হে বুদ্ধিজীবী,একটি ধর্ষিত শিশুর ধর্ষকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের থেকে পাথর উচ্ছেদটা অত্যন্ত বেশি গুরুত্বপূর্ণ…?

গেরুয়া ঝড়ের মুখে বিপন্ন বাংলার সাংস্কৃতিক মুক্তমঞ্চ :
রাস্তার ধারে ধারে, পাড়ার মোড়ে মোড়ে, রিক্সাস্ট্যান্ডের কোনা বা প্লাটফর্মের বাইরের অংশের রাস্তার ছোট্ট একটা স্থান দখল করে একটা হাঁড়ি বসিয়ে তাতে লাল কাপড় বেঁধে ধর্মীয় বিশ্বাস অর্জন বা সৃষ্টিকর্তার আরাধনা চলছে বছরের পর বছর, এবং ধীরে ধীরে কংক্রিট দিয়ে বাঁধিয়ে পাকাপোক্ত ভাবে ওই স্থানকে দখল করে ফেলা হচ্ছে পরিকল্পনা মাফিক। ক্রমশ সময়ের সাথে বৃহৎ করে স্থায়ী পাকাপোক্ত ধর্মীয় আস্তানায় পরিণত হচ্ছে তা। দীর্ঘ বেশ কিছু বছর হতে এমন দৃশ্য চতুর্দিকে দেখে আসছি, এ নিয়ে কোনদিন কারোর সমস্যা হয়নি, কারোর ভাবাবেগে আঘাত লাগেনি। কারণ এ বাংলা সম্প্রীতির বাংলা, এ বাংলা ধর্মনিরেপক্ষতার বাংলা। কিন্তু আজ একাডেমি অফ ফাইন আর্টসের সামনের নিম গাছের নিচে কিছু মানুষ পাথর রেখে পূজা অর্চনা করার প্রতিবাদে শিল্পী মহল বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে। তাদের অসহিষ্ণুতার গ্রন্থি হতে ক্রমাগত এন্টিরিলিজিউন হরমোন ক্ষরিত হচ্ছে। আচ্ছা এরা কি এত দিন রাস্তার ধারে ধারে, পাড়ার মোড়ে মোড়ে, রিক্সাস্ট্যান্ডের কোনা বা প্লাটফর্মের বাইরের অংশগুলো লক্ষ্য করেননি …? একটা স্থানে একটা নিমগাছ সেই গাছের গোড়ায় দুটো কালো পাথর বসিয়ে যদি কিছু মানুষ পূজা-অর্চনা করেন তাতে শিল্পের কী ক্ষতি হয়…? গাছের নিচে বসে গাঁজা, মদ খেয়ে যদি পাশ্চাত্য সাহিত্য নিয়ে আলোচনার আসর বসানো যায় তাহলে গাছে নিচে একটা পাথর রেখে পুজো করা যায় না কেন…? রাস্তা দখল করা হচ্ছে না…মাইক লাগিয়ে শব্দ দূষণ করা হচ্ছে না…শিল্প সাহিত্য বা নাটকের দলের লোকেদের কপালে জোর করে টিকা লাগিয়ে দেয়া হচ্ছে না, তাহলে সমস্যা কোথায়…? প্রতিবাদ একতরফা কেন ? শুধুমাত্র একশ্রেণির মানুষের ধর্মীয় ভাবনায় আঘাত দেয়ার প্রবণতা এত বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে কেন?
দেখলাম তসলিমা নাসরিন প্রতিবাদে কলম ধরেছেন…ভালো কথা! আচ্ছা তসলিমা নাসরিন কেন কলকাতা হতে বিতারিত হয়েছিলেন…? কারণটা কি সবাই ভুলে গেছেন ? যখন শিল্প সাহিত্য ও মুক্তচিন্তার ধারকেরা এই পাথর উচ্ছেদ আন্দোলন করছেন তখন অন্য দিকে ছোট্ট শিশু দিব্যার ধর্ষণ কাণ্ড নিয়ে সোশ্যালমিডিয়া তোলপাড়। সেক্ষেত্রে কিন্তু মুক্ত চিন্তার ধারকেরা একটি শব্দও খরচ করেননি। একটি ধর্ষিত শিশুর ধর্ষকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের থেকে পাথর উচ্ছেদটা অত্যন্ত বেশি গুরুত্বপূর্ণ…? এটাই বাংলার শিল্প…? এটাই বাংলার সাহিত্য…? এটাই বাংলার মুক্তচিন্তা…?
কাংলা পক্ষ, হ্যাংলা পক্ষ, আর কত পক্ষের আবির্ভাবে এ বাংলা কি ভেজাল বাংলা হয়ে উঠবে…? জনগন আর কবে বুঝবে শিল্প সাহিত্যের নামে এ নোংরামি…মুক্তচিন্তার নামে মানুষের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত আনার এ দুঃসাহস এরা পায় কোথা থেকে…? এটা বাংলা এখানে বারো মাসে তেরো উৎসব, এখানে মানুষ যেমন স্বাধীন ভাবে নিজের নিজের ধর্ম পালন করে, তেমন এখানে মুক্ত চিন্তার মানুষেরাও দীর্ঘ সময় হতে তাদের চিন্তাভাবনা নিয়ে শান্তির সঙ্গে বসবাস করে আসছে। কোন দিন কোন ধর্মীয় মানুষ জোর করে কোন মুক্ত চিন্তার মানুষকে ধর্মালয়ে ধরে এনে ধর্ম পালন করতে বলেনি, বা কোন দিন চাপাতির কোপ মেরে তার রক্ত মেখে ধর্ম পালন করেনি। তাহলে আজ কেন মুক্তচিন্তার নামে মানুষের ধর্মীয় ভাবাবেগ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে…? সময় থাকতে মানুষকে বুঝতে হবে এবং প্রয়োজনে এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে, নাহলে আগামী দিনে এরা আমাদের ঘরে ঢুকে তুলসীমঞ্চ টাকে তুলে দিয়ে ওখানে কোন বিদেশি সাহিত্যিকের ছবি এঁকে দিয়ে যাবে। আর এটা যদি ওদের স্বাধীনতা হয় তাহলে আমাদেরকেও আমাদের স্বাধীনতাটা বুঝে করে নিতে হবে।

[Pradip Bose এর দেওয়াল থেকে]

[ https://m.eisamay.com/videos/religiousgroup-target-academy-of-fine-arts-threat-cultural-activists/articleshow/64818787.cms ]