পোস্ট টা কপি করলাম Prasun এর টাইমলাইন থেকে-।অসাধারণ বিশ্লেষণ বাক স্বাধীনতা সম্পর্কে।
“
হিন্দু মনিষীদের দিয়ে অশ্লীল পোস্ট করার জন্যে জনৈক ব্যক্তি গ্রেপ্তার হওয়ার পরে ফেসবুকে সেই ব্যক্তির গ্রেপ্তারীর পক্ষে ও বিপক্ষে #বাক_স্বাধীনতা নিয়ে ঝড় উঠেছে। একপক্ষের মতে গ্রেপ্তার করে কলকাতা পুলিশ ভাল কাজ করেছে এবং আরেকপক্ষ বাকস্বাধীনতা খর্ব করার জন্যে কলকাতা পুলিশের চোদ্দপুরুষ উদ্ধার করে দিচ্ছে। বাকস্বাধীনতা জিনিসটা খুবই ভাল। প্রত্যেকটি গণতান্ত্রিক দেশের মত ভারতের সংবিধানও একে মৌলিক অধিকারের মর্যাদাও দিয়েছে। কিন্তু কোন অধিকারই চূড়ান্ত (absolute) নয়, সেটা দায়িত্বর (duty) গণ্ডী দিয়ে বাঁধা থাকে। সংবিধান অনুসারে আমার যেমন দেশের ভিতর যেকোন জায়গায় বিনা বাধায় যাতায়াতের অধিকার রয়েছে তেমনি সেই অধিকার আরেকজন নাগরিকেরও আছে। এখন আমি যদি আমার অধিকারবলে অন্য কাউকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে চাই তাহলে সেটা আর শুধু আমার অধিকারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবেনা, অন্যের অধিকার হরণে পরিণত হবে। এমতাবস্থায়, নৈরাজ্য রুখতে রাষ্ট্রের দায়িত্ব হল প্রথমে আমাকে আমার দায়িত্ববোধ সমঝে দেয়া আর সেটাতেও কাজ না হলে, আমাকে অন্যের অধিকার হরণ করতে বাধা দেয়া। এক্ষেত্রেও ঠিক সেটাই ঘটেছে। তবে এক্ষেত্রে খেলাটা অন্যকে ধাক্কা দেয়ার মত সরল নয়, এর পিছনে আরও বড় ষড়যন্ত্র আছে, সেটা বোঝার জন্যে আমাদের কয়েক দশক পিছিয়ে যেতে হবে।
হিন্দুদের জাতিগত পরিচয় অগ্রাহ্য করে, একটি ধার্মিক রূপ দেয়ার কাজ প্রথম করেছিলেন মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের সময়েও বিপ্লবীরা গঙ্গায় স্নান করে, কপালে তিলক ধারণ করে, ভগবৎ গীতা হাতে নিয়ে কালীঘাটে মা কালীর সামনে বঙ্গভঙ্গ প্রতিহত করার শপথ নিয়েছিলেন। তখনও হিন্দুত্ব ও জাতীয়তাবোধ ছিল সমার্থক। কিন্তু স্বাধীনতা প্রাপ্তির দাবীতে নিজের আন্দোলনে মুসলমানদের যুক্ত করার স্বার্থে, যদিও সেই অসম্ভব কল্পনা কখনই বাস্তবায়িত হয়নি, গান্ধীই প্রথম হিন্দুদের জাতীয়তাবাদ থেকে আলাদা করে ধার্মিক পরিচয় দেন। মুসলমানদের ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে যুক্ত করার স্বপ্ন যে কতটা ভ্রান্ত ছিল সেটা প্রমাণ হয় পাকিস্তান গঠনের সময়।
গান্ধীর পরে, তাঁর ভাবশিষ্য নেহরু, যিনি নিজের হিন্দু পরিচয় নিয়ে অতিশয় বিব্রত বোধ করতেন, হিন্দুদের জাতিগত পরিচয় ধ্বংস করতে উদ্যোগী হন। এই নেহেরুর উদ্যোগেই হিন্দুজাতির বদলে, ভারতীয় জাতি শব্দের প্রচলন শুরু হয়। এরই পরিণতিতে হিন্দুদের জাতিগত পরিচয় মুছে, তাদের ধর্মীয় পরিচয় দেয়া হয়। কয়েক হাজার বছরের সনাতন ধর্মভিত্তিক জাতিকে রূপান্তরিত করা হয় নিছক একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীতে। মুসলমান, খ্রিষ্টানদের মত এদেশের মূল নিবাসীদেরও ‘ভারতীয় জাতি’র অন্যতম উপাদান হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। তাই নেহেরুর মতে “India is a nation in making”।
এর পরিণতি হয় মারাত্মক। অন্যান্য ধর্মগোষ্ঠীর মধ্যে বৃহত্তম হওয়ার সুবাদে হিন্দুদেরকে অন্যদের প্রতি বিপদ (threat) হিসাবে দেখানোর প্রয়াস শুরু হয়ে যায়। তাই অন্যান্য ধর্মগোষ্ঠীর নিরাপত্তার স্বার্থে হিন্দুদের দমন করার ও তাদের বিভিন্ন উপায়ে বিভক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়। হিন্দু জাতির উপর আক্রমণকারী ইসলাম বা খ্রিস্টানদের মত বিদেশী মতাদর্শকেও আপন করে নেয়ার পরামর্শ দেয়া শুরু হয়। মুসলিমদের ধর্মগ্রন্থ কোরান যেখানে তাদের উম্মাহ ব্যতীত অন্য কারুর সাথে বন্ধুত্ব স্থাপনে মানা করছে, হিন্দুদের, কোরান অনুসারে যারা মুশরিক, ইসলাম কবুল বা হত্যার পরামর্শ দিচ্ছে তাদের সাথে হিন্দুদের একাত্ম হতে বলা হলো।
কোন জনগোষ্ঠীকে তখনই জাতি বলা হয় যখন তারা একটা বিশেষ সংস্কৃতিকে বহন করে, একটি নির্দিষ্ট ভূখন্ডে তাদের নির্দিষ্ট পরিচয় বহন করে থাকে। হিন্দুদের ক্ষেত্রে সেই বিশেষ সংস্কৃতি হল সনাতন ধর্ম। তাই হিন্দুদের ক্ষেত্রে জাতিগত আর ধর্মীয় পরিচয় সমান। এই প্রসঙ্গে স্বামী বিবেকানন্দর শিকাগো বক্তৃতার কথাগুলি মনে করুন। “আমি সেই ধর্মের প্রতিনিধি হিসাবে গর্ববোধ করি যারা বিশ্বকে সহিষ্ণুতার শিক্ষা দিয়েছে”। “আমি সেই জাতির প্রতিনিধি হিসাবে গর্ববোধ করি যারা সারা বিশ্বে অত্যাচারিত জনজাতিকে পরম মমতায় আশ্রয় দিয়েছে”। স্বামীজীর কাছে হিন্দু ধর্ম আর হিন্দু জাতি সমার্থক। সনাতন ধর্মই হিন্দু জাতির সাংস্কৃতিক পরিচয়। তাই বারবার বৈদেশিক আক্রমণের ফলে হিন্দুদের মন্দির ধ্বংসপ্রাপ্ত হলেও সেই মন্দির হিন্দুরা আবার গড়ে তুলেছে, কারণ তাদের জাতিসত্তা বিলুপ্ত হয়নি, আত্মপরিচয় বিস্মৃত হয়নি।
হিন্দু জাতিকে ভারতীয় জাতিতে পরিণত করার উদ্দেশ্যে তার আত্মপরিচয় ভুলিয়ে দেওয়াটা আবশ্যিক। তাই নেহরুর উদ্যোগে সরকারি উৎসাহে শুরু হয়েছিল এই কাজ, আর সেটাতে প্রত্যক্ষ সহযোগী ছিল বামপন্থীরা। হিন্দুদের গৌরবময় ইতিহাস বাদ দিয়ে তাদের কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা, প্রগতিশীলতা বিরোধী মনোভাব নিয়ে শুরু হল অপপ্রচার। উদ্দেশ্য একটাই- হিন্দু জাতিকে তার মূল পরিচয় থেকে বিযুক্ত করে হীনমন্যতায় ভুগিয়ে তোলা। ‘স্পেসিফাইড তারকাটা’র মত বামপন্থী পেজগুলি সেই কাজই করে চলেছে।
তাই বাকস্বাধীনতার দোহাই দিয়ে যারা এই ধ্বংসাত্মক বামপন্থী মানসিকতার সমর্থন করছে তাদের চিনে রাখুন। আপনার গর্বের বিষয় নিয়ে যারা অশালীন মন্তব্য করে আপনার অনুভূতিকে আহত করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার অধিকার সেই সংবিধানই দিয়েছে যে সংবিধান মৌলিক অধিকারের মর্যাদা দিয়েছে। কমলেশ তিওয়ারীর মন্তব্যে যদি কারুর অনুভূতি আহত হয় তাহলে ‘স্পেসিফাইড তারকাটা’র পোস্টে অন্যদের অনুভূতি আহত হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। জনগণ যদি কোন সদর্থক ক্ষেত্রে একজোট হয়ে প্রশাসনকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য করে তাহলে আমি সেটাকে ‘মব জাস্টিস’ নয়, গণতন্ত্রের সাফল্য হিসাবেই দেখবো।”