“ক্রম বিবর্তন (Theory of Evolution) এবং বৈদিক দর্শন”

“ক্রম বিবর্তন (Theory of Evolution) এবং বৈদিক দর্শন”
ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ

প্রানীর ক্রম বিবর্তনের (Evolutionary Process) ধারা নিয়ে চার্লস ডারউইনের এক মতবাদ আছে। খ্রীষ্টিয় এবং অন্য সেমেটিক ধর্ম সেই তত্ব মানে না। কারন ডারউইনের মতবাদ মানলে তাদের ধর্মই থাকে না। ঈশ্বর ৬ দিনে এই বিশ্ব তৈরী করেছিলেন,মানুষ এবং অন্যান্য প্রানী সৃষ্টি করেছিলেন ,তার পর ৭ম দিনে বিশ্রাম নিয়েছিলেন ,সে কথা মিথ্যা প্রমানিত হয়।
ভারতীয় হিন্দু দর্শনে প্রানীর এই ক্রম বিবর্তন কে মান্যতা দেওয়া হয়েছে। হিন্দুরা বলে ৮৪ লক্ষ যোনী ভ্রমন করে মানুষ্য জন্ম পাওয়া যায়। অর্থ্যাত, এক কোষী প্রানী থেকে বহু কোষী প্রানী, মানুষ হতে আমাদের ৮৪ লক্ষবার জন্ম নিতে হয়। তাই বলছিলাম চার্লস ডারউইন সেই কথাই স্বীকার করে নিয়েছেন যা আমাদের ভারতীয় দর্শনে অনেক আগেই বলা আছে।

প্রশ্ন যেটা ওঠে সেটা হলো, মানুষ হিসাবে জন্ম নেওয়াটাই কি এই বিবর্তনের শেষ ধাপ। এর পর কি আর কিছু নেই???? এর কোনো বিজ্ঞান ভিত্তিক উত্তর নেই। সিগমন্ড ফ্রয়েড, কার্ল মার্কস, এঙ্গেলস, নিঁৎশে সবাই এর ওপরে ঊঠে আর কিছু বলতে পারেন নি। কেনো পারেন নি? তারা কি একদেশদর্শী বা কম বুদ্ধির মানুষ ছিলেন??? না, তা নয়। এরা সবাই প্রথিত যশা চিন্তাবিদ এবং সমাজ বিদ ছিলেন। এদের কাছে এর কোনো উত্তর না থাকার যে কারন আমার মনে হয় তা হলো দুটো।

প্রথমত, এরা সবাই একক ভাবে চিন্তা ভাবনা করেছেন। অর্থ্যত, এদের ভাবনা চিন্তাকে সামগ্রিক ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কোনো প্রচেষ্টা হয় নি। এর পরে কি বলার আছে ,তা বলার কেউ নেই। এদের কথাকে শেষ কথা ধরে নিয়েই নানা মতা মত, পথ তৈরী হয়েছে। কোনো এক ব্যাক্তির ধ্যান ধারনাই শেষ কথা হতে পারে না। তা সে সমাজ বিজ্ঞান হোক, অর্থনিতী হোক, চিকিৎসা নীতি বা ধর্ম নীতি যাই হোক। সেই জন্য, এই সব মহামতি নিজ নিজ ক্ষেত্রে মহান হলেও তাদের কথাই শেষ কথা নয়।

দ্বিতীয়ত, এরা কেউই বিশদ ভাবে প্রাচীন বৈদিক দর্শন পড়া শুনা করেন নি। পাশ্চাত্য সমাজ ব্যাবস্থায় এবং সেই সমাজের চিন্তা ভাবনার মধ্যে এদের ঘোরা ঘুরি। বৈদিক দর্শন পাশ্চাত্য ভাষায়, পাশ্চাত্যে নিয়ে যান রোঁমা রোলা। এই মহামতিরা সেই জন্য সঠিক জানতেন না, বৈদিক দর্শন এই ক্রম বিবর্তনের বিষয়ে কি বলে। ধর্ম বলতে তারা ঐ সিমেটিক ধর্ম তিনটির গোড়ামিতেই আটকে গেছেন। এর উপরে যে আর কিছু বলা যায় বা বলা হয়েছে সেই ধারন তাদের ছিলো না।

বৈদিক দর্শন কোনো একজনের বলা কথা নয়। প্রায় ১০০০০ হাজার বছর থেকে শুরু করে ভারতে আরবী/ তুর্কি বর্বরতা শুরু হওয়া অবধি বৈদিক দর্শন ভিত্তিক ভারতীয় জ্ঞান বিজ্ঞান এর প্রসার ঘটেছিলো, অনেক মুনি ঋষির হাত ধরে। সেই সব জ্ঞান ভান্ডার আরবী /তুর্কি রা ধংস করে দিয়েছে।

যাই হোক। বৈদিক দর্শন বলে—মনুষ্য জন্মের পরেও ক্রম বিবর্তন (Evolution or Devolution) হয়। মানব জন্মই শ্রেষ্ট জন্ম, এর পরে কিছু নেই, তা ঠিক নয়। এই মানব জন্মে মানুষের দুই দিকে ‘গতি’ হতে পারে। মানুষ থেকে দেবতা হওয়া যায় অথবা মানুষ থেকে ইতর প্রানী হওয়া যায়। অনেক টা সাপ লুডোর মতো। উপরে ওঠা যায় বা সাপের মুখে পড়ে একেবারে নীচে চলে যাওয়া যায়। একেই বলা হয় উর্দ্ধগতি এবং অধোগতি। আর সেটাই ‘জন্মান্তর বাদ”।

মানুষ এই জন্মে যেখানে শেষ করে পরের জন্মে সেখান থেকেই শুরু হয়। ভালো কাজ করলে ধর্মীয় পথে চলে নিজেকে মানুষ থেকে দেবত্বে উন্নীত করা যায় বা অধার্মিক পথে চলে এই জন্মেই বা পরজন্মে পশুত্ব অর্জন করা যায়।

মানুষকেই ঠিক করতে হবে সে কি চায়। ক্রম বিবর্তনে একেই বলে  Individual selective  Choice.