মুর্তিপূজা

মুর্তিপূজা: কোন বস্তুকে যখন আপনি বিশেষ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছেন তখন সেটি বিশেষই হয় সর্বত্র।

মুর্তিপূজা: হিন্দুরা নিজেরা মূর্তি বানিয়ে আবার সেই নিজেদের বানানো মূর্তিকেই কেন পূজা করেন? মুসলিমরা মক্কাতে হজ্জব্রত পালন করতে কেন যায়? পবিত্র কাবাশরীফ মানুষই বানিয়েছে, কেন তাকে প্রদক্ষিন করে শ্রদ্ধা নিবেদন করে? কেন শয়তানরুপ একটি মিনার বানিয়ে সেটাতে পাথর ছোড়ে? শয়তানকে শাস্তি দিতে?

 

  • কেন হাজরে অসওয়াদে গোনহা মাফের অছিলাই চুম্বন করে?
  • কেন সাফা আর মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মাঝে ছোটাছুটি করে?
  • কেন কবর জিয়ারত করে?
  • কেন জমজমের পানি পবিত্র হিসাবে পান করে এবং সঙ্গে করে নিয়ে যায়?
  • প্রতিদিন পাঁচবার কেন নামাজ পড়ে? আপনারা কি মসজিদকে সেজদা দেন?

 

এই সবকিছুর উত্তর কিন্তু একটাই, মানুষের হাজার বছর ধরে বয়ে চলা ঐতিহ্য ও সংষ্কৃতি ও বিশ্বাস। সেই বিশ্বাস তখন পর্যন্ত ভালো যখন পর্যন্ত তা অন্যকে আঘাত না করে। যদি সেই বিশ্বাস কখন অন্যকে আঘাত করতে শুরু করে তবে সেটা ভয়ষ্কার।

মানুষের সংষ্কৃতি, বিশ্বাস, সভ্যতা এসব নিয়ে ব্যাঙ্গাত্বক প্রশ্ন তোলাটা কিন্তু সভ্য মানুষের ও সভ্য সমাজের পরিচয় বহন করে না।

মুর্তিপূজা প্রসঙ্গেঃ

পৃথিবীর বহু সভ্যতা ও সংষ্কৃতির সাথে মূর্তিপূজা জড়িয়ে আছে, তবে সবগুলো একই প্রকৃতির নয়, তাদের ভিতরকার ধারণা ও উপলব্ধিগত বিস্তর পার্থক্য বিদ্যমান। আরবের, মিশরের, ভারতের, গ্রীসের, ইরানের সহ অন্যান্ন প্রত্যেকটি প্রাচীন মূর্তিপূজার সংষ্কৃতির বিষয় গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে এই ভিন্নতা প্রতীয়মান হয়।

 

সনাতনীরা মূলত মুর্তিপূজা করেনা, প্রতিমা পূজা করে। আর সনাতনধর্ম বহু পথের সমাহার, সেখানে সকলে একই পথ ফলো করেনা। যেমন একটি ম্যাথ আপনি বিভিন্ন ওয়েতে করতে পারবেন, একটি প্রোগ্রাম আপনি, পাইথন, জাপা, c++, এমন অনেক ল্যাঙ্গুয়েজে ভিন্ন ভিন্ন কোডে করতে পারবেন।

সনাতনও তেমনি, একটা সম্মৃদ্ধ লাইব্রেরী। আপনি যে কোন সাইড নিয়ে কাজ করতে পারেন। প্রতিমা পূজাও তদ্রুপ একটি ট্রেডিশন। প্রতিমা পূজার শেষে প্রতিমাকে বিসর্জন দেওয়া হয় জলাশয়ে, এটা দেখেছেন কিনা? তাহলে নিশ্চয় বুঝেছেন পূজা আসলে কার করে!! আমরা আগুন জ্বালানোর জন্য পার্টিকেল ব্যবহার করি, আগুল জ্বলার পরে ঐ পার্টিকেলটাকে আর প্রয়োজন হয় না, তখন কিন্তু সেটাকে অপ্রয়োজনীয় হিসাবেই রেখে দেয়।

 

তেমনি প্রতিমা এখানে আরাধনার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত পার্টিকেল। এবার হয়তো ভাববেন, প্রতিমাকে এত শ্রদ্ধা কেন করে? আসলে প্রতিমাতো সেই পরমেশ্বরে বিভিন্ন গুনরুপের, শক্তিরুপের কল্পনা থেকেই তৈরী, এই কারনে। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ছবি মানুষ এত টাকা দিয়ে কেন কেনে? এমনকি আপনার প্রীয়জনদের বা আপনার নিজের ছবি কেন আপনাকে আনন্দিত করে, সেগুলোতো শুধুই রং, তুলি, কাগজের বা ডিজিটাল ডিভাইসের, তাইনা? যখন ছবিগুলো দেখেন তখন কি মনে হয় এগুলো শুধুই রং আর কাগজ??

যে কোন দেশ তার জাতীয় পতাকাকে কেনো এত সম্মান করে? এগুলোতো শুধুই টুকরো কাপড়ে রং দেওয়া, তাই না? আসলে, কোন বস্তুকে যখন আপনি বিশেষ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছেন তখন সেটি বিশেষই হয় সর্বত্র।

যারা অদ্বৈতবাদী তারা কিন্তু কোন প্রতিমা পূজা করেন না, এছাড়াও অনেক পথ রয়েছে, তবে পরষ্পরের প্রতি কোন ঝামেলা নেই। সনাতনে সবাই স্বাধীন। যারা এমন প্রশ্ন করেন তারা কিন্তু অনেকেই মনে করেন, আরবের কুরাইশ মুর্তিপুজকদের মতো হয়তো সনাতনীরা, এই ধারনাটা সঠিক নয়, পৃথিবীতে অনেক মুর্তিপূজক গোষ্ঠী আছে যাদের কোন কেতাব নেই বা সমৃদ্ধ কোন “ইতিহাস ও গ্রন্থ” নেই। যেমন কুরাইশদের কোন কেতাব বা সমৃদ্ধ ইতিহাস ছিলো না, আর সনাতনের ইতিহাস ” রামায়ন ও মহাভারত ” পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত সবচেয়ে প্রাচীন মহাকাব্যদ্বয়। সনাতন সম্পর্কে যদি জানতে চান খুব সংক্ষেপে, তাহলে

১, বেদ

২, উপনিষদ

৩, গীতা,

এই তিনটি গ্রন্থই জগতের অনন্য দৃষ্টান্ত। আপনার উদ্দেশ্যো যদি সত্যে পৌচ্ছানো হয় তাহলে সেটি পারবেন, কিন্তু আপনার উদ্দেশ্যো যদি হিপোক্রেসি হয় তাহলে তো সত্যে পৌচ্ছাতে পারবেন না।

বিশ্বের প্রায় সব লেভেলের অপরাপর ধর্মালম্বীরা, সবাই নিজেদের বানানো বিভিন্ন স্থান, নিদর্শন, স্তম্ভ, মুর্তি, ঘর, পবিত্র হিসাবে নির্দেশিত, এগুলোকেই শ্রদ্ধা(পূজা, veneration) করে।

(১),বিশ্বের সনাতনধর্মালম্বীরা নিজেদের বানানো প্রতীমা পূজা করে ( পূরান অনুযায়ী)

(২), নিজেদের বানানো ছাড়া প্রকৃতির পূজা করে( বেদ অনুযায়ী)

(৩), কোন রকম পূজা ব্যতিরেকে শুধুমাত্র জ্ঞান চর্চা ও উপলব্ধির মাধ্যমে ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ করার প্রচেষ্টা। ( উপনিষদ অনুযায়ী)

(৪), ধ্যানের মাধ্যমে ( মেডিটেশন) ঈশ্বর আরাধনা, ( ইয়োগা অনুযায়ী)

(৫), ভালো কর্মের মাধ্যমে, জগতের কল্যানের নিমিত্তে নিয়োজিত থাকার মাধ্যম দিয়ে ঈশ্বর উপাসনা, সেবাই ধর্ম।

“জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর” আপনার পাশে দরিদ্র, আহার জোটেনা এমন মানুষের হাহাকার আর আপনি ধর্মের বেদ, বেদান্ত সব উপদেশ বিতরণ করছেন, তখন এটা কিন্তু কোন ধর্মই নয়, সেই পরিস্থিতি তে আপনার ধর্ম অসহায়কে সহায়তা করা। (বেদান্ত অনুযায়ী, বিবেকানন্দের নির্দেশিত)

(৭), বেদ নির্দেশিত যজ্ঞাদি ও নির্দেশিত ক্রিয়াকর্মের মাধ্যমে ঈশ্বর উপাসনা করে। (বেদ অনুযায়ী)

(৮), ভক্তির মাধ্যমে ঈশ্বর উপাসনা করে(গীতা অনুযায়ী)

(৯), প্রত্যেকে তার স্বভাবজাত কর্মের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে ধর্মানুষ্ঠান করে। ( গীতা অনুযায়ী)

★ আরো বহুপথ বিদ্যমান।

★* যত মত, তত পথ *★ মুর্তিপূজা মুর্তিপূজা মুর্তিপূজা মুর্তিপূজা মুর্তিপূজা মুর্তিপূজা মুর্তিপূজা

 

প্রত্যেকটি বিষয়েরই উৎস মূল পবিত্র “বেদ”, সবচেয়ে রহস্যজনক সৌন্দর্য এটাই যে, কোন সনাতনধর্মালম্বীদেরকে অপরের ভুল বের করতে দেখা যায় না, কেও অন্যের উপর ধর্মীয় অস্ত্র ” নাস্তিক” ট্যাগ লাগানো( আস্তিক ও নাস্তিক কথাটির উৎসমূল ঋক বেদ, 5000 BC) বা ধর্মীয় রাজনীতি “ব্লাসফেমির” প্রয়োগ করে না।

” ধর্ম নিয়ে কারোর মনে যদি কোন অহংকার সৃষ্টি হয়, সেই ব্যক্তির মাধ্যমে কোন ধর্মই নয় বরং সর্বদা অধর্মই হয়ে থাকে”

( ভগবান শ্রী কৃষ্ন)

সনাতন, আপনাকে, নিজেকে বেছে নেওয়ার পরিপূর্ণ সুযোগ দিয়েছে, আপনার যে পথটি পচ্ছন্দনীয় সেটিকে বেছে নিন।

সকল বিতর্কের জবাব শ্রীমদ্ভগবদ্ গীতার নিন্মলিখিত শ্লোকেই উল্লেখিত।

( ৩০০০-৫০০০ খ্রিঃপূর্ব)

শ্রীমদ্ভগবদগীতা ৪র্থ অধ্যায়: জ্ঞানযোগ

শ্লোক:11:
যে যথা মাং প্রপদ্যন্তে তাংস্তথৈব ভজাম্যহম্।
মম বর্ত্মানুবর্তন্তে মনুষ্যাঃ পার্থ সর্বশঃ।।১১।।

যে, যথা, মাম্, প্রপদ্যন্তে, তান্, তথা, এব, ভজামি, অহম্,
মম, বর্ত্ম, অনুবর্তন্তে, মনুষ্যাঃ, পার্থ, সর্বশঃ।।১১।।

অর্থ:- যারা যেভাবে আমার প্রতি আত্মসমর্পণ করে, আমি তাদেরকে সেভাবেই পুরস্কৃত করি। হে পার্থ ! সকলেই সর্বতোভাবে আমার পথ অনুসরণ করে।

” প্রকৃতি কতই না বৈচিত্রময়, আমাদের নিজেদের শরীর, মন, ভালোবাসা, প্রত্যাশা, সবকিছুরই মাঝেও কতই না বৈচিত্র, অথচ কি অপূর্ব সমন্বয়”

বৈচিত্রপূর্ন এ জগতের মাঝেই যে আনন্দ আছে, যে সৌন্দর্য্য আছে, সেখানে প্রবেশ করুন, দেখবেন জগতটা, ঘৃনার নয়, ভালোবাসার।