একঈশ্বরবাদ

একঈশ্বরবাদ: হিন্দু ধর্ম বহু দেবতাবাদী ধর্ম, বহু ঈশ্বরবাদী ধর্ম না।

একঈশ্বরবাদ: হিন্দু ধর্ম বহু দেবতাবাদী ধর্ম, বহু ঈশ্বরবাদী ধর্ম না। হিন্দুদের ইশ্বর আজ থেকে হাজার হাজার বছর আগেই সংজ্ঞায়িত হয়ে গেছে l সেটা হল ইশ্বর এক ও নিরাকার l

আমরা যে দেব দেবী দের পুজো করি তারা হল ইশ্বরের এক এক অংশ এবং তার শক্তির রূপ l আমাদের ইশ্বর যেমন সৃষ্টি করেন তেমনই ধ্বংস ও করেন l আজও হিন্দুরা সংজ্ঞায়িত করতে পারেনি ঈশ্বর কী এবং কতজন ঈশ্বর আছে?

প্রশ্নটা হবে আজ পর্যন্ত মুসলমানরা কেনো হিন্দু ধর্মে ঈশ্বর কয়জন সেটা বুঝে উঠতে পারে নি?

হিন্দুরা সবাই জানে হিন্দু ধর্মে ঈশ্বর একজনই। দেবতা অনেকজন। দেবতারা সবাই একজন ঈশ্বরেরই বিভিন্ন রুপ ও বিভিন্ন শক্তির প্রকাশ।

দেবতা ও দেবী কনসেপ্ট মুসলমানরা বুঝে না। অনেকে আরব মুশরিকদের ঈশ্বর ও উপ-ঈশ্বরদের সাথে এক করে ফেলে হিন্দুদের দেব-দেবীদের।

হিন্দু ধর্ম বহু দেবতাবাদী ধর্ম, বহু ঈশ্বরবাদী ধর্ম না।

মুসলমানরা হিন্দু ধর্মের দেবতাদের সাথে ইসলাম ধর্মের আল্লাহকে তুলনা করতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলে এবং মনে করে দেবতারা একেকজন আলাদা আলাদা ঈশ্বর।

একঈশ্বরবাদ

দেবতা ও দেবী রুপ বা অবতার হচ্ছে একজন পরমেশ্বরের বিভিন্ন শক্তির বহিঃপ্রকাশ।

তিনি একেক দেবতা হয়ে সবখানে বিরাজ করেন। দেবতারা দেবকুলে থাকেন কিন্তু দেবতারা মানুষ ও অন্যান্য প্রানীদের মাঝেও বিরাজ করেন।

দেবী দূর্গা, দেবী কালী এই দেবীরা আবার অন্য দেবী পার্বতীর একেকটি অবতার। দেবী পার্বতী আবার পরমেরশ্বর ব্রহ্মের নারী অবতারের অন্যতম শক্তির বহিঃপ্রকাশ।

হিন্দু ধর্মে দেবতা ও দেবী অবতারদের প্রতিমা মূর্তির পূজা করা হয়। সবই একজনেরই সাকার অবতার। গনেশের পূজা, গনেশের “বাবা-মা” শিবঠাকুর ও পার্বতীর পূজা সবই একজনেরই পূজা।

আসলে হিন্দু ধর্মের ঈশ্বরের দেবতা অবতার অসংখ্য। গুনে শেষ করা যাবে না। ৩৩ প্রকারের শক্তির বহিঃপ্রকাশ বলা হলেও এই ৩৩ প্রকারের দেবতা রুপের থেকে আরো যে কত দেবতা এসেছে সেই হিসেব করা মানুষের পক্ষে সম্ভব না। এমনকি মানুষও এক দেবতারুপ।

এক দেব-দেবী থেকে আরো দেব-দেবী এসেছেন। যেমন, শিব-পার্বতী থেকে গনেশ দেবতার আবির্ভাব।

এখন কেউ যদি গনেশ ঠাকুরের পূজা করে তাহলে আদতে শিব ও পার্বতীর পূজাই তিনি করছেন।

এরকমই ঈশ্বরের একজন দেব ও একজন দেবী রুপের মাধ্যমে আরো অসংখ্য দেব দেবী অবতীর্ন হয়েছেন বা আবির্ভাব ঘটেছে।

এই দেবতা ও দেবীদের কাহিনীর সন্নিবেশ হচ্ছে বেদ, পুরান, উপনিষদ, রামায়ন, মহাভারত এসব।

আল্লাহর সাথে তালগোল পাকিয়ে ফেললে হিন্দুদের ঈশ্বর মনে হবে কোটি কোটি ঈশ্বর। আসলে হিন্দুরা মুসলমানদের চেয়েও বেশি একেশ্বরবাদী। তাদের মধ্যে ঈশ্বর কয়জন সেটা নিয়ে বিবাদ নেই, যদি বিতর্ক হয় তবে সেটা ঈশ্বরের কোন দেবতা অবতার শক্তিশালী বেশি সেটা নিয়ে হতে পারে।

হিন্দুদের ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গীতায় বলছেনঃ

যখনই ধার্মিকতা ক্ষয় হয় এবং অন্যায় বেড়ে যায় আমি নিজেকে প্রেরণ করি।
ভালোকে রক্ষার জন্য এবং মন্দের বিনাশের জন্য,
এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য,
আমি সময়ের পরে সময় ধরে আসছি।

– ভগবত গীতা 4.7 – 8

হিন্দু ধর্ম শুধু না, বিশ্বের প্রতিষ্ঠিত সব ধর্মেরই ঈশ্বর একজন। শুধু বুঝার ভুলের কারনে ভিন্ন ধর্মের লোকেরা নিজ ধর্ম ছাড়া বাকি সব ধর্মকে বহু ঈশ্বরবাদী ধর্ম মনে করে।

মুসলমানরা অনেকেই নবীর মাধ্যমে আল্লাহর কাছে চায়। হিন্দুরা দেবতাদের মাধ্যমে দেবতাদের কাছেই চায়। হিন্দুদের দেবতারা সবাই হিন্দুদের একজন ঈশ্বরেরই অংশ।

এমন অনেক মুসলমান আছে তারা মুহাম্মদ সাঃ কে উছিলা করে আল্লাহর কাছে দোয়া করে। কিন্তু হিন্দুরা সেই  ঈশ্বেরে অন্য রুপ দেবতাদের কাছেই আশির্বাদ বা ‘দোয়া’ চায়। মানে হিন্দুরা সরাসরি ঈশ্বরের কাছেই চাচ্ছে। কাউকে উছিলা মেনে চাচ্ছে না।

শিরক বা ঈশ্বরের সাথে কাউকে এক করে ফেললে সেটা অন্যরাই মনের অজান্তে অনেক সময় করে ফেলে যদিও শিরক করা অনেক বড় পাপ কিন্তু হিন্দুরা কখনো শিরক করে না। কারন তাদের যেই কোটি কোটি দেব-দেবী আছেন সবাই একজন ঈশ্বরেরই অসংখ্য শক্তির বহিঃপ্রকাশ। আলাদা কোনো স্বত্তা না।

হিন্দুধর্মে ঈশ্বর একমোদ্বিতীয়ম– অর্থাৎ, ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয় ( ঋকবেদ ১/৬৪/৪৬) এবং সেই এক ঈশ্বরকে পন্ডিতগণ বহুনামে ডেকে থাকেন ও কল্পনা করে থাকেন ( ঋকবেদ ১/১১৪/৫)। পরমাত্মা এক । তিনি ছাড়া কেউ ২য়, ৩য় বা ৪র্থ, ৫ম, ৬ষ্ঠ বা ৭ম, ৮ম, ৯ম বা ১০ম বলে অভিহিত আর কেউ নেই (অথর্ববেদ ১৪/৪/২)৷ বেদে ৩৩ টি ( সংষ্কৃত কোটি মানে প্রকার বা টি) দেবদেবী আছে, যথা অগ্নি, ইন্দ্র, বরুণ, ঊষা প্রমুখের বর্ণনা আছে। এসকল দেবদেবী প্রকৃতির বিভিন্ন শক্তির আধার; অপর মতে তাঁরা পরমেশ্বরের ব্রহ্মার বিভিন্ন রূপের প্রকাশ।

 

অর্থাৎ হিন্দুধর্মে সৃষ্টা একজন ও তার ৩৩ টি রূপ আছে বিভিন্ন শক্তির আকারে। একই ঘটনা কোরানে বর্ণিত সৃষ্টা আল্লাহ একজন ও তার ৯৯ টি নাম আছে। ইহুদী, খ্রিস্টানসহ বহু ধর্ম এমনই একেশ্বরবাদী।

হিন্দুদের বিভিন্ন মূর্তির যে পূজো হয়, মূর্তির কাজ শুধুমাত্র প্রতীক হিসাবে বিষয়টিকে স্পষ্ট ধারণা দেওয়ার এবং মনোযোগ আকর্ষণ করার। আসল অনুষ্ঠান কিন্ত একটা ঘট-এ হয়। তাতেই আরাধ্যের আবাহন, সংকল্প, অর্পণ ইত্যাদি করা হয়।

 

 

সনাতন ধর্মটাই প্রকৃতিপূজারী। দেবতা বাড়ানোর কিছু নেই। সবেতেই দেবত্ব আরোপ করা হয়েছে। কারণ সবই এই প্রকৃতি বা মহাসৃষ্টির অংশ।

শিব আর পার্বতী স্বামী-স্ত্রী বলতে ওরকম আক্ষরিক অর্থে নয়। খুব সহজে ও সংক্ষেপে বলতে গেলে এই সমগ্র প্রকৃতি হচ্ছেন দেবী আর সেই প্রকৃতি যে নিয়মে চালিত তাই হল শিব। একটা ছাড়া অন্যটার অস্তিত্ব সম্ভব নয়। হিন্দুধর্মকে বুঝতে হলে দার্শনিক পথে বুঝতে হবে।

অন্য ধর্মে ইশ্বর এবং মানুষ আলাদা জিনিস l হিন্দু ধর্মে মানুষ ও ইশ্বরের অংশ থেকেই তৈরী l জীবন শেষের সেই ইশ্বরের অংশ ইশ্বরই বিলীন হয়ে যায় l

না খ্রিস্টান, না ইহুদী, না ইসলাম l এক ইশ্বরবাদ এর উৎপত্তি হিন্দু ধর্মের থেকে আজ থেকে হাজার হাজার বছর আগে l

 

এক মাত্র সনাতন ধর্মই পেরেছে ঈশ্বরকে বিশুদ্ধ রূপে সংজ্ঞা দিতে। তিনি জন্ম মৃত্যু রহিত, এক এবং অদ্বিতীয়। জ্ঞানিরা তাকে নিরাকার রূপে অনুভব করেন। তিনি সমস্ত সৃষ্টিকে পরিব্যপ্ত করে অতিরিক্ত হয়ে অবস্থান করছেন। তিনি স্নায়ু ও দেহ বিহীন। সমস্ত হীরন্যগর্ভে তিনি অবস্থান করেন। বাকি মতবাদ গুলি শুরু হয়েছে সুমেরিয়ান দেবতা “ইয়া” এবং মেসোপোটেমিয়ান দেবতা “ওয়ে ” কে নকল করে। তার পর থেকে যা পাওয়া গেছে তার নাম গুলো পর্যন্ত নকল কিংবা নকলের নকল আর তার উপরে নকল। অন্য কে নকল করে বানানো ঈশ্বর নিয়ে সনাতন ধর্মের সংজ্ঞা বুঝতে চাওয়া খুবই হাস্যকর। একঈশ্বরবাদ একঈশ্বরবাদ একঈশ্বরবাদ একঈশ্বরবাদ একঈশ্বরবাদ একঈশ্বরবাদ