। তারাই রক্ষা করতে পারে ভারতকে দেশ হিসাবে, ভারতীয় হিন্দু জাতি হিসাবে, হিন্দু ধর্মী হিসাবে। আর কেউ নয়। এই রক্ষা করা তাদের দায়িত্বই শুধু নয় “বেচে থাকার সংগ্রাম”।