এভাবে ইসলামের ভাবমূর্তি রক্ষার কারণটি কি?

বাংলাদেশের টকশোগুলোতে একটা হুজুর ধরে এনে তার সঙ্গে দুইজন আধুনিকা নারী, একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষক অথবা সাংবাদিক, ব্লগারদের মধ্যে আরিফ জেবতিক ভাইকে বসিয়ে প্রায়ই দেখি সবাই মিলে হুজুরের কাছে নাস্তানাবুদ হতে!

আরিফ জেবুতিক ভাই, আপনি তো নাস্তিক নন, আপনিই টেলিভিশনে একবার বলেছিলেন আপনাকে নাস্তিক ট্যাগ দেয়া হয় অথচ আপনি আপনার এলাকার মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি। আপনার এই ধর্ম বিশ্বাস নিয়ে আমার কোন কথা নেই। প্রশ্ন হচ্ছে, আপনি টকশোতে গিয়ে তাহলে হুজুরের কথার বিপেক্ষ কেন থাকেন? আপনি কি জানেন না ইসলামে মুরতাদের শাস্তি মৃত্যুদ্বন্ড? ইসলামের চার মাজহাবের সবাই একমত মুরতাদকে বাঁচিয়ে রাখা যাবে না। আপনার মত একজন সচেতন ব্লগার কি জানে না কুরআনে ইসলামের নবীর বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর শাস্তি বলা হয়েছে পিছন থেকে হাত কেটে দেয়া অথবা শূলে চড়ানো? সব জেনেও কেন হুজুরের বক্তব্য আপনার কাছে গ্রহণীয় মনে হয় না? কেন সরাসরি বলেন না ইসলাম নারীদের অবাধ চলাফেরা দূরে থাক এখানে এই গোলটেবিলে যে সবাই মিলে বসে আছি সেটাই সম্ভব না! ইসলামের কি এতটুকু মানবেন অতটুকু মানবেন না? যদি ইসলামের পক্ষে বললে নিজেকে পশ্চপৎ মনে হয়, নারী  বিরোধী মনে হয় তাহলে সেটা কেন বলেন না? কেন বলেন না, ইসলামে এসব আছে কিন্তু এগুলো কোন সভ্য সমাজে গ্রহণীয় নয়। এটা বলতে না পারলে অন্তত চক্ষু শরমের মাথা খেয়ে হুজুরের বক্তব্যকে সমর্থন করে আসুন!

সামিয়া রহমান, আপনি দেশের প্রথম বেসরকারী টেলিভিশনে নারী সাংবাদিকদের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় একজন। আপনার ধর্ম বিশ্বাস সম্পর্কে কিছু জানা নেই। আপনি যেভাবে সাংবাদিকতা করছেন তার কোনটাই ইসলামে অনুমোদন নেই। শাড়ি পরে মাথা খোলা রেখে- তাও চুল ছোট ছোট করে কেটে আপনার সাংবাদিকতা ইসলামের ৭২ ফিকরার কোনটাই সমর্থন জানাবে না। আপনি আপনার অনুষ্ঠানে এইসব হুজুরদের ডেকে আনেন কি তাদের জিতিয়ে দিতেই? অনেক দু:খে কথাগুলি বললাম কারণ আপনাদের সাহস নেই বলার যে, ইসলামে যা-ই লেখা থাকুক সেটা আপনারা মানবেন না। যদি ইসলামে এসব বলা থাকে তাহলে সেসব বর্বর কথাবার্তা যা আজকের পৃথিবীতে মানার কোন কারণই নেই। এসব না বলে কি বলেন আপনার? ইসলাম তো নারীদের সন্মান করার কথা বলা হয়েছে, ইসলাম তো ক্ষমা আর সহিষ্ণুতার কথা বলে…। ইসলামী যে কোন বিষয়ে যারা মতামত দেন কুরআন হাদিসের আলোকে সেই মুফতিদের আপনারা ইসলাম শেখান! এটা শিখাতে গিয়েই আপনারা অনুষ্ঠানে নাস্তানাবুদ হন! কারণ আপনারা ইসলামের এই হুকুমতগুলির বিরুদ্ধে কথা বলতে পারেন না। বলতে পারেন না ইসলামে নারী বিষয়ে যা বলা আছে তা আজকের যুগে অচল। বলতে পারেন না, ইসলামে বিধর্মীদের সম্পর্কে যা বলা আছে তা মানা অসভ্যতা। বলতে পারেন না গণতন্ত্রের চেয়ে কিছুতে ইসলামিক শাসনতন্ত্র গহণীয় হতে পারে না…। আমি জানি আপনাদের কেউ এই লেখা পড়লে বলবেন, নিজেকে লুকিয়ে অনেক বড় বড় কথা বলা যায়, লাইভ অনুষ্ঠানে ৯০ ভাগ মুসলামানের দেশে আমাদের অনেক বুঝেসুঝে কথা বলতে হয়…। একদম সত্যি। এই জন্যই অনুরোধ থাকবে, একটা হুজুরকে ডেকে এনে তার চাপার জোরে নিজেদের অসহায় না বানিয়ে দেশের তেল রুটি ভাত কাপড় নিয়ে টকশো করা যায়- সেটাই করুন। যেদিন ইসলামের সমালোচনা করতে পারবেন, যেদিন বলতে পারবেন ইসলামী আইন এ যুগে অচল সেদিন হুজুরদের ডেকে আনবেন।

২.
অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর ‘বাকের ভাই’ চরিত্রে অভিনয় করে কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছিলেন। সেই জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে পরে এমপি হয়েছেন একাধিকবার। মানুষটিকে কাল পর্যন্ত শ্রদ্ধা করতাম। অথচ আমি ভুলেই গিয়েছিলাম শত হলেও তিনি তো একজন মুসলমান! নূর বলেছেন, আইএস বলতে তিনি ‘ইসলামিক স্টেট’ বুঝেন না, তিনি আইএস বলতে ‘ইজরাইল স্টেট’ বুঝেন! তার বক্তব্য, আইএস কেন ইসলামের শত্রু ইজরাইলে বোমা মারে না? যদি তারা সত্যিই ইসলাম ও মুসলমানের দল হতো তাহলে তারা ইজরাইলে বোমা মারত! এতখানি ইহুদী বিরূপতা আপনার মধ্যে ছিলো? আমেরিকাতে যারা নাইন ইলেভেন ঘটিয়ে ছিলো তাদের কি কেউ জিজ্ঞেস করেছিলো ইজরাইলে বিমান হামলা না চালিয়ে কেন টুয়িং টাওয়ারে হামলা চালালে? টুয়িং টাওয়ারে যারা হামলা চালিয়েছিলো তাদের পরিচয়গুলো কি জনাব নূর? খালেদ শেখ মোহাম্মদ, মুহম্মদ আতা…। ম্যানহাটনে বাংলাদেশী আকায়েদ উল্লাহ কি ইহুদী ধর্মের ছিলো? সে কেন শরীরের বোমা মেরে সব উড়িয়ে দিয়েছিলো? ইজরাইল তাকে পাঠিয়েছিলো আমেরিকার বোমা মারতে? ইজরাইলের এত ক্ষমতা তারা ইসলামিক দল বানিয়ে সারা পৃথিবীর মুসলমানদের বোকা বানাচ্ছে কিন্তু হামাসের সঙ্গে পেড়ে উঠছে না! এমনকি ফিলিস্তিনী বালকদের আগুন ঘুড়িতে নিজেদের ফসলের ক্ষেত যারা রক্ষা করতে হিমশিম খায় তারা আইএস গঠন করেছে যেখানে সারা পৃথিবীর মুসলমানরা যোগ দিচ্ছে বেহেস্তে যাবার লোভে! এভাবে ইসলামের ভাবমূর্তি রক্ষার কারণটি কি কেবলই ধর্মান্ধ জনগণের কাছে নিজের ভোট ব্যাংক ঠিক রাখা? নাকি নামাজ কালাম না পড়লেও মুসলমান তো!

এ কথা জেনেছি বহু ঠকে, ধাক্কা খেয়ে- মুসলমানকে প্রগতিশীল অসাম্প্রদায়িক হতে হলে একেবারে নাস্তিক হতে হয়!