মানুষ ও তার সমাজ যে অবস্থায় আজ উপনীত হয়েছে তাকে কখনোই আকস্মিক উপাধিতে ভূষিত করা যেতে পারে না। তাই এই বর্তমান সমাজকে আমরা অতীতের একাধিক পরিবর্তনের নামান্তর(Remane) রূপে অভিহিত করতে পারি।
রবীন্দ্রনাথ ও আইনস্টাইন -এর সাক্ষাৎ:-
রবীন্দ্রনাথ ও আইনস্টাইন -এর সাক্ষাৎ হয় মোট চারবার। রবীন্দ্রনাথ প্রথম জার্মানীতে যান ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে। সেবার আইনস্টাইনের সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হয় নি।
এরপর রবীন্দ্রনাথ দ্বিতীয় সফর করেন করেন ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে। এবারের সফরের সময় ১৪ই সেপ্টেম্বর আইনস্টাইনের সাথে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ ঘটে। এদিন সকালে রবীন্দ্রনাথের সম্মানে জার্মানীর সাংস্কৃতিক মন্ত্রী বেকার একটি চা-চক্রের আয়োজন করেন। আমন্ত্রিত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন আলবার্ট আইনস্টাইন এবং জার্মানির অনেক বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক। একই দিন বিকেলে আইনস্টাইন রবীন্দ্রনাথকে চা-চক্রে আপ্যায়িত করেন। রবীন্দ্রানাথ বিকেলে কাপুথে (Caputh) অবস্থিত আইনস্টাইনের বাসভবন ‘আইনস্টাইন ভিলায়’ যান। সেখানে রবীন্দ্রনাথের সাথে আইনস্টাইন যে কথাবার্তা হয়, তার অংশবিশেষ ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের ১০ই আগস্ট নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত হয়
Einstein and Tagore Plumb the Truth-
নামে। এর প্রতিবেদক ছিলেন জার্মানীর বিখ্যাত সাংবাদিক দিমিত্রি মারিয়ানফ (আইনস্টাইনের সৎ-কন্যা মার্গোর স্বামী দিমিত্রি মারিয়ানফ্)।
১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে রবীন্দ্রনাথ আবার জার্মানী সফর করেন এবং ১৪ই জুলাই আইনস্টাইনের বাসভবনে তাঁদের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো সাক্ষাৎ ঘটে। আইনস্টাইন তখন বার্লিনের কাইজার ভিলহেলম ফিজিক্যাল ইনস্টিটিউটের পরিচালক এবং বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক। কবি ও বিজ্ঞানীর মধ্যে সেদিন অনুষ্ঠিত দীর্ঘ আলোচনার সময়ে উপস্থিত ছিলেন কবি অমিয় চক্রবর্তী। তাঁদের মধ্যে তৎকালীন বিশ্বপরিস্থিতি, সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি এবং ইহুদী ও ফিলিস্তিনী সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়। রবীন্দ্রনাথ ও আইনস্টাইনের মধ্যে তৃতীয়বার সাক্ষাৎ ঘটে ১৯৩০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। তাঁদের মধ্যে চতুর্থবার এবং শেষবার দেখা হয় ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই ডিসেম্বর আমেরিকার নিউ ইয়র্কে। সেবার রবীন্দ্রনাথ নিউ ইয়র্কে এক চিত্রশিল্পীর বাসায় আতিথ্য গ্রহণ করেছিলেন এবং আইনস্টাইন সেই বাসায় এসে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা করেন। আইনস্টাইন ও রবীন্দ্রনাথের মধ্যে সাক্ষাৎকার ছাড়াও দু’জনের মধ্যে অনেকবার পত্র বিনিময় হয়। রবীন্দ্রনাথকে জার্মান ভাষায় স্বহস্তে লেখা আইনস্টাইনের দু’টি চিঠি শান্তি-নিকেতনের রবীন্দ্রভবন সংগ্রহশালায় সংরক্ষিত আছে।
আইনস্টাইনের সাথে রবীন্দ্রনাথের এই দুটি সাক্ষাৎকার পৃথকভাবে বা একত্রিত অবস্থায় অনেক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। যতদূর জানা যায় The Modern Review -তে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারটি দেখে আইনস্টাইন তাতে কিছুটা অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। এছাড়া The American Hebrew -তে এই সাক্ষাৎকার পুনঃপ্রকাশিত হলে, আইনস্টাইন প্রথম প্রকাশনার কতকগুলো অংশ কেটে বাদ দেন। ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে
The Kenyon Review (vol. xxiii, number 2) দিমিত্রি মারিয়ানফ্ এবং অমিয় চক্রবর্তীর সমন্বিত নোট, শান্তিনিকেতনের রবীন্দ্র ভবনে সংরক্ষিত আর্কাইভস ভিত্তি করে বিস্তৃততর সমন্বিত ভাষ্য প্রকাশ করেছে।
উল্লেখ্য যে আইনস্টাইন-রবীন্দ্রনাথ সংলাপের সংক্ষিপ্ত বাংলা অনুবাদ ১৯৩১-এ বিচিত্রা পত্রিকায় বেরিয়েছিল। নিচে এই সকল প্রকাশনার সমন্বয়ে একটি পাঠ নিচে তুলে ধরা হলো।
TAGORE: You have been busy, hunting down with mathematics, the two ancient entities, time and space, while I have been lecturing in this country on the eternal world of man, the universe of reality.
রবীন্দ্রনাথ: আপনি অঙ্কশাস্ত্রের দুটো প্রাচীন সত্তা, স্থান এবং কাল-এর অনুসন্ধানে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন। আর আমি এদেশে পরমপুরুষের অনন্ত-শাশ্বত বিশ্ব-সত্যের জগৎ নিয়ে বক্তৃতা দিয়ে ঘুরছি।
EINSTEIN: Do you believe in the divine isolated from the world?
আইনস্টাইন: আপনি ঐশী শক্তিকে বাস্তব জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হিসেবে বিশ্বাস করেন?
TAGORE: Not isolated. The infinite personality of man comprehends the universe. There cannot be anything that cannot be subsumed by the human personality, and this proves that the truth of the universe is human truth.
রবীন্দ্রনাথ: বিচ্ছিন্ন করে নয়। মানুষের অনন্ত ব্যক্তিসত্তা বিশ্বপ্রকৃতিকে অনুধাবন করে। এমন কিছুই নেই যা মানবসত্তা বুঝতে অপারগ হয়, এবং এটাই প্রমাণ করে যে বিশ্বজগতের সত্য মানবসত্তার সত্য।
EINSTEIN: There are two different conceptions about the nature of the universe – the world as a unity dependent on humanity, and the world as reality independent of the human factor.
আইনস্টাইন: মহাবিশ্বের প্রকৃতি সম্বন্ধে দুটো ধারণা রয়েছে −
বিশ্বসত্তার ঐক্য মানবিকতার উপর নির্ভরশীল, এবং বিশ্বসত্তার বাস্তবতা মানবিক কার্যকারণের উপর স্বনির্ভর।
TAGORE: When our universe is in harmony with man, the eternal, we know it as truth, we feel it as beauty.
রবীন্দ্রনাথ: যখন আমাদের বিশ্বজগৎ মানুষের সাথে সুসমন্বিত হয়, তখন সেটা হয় শাশ্বত, তখন তাকে আমরা সত্য বলে জানি, তাকে সুন্দর হিসেবে অনুভব করি।
EINSTEIN: This is a purely human conception of the universe.
আইনস্টাইন: এটা বিশ্বজগতের সম্পর্কে পুরোপুরি মানবিক ধারণা।
TAGORE : The world is a human world – the scientific view of it is also that of the scientific man. Therefore, the world apart from us does not exist; it is a relative world, depending for its reality upon our consciousness. There is some standard of reason and enjoyment which gives it truth, the standard of the eternal man whose experiences are made possible through our experiences.
রবীন্দ্রনাথ: এই জগৎ হচ্ছে মানবিক জগৎ, বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষেরও জগৎ। অতএব আমাদের কাছ থেকে জগৎকে সরিয়ে রাখলে জগতের অস্তিত্ব থাকে না; এটা একটা আপেক্ষিক জগৎ এবং এর বাস্তবতা আমাদের চৈতন্যনির্ভর। কিছু আদর্শিক কারণ এবং আনন্দ আমাদের কাছে সত্যকে উপস্থাপিত করে। আদর্শ শাশ্বত মানুষ সেই, যার অভিজ্ঞতা সম্ভবপর হয়ে উঠে আমাদের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে।
EINSTEIN: This is a realization of the human entity.
আইনস্টাইন: এটি মানবসত্তার উপলব্ধি।
TAGORE: Yes, one eternal entity. We have to realize it through our emotions and activities. We realize the supreme man, who has no individuaL limitations, through our limitations.
Science is concerned with that which is not confined to individuals; it is the impersonal human world of truths. Religion realizes these truths and links them up with our deeper needs. Our individual consciousness of truth gains universal significance. Religion applies values to truth, and we know truth as good through own harmony with it.
রবীন্দ্রনাথ: হ্যাঁ, এটি একটি অনন্তসত্তা। এটাকে আমাদের উপলব্ধি করতে হবে আমাদের আবেগ এবং কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে। আমরা উপলব্ধি করি এমন পরমপুরুষকে, আমাদের সীমাবদ্ধতার বিচারে যার কোনো সীমাবদ্ধতা নাই।
ব্যক্তির কাছে যা সীমাবদ্ধ নয়, বিজ্ঞান বিষয় সেটাই। এটি একটি নৈর্ব্যক্তিক সত্যের বিশ্বজগৎ। ধর্ম এসকল সত্যকে বাস্তবায়িত করে এবং আমাদের গভীরতর প্রয়োজনসমূহের সাথে সংযোগ ঘটায়। আমাদের ব্যক্তিগত সত্যের সজ্ঞানতা বিশ্বজনীন মূল্য লাভ করে। ধর্ম সত্যের মূল্যকে প্রয়োগ করে এবং আমরা এর সাথে নিজেদের মিলটাকে সুসমন্বিত করে সত্যকে মঙ্গলময় হিসেবে জানতে পারি।
EINSTEIN: Truth, then, or beauty, is not independent of man?
আইনস্টাইন: সত্য, তারপর, বা সৌন্দর্য, এগুলো কি স্বনির্ভর মানুষের জন্য নয়?
TAGORE: No, I do not say so.
রবীন্দ্রনাথ: না, আমি তা বলছি না।
EINSTEIN: If there were no human beings any more, the Apollo Belvedere no longer would be beautiful?
আইনস্টাইন: যদি মানুষজাতির কেউ না থাকতো, তাহলে কি বেলভিডিয়ারের অ্যাপোলো সুন্দর বিবেচিত হতো না?
TAGORE: No!
রবীন্দ্রনাথ: না।
EINSTEIN: I agree with this conception of beauty, but not with regard to truth.
আইনস্টাইন: সৌন্দর্যবোধের এই ধারণা সম্পর্কে আমি আপনার সাথে একমত, কিন্তু সত্য সম্পর্কে একমত নই।
TAGORE Why not? Truth is realized through men.
রবীন্দ্রনাথ: কেন নয়? সত্য তো মানুষের মধ্যে উপলব্ধির যোগ্য হয়ে উঠে।
EINSTEIN I cannot prove my conception is right, but that is my religion.
আইনস্টাইন: আমার ধারণা যে ঠিক, সে বিষয়ে আমি কোনো প্রমাণ দিতে পারব না। কিন্তু এটাই আমার ধর্মবিশ্বাস। আমরা তা ব্যক্তিগতভাবে উপস্থাপন করি −
আমাদের ভ্রান্তি এবং অন্ধ অনুকরণসমূহের দ্বারা, সৃষ্ট অভিজ্ঞতার দ্বারা, আধ্যাত্মিক চেতনার দ্বারা।
TAGORE: Beauty is in the ideal of perfect harmony, which is in the universal being; truth is the perfect comprehension of the universal mind. We individuals approach it through our own mistakes and blunders, through our accumulated experience, through our illumined consciousness. How otherwise can we know truth?
রবীন্দ্রনাথ: সৌন্দর্য হলো যথার্থ সমন্বয়ের আদর্শ, যা বিশ্বচরাচরে বিদ্যামান। সত্য হলো বিশ্বসত্তার মননশীলতার যথার্থ উপলব্ধি। এ ছাড়া আমরা কি ভাবে সত্যকে চিনতে পারবো?
EINSTEIN I cannot prove, but I believe in the Pythagorean argument, that the truth is independent of human beings. It is the problem of the logic of continuity.
আইনস্টাইন: আমি প্রমাণ করতে পারবো না। কিন্তু আমি পিথাগোরাসের উপপাদ্যে বিশ্বাসী, যে সত্য মাননবসত্তার নির্ভরতামুক্ত। এটা অবিচ্ছন্ন যুক্তির সমস্যা।
TAGORE Truth, which is one with the universal being, must be essentially human; otherwise, whatever we individuals realize as true, never can be called truth. At least, the truth which is described as scientific and which only can be reached through the process of logic – —in other words, by an organ of thought which is human. According to the Indian philosophy there is Brahman, the absolute truth, which cannot be conceived by the isolation of the individual mind or described by words, but can be realized only by merging the individual in its infinity. But such a truth cannot belong to science. The nature of truth which we are discussing is an appearance; that is to say, what appears to be true to the human mind, and therefore is human, and may be called maya, or illusion.
রবীন্দ্রনাথ: সত্য বিশ্বসত্তার সাথে সম্পৃক্ত, অবশ্যই মানুষের জন্য অত্যাবশ্যকীয় হবে। অন্যথা আমারা প্রত্যেকে সত্যকে অনুভব করবো। আমরা কোনো তাকে সত্য বলতে পারবো না। অন্তত সত্য বর্ণিত হবে বিজ্ঞানসম্মতভাবে, এবং শুধু যৌক্তিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তার কাছে পৌঁছাতে পারবো। অন্য কথায় তা হবে মানব তন্ত্রগত ভাবনা। ভারতীয় দর্শন অনুসারে ব্রহ্মই পরমসত্য। একে ব্যক্তিবিশৈষের মনের বিচ্ছিন্ন কল্পনা হতে পারে না বা বাক্যের দ্বারা প্রকাশ করা যায়। কিন্তু এই সত্য উপলব্ধিতে আসতে পারে অনন্তসত্ত্বার সাথে শুধু ব্যক্তিসত্ত্বার মিলনেই। কিন্তু এই ধরনের সত্য বিজ্ঞানের জগতের নয়। আমরা যে প্রত্যক্ষতা নিয়ে আলোচনা করছি, তা হলো সত্যের প্রকৃতি; যাকে বলা যায়, মানুষের মনে যা সত্য হিসেবে প্রতিভাত হয়। যেহেতু এটা মানিবিক। এবং একে মায়া বা বিভ্রম বলা যেতে পারে।
EINSTEIN It is no illusion of the individual, but of the species.
আইনস্টাইন: এটা ব্যক্তিবিশেষের বিভ্রম নয়, এটা মনুষ্য প্রজাতির বিভ্রম।
TAGORE: The species also belongs to a unity, to humanity. Therefore the entire human mind realizes truth; the Indian and the European mind meet in a common realization.
রবীন্দ্রনাথ: এই প্রজাতির ঐক্য এবং মানবতাকে ধারণ করে। সেই জন্য সমগ্র মানব মননসত্তা সত্যকে উপলব্ধি করে, ভারতীয়-ইউরোপীয় মননসত্তা একই অনন্য উপলব্ধিতে মিলিত হয়।
EINSTEIN: The word species is used in German for all human beings; as a matter of fact, even the apes and the frogs would belong to it. The problem is whether truth is independent of our consciousness.
আইনস্টাইন: প্রজাতি শব্দটি জার্মান ভাষায় সকল মনুষ্যসত্তাকে বুঝায়; সত্যি কথা বলতে কি, এপ কিংবা ব্যাঙও এর ভিতরে পড়ে। সমস্যা হলো, সত্য সজ্ঞানতার স্বরনির্ভরতা কি না।
TAGORE: What we call truth lies in the rational harmony between the subjective and objective aspects of reality, both of which belong to the superpersonal man.
রবীন্দ্রনাথ: যাকে আমরা সত্য বলে জানি, তা বাস্তবতার বিষয়ীকেন্দ্রিক এবং বাস্তবভিত্তিক যৌক্তিক সমন্বয়ের মধ্যস্তরে। উভয়ই পরমপুরুষ ধারণ করে।
EINSTEIN: We do things with our mind, even in our everyday life, for which we are not responsible. The mind acknowledges realities outside of it, independent of it. For instance, nobody may be in this house, yet that table remains where it is.
আইনস্টাইন: আমরা যা মনোজগতে যা ভাবি, এমনি কি প্রাত্যহিক জীবনে, এর জন্য আমরা দায়ী নই। এর উপর নির্ভর করে মন এর বাইরের
বাস্তবতাসমূহ সম্পর্কে জ্ঞাত হয়। দৃষ্টান্ত স্বরূপ, যখন বাড়ীতে কেউ নেই, তখনও টেবিলটা যেখানে ছিলো সেখানেই থাকে।
TAGORE: Yes, it remains outside the individual mind, but not the universal mind. The table is that which is perceptible by some kind of consciousness we possess.
রবীন্দ্রনাথ: হ্যাঁ, এটা ব্যক্তি মনের বাইরে থাকে, কিন্তু সর্বজনীন মনের বাইরে থাকে না। টেবিল হলো কোনো সজ্ঞানতার দ্বারা প্রত্যক্ষ করার বিষয়। যা চেতনায় থাকে।
EINSTEIN: If nobody were in the house the table would exist all the same, but this is already illegitimate from your point of view, because we cannot explain what it means, that the table is there, independently of us. Our natural point of view in regard to the existence of truth apart from humanity cannot be explained or proved, but it is a belief which nobody can lack – —not even primitive beings. We attribute to truth a superhuman objectivity. It is indispensable for us – —this reality which is independent of our existence and our experience and our mind – though we cannot say what it means.
আইনস্টাইন: কেউ যদি বাড়িতে নাও থাকে, তাহলেও টেবিলটির অস্তিত্ব কিন্তু থাকবে। কিন্তু ইতিমধ্যে তা আপনার দৃষ্টির বাইরে চলে গেছে। এই কারণে টেবিলটা যে আছ ব্যাখ্যা বা প্রমাণ করতে পারবো না। বিষয়টা আমাদের দেখার উপর নির্ভর করে। মানবতানিরপেক্ষ সত্যের অস্তিত্ব সম্পর্কে আমাদের স্বাভাবিক বোধ ব্যাখ্যা কিংবা প্রমাণ করা যায় না। কিন্তু এই বিশ্বাস কেউ ত্যাগ করতে পারে না, এমন কি আদিবাসীরাও। সত্যকে আমরা পরমপুরুষ মূল্য দিই। অপরিহার্য এই বাস্তবতা যা আমাদের অস্তিত্ব, অভিজ্ঞতা এবং মানস থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। যদিও আমরা পরিষ্কার বলতে পারি না তার অর্থ কি।
TAGORE: In any case, if there be any truth absolutely unrelated to humanity, then for us it is absolutely non-existing.
রবীন্দ্রনাথ: হ্যাঁ, যদি কোনো সত্য থেকে থাকে যার সঙ্গে মানবিকতার সাথে সম্পূর্ণ সম্পর্কহীন হয়, তবে আমাদের জন্য সেটা হবে সম্পূর্ণই অস্তিত্বহীনতা।
EINSTEIN: Then I am more religious than you are!
আইনস্টাইন: তা হলে আপনার চেয়ে আমি বেশি ধার্মিক।
TAGORE: My religion is in the reconciliation of the superpersonal man, the universal spirit, in my own individual being.
রবীন্দ্রনাথ: আমার ধর্ম হচ্ছে পরমপুরুষের সাথে পুনর্মিত্রাতায়, সর্বজনীন পরমাত্মায়, আমার নিজস্ব ব্যক্তিসত্তায়।
আইনস্টাইনের সাথে রবীন্দ্রনাথের দ্বিতীয়বারের কথপোকথন প্রকাশিত হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের
Asia নামক সাময়িকীর মার্চ ১৯৩১ সংখ্যায়। নিচে এই কথপোকথন তুলে ধরা হলো।
TAGORE: I was discussing with Dr. Mendel today the new mathematical discoveries which tell us that in the realm of infinitesimal atoms chance has its play; the drama of existence is not absolutely predestined in character.
রবীন্দ্রনাথ: আমি আজ ডক্টর মেন্ডেলের সাথে গণিতের নব্য আবিষ্কার সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম, যা বলছে যে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম পরমাণুরও কিছু করবার আছে; অস্তিত্বের নাটকীয়তা তার বৈশিষ্ট্যের দ্বারা পূর্বনির্ধারিত নয়।
EINSTEIN: The facts that make science tend toward this view do not say good-bye to causality.
আইনস্টাইন: প্রকৃতপক্ষে এসব বিজ্ঞানকে এমনটি ভাবাচ্ছে, যা কার্যকারণবাদ ধারণাকে বাতিল করে না।
TAGORE: Maybe not, yet it appears that the idea of causality is not in the elements, but that some other force builds up with them an organized universe.
রবীন্দ্রনাথ: তা হয়ত করে না, দেখা যাচ্ছে যে কার্যকারণবাদ উপাদানের মধ্যে নিহিত নয়, কিন্তু অন্য কোনো শক্তি এর মাধ্যমে একটি সুসমন্বিত মহাবিশ্বের সৃষ্টি করে।
EINSTEIN: One tries to understand in the higher plane how the order is. The order is there, where the big elements combine and guide existence, but in the minute elements this order is not perceptible.
আইনস্টাইন: যে কেউ এটা বুঝতে চেষ্টা করছে যে উচ্চতর স্তরে কীভাবে এ ক্রমধারা আছে। ক্রমধারাটি আছে; যেখানে বৃহৎ উপাদান একত্রিত করে এবং অস্তিত্বকে চালিত করে; কিন্তু সূক্ষ্মতর উপাদানে এ ক্রমধারা দৃশ্যমান নয়।
TAGORE: Thus duality is in the depths of existence, the contradiction of free impulse and the directive will which works upon it and evolves an orderly scheme of things.
রবীন্দ্রনাথ: এই দ্বৈততা অস্তিত্বের গভীরে বিদ্যমান, মুক্ত আকাঙ্ক্ষা এবং নির্দেশিত ইচ্ছার স্ববিরোধীতা, যা এর উপর কাজ করছে এবং একটি নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতির উপর আবর্তিত হচ্ছে।
EINSTEIN: Modern physics would not say they are contradictory. Clouds look as one from a distance, but if you see them nearby, they show themselves as disorderly drops of water.
আইনস্টাইন: আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান স্বীকার করছে না যে তারা স্ববিরোধী। মেঘ দূর থেকে এক রকম দেখায়, কিন্তু খুব কাছ থেকে দেখলে বিক্ষিপ্ত জলকণিকা ছাড়া আর কিছুই দেখা যাবে না।
TAGORE: I find a parallel in human psychology. Our passions and desires are unruly, but our character subdues these elements into a harmonious whole. Does something similar to this happen in the physical world? Are the elements rebellious, dynamic with individual impulse? And is there a principle in the physical world which dominates them and puts them into an orderly organization?
রবীন্দ্রনাথ: আমি মানব-মনোবিদ্যায়ও প্রায় একই রকম দেখতে পাই। আমাদের আবেগ এবং আকাঙ্ক্ষাগুলো অনিয়ন্ত্রিত, কিন্তু আমাদের চরিত্র এগুলোকে পরিপূর্ণভাবে আয়ত্বে নিয়ে আসে। বস্তুজগতে কি এমনটি ঘটতে পারে? উপাদানগুলো স্বতন্ত্র আবেগ দ্বারা অসংযত, গতিশীল? এবং বস্তুজগতে এমন কি কোনো নীতি আছে যা তাদের নিয়ন্ত্রণ করে একটি ক্রমনির্দেশিত সংগঠন?
EINSTEIN: Even the elements are not without statistical order; elements of radium will always maintain their specific order, now and ever onward, just as they have done all along. There is, then, a statistical order in the elements.
আইনস্টাইন: এমনকি মৌলিক উপাদানগুলোও পরিসাংখ্যিক নিয়মমুক্ত নয়; যেমন রেডিয়মের অনুগুলোও সর্বদা একটি সুনির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চছে, চলছে এবং চলবে; যেমন করে তারা সর্বদা চলে আসছে। তাহলে অবশ্যই বস্তু উপাদানও নিয়ন্ত্রিত।
TAGORE: Otherwise, the drama of existence would be too desultory. It is the constant harmony of chance and determination which makes it eternally new and living.
রবীন্দ্রনাথ: অন্যথায়, অস্তিত্বের ঘটনাপ্রবাহ উদ্দেশ্যহীন হয়ে যাবে। এটা হলো সুযোগ ও লক্ষ্য এ দুয়ের একটা ধ্রুব সমন্বয়, যা চির-নতুন এবং সজীব করে রাখে।
EINSTEIN: I believe that whatever we do or live for has its causality; it is good, however, that we cannot see through to it.
আইনস্টাইন: আমি বিশ্বাস করি, যা আমরা করি কিংবা যা অস্তিত্বশীল তার সবকিছুরই কার্যকারণ রয়েছে; এটা ভাল, যদিও আমরা তার সবকিছু আগাগোড়া দেখতে পাই না।
TAGORE: There is in human affairs an element of elasticity also, some freedom within a small range which is for the expression of our personality. It is like the musical system in India, which is not so rigidly fixed as western music. Our composers give a certain definite outline,
a system of melody and rhythmic arrangement, and within a certain limit the player can improvise upon it. He must be one with the law of that particular melody, and then he can give spontaneous expression to his musical feeling within the prescribed regulation. We praise the composer for his genius in creating a foundation along with a superstructure of melodies, but we expect from the player his own skill in the creation of variations of melodic flourish and ornamentation. In creation we follow the central law of existence, but if we do not cut ourselves adrift from it, we can have sufficient freedom within the limits of our personality for the fullest self-expression.
রবীন্দ্রনাথ: মানুষের ক্ষেত্রে নমনীয়তার একটা বিষয় আছে, যার ছোট্ট পরিসরে কিছুটা স্বাধীনতা আছে, যেখানে সে তার ব্যক্তিত্ব প্রকাশ করতে পারে। এটা অনেকটা ভারতীয় সংগীতের মতো, যা পাশ্চাত্য সংগীতের মতো অতটা কঠিন নিয়মের শৃঙ্খলে আবদ্ধ নয়। আমাদের সুরকারগণ এর একটা সুনির্দিষ্ট রূপরেখা, সুরপদ্ধতি দিয়ে থাকেন এবং এর মধ্যে শিল্পী নিজেও কিছুটা স্বকীয়তার অনুপ্রবেশ ঘটাতে পারেন। তাঁকে অবশ্যই সেই সুনির্দিষ্ট সুরের মধ্যে থাকতে হবে এবং এর মধ্যে থেকেই সে গায়কী-আবেগের স্বতস্ফুর্ত প্রকাশ ঘটাতে পারে। আমরা সুর সৃষ্টিতে সুরকারের মননশীলতার প্রশংসা করি, কিন্তু একই সাথে আমরা শিল্পীর কাছে তার গায়কী এবং সংগীতালংকারে নিজস্ব দক্ষতা প্রত্যাশা করি। এই সৃষ্টিতে আমরা অস্তিত্বের কেন্দ্রীয় সূত্র মেনে চলি – কিন্তু আমরা যদি আমাদের এই দোদুল্যমনতা থেকে মুক্ত করতে না পারি – আমরা আমাদের ব্যক্তিত্বের মধ্যে থেকেও নিজের পরিপূর্ণ প্রকাশে পর্যাপ্ত স্বাধীনতা পাই।
EINSTEIN: That is possible only when there is a strong artistic tradition in music to guide the people’s mind. In Europe, music has come too far away from popular art and popular feeling and has become something like a secret art with conventions and traditions of its own.
আইনস্টাইন: তা তখনই সম্ভব যখন সঙ্গীতের প্রবল নান্দনিক ঐতিহ্য মানুষের মনকে উজ্জ্বীবিত করে। ইউরোপে সঙ্গীত মানুষের জনপ্রিয় শৈলী এবং গণ-মানুষের আবেগ থেকে অনেক দূরে এসে গেছে এবং তা মূলতঃ স্বীয় প্রথা ও ঐতিহ্য প্রকাশের নিগূঢ় শিল্প হিসেবে দেখা দিচ্ছে।
TAGORE: You have to be absolutely obedient to this too complicated music. In India, the measure of a singer’s freedom is in his own creative personality. He can sing the composer’s song as his own, if he has the power creatively to assert himself in his interpretation of the general law of the melody which he is given to interpret.
রবীন্দ্রনাথ: আপনাকে অবশ্যই এ গূঢ় সঙ্গীতের কাছে অনুগত থাকতে হবে। ভারতবর্ষে, নিজস্ব সৃজনশীল ব্যক্তিত্বই হলো একজন গায়কের স্বাধীনতার মাপকাঠি। সে একজন সুরকারের গান নিজস্ব ঢংএ গাইতে পারে যদি ঐ নির্দিষ্ট সঙ্গীতের জন্য তার নিজের গায়কীর মধ্যে নির্দিষ্ট সুরের সাধারণ নিয়মাবলী প্রকাশের সৃজনশীল সক্ষমতা থাকে।
EINSTEIN: It requires a very high standard of art to realize fully the great idea in the original music, so that one can make variations upon it. In our country, the variations are often prescribed.
আইনস্টাইন: প্রকৃত সঙ্গীতের মাহাত্ম অনুধাবন করার জন্য অত্যন্ত উঁচু দরের শিল্পের প্রয়োজন, যাতে করে কেউ এ ধরনের পরিবর্তন করতে পারে। আমাদের দেশে এ ধরনের পরিবর্তনও সুনির্দিষ্ট।
TAGORE: If in our conduct we can follow the law of goodness, we can have real liberty of self-expression. The principle of conduct is there, but the character which makes it true and individual is our own creation. In our music there is a duality of freedom and prescribed order.
রবীন্দ্রনাথ: আমরা আমাদের আচরণে যদি মহত্তের সূত্রগুলো মেনে চলতে পারি তবেই আমরা আত্ম-প্রকাশের প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন করতে পারব। আচরণের নীতিটা সেখানেই, কিন্তু এই চরিত্র যা একে সত্য এবং স্বতন্ত্র হিসেবে তৈরি করে তা আমাদেরই সৃষ্টি। আমাদের সঙ্গীতে স্বাধীনতা এবং সুনির্দিষ্টতার দ্বৈততা রয়েছে।
EINSTEIN: Are the words of a song also free? I mean to say, is the singer at liberty to add his own words to the song which he is singing
আইনস্টাইন: সঙ্গীতের কথাগুলোও কি মুক্ত? আমি আসলে বোঝাতে চাইছি, সঙ্গীতের কথাগুলো, এবং যা সে গাইছে, তার সাথে একজন গায়ক কি সম্পূর্ণ একমত?
TAGORE: Yes. In Bengal we have a kind of song-kirtan, we call it-which gives freedom to the singer to introduce parenthetical comments, phrases not in the original song. This occasions great enthusiasm, since the audience is constantly thrilled by some beautiful, spontaneous sentiment added by the singer.
রবীন্দ্রনাথ: হ্যাঁ। বাংলায় এক ধরণের সঙ্গীত রয়েছে, যাকে আমরা কীর্তন বলি, যেখানে গানের সাথে গায়ক তাঁর নিজস্ব ও পছন্দসই মতামত, কথা বা উক্তি জুড়ে দিতে পারেন। এগুলো আসলে প্রবল উৎসাহোদ্দীপক, গায়কের এ সকল সুন্দর স্বতস্ফুর্ত আবেগে শ্রোতারা মুগ্ধ হয়।
EINSTEIN: Is the metrical form quite severe?
আইনস্টাইন: এ ধরনের ছন্দোবদ্ধ গঠন কি খুবই কঠিন?
TAGORE: Yes, quite. You cannot exceed the limits of versification; the singer in all his variations must keep the rhythm and the time, which is fixed. In European music you have a comparative liberty with time, but not with melody.
রবীন্দ্রনাথ: হ্যাঁ, অবশ্যই। আপনি পদ্যরচনকৌশলের সীমাকে অতিক্রম করতে পারবেন না। একজন গায়ককে অবশ্যই তাঁর নির্দিষ্ট সুর ও সময়ের মধ্যে থেকেই পরিবর্তন করবেন। ইউরোপীয় সঙ্গীতে সময়ের সাথে গায়কের তুলনামূলক স্বাধীনতা রয়েছে কিন্তু সুরের সাথে নয়।
EINSTEIN: Can the Indian music be sung without words? Can one understand a song without words?
আইনস্টাইন: বাণী ছাড়া কি ভারতীয় সঙ্গীত হতে পারে? কেউ কি বাণী ছাড়া সঙ্গীত বুঝতে পারে?
TAGORE: Yes, we have songs with unmeaning words, sounds which just help to act as carriers of the notes. In North India, music is an independent art, not the interpretation of words and thoughts, as in Bengal. The music is very intricate and subtle and is a complete world of melody by itself.
রবীন্দ্রনাথ: হ্যাঁ, অর্থহীন শব্দ দিয়েও সঙ্গীত হতে পারে, এ শব্দগুলো কেবল কিছু সুনির্দিষ্ট সুরসঙ্কেত প্রকাশ করে। উত্তর ভারতে, সঙ্গীত একটি স্বাধীন শিল্পকলা, বাংলার মতো শব্দ এবং ভাবের প্রকাশ নয়। এ সঙ্গীত অত্যন্ত দুর্বোধ্য এবং নিগূঢ়, এবং ইহা সম্পূর্ণরূপেই স্ব-ব্যাখ্যাত সুর।
EINSTEIN: Is it not polyphonic?
আইনস্টাইন: ইহা কি বহু-স্বরিক নয়?
TAGORE: Instruments are used, not for harmony, but for keeping time and adding to the volume and depth. Has melody suffered in your music by the imposition of harmony?
রবীন্দ্রনাথ: যন্ত্রসমূহ ঐক্যতান জন্য ব্যবহৃত হয় না, সময়ের সাশ্রয় এবং মাত্রা ও গভীরতা বৃদ্ধির জন্য। ইউরোপীয় সুর কি আরোপিত ঐক্যতান দ্বারা আক্রান্ত?
EINSTEIN: Sometimes it does suffer very much. Sometimes the harmony swallows up the melody altogether.
আইনস্টাইন: কখনো খুব ভালোভাবেই আক্রান্ত। কখনো ঐক্যতান সম্পূর্ণ সুরকেই ছাপিয়ে ফেলে।
TAGORE: Melody and harmony are like lines and colors in pictures. A simple linear picture may be completely beautiful; the introduction of color may make it vague and insignificant. Yet color may, by combination with lines, create great pictures, so long as it does not smother and destroy their value.
রবীন্দ্রনাথ: সুর ও ঐক্যতান হলো অনেকটা ছবির রেখা এবং রংশিল্পের মতো। একটি রৈখিক ছবি পরিপূর্ণ সুন্দর হতে পারে; যাতে রংয়ের ছোঁয়া ছবিটিকেই অস্পষ্ট ও গুরুত্বহীন করে তুলতে পারে। তবে রং ও রেখার সমন্বয়ে ও একটি ভালো ছবির সৃষ্টি হতে পারে, এর মূল্য না ছাপিয়ে বা নষ্ট না করে।
EINSTEIN: It is a beautiful comparison; line is also much older than color. It seems that your melody is much richer in structure than ours. Japanese music also seems to be so.
আইনস্টাইন: এটা একটা চমৎকার উদাহরণ, রেখা আসলে রংয়ের চেয়ে অনেক বেশি গভীর। মনে হয় আপনাদের সুর এর কাঠামোয় আমাদের চেয়ে অনেক বেশি সমৃদ্ধ। জাপানী সঙ্গীতও আমার কাছে তেমনি মনে হয়।
TAGORE: It is difficult to analyze the effect of eastern and western music on our minds. I am deeply moved by the western music; I feel that it is great, that it is vast in its structure and grand in its composition. Our own music touches me more deeply by its fundamental lyrical appeal. European music is epic in character; it has a broad background and is Gothic in its structure.
রবীন্দ্রনাথ: আমাদের মানসিকতা দিয়ে প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের সঙ্গীতের প্রভাব অনুধাবন করা খুবই কঠিন। পাশ্চাত্য সঙ্গীত আমাকে গভীরভাবে নাড়া দেয়; আমি মনে করি এটা মহান, এটা মহান এর গঠনে এবং এর সুরে। কিন্তু আমাদের সঙ্গীত এবং এর মৌলিক গীতিআবেদন আমাকে আরো বেশি স্পর্শ করে। ইউরোপীয় সঙ্গীত চরিত্রের দিক থেকে মহাকাব্যের মত; এর একটা বিশাল আবহ আছে এবং ইহা অনেকটা গথিক প্রকৃতির।
EINSTEIN: This is a question we Europeans cannot properly answer, we are so used to our own music. We want to know whether our own music is a conventional or a fundamental human feeling, whether to feel consonance and dissonance is natural, or a convention which we accept.
আইনস্টাইন: আমরা আমাদের সঙ্গীতের সাথে এতটাই অভ্যস্ত যে এ প্রশ্নে উত্তর আমরা ইউরোপীয়রা জানি না। আমরা জানতে চাই আমাদের সঙ্গীত ঐতিহ্যের না মৌলিক মানবীয় আবেগের, এ ঐক্য এবং অনৈক্যের আবেগ যা স্বাভাবিক, অথবা কেবল ঐতিহ্যের দ্বারা যা আমরা অর্জন করি।
TAGORE: Somehow the piano confounds me. The violin pleases me much more.
রবীন্দ্রনাথ: যেকোনো উপায়ে পিয়ানো আমাকে বিস্মিত করে। বেহালা আমাকে অনেক বেশি আনন্দ দেয়।
EINSTEIN: It would be interesting to study the effects of European music on an Indian who had never heard it when he was young.
আইনস্টাইন: এ গবেষণা খুবই আনন্দের হবে যে, একজন ভারতীয় যে যুবাকালে কখনোই ইউরোপীয় সঙ্গীত শোনে নি তার উপর এ সঙ্গীত কেমন প্রভাব ফেলে তা জানা।
TAGORE: Once I asked an English musician to analyze for me some classical music, and explain to me what elements make for the beauty of the piece.
রবীন্দ্রনাথ: একদা আমি একজন ইংলিশ সুরকারকে আমার জন্য কিছু ক্লাসিক্যাল সঙ্গীত বিশ্লেষণ করতে বলেছিলাম, এবং এর সৌন্দর্য ব্যাখ্যা করতে বলেছিলাম।
EINSTEIN: The difficulty is that the really good music, whether of the East or of the West, cannot be analyzed.
আইনস্টাইন: সমস্যা হল, প্রকৃত ভালো সঙ্গীত, তা প্রচ্যেরই হোক কিংবা পাশ্চাত্যেরই হোক, বিশ্লেষণ করা যায় না।
TAGORE: Yes, and what deeply affects the hearer is beyond himself.
রবীন্দ্রনাথ: ঠিক, যা গভীরভাবে প্রভাবিত করে শ্রোতা আসলে তখন তার নিজের মধ্যে থাকে না।
EINSTEIN: The same uncertainty will always be there about everything fundamental in our experience, in our reaction to art, whether in Europe or in Asia. Even the red flower I see before me on your table may not be the same to you and me.
আইনস্টাইন: একই ধরনের অনিশ্চয়তা আমাদের অভিজ্ঞতার প্রায় সকল মৌলিক বিষয়েই রয়েছে, শিল্পকলা সম্পর্কে আমাদের প্রতিক্রিয়া, তা হোক ইউরোপে কিংবা এশিয়ায়। এমনকি আপনার টেবিলের এই লাল ফুল যা আমি দেখছি তাও আপনার কাছে এবং আমার কাছে একই নাও হতে পারে।
TAGORE: And yet there is always going on the process of reconciliation between them, the individual taste conforming to the universal standard.
রবীন্দ্রনাথ: অতএব, এ সবকিছুর মধ্যেই এক ধরণের মিলনক্রিয়া চলছে, ব্যক্তিবিশেষের রুচি সর্বদাই একটি সর্বজনীন আদর্শের অনুগত।
সূত্র:
NewYork Times, August 10, 1930, by Dmitri Marianoff]