জন্মান্তরবাদ

জন্মান্তরবাদ, কথবকথন মোস্তফা ও আদিত্য।

জন্মান্তরবাদ, কথবকথন মোস্তফা ও আদিত্য।

মোস্তফাঃ সনাতন ধর্মের জন্মান্তরবাদ তত্ত্বটা অযৌক্তিক এবং অবৈজ্ঞানিক। 
আদিত্যঃ আপনার এমনটা কেন মনে হচ্ছে? মোস্তফাঃ প্রথমত, সনাতন ধর্ম ছাড়া অন্য কোনো ধর্মে যেমন  ইসলাম, খ্রিস্টান, ইহুদি ধর্মে জন্মান্তরবাদ নেই। দ্বিতীয়ত, আল্লাহ কোরানে বলেছেন, মৃত্যুর পর মানুষের রুহ(আত্মা) কবরে,আকাশে থাকবে।কেবলমাত্র কিয়ামতের সময়( মহাপ্রলয়ের পর) আত্মা পুনরুজ্জীবিত হবে জান্নাত(স্বর্গ) লাভ এবং জাহান্নামের(নরককের) শাস্তি ভোগ করার জন্য। 

আদিত্যঃ সনাতন শাস্ত্র অনুসারে প্রতিটি জীবের মধ্যে আত্মা রয়েছে। আত্মা হচ্ছে ৩৩ দেবের মধ্যে একটি। সংস্কৃতে দেব শব্দের অর্থ শক্তি।সনাতন শাস্ত্র অনুসারে, দেব তথা শক্তি ৩৩ প্রকার আর বিজ্ঞান অনুসারে, প্রধান ১০ প্রকার শক্তিসহ আরও অনেক শক্তি রয়েছে।  সনাতন শাস্ত্র জীবের মধ্যে অবস্থিত শক্তিকে আত্মা বলে আর রসায়ন বিজ্ঞান আত্মাকে রাসায়নিক শক্তি বলে। 

মোস্তফাঃ এটা না হয় বুঝলাম কিন্তু জন্মান্তরবাদ?
আদিত্যঃ বিজ্ঞানে ‘শক্তির সংরক্ষণশীলতা” নামে একটি  নীতি রয়েছে। সেই নীতিটি হচ্ছে….” শক্তির সৃষ্টি বা ধ্বংস নেই (অর্থাৎ শক্তি কেউ আর সৃষ্টি বা ধ্বংস করতে পারবে না), শক্তিকে কেবল এক বা একাধিক রূপে রূপান্তরিত করা যায় মাত্র।এই মহাবিশ্ব সৃষ্টির শুরুতে যে পরিমাণ শক্তি ছিল এখনো সেই পরিমাণ শক্তি রয়েছে। অর্থাৎ মহাবিশ্ব সৃষ্টির শুরু থেকে ২ কোটি বছর পরও মোট শক্তির পরিমাণ ১ বিন্দু পরিমাণ কমেনি বা বাড়েনি। 

মোস্তফাঃ এর সাথে জন্মান্তরবাদের কি সম্পর্ক?? 
আদিত্যঃ ধরি,সৃষ্টির শুরুতে মাত্র ২ জন মানুষ ছিল এখন ৭০০ কোটিরও বেশি মানুষ। আগের তুলনায় কয়েকশ কোটি মানুষ বেড়েছে তার মানে ইসলাম মতে শক্তির পরিমাণ বাড়ছে। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ জন্ম গ্রহণ করছে তার মানে ইসলাম অনুসারে  প্রতিদিন নতুন নতুন শক্তির সৃষ্টি করতে হচ্ছে। কিন্তু বিজ্ঞান বলছে নতুন ভাবে শক্তি সৃষ্টি করা সম্ভব নয়। সেজন্য বিজ্ঞান অনুসারে বিশ্বে ১ বিন্দু পরিমাণ শক্তি বাড়বে না বা কমবে না। বিজ্ঞানের “শক্তির সংরক্ষণশীলতা” নীতির সাথে ইসলামের পারলৌকিক তত্ত্বের সাংঘর্ষিক হয়ে যাচ্ছে। 

মোস্তফাঃ আমাকে এখন বুঝান জন্মান্তরবাদ কিভাবে বৈজ্ঞানিক? 
আদিত্যঃ প্রথমেই বলেছি প্রতিটি জীবের মধ্যে আত্মা নামক শক্তি রয়েছে।  ২শ,৫শ বছর আগেও যে পরিমাণ বনাঞ্চল পৃথিবীতে ছিল এখন সে পরিমাণ বনাঞ্চল নেই।এসব বনাঞ্চলগুলোতে যে পরিমাণ গাছ,পশুপাখি ছিল এখন সে পরিমাণ নেই।আর আগে নদী-সমুদ্রে যে পরিমাণ মাছ ছিল এখন নেই।

একদিকে যেমন গাছ,পশু-পাখি, মাছ কমছে অন্যদিকে মানুষ বাড়ছে। আবার যে মানুষ গুলো মারা যাচ্ছে তারাও কোনো না কোনো জীব হিসেবে জন্মগ্রহণ করছে অর্থাৎ একদিকে যেমন কোনো না কোনো জীব মৃত্যুবরণ করছে অন্যদিকে সেইসব জীব জন্মগ্রহণ করছে।ফলে শক্তির মোট পরিমাণ কমছে না বা বাড়ছে না অর্থাৎ শক্তির ভারসাম্য বজায় থাকছে ।

এই তত্ত্ব থেকেও প্রমাণিত যে,সনাতন ধর্ম হচ্ছে বিজ্ঞানময় ধর্ম।সেজন্য বিজ্ঞান দিয়ে সনাতন ধর্মের তত্ত্বগুলোকে বিশ্লেষণ করা সম্ভব।
মোস্তফাঃ  হয়তো!!! ….
আদিত্যঃ (লেখক বাদল চন্দ্র রায়)

বিজ্ঞানময় ধর্ম, কথাবকথন মোস্তফা ও আদিত্য।

আর পড়ুন……..