বাঙালী প্রধান হবার পরও বাংলাদেশ চরমভাবে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র! কোলকাতাই শেষ পর্যন্ত বাংলা ভাষার একমাত্র রাজধানী হয়ে রইল…।

-Susupto Pathok
ভারতের টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাদেশের ছেলেমেয়েদের তারকা বানিয়ে দিচ্ছে। বাংলাদেশের লেখকদের ভারতের সাহিত্য পুরস্কার দন্ত বিকশিত করে গ্রহণ করতে দেখি। ভারতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার হাতে বাংলাদেশের অভিনেতা অভিনেত্রীদের দেখা বিরল ঘটনা নয়। ভারতের বইমেলায় বাংলাদেশের বই বিক্রির জন্য আলাদা করে স্টল বরাদ্দ করা আছে। সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাংলা ভাষা ও বাঙালীর তাই অঘোষিত রাজধানী কোলকাতা- পশ্চিমবঙ্গ!

আহমদ ছফা বেঁচে থাকলে নিশ্চিত লজ্জ্বা পেতেন। পশ্চিমবঙ্গ ভারতের একটি প্রদেশ মাত্র। অপরদিকে বাংলাদেশ নিজেই একটি রাষ্ট্র। তবু বাংলা ভাষা ও বাঙালীর প্রধান কেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গ। পশ্চিমবঙ্গ হিন্দির সঙ্গে লড়ছে, উর্দুর সঙ্গে লড়ছে, বাংলাদেশের সেরকম কোন লড়াই নেই। বাংলা ভাষা ও বাঙালীর প্রধান কেন্দ্র হতে হলে যে বড় মনের প্রয়োজন সেটি বাংলাদেশের নেই। বাংলাদেশে আজ পর্যন্ত এমন কোন পুরস্কার প্রবর্তন করেনি যা দুই বাংলার বাংলা ভাষার লেখকদের জন্য প্রযর্জ্য হবে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতের এমন কোন বিভাগ নেই যেটা দুই বাংলার শ্রেষ্ঠদের মূল্যায়ন করবে। বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলো ভারতের টিভি চ্যানেলে তারকা হয়ে আসা আর্টিসদের নিয়ে অনুষ্ঠান করে টিআরপি বাড়ায়। ভারতে হিন্দি চ্যানেলের সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকা বাংলা চ্যানেলগুলো এপাড় বাংলার আর্টিসদের জন্য প্লাটফর্ম করে দিচ্ছে। এটি বাংলাদেশের জন্য লজ্জ্বার। কিন্তু বাংলাদেশ জন্মগতভাবে নির্লজ্জ্ব! সংক্রীর্ণ মানসিকতার বাংলাদেশ কখনই বাংলা ভাষা ও বাঙালীর অভিভাবক হতে পারেনি পারবেও না।

পশ্চিমবঙ্গের বন্ধুদের দেখি পশ্চিমবঙ্গে বাংলা ভাষার ভবিষ্যত নিয়ে তারা চিন্তিত। নানা রকম প্রতিযোগিতা ও আগ্রাসনের চিন্তায় তারা ভীত। এরকম বাস্তবতা আছে জানি। এই কঠিন বাস্তবতার মধ্যেও বাংলাদেশকে তারা কখনই ত্রাস মনে করেনি বরং বাংলা ভাষার শেষ কেন্দ্রস্থল হিসেবে সান্ত্বনা খুঁজেছে। কিন্তু বাংলাদেশের কাউকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় আপনি কেমন আছেন, তিনি উত্তর করেন ‘আলহামদুলিল্লাহ’! বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মাদ্রাসায় আরবী ও উর্দুর চর্চা ঘটে। সেখানে বাংলার ‘ব’ও পড়ানো হয় না। এছাড়া ইংরেজি মাধ্যম আগে থেকেই ট্যাঁস ফিরিঙ্গি বানানোর কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তবু বাংলা ভাষা ও বাঙালীর মূল কেন্দ্রস্থল হবার সব রকম বাস্তবতাই ছিলো বাংলাদেশের। কিন্তু বাংলাদেশ হবার পর আবদুর রাজ্জাক, আহমদ ছফা, সিনেমায় চাষি নজরুল ইসলামদের মত ব্যক্তিরা সংক্রীর্ণ এক বাংলাদেশের সূচনা করে গেছেন। তাদের সেই সংক্রীর্ণতা এখন সাম্প্রদায়িক চেহারা পেয়ে ‘বাংলা ভাষী মুসলমান’ হয়ে উঠেছে। জয়া আহসান ভারতের ফ্লিম ফেয়ার পেলে বাংলাদেশীদের গর্বিত হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু বাংলাদেশ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভারতীয় বাংলা সিনেমা বিবেচিত হলে দরাজ একটি হৃদয়ের যে গৌরব ছিলো, বাংলা ভাষার কেন্দ্র হবার যে বিশালতা ছিলো সেটি উপলব্ধি করার মত মানসিকতা আমাদের নেই। বাংলা ভাষা ও বাঙালী প্রধান হবার পরও বাংলাদেশ চরমভাবে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র! কোলকাতাই শেষ পর্যন্ত বাংলা ভাষার একমাত্র রাজধানী হয়ে রইল…।

Scroll to Top