বাঙালির অস্তিত্ব বিলুপ্ত হবেঃ (তৃতীয় অংশ) (দ্বিতীয় অংশের পর …)

বাঙালির অস্তিত্ব বিলুপ্ত হবেঃ (তৃতীয় অংশ)
(দ্বিতীয় অংশের পর …)
শ্রীচৈতন্য ও তাঁর ভক্তি আন্দোলনে দ্বারা বাংলা কতটা রক্ষা পেয়েছিল ….?? 

আজকে আমরা মমতা ব্যানার্জী বা জ্যোতি বসুকেই যতই দোষ দিই না কেন, একটা তথ্য মনে রাখা দরকার। এনাদের মোল্লা তোষণের বদমাইসি শুরু হবার অনেক আগেই কিন্তু বাংলায় কথা বলা জনগোষ্ঠীর মধ্যে (ভারত ও বাংলাদেশ মিলিয়ে) প্রায় সত্তর শতাংশ মানুষ অহিন্দু হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ তারা নিজেদেরকে বাঙালি সংস্কৃতি থেকে আলাদা করে নিয়েছে। এর দায় আজকের ভোটলোভী রাজনৈতিক নেতাদের উপর চাপানো সম্পূর্ণ ভুল। কিন্তু এই দুর্ঘটনা, অর্থাৎ বাঙালি হিন্দু ত্ৰিশ শতাংশ হয়ে যাওয়া, কী করে হল, তার সঠিক ব্যাখ্যা আমার কাছে নেই। নদীনালা বেষ্টিত দুৰ্গম পূর্ববঙ্গে একাত্তর শতাংশ মুসলমান হয়ে যাওয়া ১৯৪৭ সালে শুধু নবাব বাদশাদের অত্যাচারের ফলে হয়েছে, মানা যায় না। শ্ৰীচৈতন্যদেবের ভক্তি আন্দোলন, বা নাম সংকীর্তন কর্মসূচী বাংলাকে ইসলামীকরণের হাত থেকে রক্ষা করেছে – অনেকেই এটা মনে করেন। কিন্তু আমি কিছুতেই এটা বুঝতে পারি না, শ্রীচৈতন্য তাঁর ভক্তি আন্দোলন শুরু করার পর মাত্ৰ ৭-৮ বছর বাংলায় থেকেছেন। তারপর দীর্ঘ আঠারো বছর, জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি নীলাচলে অবস্থান করেছেন। সেইসময় রাজা প্রতাপরুদ্র তাঁর শিষ্য হয়েছিলেন। তারপরেও উড়িষ্যার মানুষ শ্ৰীচৈতন্যের নামধর্ম গ্রহণ করেনি বা তাঁর ভক্তি আন্দোলনে সামিল হয়নি। আজও উড়িষ্যার মুসলিম ২.৪ শতাংশ। যৌথ বাংলার সঙ্গে একবার তুলনা করে দেখুন। আশ্চর্য হতে হয় না কি? কারও কারও মতে উত্তর ভারত থেকে উড়িষ্যায় প্রবেশ করার প্রাকৃতিক দুৰ্গমতার কারণে উড়িষ্যা বেঁচে গিয়েছে। কী করে মেনে নিই? উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে তো সেই প্রাকৃতিক দুর্গমতা ছিল না। এই দুটি রাজ্যের উপর দিয়েই তো সমস্ত মুসলিম আক্রমণকারীরা এসেছে। আবার এইসব রাজ্যে হিন্দুধর্মের মধ্যে জাতপাতের ভেদাভেদও খুব ছিল, অস্পৃশ্যতা ছিল। তা সত্ত্বেও আজও উত্তরপ্রদেশে মাত্র আঠারো শতাংশ মুসলমান, বিহারে সতেরো শতাংশ মুসলমান। আর আমাদের যৌথ বাংলায় তাদের সংখ্যা সত্তর শতাংশ। তাই শ্রীচৈতন্যদেব বাংলাকে রক্ষা করতে পেরেছেন – উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও উড়িষ্যার সঙ্গে তুলনা করে একথা কি করে মেনে নিই?

(ক্রমশঃ)
সৌজন্যেঃ স্বদেশ সংহতি সংবাদ। পূজা সংখ্যা; ২০১৭, পৃষ্ঠা – ৬
লেখকঃ শ্রী তপন ঘোষ….