বৈদেশিক সন্ন্যাসী

বৈদেশিক সন্ন্যাসী, যুক্তরাষ্ট্রের গণিতজ্ঞ থেকে স্বামী পরমানন্দ সরস্বতী হয়ে ওঠার কথা।

বৈদেশিক সন্ন্যাসী, যুক্তরাষ্ট্রের গণিতজ্ঞ থেকে স্বামী পরমানন্দ সরস্বতী হয়ে ওঠার কথা। শঙ্কর মঠের সাথে যুক্ত অনেক বৈদেশিক সন্ন্যাসীও রয়েছে। এ বৈদেশিক সন্ন্যাসীদের মধ্যে শ্রীমৎ স্বামী পরমানন্দ সরস্বতী প্রধানতম। তিনি ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ২৪শে জুন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে জন্মগ্রহণ করেন।

তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে অবস্থিত প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিত বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। অত্যন্ত পাণ্ডিত্যের সাথে পরবর্তীতে তিনি একজন গণিতজ্ঞ হিসেবে নিজের পেশা গ্রহণ করেন।

সনাতন ধর্ম এবং দর্শনের সত্যতা, নিত্যতা এবং সর্বজনীনতা তাঁকে ব্যাপকভাবে আকৃষ্ট করে। তাই তিনি সনাতন ধর্ম এবং সংস্কৃতি চর্চা এবং প্রচারে আত্মনিয়োগ করতে মনস্থির করেন।

সে লক্ষ্যে ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি শ্রীশঙ্করাচার্যের দশনামী সন্ন্যাসী সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত হয়ে ব্রহ্মচর্য ব্রত গ্রহণ করেন।

১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রয়াগরাজের ‘যোগবেদান্ত কুটির’ এর অধ্যক্ষ স্বামী বিষ্ণুদেবানন্দ সরস্বতীর কাছে সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। তখন তাঁর নামের শেষে শৃঙ্গেরীমঠের অন্তর্ভুক্ত ‘সরস্বতী’ উপাধিটি যুক্ত হয়।

সরস্বতী উপাধি সম্পর্কে শ্রীশঙ্করাচার্য তাঁর ‘শৃঙ্গেরীমঠান্নায়’তে বলেছেন:

স্বরজ্ঞানরতো নিত্যং স্বরবাদী কবীশ্বরঃ।সংসারসাগরাসারহন্তাসৌ হি সরস্বতী॥(শৃঙ্গেরীমঠান্নায়:৬)
“যিনি সর্বদা বেদের স্বরজ্ঞানে রত, স্বরোচ্চারণে দক্ষ ও কবিশ্রেষ্ঠ এবংঅসার সংসার সাগরের হন্তা; তাঁকেই ‘সরস্বতী’ বলে।”

সন্ন্যাস পরবর্তী তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো প্রদেশে একটি বৈদান্তিক সাধন গুহা রয়েছে। শ্রীমৎ স্বামী পরমানন্দ সরস্বতী ১৯৭৬ সাল থেকে শংকর মঠ ও মিশনের সাথে যুক্ত হন। তিনি সীতাকুণ্ড শঙ্কর মঠে যখন থাকেন তখন, এই অশীতিপর বয়সেও পাহাড়ায় চূড়ায় অবস্থিত চন্দ্রনাথকে প্রতিদিন দর্শন করেন।

তিনি একজন পাহাড়প্রিয় পর্বতারোহী।তিনি ‘Mountain Yoga’ নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন। সেই গ্রন্থে তিনি অদ্বৈত বৈদান্তিক সিদ্ধান্ত এবং শৈবতত্ত্ব সম্পর্কে তাঁর সাধন জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তিনি সূর্য উদয়ের পূর্বে পবিত্র ব্যাসকুণ্ডে স্নান করে সেই কুণ্ডের জল ও আনুষঙ্গিক পূজার উপকরণ নিয়ে চন্দ্রনাথের উদ্দেশ্যে পূজা দিতে যান।

তিনি যাত্রাপথে কাউকে সঙ্গী নেন না এবং চন্দ্রনাথ দর্শনের যাত্রাপথে কোনো বিরতি নেন না। তিনি অত্যন্ত সাধারণ পোশাক পরিধান করেন। শীত বা গ্রীষ্ম তাঁর পোশাকে খুব একটি পরিবর্তন দেখা যায় না। শ্রীচন্দ্রনাথ ধামে অবস্থিত ভগবান চন্দ্রনাথের পূজা দিয়ে, তিনি সেখানে যথাসম্ভব ধ্যান করেন।

চন্দ্রনাথকে পূজা দিয়ে, তবেই তিনি শংকর মঠে এসে প্রসাদ গ্রহণ করেন। তিনি ভারত, নেপাল এবং বাংলাদেশে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন।

তাঁর তৈরি অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান নেপাল এবং ভারতে। সীতাকুণ্ড শঙ্কর মঠে অবস্থিত সংস্কৃত কলেজ ভবনটি তার অর্থায়নেই বর্তমান রূপ লাভ করে। তাই শঙ্কর মঠ কর্তৃপক্ষ  কলেজ ভবনটি তাঁর নামে, অর্থাৎ ‘পরমানন্দ সরস্বতী ভবন’ নামে নামকরণ করেন।

সংস্কৃত কলেজটি ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করা হয়।সংস্কৃত কলেজ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন মহানাম সম্প্রদায়ের আচার্য ড.মহানামব্রত ব্রহ্মচারী।

হিন্দু বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির নিদর্শন হিসেবে, একতলা ভবনটি মঠের পক্ষ থেকে উদ্বোধন করানো হয় কমলাপুর বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ শ্রীবিশুদ্ধানন্দ মহাথেরোকে দিয়ে।

লেখক- কুশল বরণ চক্রবর্ত্তী 
সহকারী অধ্যাপক
সংস্কৃত বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

আর পড়ুন…..