একটি ‘মুসলিম ক্রিকেট টিমের’ করুণ আত্মকথা!

একটি ‘মুসলিম ক্রিকেট টিমের’ করুণ আত্মকথা!

বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের ক্যাপ্টেন মাশরাফি বিন মুর্তোজা যাকে ইংরেজি ও পাশ্চত্য কায়দায় ‘ম্যাশ’ ডাকা হয়, তিনি বলেছেন, ‘খেলার দিন ব্যতীত বাকি দিনগুলো রোজা রেখেই অনুশীলন করবো। যেহেতু আমরা মুসলিম, রোজা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সবাই-ই রোজা থাকবে। খেলার দিন হয়তো কেউ কেউ থাকতে পারবে না’।

খেলতে গেছে ক্রিকেট সেখানে ক্রিকেট বাদ দিয়ে ‘মুসলমান’ ‘রোজা’ এগুলো কিভাবে আসলে কে জানে! স্টিভি ওয়াহ রিকি পন্টিংদের জীবনে কেউ বলতে শুনেছেন ‘আমরা খ্রিস্টান’? এমনকি ভারতীয় বা শ্রীলংকান ক্রিকেটাররা কখনো তাদের ক্রিকেটার পরিচয়ে নিজেদের হিন্দু বা বৌদ্ধ হিসেবে পরিচয় দিতে শুনেছেন হলভরা সাংবাদিকদের সামনে? এরকম সাম্প্রদায়িক পরিচয় দিতো পাকিস্তানীরা। তারা পাকিস্তানী হওয়ার চাইতে বিশ্বে নিজেদের ‘মুসলমান’ পরিচয় প্রতিষ্ঠা করতে চাইত। বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম সেটাই করে যা আগে পাকিস্তান করে থাকত। আয়ারল্যান্ডের সময় অনুযায়ী ১৭-১৮ ঘন্টা রোজা রেখে ক্রিকেট খেলাটা সহজ নয়। তাই বাংলাদেশ টিমের ক্যাপ্টেনের দু:খভরা মন্তব্য, যেহেতু এত দীর্ঘ সময় ধরে রোজা রেখে ক্রিকেট খেলা যাবে না তাই কেবল খেলার দিন ছাড়া বাকীদিন তারা সবাই রোজা রাখবে। আহারে…! এদের হাতে যদি দুনিয়ার ক্ষমতা চলে আসে তাহলে এরা রোজার দিনে গোটা পৃথিবীতে সমস্ত খেলাধূলা বন্ধ করে দিবে! রমজানের ইজ্জ্বত রক্ষায় সারা পৃথিবীতে সিনেমা, গান, শিল্পচর্চা সব বন্ধ করে দিবে একমাস। ক্রিকেট খেলতে গিয়ে রোজা রাখছেন না খাচ্ছেন সেই প্রসঙ্গই আসার কথা না। এই সাধারণ ব্যাপারটা একজন মুসলমানকে বুঝানো মুশকিল। রমজান আসলেই মুসলিম সাংবাদিকদের সাম্প্রদায়িকভাবে বিশ্ব ক্রিড়াবীদদের বিভাজনের কাজটা নজরে পড়ে প্রতিবছর। ইউরোপীয়ান লিগের কোন কোন খেলোয়ারকে এবার রোজা রেখে খেলতে হবে, গুরুত্বপূর্ণ খেলাটা রোজার মাঝখানে পড়ায় বিশেষ ঐ খেলোয়ারের অনেক কষ্ট করতে হবে কারণ রামাদান তো মিস করা যাবে না। লিভারপুলের হয়ে সালাহ খেললে রোজা রেখে খেলবে বার্সার মেসিদের বিরুদ্ধে। নয়ত খেলেই সেহরি খেতে যাবে…। এরকম নিউজ ছাপছে প্রথম আলোর মত তথাকথিত প্রগতিশীল কাগজগুলি! আগে পাকিস্তান ক্রিকেট টিম নিয়ে এরকম নিউজ ছাপত ইনকিলাব সংগ্রাম পত্রিকা। রোজার দিন খেলা পড়েছে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের। ইনকিলাবের নিউজ- রোজা রেখে খেলবে পাকিস্তান। সেলিম মালিক জানিয়েছেন, রোজা রেখে এই গরমে খেলতে কোন কষ্টই হবে না ইনশাল্লাহ…। এখন ইনকিলাব বা সংগ্রাম বলতে আলাদা করে কোন ইসলামিক পত্রিকাকে ধরা যায় না, সব কাগজই ধর্ম বেচে খায়…।

ইউরোপীয়ান লিগে খেলা আফিকান ও আরব মুসলিম খেলোয়াররা রমজানের শুভেচ্ছা জানিয়েছে। বিষয়টা খেয়াল করার মত। তারা তাদের শুভেচ্ছাজনিত টুইট বা ফেইসবুক পোস্টে বিশ্বের সকল মুসলিম ভাই বোনদের রমজানের শুভেচ্ছা জানিয়েছে। মেসুত ওজিল তার মোনাজাত ধরা ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘আমার সব মুসলিম ভাই ও বোনের উদ্দেশে বলছি রামাদান মোবারক’। এই যে কেবলমাত্র ‘মুসলিম ভাইবোনদের’ জন্য শুভেচ্ছা জানানো হলো এটি কেন হলো? তাদের অর্থ খ্যাতি সব এসেছে ইউরোপে ফুটবল খেলে। উন্নত জীবনও এসেছে তখাকথিত অমুসলিম মহাদেশ থেকে। তাহলে এতটুকু উদারতা কেন দেখাতে পারল না? এগুলো কিন্তু একসূত্রে গাঁথা। মাশরাফি কেন সৌম্যকে দুর্গাপুজার শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্ট দেয় না? কেন ক্রিসমাসে কোন ইসলামিক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান শুভেচ্ছা জানায় না? কারণ ইসলামে এইসব কুফরি উৎসব বাতিল উৎসবে কোন মুসলমানকে শুভেচ্ছা জানানোকে কঠরভাব হারাম করেছে। জাস্টিন টুডো রমজানের শুভেচ্ছা জানালেও কোন ইসলামিক বিশ্বের নেতা ক্রিসমাসে শুভেচ্ছা জানায় না- এ কারণেই। ম্যাশ-মুশিদের রোজা রেখে খেলতে হয় ইসলামিক খিলাফত না থাকায়। যদি এখনো খলিফা ওমরের শাসন থাকত তাহলে ম্যাশ-মুশিরা এই মাসে খেলাধূলাই বন্ধ করে দিতো। আইসিসি তাদের ক্যালেন্ডারকে রমজান মাসকে বাদ দিয়ে করতে বাধ্য হতো…। দুনিয়াটাকে মাত্র একটি ধর্মের মানুষের জন্য বানানোর ইচ্ছাটা ম্যাশের খেলার জন্য রোজা রাখতে না পাড়ার দু:খ থেকে বেশ বুঝা যায়…।