বাঙালী জাতি অনুভব করো – জ্ঞানবান, গুণবান ও বলবান হয়ে ওঠার সূত্র তোমার মধ্যেই নিহিত একমাত্র।

বন্ধুবর ও অনুজ শ্রী দীপ্তরূপ সাম্যদর্শী র এক অসাধারণ পর্যবেক্ষণ প্রকাশ করা অন্ত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কিঞ্চিত মতপার্থক্য সত্বেও। প্রথমেই বলা ভালো দীপ্তরূপ র লেখাগুলো archive করা হোক, তাতেই একমাত্র বাঙালী হিন্দু র উত্তরণ সার্থক হয়ে উঠতে পারে। হিন্দু বাঙালীর বিনাশ বা পুনরভ্যূত্থান ভবিষ্যত র গর্ভে নিহিত। যে জাতি প্রায় প্রত্যেক অর্থেই ১৯৪৭ সালে দেশভাগ র সময় ইহুদি জাতি সম ছিল তা আজ অন্ধকারে তলিয়ে সর্বনাশ র দ্বাররান্তে উপস্থিত তার নেতৃত্ব, অবিমৃষ্যকারিতা ও কাঠিন্য র অভাবে। ইতিহাস র এই ক্রান্তিকালে বাঙালী হিন্দু জাতি উঠে দাঁড়াতে পারে একমাত্র যদি সে কঠিনতম সাধনায় ব্রতী হয় তাঁর মহান পূর্বপুরুষ র পদাঙ্ক অনুসরণ করে, যাঁরা রেখে গেছেন আত্মত্যাগ, অখণ্ড চেতনা ও ততোধিক পরিশ্রম র এক অনন্য দৃষ্টান্ত। ফিরে যেতে হবে জাতির মুলে, স্মরণ ও পাথেয় করতে হবে অনুশীলন সমিতি, যুগান্তর, ব্রতী সমিতি, স্বদেশ বান্ধব সমিতি কে, তাঁর মহানতম বিপ্লবীদের ও তার ও পূর্ববর্তী ইতিহাস কে – যেখানে প্রমাণিত শতাব্দী র পর শতাব্দী জুড়ে এই সম্প্রদায় যবন শক্তির তান্ডব র বিরুদ্ধে রণক্ষেত্রে প্রবেশ করেছে, শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে সংগ্রাম করেছে কিন্তু পরাজয় স্বীকার করেনি। পরাজয় হয়েছে deception র দ্বারা, সম্মুখ সমরে নয়। আবার সে উঠে দাঁড়িয়েছে। আজ ধর্ম র মূল ব্যাখ্যা র দিকে মনোযোগী হতে হবে, half-hearted endeavors র দিকে নয়। শুধুমাত্র “গুরুদেব দয়া করো দীনজনে” ধর্ম নয়, তা এক আচার মাত্র – ধর্ম র অবস্থান শাস্ত্রচর্চা, শস্ত্রচর্চা র মধ্যে, শাপাদাপি – জ্ঞান র শক্তি র চর্চা, শারাদপি -শক্তি র জ্ঞান র চর্চা র মধ্যে। হে সর্বনাশ র দ্বারপ্রান্তে দাঁড়ানো হিন্দু বাঙালী জাতি অনুভব করো – জ্ঞানবান, গুণবান ও বলবান হয়ে ওঠার সূত্র তোমার মধ্যেই নিহিত একমাত্র।

ওঁম তেজঅসি তেজোময়ী দেহি, ওঁম বীরম অসি বীরম ময়ী দেহি, ওঁম ওজ অসি ওজ ময়ী দেহি, ওঁম সহো অসি সহো ময়ী দেহি, ওঁম মহো অসি মহো ময়ী দেহি, ওঁম মৃত্যুন অসি মৃত্যুন ময়ী দেহি। 

————————————————–
দীপ্তরূপ র হীরকখচিত পর্যবেক্ষণ:

বাদুড়িয়ার শিক্ষা এখানে শেষ নয়। এতক্ষণ অভিশপ্ত বামৈস্লামিক ও তথাকথিত হিন্দুফোব সেকুলারদের নিয়ে কথা বললাম। অথচ বাদুড়িয়া কিন্তু আরো অনেক সন্দেহই সামনে এনেছে। সেগুলোই লিখি। আবারও বলি, দলদাস হলে পড়বেন না।
.
অনেকেরই অবাক জিজ্ঞাসা এতবড় একটা ঘটনা ঘটছে সেক্ষেত্রে বিজেপির মুভমেন্ট কই? গোটা বাংলায় যেখানে 42 টা লোকসভা আসন সেখানে একটা মাত্র লোকসভা আসনের স্বার্থে একচল্লিশটা আসনের বাঙালি সেন্টিমেন্টের বিরুদ্ধে গিয়ে যে রাজ্য বিজেপি সভাপতি পাহাড় যেতে পারলেন বারবার, তারাই এতবড় ইস্যূতে মোটামুটি চুপচাপ থেকে নিয়মরক্ষার বেশী প্রতিবাদ করছেন না। কেন?
ঘটনা সত্যিই অদ্ভুত নিঃসন্দেহে, এবং আমি জানিও না এরম অদ্ভুতুড়ে আচরণের অর্থ কি।
তবে বেশ কিছুদিন ধরেই কিছু প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
ক. ধুলাগড়ের বিষয়ে সব জানা সত্ত্বেও প্রশাসনের তরফ থেকে “কিচ্ছু হয়নি, বিজেপির অপপ্রচার” বলার অর্থ কি?
প্রশাসন কি জানত না যে এই তথ্যপ্রযুক্তির যুগে খবর চেপে রাখা অসম্ভব?
যে রাজ্যে বিজেপির সমর্থন সাকুল্যে 10%, সেখানে তারগ এত ভয়ানক কিছু করতে পারে এটা ছাগলেও মানবে না। এবার প্রশাসন প্রকাশ্যে সব অস্বীকার করায় যারা ভুক্তভোগী তারা অবলম্বনহীন হয়ে পড়ল।
সাফার্ডরা সবসময় অবলম্বন খোঁজে। প্রশাসনের সব অস্বীকার করে “বিজেপি বিরোধিতার” ফলে অবলম্বনের অপশন হিসাবে আক্রান্তদের কাছে বিজেপি পেশ হয়ে গেল।
ফলাফল, প্রতিটি খুচরো ক্ল্যাশ থেকে পাওয়া ভুমিজ সমর্থন থেকেই সফলভাবে সংগঠিত রামনবমীর অস্ত্রমিছিলের ব্যাপকতা।
লক্ষ্যণীয় যে, প্রশাসনের তরফ থেকে কিন্তু সিপিএম গোটা ঘটনাপ্রবাহে গুরুত্বহীন, উল্লেখহীন থার্ডপার্টি।
খ. গোর্খাল্যান্ড ইস্যূতে অস্পষ্ট অবস্থানসহ বিভিন্ন ধরণের মন্তব্য। দুনিয়ার লোক বোঝে যে একটা লোকসভার জন্য একচল্লিশটা লোকসভার সমর্থন মায়ের ভোগে যাচ্ছে আর অমিত শার মতো ধুরন্ধর রাজনীতিজ্ঞ বোঝে না?
বিশ্বাসযোগ্য?
বাংলা বিজেপি ও বাংলার বিজেপি সাংসদ গোর্খাল্যান্ড খুঁচিয়ে দিল। ওদিকে রাজ্য চাওয়া মাত্র কেন্দ্র সেনা পাঠিয়ে দিল, আর স্পষ্ট জানিয়ে দিল রাজ্যকে বাদ দিয়ে কেন্দ্র এমনকি আলোচনাতেও বসবে না।
কেমন অদ্ভুত না??
আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় যে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে সমঝোতার অভাব। কিন্তু তবু সন্দেহ থাকে।
সন্দেহ থাকে যে বাঙালি সেন্টিমেন্টের আপাতবিরুদ্ধে গিয়ে এই যে খেলাটা বিজেপি খেলল, তার কারণ হল, বিজেপির ভোট পার্সেন্টিজ যাতে এতটা না বাড়ার উপক্রম হয় যাতে মমতা ইনসিকিওর ফিল করেন। অর্থাৎ গোটা বঙ্গ জুড়ে হিন্দুদের একটা অংশের মধ্যে যে সচেতনতা গড়ে উঠছে এটা যাতে তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্ককে খুব আঘাত না করে। তাই মমতার হারানো জমি বাঙালী সেন্টিমেন্ট দিয়ে জুগিয়ে দিতেই গোর্খাল্যান্ড নিয়ে প্রথম দিককার অস্পষ্ট অবস্থান।
নইলে সব স্টেটে বিজেপি যেখানে সেই রাজ্যের সাংস্কৃতিক অস্মিতার সাপোর্টার, সেখানে এখানে এসে বিশ্বমানব দিলীপে পরিণত হবে কেন?
ওদিকে মমতাও গোটা ব্যাপারে একধারসে বিজেপিকে ফুটেজ দিলেন। এই পদ্ধতি মমতার পরিচিত। জ্যোতি, অনিলের সিপিএম এভাবেই একসময় কং কে মুছে দিতে মমতাকে “বিরোধীমূলক তোল্লাই” দিত, বিভিন্ন বচনের মাধ্যমে।
মমতা হুবহু সেই নীতি বিজেপি সম্পর্কে নিলেন না কি? কেন নিল?
গোটা গোর্খাল্যান্ড ঘটনায় সিপিএম কি বলল, কেন বলল এ নিয়ে কিন্তু স্রেফ কোন পাত্তাই দেননি মমতা।
গ. যে রাজ্যবিজেপি রাজ্যভাগ নিয়ে গুরুংএর বাড়ী যায়, সেই রাজ্য বিজেপিই বাদুড়িয়ার কেসে রসগোল্লার ছবি পোস্ট করে, সেই সভাপতিই ডেঙ্গু সচেতনতায় যান। অথচ এই ইস্যূতে তোলপাড় মমতা বিরোধিতা করে বৃহত্তর আন্দোলন রাস্তায় নামিয়ে প্রয়োজনে জেলে গিয়ে নিজেদের আরো প্রচার করতে পারত কিন্তু তারা।
মমতা বিরোধী থাকাকালীন এর থেকে অনেক তুচ্ছ ঘটনায় রাজ্য কাঁপিয়ে দিতেন রাজ্যে রাস্ট্রপতি শাসন আর মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে। বিজেপি সে পথের ধারপাশ দিয়েও গেল না।
ওদিকে এই বাদুড়িয়া ইস্যূতেও কিন্তু মমতা সিপিএমের কোন উল্লেখেই যাচ্ছেন না। যে মমতা, মঙ্গলের উল্কাপাতকেও পারলে সিপিএমের চক্রান্ত বলতেন, সেই তিনিই কেশরীকে “বিজেপির ব্লক সভাপতি” বললেন, ভাষণ জুড়ে বিজেপির বিরোধিতা করলেন এটা জেনেও যে বিজেপি আদপে কিস্যূই করছে না, বা করার ক্ষমতাও নেই অন্তত ভোটের বিচারে। তবু গোটা ইস্যূতে সিপিএম নিয়ে আধখানা কথাও বললেন না।
কেন?
তবে কি বামেদের মুছে দিতে বিজেপিকে নেগেটিভ পাবলিসিটি দিয়ে প্রধান বিরোধী হিসাবে তুলতে চাইছেন মমতা?
তবে কি কেন্দ্রীয় বিজেপি এটা বুঝেই রাজ্য বিজেপিকে দিয়ে এমন অদ্ভুত আচরণ করাচ্ছেন যাতে তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্ক অক্ষত রেখে বর্বর বামেদের মুছে দেওয়া যায়?? সেটা অবশ্য একদিকে ভালোই। গুলাগ, লা কাবানা, তিয়েনআনমেন, মরিচঝাঁপিখ্যাত কমিউনিস্টদের রাজনৈতিকভাবে অপ্রাসঙ্গিক করার মধ্যেই নিহিত আছে দেশ ও দশের দীর্ঘমেয়াদী কল্যাণ।
সবটাই ধারণা। হয়তো ঠিক, হয়তো নয়। কিন্তু যেটাই হোক বাদুড়িয়া পর্যন্ত এসে, কথিত হিন্দুবাদী পার্টিটির নিস্পৃহতা দেখে, রাজনীতির পাকেচক্রে এটা ঘোর সন্দেহ হয় যে বাঙালী হিন্দুর রাজনৈতিক অবলম্বন হতে অন্য ভোটকেন্দ্রীক পার্টির মতোই বিজেপিও আগ্রহী নয়।
তাহলে এখন কি করণীয়?
আগেই লিখেছি সঙ্ঘশক্তি তৈরী। ছোট্ট ছোট্ট পরিসরে স্যাম্পলিং করা। অর্থাৎ বিরোধী সাধারণ মানুষ কি বলছে সেটা শোনা, তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারলে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করা এবং তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে প্রতিযুক্তি তৈরী করে মানুষের সামনে ফেলা।
সোজা কথায় সেল্ফ-এডুকেশন। বহু ইতিহাস চেপে দেওয়া আছে। তবাকাৎ-ই-নাসিরি থেকে স্যার যদুনাথ, আবুল ফজল থেকে রমেশচন্দ্র। পড়তে হবে পড়াতে হবে। ইতিহাস যেসব বর্বরতার সাক্ষী সেসব তথ্য যদি ঠিকভাবে এই এনথুসিয়াস্টিক নিউ ব্লাডদের কাছে ফেলা হয়, যে দর্শন লুকিয়ে আছে এই ভারতের মাটিতে তা যদি তুলনামূলকভাবে এদের সামনে হাজির করা যায়, হয়তো এদের মধ্যে থেকেই নরেন দত্ত বেরোতে পারে। কারণ এরাই তখন বুঝবে ফেসবুকে অশ্লীল ছবি পোস্ট করার থেকে বহু উন্নত অস্ত্র, যার নাম মেধা, সেই মেধার উত্তরাধিকার তাকে দিয়ে গেছে এই দেশের ইতিহাস, এই দেশের দর্শন।
এভাবেই দাগ কাটতে হয়, এভাবে জমি কর্ষণ করে যেতে হয়।
তবেই উর্বর জমি হয়।
এই সৌভিক সরকারের মতো প্রচুর ছেলে আছে যারা সাহসী। যারা হিন্দু আইডেন্টিটি রক্ষায় জন্য কিছু করতে চায়। সেই উদগ্র এন্থুসিয়াজমে এরা নিয়ে ফেলে এ ধরণের দুর্বল পদক্ষেপ যা তাদেরকে উদ্দ্যেশ্যহীনতার দিকে ঠেলে দেয়। প্রয়োজন এদের এই আগ্রহকে সম্মান দেওয়া। গাইড ও গার্ড করা।
একটি ভুল পদক্ষেপে গ্রেফতার মন মানসিকতা ভেঙে দিতে পারে ঐ বয়সি একটি ছেলের। তাকে নরিশ করলে হয়তো 25 বছর বয়সে এ’ই হয়ে উঠবে ডেয়ারডেভিল শানিত এক নেতা।
ভুমিপুত্র হিসাবে যে অনেক ভালো বুঝবে বাঙালি হিন্দুদের। পুলিশের ঘেরাটোপ টপকে অসীম এনার্জীতে হয়তো ঠিক চলে যেতে পারবে ভবিষ্যতের অন্য কোন “বাদুড়িয়া”র আক্রান্ত মানুষের পাশে।
গা বাঁচিয়ে নিরাপদ ফুটেজ খাবে না হয়তো।
প্রশ্ন হল, এই সৌভিকদের সঠিকভাবে তুলে আনার মতো হিন্দুস্বার্থবাহী প্ল্যাটফর্মটুকু কি বাংলায় তৈরী করা যাবে??
এটার কিন্তু আশু প্রয়োজন।
ভোট নাহয় একটু পরেই হিসাব হোক।