ভারতের বিপজ্জনক ও পক্ষপাতদুষ্ট সংখ্যালঘু নীতি।

ভারতের বিপজ্জনক ও পক্ষপাতদুষ্ট সংখ্যালঘু নীতি
                         ।দ্বিতীয় পর্ব।
সংখ্যালঘু নীতি ঠিকঠাক ভাবে মানলে, মুসলমানদের কিছুই পাওয়ার কথা নয়। ভারতের প্রকৃত ধর্মীয় সংখ্যালঘু হচ্ছে জৈন, শিখ, বৌদ্ধ ও পার্সিরা। কিন্তু এদের তুলনামূলক ভাবে কম দেওয়া হয়, কেননা এরা ভোট ব্যাঙ্ক নয়। ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারকে মনে রাখতে হবে, তারা যতই তোষণ করুক না কেন – মুসলিম ভোট কোনো অবস্থাতেই তাদের বাক্সে পড়বে না।

বহু মুসলিম দেশে তিন তালাক নিষিদ্ধ। বিজেপি সরকার মুসলিম নারীদের সুরক্ষার জন্য তিন তালাক নিষিদ্ধ করলো, অথচ সেই মুসলিম নারীরাই তিন তালাক প্রথা বহাল রাখার জন্য – বোরকা পরে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। 
ভারতের মুসলমানরা চলে তাদের ধর্মীয় নেতাদের নির্দেশে। আর ওই ধর্মীয় নেতারা চলে পাকিস্তানের রিমোট কন্ট্রোলে।
এই ধর্মীয় নেতাদের পূর্বসূরিরা তাদের সাধের সৃষ্ট পাকিস্তানে চলে যায়নি ; তারা ভারতে থেকে গেছে বিশেষ এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে। পার্টিশনের পূর্বে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ রাজনৈতিক দেনদরবারের এক সভায় একটি ম্যাচ বাক্স দেখিয়ে বলেছিলেন,”আমাকে যদি এই পরিমাণ আয়তনের (মানচিত্রের) পাকিস্তান দেওয়া হয়, তবুও আমি তা গ্রহণ করব এবং সমস্ত ভারতকে পাকিস্তানে পরিণত করবো। পাকিস্তান কেবল একটি রাষ্ট্র নয়, এটি একটি আদর্শ। ৭১২ খ্রিস্টাব্দে সিন্ধু মুসলমানদের পদানত হওয়ার পর, প্রথম যে ধর্মান্তরিত হিন্দুটি মুসলমান হয়েছিল, সেদিন থেকেই পাকিস্তান আদর্শের সূচনা।”
কংগ্রেস ভোটব‍্যাংক রক্ষার স্বার্থে এই পাকিস্তানপন্থী অপশক্তিকে যুগের পর যুগ লালন পালন করেছে – পরিপুষ্ট করেছে,সংখ‍্যা বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে; কিন্তু বিজেপি এই পাকিস্তানপন্থী অপশক্তিকে প্রশ্রয় দিচ্ছে কীসের মোহে? এতদিন না হয় মধ্যপ্রাচ্য থেকে আয়-রোজগারের একটা সম্ভাবনা ছিল। জ্বালানি তেলের দাম জলের দামে পরিণত হাওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনীতি অস্বাভাবিক রকম সঙ্কুচিত হতে যাচ্ছে, তাছাড়া আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংঘাতের ফলে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য একটি যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
ভারতীয় সংবিধান শুধু ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের রক্ষা করতে বলেনি, সাথে ভাষাগত সংখ্যালঘুদেরও রক্ষা করতে বলেছে। দুর্ভাগ‍্যবশত সরকার কেবল ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের স্বার্থরক্ষা করতে ব্যস্ত – তাও কেবল আব্রাহামিক ধর্মাবলম্বী সংখ্যালঘুদের। এর কারণ হল, ১৯৯৩ সাল থেকে ন্যাশনাল কমিশন ফর মাইনরিটিস (এনসিএম) নামে এক সংগঠনের উপস্থিতি। কার্যত রাজ্য সরকারগুলি এদের কথাতেই চলে। কিন্তু ভাষাগত সংখ্যালঘুদের কথা কেউই ভাবে না। সম্প্রতি দিল্লির সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান মোঃ জাফরুল ইসলাম হুমকি দিয়েছে – ভারতীয় মুসলমানরা নালিশ করলে, মুসলিম বিশ্ব ও আরবরা এসে ভারত ধ্বংস করে দিবে।
টেকনিক্যালি, যিনি হিন্দু নন, তারা প্রত্যেকেই সংখ্যালঘু নীতির সুবিধা পাবেন। এর চেয়ে ন‍্যাক্কারজনক সাম্প্রদায়িক আর কোন কিছু হতে পারে কি? ভারতের সংবিধানের ৩০ নং ধারা অনুসারে যে কোনও ধর্মীয় ও ভাষাগত সংখ্যালঘু নিজেদের জন্য শিক্ষাগত প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে পারে, অথচ হিন্দুদের ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গঠন করার অধিকার নেই। পৃথিবীর কোন রাষ্ট্রে সংখ‍্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর প্রতি এতবড় বৈষম্যের দৃষ্টান্ত নেই। 
২০০৪ সালে তৈরি ন্যাশনাল কমিশন ফর মাইনরিটি এডুকেশন ইন্সটিটিউশন (এনসিএমঈআই) থেকে কেবল ছয় অহিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষই সদস্য হতে পারে, হিন্দুরা নয়। কত ভয়ঙ্কর ভাবে হিন্দু জাতিকে ঠকানো হয়েছে।
 
সংখ্যালঘু নীতিকে যদি সত্যিই কার্যকর করতে হয়, তবে সেটা কেন্দ্রীয় ভাবে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের স্বার্থরক্ষা করার বদলে, রাজ্যগত ভাবে সংখ্যালঘুদের স্বার্থরক্ষার ব্যবস্থা করলে বেশী ফলদায়ক হবে। মনে রাখতে হবে, হিন্দুরা ইতোমধ্যেই ৯টি ভারতীয় রাজ্য ও কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে সংখ্যালঘু হয়ে গেছে। কিন্তু ওই সব রাজ্যের সংখ্যাগুরু অহিন্দু সম্প্রদায়ের রাজনীতিবিদরা কোন ভাবেই হিন্দুদের সংখ্যালঘু মর্যাদা ও সুযোগ সুবিধা দিতে রাজি নয়। অর্থাৎ ভারতের আব্রাহামিক ধর্মাবলম্বীরা গাছেরটাও খাবে, আবার তলারটাও কুড়োবে – এই  নীতি নিয়ে চলছে। উক্ত রাজ্যগুলিতে তারা সংখ্যাগুরু হয়েও সংখ্যালঘু স্কলারশিপ পাবে, হিন্দুরা সংখ্যালঘু হয়েও কোন সুযোগ সুবিধা পাবেন না। এই ৯ টি ধান্দাবাজ রাজ্য ও কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল হল — পাঞ্জাব, জম্মু-কাশ্মীর,খ্রিষ্টান অধ্যুষিত উত্তর-পূর্বাঞ্চল ইত্যাদি।
সম্পাদনা
কৃত্তিবাস ওঝা
ফুলিয়া, পশ্চিম বঙ্গ, ভারত
(ক্রমশ)