আগুন জ্বলছে পাকিস্তানে। ২০০ মানুষ আহত হয়েছে, মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী।

আগুন জ্বলছে পাকিস্তানে। ২০০ মানুষ আহত হয়েছে, মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী। হাজার হাজার মুসলমান একজন মন্ত্রীর কল্লা চাইছে কারণ তিনি শপথ নেয়ার সময় পাকিস্তানের নিয়ম অনুযায়ী হযরত মুহাম্মদের নাম বাদ দিয়েছেন। মুহাম্মদের নামে শপথ করে পাকিস্তানে নেওয়াজ শরীফ, বেনজির, তার স্বামী, অন্যান্য মন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট, সেনাপ্রধানরা হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করলেও মুহাম্মদের কোন অবমাননা হয় না। মুসলমানদের এটা কে বুঝাবে গলায় আল্লাহু লকেট পরে বারে বেশ্যালয়ে যাবার চাইতে বরং এই লকেট না পরাই ভালো। রাষ্ট্রীয়ভাবে নবী-আল্লাহকে এনে এভাবেই তারা তাদের হেয় করছে। রাষ্ট্র থেকে তারা তাদের নবী এবং ধর্মকে দূরে রাখার দাবী জানাতে সম্ভবত আরো কয়েক শতাব্দী লাগবে। ততদিনে মিশরের সিনাই মসজিদে ২৩৫ জন মুসল্লি হত্যার মত আরো বিলিয়ন বিলিয়ন ঘটনা ঘটে যাবে…।

মিশরে এতগুলো নামাজরত মুসল্লিকে হত্যা করল একদল সশস্ত্র মুসলিম মুজাহিদ অথচ উপমহাদেশের ইসলামী অনুভূতির দুই পাওয়ার হাউস বাংলাদেশ পাকিস্তানে তার কোন প্রতিক্রিয়া হলো না! ফিলিস্তিনে ইজরাইলের গুলিতে দু-একজন মারা গেলেই বাইতুল মোকাররম, কমিউনিস্ট পার্টি অফিস, হাটহাজারীতে যে সাড়া পড়ে তার ছিটে ফোটা্ও কেন দেখা গেলো না? একটা পরিত্যাক্ত বাবরী মসজিদ আংশিক ভেঙ্গেছিলেন উগ্র শিব ভক্ত ধর্মান্ধ হিন্দুরা। তাতেই বাংলাদেশে শত শত মন্দির ভেঙ্গেছিলো। শত শত হিন্দু বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন জ্বলেছিলো, দেশ ছেড়েছিলো শত শত হিন্দু আতংকিত হয়ে…। কিন্তু পাকিস্তানে একটি স্কুলে তিনশোর মত শিশুকে তালেবানরা হত্যা করলেও মুসলমানরা রাও করে না। তারা তখন ধানচালের দরদাম নিয়ে আলাপ করে। এমনিতে তারা তালেবান-আইএসকে ইহুদীদের দল বলে দাবী করলেও কেন যে পাকিস্তান-মিশর-বাংলাদেশে চালানো বড় বড় সন্ত্রাসী কাজের জন্য ‘ইজরাইল দুতাবাস’ ঘেরাও করার ডাক দেয় না? এই যে পাকিস্তানে সেনাবাহিনী নামতে বাধ্য হয়েছে পাবলিক সহিংসতা নিয়ন্ত্রণ করতে, বাংলাদেশে নবী অবমানরার অভিযোগে সাম্প্রতিককালে নাসিরনগর-ঠাকুরপাড়ায় যে তান্ডব মুসলমানরা ঘটিয়েছে, মিশরে মসজিদে নামাজ পড়তে থাকা মুসল্লিদের হত্যা করার ঘটনায় তারা নিশ্চুপ থাকাটার অবশ্যই কোন কারণ আছে। সেটি কি আমাদের জানতে হবে…।

সৌদি প্রিন্স বলেছেন, তিনি ‘আসল ইসলামে’ ফিরতে চান। আর তার এই সংস্কার নতুন কোন ইসলাম নয়, নবী মুহাম্মদের সময়কার ইসলামে ফেরাই লক্ষ। প্রায় আড়াই শ’ বছর আগে এই একই দাবীতে আবদুল ওহাব ‘সালাফি’ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন। সালাফি মানে পূর্ব পুরুষ। আবদুল ওহাব দেখেছিলেন খিলাফতের খলিফারা শত শত বছর ধরে ক্ষমতায় থেকে নবী মুহাম্মদের রাষ্ট্রনীতি এবং পরাষ্ট্রনীতি থেকে বিচ্যুত। অনেক খলিফা ‘কাফের-মুশরিকদের’ সঙ্গে ভাল সম্পর্ক রাখছে। তাদের কাউকে কাউকে রাষ্ট্রীয় পদে বসানোও হয়েছে। ইসলাম মতে যা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। মাদ্রাসা-মক্তব না গড়ে, ইমাম-মাশায়েখ উৎপাদন না করে কিছু শাসক আধুনিক বিজ্ঞানমনস্কতা চর্চায়, সাহিত্য শিল্প চর্চায় পৃষ্ঠপোষকতা করছে। আবদুল ওহাব মনে করতেন এসব করতে গিয়েই ইসলামী খিলাফত বহু স্থান থেকে বিলুপ্ত ঘটে গেছে। আবদুল ওহাব সাহেব তাই পূর্ব পুরুষদের (সালাফি) ইসলামে ফেরার আন্দোলনের ডাক দিলেন। তার মৃত্যুর শত বছর পরও সালাফি মতবাদ গ্রহণ করে বহু মুসলমান নিজ নিজ দেশে ফিরে তার প্রয়োগ করতে শুরু করলেন। আমাদের ভারতবর্ষের তীতুমীর-শরীয়তুল্লাহও সৌদিতে হজ করতে গিয়ে এই মতবাদ গ্রহণ করে দেশে ফিরে ইংরেজ বিরোধী আন্দোলন সংঘঠিত করেছিলেন। আবদুল ওহাবের মতবাদ থেকেই আজকের যুগের আল কায়দা, আল শাবাব, বকো হারাম, তালেবান, আইএসসহ শত শত জিহাদী দল গড়ে উঠে। প্রকৃতপক্ষে এই দলগুলো সালাফি বা আবদুল ওহাবের মতবাদ নয়, কুরআনের প্রসিদ্ধ তাফসির, সহি হাদিস, ইজমা, কিয়াসকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হয়। আইএস যোদ্ধাদের যৌনদাসী ভোগ, যুদ্ধহত নারীদের নিলামে বিক্রি সবই আদি ইসলামে অর্থ্যাৎ নবী মুহাম্মদের জমানায় ঘটেছে। সহি বুখারী, মুসলিম শরীফ, তিরমিজি শরীফ থেকে দেখা যাবে নবীর আমলে নারী মাংসের মচ্ছব ঘটাতো সাহাবীরা। ইহুদী নারীদের যৌনদাসী করে রাখা, তাদের বিক্রি করে দেয়া ছিলো ইসলামে হালাল। যেহেতু পরবর্তীতে কোন আয়াত দ্বারা এই হালাল নারী মাংস হারাম হয়নি তাই মুসলমান মুজাহিদদের কাছে কাফের নারীদের অবাধে ধর্ষণ করা কিয়ামত পর্যন্ত জায়েজ। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী সোলজার এবং রাজাকাররা এ কারণেই হিন্দু নারী এবং ৭০ সালে নৌকায় ভোট দেয়া ‘ইসলাম বিরোধী’ নারীদের ধর্ষণ করেছে কোন রকম পাপবোধ ছাড়াই। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে খুব ভাল করেই জিহাদ এবং গণিমতের মাল সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়ে থাকে।

সৌদি আরবের সংস্কারের ডাক নেহাতই তাদের রাজপরিবারের ক্ষমতার জন্য হুমকি হয়ে উঠা সালাফিদের কোণঠাসা করতে একটা ফাঁকা বুলি। প্রিন্স বলেছেন তারা অমুসলিম ইহুদী খ্রিস্টানদের সঙ্গেও সুসম্পর্ক চান। ধর্মনিরপেক্ষতার পথে হাটতে চান…। এটি সৎ ভাবে চাইলে ইসলাম ধর্ম থেকে প্রফেট মুহাম্মদের বাণীকে বাদ দিতে হবে। হাজার হাজার সহি হাদিসে মুহাম্মদের পৌত্তলিক, ইহুদী, খ্রিস্টানসহ অমুসলিমদের প্রতি চরম বিদ্বেষ প্রকাশ করেছেন। খোদ কুরআনে অমুসলিমদের অপবিত্র, শুকর, কুকুর বলে অভিহত করা হয়েছে। এসবকে রেখে কখনই সৌদি আরব সংস্কারে যেতে পারবে না।

http://abpananda.abplive.in/world-news/pakistan-cracks-down-on-hardliners-10-killed-over-250-injured-409526