ইসরো প্রধান ড শিভম রকেট উৎক্ষেপনের আগে পূজো দেন। ইসরোতে উপগ্রহ ছাড়ার আগে গোটা উপগ্রহকেই পূজো দেওয়া হয়।

ইসরো প্রধান ড শিভম রকেট উৎক্ষেপনের আগে পূজো দেন। ইসরোতে উপগ্রহ ছাড়ার আগে গোটা উপগ্রহকেই পূজো দেওয়া হয়।

      এই নিয়ে যুক্তিবাদিদের আপত্তি নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ন। কারন বিজ্ঞান ত বইতে লেখা থাকে না- যা জীবন যাত্রায় না নিয়ে আসলে ভারতের মতন একটা দেশের উত্তরন কদ্দূর সম্ভব, সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই।  পূজো অর্চনার সাথে সাফল্যের কোন সম্পর্ক নেই । কোন সাফল্য বা ব্যর্থতার সাথেই নেই। এই ক্ষেত্রেও যা শোনা যাচ্ছে টেস্ট বেডেই রোভারের অবতরনের % সাকসেস ছিল ২৮%।  সুতরাং আরেকটু সময় নিয়ে লঞ্চ করলেই সাফল্যের সম্ভবনা হত বেশী। কিন্ত সেটা কেন হল না জানি না। রাজনৈতিক চাপ হতে পারে। আবার এটাও হতে পারে, যে চাঁদের বুকে না নামা পর্যন্ত ঐ ডেটাগুলো না পেলে, আসলেই এই ২৮% টা উন্নত করা সম্ভব না।  সুতরাং মন্তব্য করা সম্ভব না।

  এবার আসল প্রশ্নে আসি। বিজ্ঞানীদের প্রকাশ্য ধর্মচারন ঠিক না।

   প্রথমত  শিভম বিজ্ঞানী নন। ইসরো কোন বিজ্ঞান সংস্থা না। ইসরো প্রযুক্তি সংস্থা।  তারা যে প্রযুক্তি তৈরী করছেন তা আমেরিকা, বা রাশিয়া ৫০ বছর আগেই করেছে।  এবং তখন কাজটা সেই যুগের আদিম ইলেক্ট্রিনিক্স নিয়ে আরো কঠিন ছিল।  তাহলে ইসরোর ইঞ্জিনিয়াররা কি করছেন আসলে?

এখানেই বুঝতে হবে- নাসা তার প্রযুক্তি ভারতের সাথে শেয়ার করবে না। কারন স্যাটেলাইট এখন যুদ্ধের গোয়েন্দাগিরির অবিচ্ছেদ্য অংশ। সুতরাং ভারতের নিজস্ব মহাকাশ প্রযুক্তি দরকার। এবং সেটা কম খরচে দরকার। ইসরো সেটাই করে। এবং কাজটা কোন অংশে সহজ না। বেশ কঠিন কাজ।

ইঞ্জিনিয়ার লিডার হিসাবে ড শিভমের কাজ, বিজ্ঞানীদের থেকেও কঠিন। বিজ্ঞানী গোটা পৃথিবীতে লাখে লাখে আছে। কালাম বা শিভমের মতন প্রযুক্তি লিডার হাতে গোনা কয়েকজন। কারন হাজারজনের ইঞ্জিনিয়ারিং টিমকে একসূত্রে বেঁধে প্রজেক্ট সফল করা খুব কঠিন কাজ। অসম্ভব ধীশক্তি ছাড়া তা সম্ভব না।   ড শিভম যে একজন অতি উচ্চমেধার মানুষ তাই নিয়ে কোন সংশয় থাকা উচিত না।

সুতরাং প্রশ্ন উঠেছে তার প্রকাশ্য ধর্মাচারন ঠিক কি না।

  আমার মনে হয় কারুর ব্যক্তিগত ধর্মবিশ্বাস , তা যদি ক্ষতি না করে তাহলে চিন্তা করাই উচিত না।  এক্ষেত্রে তার ধর্ম বিশ্বাসে ক্ষতি এবং লাভ দুটোই দেখতে পাচ্ছি।

ক্ষতির দিকটা এই যে তিনি ভারতের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে একজন আইকন। তারা যেন না ভেবে বসে পূজো করলেই জীবনে সাফল্য আসবে। সাফল্যের পেছনে যে কঠিন পরিশ্রম এবং প্ল্যানিং থাকে , এবং সেটাই দরকার, এটা ভারতীয় শিশু কিশোর মনে পৌছালো না। যা দরকার। খুব বেশী করে দরকার। 

লাভের দিকটা এই যে মানুষ, বিজ্ঞান প্রযুক্তির বলে বলিয়ান হয়ে প্রকৃতিকে ধ্বংস করছে ক্রমাগত। হিন্দু ধর্ম মূলত প্যাগানিজম। এই ধ্বংস রুখতে প্যাগানিজমের চেতনাটাও দরকার যুক্তি এবং বিজ্ঞানের সাথে। কি সেই চেতনা? কেন হিন্দুরা গাছ পাথর উপগ্রহ রকেট সব কিছুকেই পূজো করে?  কারন প্যাগানিজমের মূল বক্তব্য সব কিছুতেই ঈশ্বর আছেন।  মানুষ যেভাবে প্রকৃতি এবং প্রানীকূলকে ধ্বংস করে চলেছে, তার জন্য প্যাগানিজম ও ফিরে আসুক- যেখানে মানুষ প্রকৃতির সাথে আত্মীয়তা ফিরে পাবে।  হিন্দু বিশ্বাসে রকেট উপগ্রহ সবই মূর্ত।  মানুষ বাদে পৃথিবীর আর যাকিছু-তারাও যে মানুষের মতনই গুরুত্বপূর্ন -এই চেতনাটা পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা দরকার। এবং এটা করতে পারে হিন্দুদের প্যাগান বিশ্বাস। আবার বিজ্ঞানের পথেও এই রিয়ালাইজেশন সম্ভব। কিন্ত বিজ্ঞান প্রযুক্তি কর্পরেট রাজনৈতিক নেতাদের হাতে পরে, তার উল্টোটাই হয়েছে। বিজ্ঞান ধ্বংসের স্রষ্টা এখন। প্রকৃতি ধ্বংস হয়েছে শিল্পায়নের ফলে। নিউক্লিয়ার যুদ্ধ শুরু হলে সব যাবে।

সুতরাং প্যাগান বিশ্বাস , যা প্রকৃতিকে ভালবাসতে শেখায়, তা ফিরে আসলে ক্ষতি কিছু নেই।  শুধু এটা না ভাবলেই হল, সাফল্যের জন্য পূজো অর্চনা দরকার। না। এটা বুঝতে হবে, হিন্দু ধর্মে লোকে উপগ্রহ বা পাথর বা গাছ-যাকেই পূজো করূক না-তা করে, অমূর্ত জগতকে মূর্ত জগতের অন্তর্ভুক্ত করতে। যাতে তারা সর্বভূতেই ঈশ্বরের সন্ধান পান।
 
সাফল্য পাওয়ার জন্য পূজো অর্চনা ঋকবেদের যুগে ছিল। আস্তে আস্তে হিন্দুদের সভ্যতা যত এগিয়েছে, উপনিষদের যুগে হিন্দুরা পূজো করেছে বিমূর্তের মধ্যে মূর্তকে প্রতিষ্ঠা করতে ।  উপনিষদের ঋষিরা মানুষের বস্তুজগতের সাফল্যকে নস্যাত করেছেন। নচিকেতার উপখ্যান দেখুন।  ভুলে যাবেন না এই বস্তু জগতের সাফল্যের পেছনে দৌড়াতে গিতেই পৃথিবীর এই কাহিল অবস্থা এখন।

প্রশ্ন উঠতেই পারে এই বিশ্বমানবতা  বিজ্ঞানের পথেও সম্ভব। মুশকিল হচ্ছে জীবনের উদ্দেশ্য কি- এই প্রশ্নের উত্তর বিজ্ঞানের ডোমেনেই আসে না। ফলে  এই ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক ভাবে যেসব দর্শন মানুষ এবং প্রকৃতির মেল বন্ধন ঘটিয়েছে, যেমন প্যাগানিজম, যেমন জৈন ধর্ম-তাদের ওপর ভরসা করলে ক্ষতি নেই।

বিল্পাব পাল।