দুর্গা ও কালিপূজায় পুরুষ ছাগলকে কামের প্রতীক হিসাবে বলি দেওয়া হয় না।

দুর্গা ও কালিপূজায় পুরুষ ছাগলকে কামের প্রতীক হিসাবে বলি দেওয়া হয় না। জড়তা-র প্রতীক হিসাবে বলি দেওয়া হয়।

মাংস খাওয়ার জন্য যেখান থেকে খুশি মাংস নিয়ে আসায় আপত্তি নেই। কিন্তু পূজাস্থানে বলি দিতে হবে এই বার্তা দিতে যে আমাদের ধর্ম অহিংস নয়।
আমাদের হিন্দু ধর্মের কোন সংজ্ঞা নেই। কিন্তু একটি শ্লোকে আমাদের ধর্মের দশ লক্ষণের কথা বলা হয়েছে। তাতে “অহিংসা” নেই।
আসল কথা হল, ধর্মকে অহিংস করবেন না। ধর্মকে ন্যায়পরায়ণ ও ন্যায় রক্ষক করতে হবে।

স্বামী বিবেকানন্দ এই বলি প্রথা সম্বন্ধে কী বলেছেন সেটা সকলের জানা দরকার।
স্বামী বিবেকানন্দ বেলুড় মঠে দুর্গাপূজার সময় অষ্টমীর সন্ধিতে বলি দিতে চেয়েছিলেন। কোনো লুকোচুরি নেই। শুধু মা সারদার আপত্তির জন্য পাঁঠার বদলে চালকুমড়া বলি দেওয়ার প্রথা শুরু করেছিলেন।
শিক্ষিত বাঙালি হিন্দুদের মধ্যে এই বলিবিরোধী নরম মানসিকতা তৈরীর জন্য দায়ী রবীন্দ্রনাথ। এই কাজ করে তিনি বাংলার হিন্দুর বিরাট ক্ষতি করে গিয়েছেন। সেইজন্যই দেশভাগের বিরুদ্ধে বাঙ্গালী হিন্দু লড়াই করার কথা চিন্তাও করতে পারেনি।
বিবেকানন্দ স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, সম্রাট অশোক বলি প্রথা বন্ধ করে কয়েক লক্ষ ছাগলের প্রাণ বাঁচিয়েছেন। কিন্তু তার পরিণামে দেশটা হাজার বছরের জন্য পরাধীন হয়ে গিয়েছে। আমার কথা নয়, বিবেকানন্দের কথা।

২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গার সময় শহরের বাইরে গ্রামাঞ্চল থেকে বেশ বেশী সংখ্যায় আদিবাসীরা এসেছিল। তারাই আসল কাজ করেছে। শহরের লোকরা তাদের গাইড করেছে। ঠিক একই ঘটনা ঘটেছে ১৯৯৩ সালে বম্বেতে সিরিয়াল ব্লাস্টের পর। একই ঘটনা ১৯৮৪ শিখ বিরোধী দাঙ্গায় হয়েছিল। আমি ব্যক্তিগত ভাবে এগুলো সব অনুসন্ধান করেছি।

উত্তর ভারতের জাট ও গুজ্জর রা মোটেই মূলত নিরামিষাশী নয়। স্বামী দয়ানন্দের প্রভাবে অনেকে নিরামিষাশী হয়েছিল। কিন্তু মোগল ও মুসলিম শাসকরা দিল্লী থেকে রাজত্ব করলেও দিল্লীর আশপাশে জাট, গুজ্জরদের ধর্মান্তরিত করতে পারে নি। তার একটা বড় কারণ এটা। কিছুটা কারণ স্ট্র্যাটেজিকও। কিন্তু ওই স্ট্র্যাটেজির পিছনেও মাংসাহারী জাট গুজ্জরদের aggressive nature কে ভয় করা ফ্যাক্টরটা অবশ্যই কাজ করেছে।

আমিষ ভোজনে তমোগুণ তৈরী হয় না, রজোগুণ তৈরী হয়। রাজা, রাজপুত ও ক্ষত্রিয়দের জন্য রজোগুণ প্রচণ্ড দরকার। তা নাহলে জাতি পরাধীন হয়। ভারতে ঠিক তাই হয়েছে। এই পরাধীনতা ও দাসত্বের জন্য সবথেকে বেশী দায়ী বৌদ্ধধর্ম। স্বামীজি স্পষ্টভাবে বলেছেন, সম্রাট অশোক বলি প্রথা বন্ধ করে কয়েক লক্ষ ছাগলের প্রাণ বাঁচিয়েছেন। কিন্তু তার পরিণামে আমাদের দেশ হাজার বছরের জন্য দাস হয়ে গিয়েছে। তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছেন, “ওরে তোরা সারা দেশে রজোগুণের বন্যা বইয়ে দে।” রামকৃষ্ণ মিশনে আমিষ ভোজন স্বামীজি নিজে চালু করে গিয়েছেন। কেউ কেউ মনে করে যে স্বামীজি নিজে লোভী ছিলেন বলে এই কাজ করেছেন। তাদেরকে আমি করুণা করি।
স্বামীজির মন্ত্রশিষ্য, সম্ভবত শরৎচন্দ্র চক্রবর্তী confusion এ ভুগছিলেন। তিনি স্বামীজিকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, মাছ মাংস খেতে গিয়ে প্রাণীহত্যার পাপ লাগবে কিনা! স্বামীজি তাকে বলেছিলেন, ওরে, তোর প্রাণীহত্যার সব পাপ আমি নিয়ে নেব। তুই খুব করে মাছ মাংস খাবি।
স্বামীজির অন্তর্দৃষ্টি ছিল, দূরদৃষ্টি ছিল। আমি খুব দায়িত্ব নিয়ে বলছি, এই অন্তর্দৃষ্টি ও দূরদৃষ্টি স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী ও স্বামী প্রণবানন্দের ছিল না। নিরামিষ ভোজনের প্রচার করা অন্য বাবাজী-মাতাজীদেরও নেই। ওনারা তামোগুণ-কে সত্ত্বগুণ বলে মনে করেন। এটা সম্পূর্ণ ভুল। তমোগুণী ব্যক্তি রজোগুণ সম্পন্ন না হয়ে সোজা সত্ত্বগুণে উত্তীর্ণ হতে পারে না।
আজ ইসলামী আগ্রাসনের মুখে দাঁড়িয়ে তমোনাশ করে রজোগুণের প্রাবল্য চাই।
আরও অনেক অনেক কথা বলার আছে।

আমি পুরোপুরি কনভিন্সড যে হিন্দুর মাংসাহার করা দরকার।

পশ্চিমী দেশে মাংসাহার ও রজোগুণের আধিক্য হয়েছে। তাই তাদের জন্য ও মুসলিমদের জন্য ইসকন দরকার। অখণ্ড ভারতের হিন্দুদের জন্য ইসকন নয়, প্রচণ্ড পরিমাণে মাংসাহার দরকার।
দুধও অনেকটা রজোগুণ তৈরীতে সাহায্য করে। কারণ দুধ অ্যানিমাল প্রোটিন সমৃদ্ধ।

বাঙালিদের সম্বন্ধেও ভীতু কাপুরুষ অভিযোগ ঠিক নয়। সাহসী বিপ্লবী ও নকশালপন্থীরা এই বাংলা থেকেই বেরিয়েছেন।
মুসলিম আক্রমণের সময়ও মল্ল রাজা, বাগদী রাজা, রাজবংশী বীর চিলারায়, প্রতাপাদিত্যের সেনাবাহিনী জোরালো লড়াই দিয়েছিল। আমিষ ভোজনের জন্য বাঙ্গালী পরাধীন হয় নি। উচ্চবর্ণের (অধিকাংশের) স্বার্থপরতা ও কাপুরুষতার জন্য হয়েছে। কারণ, সামাজিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বা অধিকার তাদের হাতে ছিল, সাহসী লড়াকু, তথাকথিত নিম্নবর্ণের হাতে ছিল না।
শ্রী রামচন্দ্র আমিষ ভোজন করতেন। মূল বাল্মীকি রামায়ণে তার বহু উল্লেখ আছে। বেশি উল্লেখ আছে অরণ্যকাণ্ডে।
 
প্রাণীজগতে তাকিয়ে দেখুন, প্রচণ্ড শক্তিশালী নিরামিষভোজী প্রাণীরা মানুষের দাসত্ব করে। হাতী, ঘোড়া, উট, বলদ, মোষ, গাধা, খচ্চর। আর যেসব নিরামিষভোজী প্রাণীরা দাসত্ব করে না তারা মানুষের অথবা বাঘ সিংহের খাদ্য হয়। ছাগল, ভেড়া, হরিণ, মিথুন।
আর মাংসাহারী প্রাণী বাঘ সিংহের কথা তো ছেড়েই দিন, কোনো ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র আমিষাশি প্রাণীও মানুষের দাসত্ব করে না। কুকুর, বেড়াল, শিয়াল, হায়েনা, সাপ, গোসাপ, সর্ব প্রকারের পাখি, মাছ, পোকামাকড়।
অর্থাৎ আমিষ ভোজন স্বাধীনচেতা স্বভাব নির্মাণ করে। নিরামিষ ভোজন দাসত্ব স্বভাব নির্মাণ করে। এক প্রজন্মে এটা হয় না। কয়েক প্রজন্মের ভোজনপ্রক্রিয়া এই স্বভাব নির্মাণ করে।

– তপন ঘোষ।