১৯৮৬ সাল। গুলাম মহম্মদ শাহ ফারুক আবদুল্লাকে হারিয়ে জম্মু কাশ্মীরের ক্ষমতা দখল করল। ক্ষমতায় এসে তিনি শুরু করলেন এক বিশাল আকারের মসজিদ নির্মানের কাজ, যা পরবর্তীতে পরিচিত হবে শাহ মসজিদ নামে। কিন্তু তিনি এই নির্মান শুরু করলেন যথারীতি এক প্রাচীন হিন্দু মন্দিরের প্রেমিসেসের মধ্যে। এলাকাটি New Civil Secretariat area জম্মুতে। হিন্দুদের পক্ষ থেকে এক বিরাট প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হল। যার উত্তরে গুলাম মহম্মদ শাহ স্থানীয় মুসলিমদের উত্তেজিত করলেন, এই বলে যে, ইসলাম খতরে মেঁ হ্যায়। সেই শুরু নিজের পূর্ব পুরুষের জমির ওপর দাঁড়িয়ে দিনের পর দিন সহায় সম্বলহীন অত্যাচারিত হওয়ার ইতিহাস। হাজার হাজার হিন্দু কাশ্মীরীর বাড়িঘর মন্দির আক্রান্ত হল কোনরূপ প্রতিবাদহীন। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হল দক্ষিণ কাশ্মীরের সোপর এলাকায়। এছাড়াও Vanpoh, Lukbhavan, Anantnag, Salar and Fatehpur প্রভৃতি এলাকায় একের পর এক আক্রান্ত হল হিন্দুদের বাড়ি। পুড়িয়ে দেওয়া হল তাদের বসবাসের আবাস বিনা প্ররোচনায়। শিশু বৃদ্ধ অসুস্থ মানুষদের নিয়ে পথে নেমে এলেন এইসব অঞ্চলে হাজার বছর ধরে বসবাস করা হতদরিদ্র মানুষের দল। আক্রান্ত হল হেরিটেজ হিসেবে ঘোষিত প্রাচীন হিন্দু মন্দিরগুলি। সকলেই জানেন কাশ্মীর অতি প্রাচীন কাল থেকে বৈদিক সংস্কৃতির উল্লেখযোগ্য পীঠস্থান। দিনের পর দিন ধ্বংস করে দেওয়া হল সেই সংস্কৃতির যাবতীয় নিদর্শন। সকলেই ধরে নেবেন এই সব কিছুর পিছনে কিছু ধর্মান্ধ মুসলিম মবই ছিল? কিন্তু না, আওয়ামী ন্যাশনাল কনফারেন্স এবং কংগ্রেসের কর্মীরাও প্রকাশ্যে দাপিয়ে বেড়াল পুরো এলাকা জুড়ে। হাজারে হাজারে কাশ্মীরী হিন্দু উদ্বাস্তু হয়ে চলে এল উত্তর প্রদেশ হরিয়ানা দিল্লির রাজপথে। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছাল যে কেন্দ্রীয় সরকারও মুখ বুঝে থাকতে পারল না। গুলাম শাহকে পদচ্যুত করে কাশ্মীরে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করলেন গভর্নর জগমোহন। কতজন হিন্দু কাশ্মীরী বাধ্য হয়েছিল নিজের পিতৃ পিতামহের সুপ্রাচীন বাসভূমি ছেড়ে আসতে? বিবিসির একটি রিপোর্ট অনুসারে সংখ্যাটা ২৫০,০০০। উইকিপিডিয়ার একটি আর্টকেল বলছে ৩৫০,০০০জন। http://www.bbc.co.uk/worldse…/specials/1246_land/page9.shtml ।https://en.wikipedia.org/wiki/Ethnic_cleansing_of_Kashmiri_Hindus
কে এই গুলাম মহম্মদ শাহ? ১৯৪৭এ তিনি জম্মু কাশ্মীরে কর্মরত ভারত সরকারের উচ্চপদস্ত আমলা, Controller of Supplies and Prices, যে পদে তিনি কাজ করেছেন ১৯৫৩ পর্যন্ত। ১৯৭৫-এ ইন্দিরা-ফারুক আবদুল্লা গভর্নমেন্টের স্টেট মিনিস্টার। ১৯৭৭-এও ন্যাশেনাল কনফারেন্সের ভোট প্রচার করেছেন। পার্টি জিতেছে। তিনি ক্যাবিনেট মন্ত্রী হয়েছেন, Transport, Food & Supplies, Trade Agencies, Estate Works and Power এতগুলি দপ্তর সামলেছেন। তারপর?
১৯৮৪ সালে ফারুক আবদুল্লার পিছনে ছুরি মেরে ১২জন এমএলএকে নিয়ে দল ছেড়ে তৈরি করেছেন আওয়ামী ন্যাশেনাল কনফারেন্স। ফারুক আবদুল্লার পতনের পর কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে সরকার গড়েছেন। অঙ্ক খুব স্পষ্ট যে ফারুক আবদুল্লার সরকার ফেলে দেবার পিছনে পুরো সমর্থন রাজীব গান্ধীরই ছিল। যেদিন কাশ্মীরী হিন্দুদের শয়ে শয়ে খুন করছে এই কংগ্রেস ও আওয়ামী কর্মীরা, কেন রাজীব গান্ধী চুপ করে থেকেছেন? কারণটা অজানা নয়। এই একই ভাবে পাঞ্জাবে অকালি দলকে চাপে রাখতে নেহাতই ক্ষুদ্র স্বার্থে ভিন্দ্রেনওয়ালাকে মদত দিয়ে খলিস্তানী আন্দোলন ইন্দিরা নিজের হাতে গড়ে তুলেছিলেন। বাকি ইতিহাস আমার মার্ক্সবাদী সেকু কুকুররা ছাড়া সকলেই জানেন। ১২ই মার্চ ১৯৮৬ তে সরকার ডিসমিসড হবার পর ১৯৮৩ ও ১৯৮৭ রাজ্য বিধান সভার ভোটে গুলাম শাহের এই উগ্র ইসলামিস্ট দল ভোটে চরমভাবে পরাজিত হল। এবং সীমান্তের এপাড়ে শুরু হল আজাদ কাশ্মীরের দাবী! তারপরের ইতিহাস রক্তের ইতিহাস। নেহরু কথিত গণভোটের দাবী কেউ তোলেনি ১৯৮৭ পর্যন্ত। ভূস্বর্গ স্বর্গই ছিল। নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত। হ্যাঁ, পাকিস্তানের দাবী ছিল সমগ্র কাশ্মীরের। কিন্তু তা কাশ্মীরবাসীর দাবীতে পরিণত হয়েছে নব্বইয়ের দশকের পর রাজীব গান্ধীর কুচক্রের ফল স্বরূপ। কংগ্রেসের ক্ষমতা এনসিওর করতে হবে, নাহলে কংগ্রেস তাকে চরম শিক্ষা দেবে। এই হল সেকুলার ভারতের রাজনীতি।
আজ যারা বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসবাদকে বকলমে সমর্থন করছেন, আমার মনে হয় না, তাদের ইতিহাস জানার ধৈর্যটুকু আছে! কংগ্রেসী রাজনীতি দেশ ভাঙার মূল কারণ। দেশ বিভাগের মূল হোতা নেহরু। ইতিহাস জানে এমনকি জিন্নাও অর্থনীতি প্রতিরক্ষা ও বৈদেশিক নীতি কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ছেড়ে মুসলিম প্রধান অঞ্চল গুলি নিয়ে স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে ছিলেন। এটাই ঠিক হয়েছিল। নেহরুও প্রথমত এই দাবী মেনে নিয়েছিলেন। ভারত ভাগ হত না। যদি নেহরু বেঁকে না বসত। ‘India Wins Freedom’ Moulana abulkalam azad। কংগ্রেস ভেঙেছে এই দেশ। কংগ্রেস নিশ্চিত করেছে গান্ধী পরিবারের হাজার বছরের মৌরসিপাট্টা।
রেজাউল মানিক