মুসলমানদের হাতেই একদিন জিহাদ নিষিদ্ধ হবে। মুসলমানরাই নিজেদের বাঁচাতে ইসলামকে বাতিল করে দিবে। কেন কথাটা বললাম বলি, সৌদি আরব সম্প্রতি হাদিসে মুহাম্মদের বাণী অনুসরণ করে যাতে কেউ জিহাদ করতে না পারে (নিজেদের বিপক্ষে গেলেই সেটার নাম হয়ে যায় জঙ্গিবাদ) তার জন্য একটা আলাদা কর্তৃপক্ষ নিয়োগ করেছে। আইএসসহ শিয়া জিহাদীরা সৌদি আরবে রাজতন্ত্র খতম করে ইসলামী খিলাফত বানাতে চায়। তেল পাবার পর বিগত ৫০ বছর এই সৌদি আরবই জিহাদী মাইন্ডের জনগোষ্ঠি তৈরি করতে সারা বিশ্বে প্রেট্টডলার অকাতরে ঢেলে গেছে। ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তানে পরিচালিত মাদ্রাসাগুলোতে জিহাদী তৈরিতে সৌদি ছক অনুযায়ী কাজ হয়েছে। সারা পৃথিবীকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে বর্বর শরীয়া আইন নারীর উপর প্রয়োগ করেছে তারা। এতসব কিছুর মূলেই কুরআন এবং হাদিস। হাদিসগুলো রচিত হয়েছে প্রায় বারোশো বছর আগে। কাজেই তালেবান আইএস বা সৌদি আরব নিজেরা হাদিস বানায়নি। পৃথিবীতে যত জিহাদী দল আছে তারা সবাই কুরআন এবং হাদিসকে অক্ষরে অক্ষরে পালন করে। সৌদি আরবের স্বার্থের বিপক্ষে জিহাদ প্রয়োগ হবার কারণেই আজ সৌদি আরব হাদিসের বাণীকে কেউ যাতে ‘জঙ্গিবাদের’ কাজে না লাগালে পারে তার জন্য নজরদারী করবে। অর্থ্যাৎ সৌদি আরবকেই এখন ‘জিহাদী বই’ হিসেবে কুরআন-হাদিস আটক করতে হবে!
ইসলাম ধর্মের বিপদটা অন্য ধর্মের চেয়ে ভিন্ন। অন্য ধর্মগুলোতে প্রথাগতভাবে অনুসারীকে নিপীড়ণের রাস্তা অনেক। হিন্দু ধর্মের ব্রাহ্মণবাদ থেকে রেহাই পেতেই জৈন, বৌদ্ধ ধর্মের সৃষ্টি হয়েছিলো। ইহুদী ধর্ম থেকে বেরিয়ে গিয়েই একদল খ্রিস্টান ধর্ম প্রবর্তণ করেছিলো। একসময় সম্রাট অশোক বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করার ফলে রাজ পৃষ্ঠপোষকতায় বৌদ্ধ ধর্ম ছড়িয়ে পড়েছিলো সারা বিশ্বে। একইভাবে ইউরোপ খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করার কারণে রাজশক্তির পৃষ্ঠপোষকতায় বিস্তার লাভ করেছিলো। মধ্যযুগে চার্চ রাজনৈতিক ক্ষমতা হাতে পেয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল। কিন্তু এটা সম্পূর্ণই ছিলো খ্রিস্টধর্মের অথেনটিক সোর্স বর্হির্ভূত। মার্টিন লুথার খ্রিস্টান ধর্মের পূর্ণজাগরণের ডাক দিলেন। লুথারকে বলা যায় খ্রিস্টানদের ‘সালাফি’ মতবাদের প্রবর্তক। কারণ তিনি ভক্তদের বলেছিলেন, চার্চের অপশাসন আর খবরদারী খ্রিস্টানরা মানবে না কারণ খ্রিস্টের বাণীতে এসব কিছুই নেই। এইসব চার্চ, পোপ, স্বর্গের টিকিট বিক্রি, আইন ফরমাইন- এসব প্রকৃত খ্রিস্টধর্মে ছিলো না। লুথার খ্রিস্টানদের বললেন, পোপতন্ত্র আর চার্চকে প্রত্যাখান করে প্রভুযীশুর সত্যিকারের খ্রিস্টধর্মে আমাদের ফিরে যেতে হবে। ভারতবর্ষে বুদ্ধ, মহাবীরের মত মহাপুরুষরা বেদকে ভ্রান্ত বলেছিলেন। শ্রেণী বৈষম্য কোন ঈশ্বরের কাজ হতে পারে না। এসব বলেই তখনকার প্রচলিত ধর্মকে (আজকে যেটা হিন্দু ধর্ম হিসেবে ধরা হয়) প্রত্যাখান করে নিজ ধর্মমত প্রবর্তন করেছিলেন। শ্রী চৈতন্যদেব হিন্দুধর্মের জাতপাত বিলোপ করতে যে ডাক দিয়েছিলেন তাও লুথারের অনুরূপ। চৈতন্যদেব সেনরাজাদের প্রবর্তিত শ্রেণী বিভাজন বিলোপ করে আদি সনাতন ধর্মে ভক্তদের ফিরে যেতে উপদেশ দিয়েছিলেন। তথাকথিত নিচু জাতের হিন্দুদের নিয়ে তিনি পূর্বপুরুষদের ধর্মের আবার ফিরে যেতে চেয়েছিলেন।
একই ঘটনা ইসলাম ধর্মের ক্ষেত্রেও ঘটেছিলো। ইসলামী খেলাফত বিশ্বজুড়ে বহু বছর ব্যাপী রাজত্ব করার সময় শাসকদের স্বেচ্ছাচারিতা, ব্যক্তিগত বিশ্বাস ইত্যাদির কারণে ইসলামের মূল লক্ষ্য থেকে ক্রমশ দূরে সরে আসছিলো। এইরকম সময়ই আবদুল ওহাব ডাক দিয়েছিলেন মুসলমানদের অবশ্যই তাদের পূর্বপুরুষদের ধর্মে ফিরে যেতে হবে। নবী এবং তার সাহাবীরা যেভাবে দেশ চালিয়ে ছিলেন, যেভাবে পৃথিবীকে দেখতেন কুরআন হাদিসের দলিল ধরে সেভাবেই চলতে হবে। এই না চলার কারণেই মুসলমানরা খেলাফত হারিয়ে সারাবিশ্বে পরাজিত হয়ে পড়ছে। ওহাবের এই পূর্বপুরুষদের ধর্মে ফেলার ডাককেই ‘স্যালাফি’ বলা হয়। আশ্চর্য যে এটাকে ইসলামের উগ্রপন্থা বলা হচ্ছে। অথচ ওহাব স্রেফ কুরআন-হাদিস মোতাবেক মুসলমানদের চলতে বলেছেন। সেই থেকেই নতুন করে মুসলিমদের মধ্যে জেহাদ চেতনা, খিলাফত, দারুল ইসলাম, দারুল হার্ব, জিজিয়া, গণিমত, বাইতুল মাল ইত্যাদি বিশ্বাস জেগে উঠতে শুরু করেছিলো। আজকের সৌদি আরব, আইএস, তালেবান, লস্কর, আনসারুল্লাহ সবই ইসলামে পূর্ণজাগরণের ফসল। দেখা যাচ্ছে খ্রিস্টান স্যালাফি বা হিন্দু স্যালাফির ডাকে সেই ধর্মগুলো কমণীয় এবং নিরহ দর্শন হয়ে উঠেছিলো। কিন্তু ইসলামের পূর্বপুরুষদের ডাক বা স্যালাফি ডাকে ইসলাম হয়ে উঠেছে ভয়ংকর এক রক্তখেকো দানবে!
এখানেই ইসলাম আর অন্যসব ধর্মের মধ্যে মৌলিক তফাত। ইসলামে সরাসরি ইহুদী খ্রিস্টান হিন্দুদের (পৌত্তলিক) বিরুদ্ধে আজীবন লড়াই করে যেতে বলা হয়েছে। তাদের বন্ধু রূপে গ্রহণ করতে মানা করা হয়েছে। তাদের সম্পত্তি, নারী সমস্ত কিছু মুসলমানদের জন্য মালে গণিমত। ইসলাম পৃথিবীকে মুসলমানদের কব্জায় নিতে জিহাদ করতে বলে এবং অমুসলিমদের মুসলমানদের বশ্যতা শিকার করতে নির্দেশ দেয়। সৌদি আরব নিজে বেকায়দায় পড়েছে এইসব ঘৃণা আর সন্ত্রাসবাদের নির্দেশগুলো থেকেই। মুসলিম কোন শাসককে যদি মনে হয় তিনি ইসলাম অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছেন না তাহলে তার বিরুদ্ধেও জিহাদ করা যাবে দ্বিন প্রতিষ্ঠার জন্য। শিয়া এবং সুন্নী জিহাদীরা মনে করে রাজতন্ত্র কায়েম করে সৌদি আরব খিলাফত থেকে দূরে সরে গেছে। তাই তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা ফরজ। তাই বলা যায় এখন খেলা সবে মাত্র শুরু হলো। সৌদি আরবের এখন মাথায় ঘা! মাথার যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে সে ইসলামকে নানাভাবে পঙ্গু করতে বাধ্য হবে। প্রতিটি ইসলামী রাষ্ট্র এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র ইসলামের এইসব ঘৃণা আর রাজনীতি দিয়ে প্রথমে অমুসলিমদের জীবন দুর্বিসহ করে তোলে। এভাবে তাদের নিঃশেষ করে পরে নিজেরাই ইসলামের বড় শিকারে পরিণত হয়। নিজেরাই গৃহহারা হয়ে পড়ে। মিশর, সিরিয়া এসব ছিলো খ্রিস্টানদের দেশ। এখান থেকে এরা নিঃশেষ হয়ে গেছে। এখন মুসলমানরাই এখান থেকে পালাচ্ছে। ইসলাম হচ্ছে ফ্রাঙ্কাইস্টাইন। যে তাকে ডেকে আনবে তাকেই সে শেষ করে দিবে!
Susupto Pathok