“যীশু খ্রীষ্ট ও ‘নাথ যোগী’ সম্প্রদায়”

“যীশু খ্রীষ্ট ও ‘নাথ যোগী’ সম্প্রদায়”
ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ

যীশুকে নিয়ে কাহিনীর শেষ নেই। একজন মানুষ যদি মারাই গিয়ে থাকেন তিনি কি করে বেচে ওঠেন , একজন মানুষ যার জঠর থেকে জন্ম নিলেন সেই মাতা কি করে অক্ষত যোনী (Virgin Marry) হতে পারেন তা সারা জীবন ভেবে কুল কিনারা পেলাম না।

আমাদের হিন্দু ধর্মে অনেক কল্প কথা আছে, যা বিশ্বাস করা যায় না, আমি করিও না। শ্রী কৃষ্ণকে নিয়ে নানা রসালো আলোচনা শুনি,পড়ি। যার একবিন্দু সত্য নয়। কিন্তু তার জন্ম বৃতান্ত বিশ্বাস করি কারন মা দেবকী এবং পিতা বসুদেব এক সংগেই ছিলেন কারাগারে, একই ঘরে। সুতরাং সন্তানের জন্ম হতেই পারে। মা দেবকী অক্ষত যোনী ছিলেন এমন দাবী কোনোদিন শুনিনি। হিন্দুরা এই দাবীও করে না শ্রী কৃষ্ণ মারা যাবার পর আবার বেচে উঠেছিলেন। শ্রী রাম চন্দ্র সেতু তৈরী করেছিলেন সেটাকে এতোদিন কল্প কথা বলে সবাই উড়িয়ে দিয়েছেন। আজ সেটা সত্য প্রমানিত হয়েছে। ৭০০০ বছর আগে সেটাও বিশ্বাস যোগ্য ( ১৭৫০০০০ বছর বিশ্বাস যোগ্য নয়) । 

যীশুকে নিয়ে একটি পুস্তক আছে। রাশিয়ান ভাষায় লেখা। একজন রাশিয়ান নিজে তিব্বতের এক বৌদ্ধ গুম্ফায় একটি লামার কাছে শুনেছিলেন এক “ঈশাই যোগী” র কথা । সেই ঈশাই যোগী ভারতে যে সময় কাটিয়েছিলেন ১৩ বছর বয়ষ থেকে ২৯ বছর বয়ষ অবধি এবং পরে তাকে মেরে ফেলার চক্রান্ত থেকে বেচে তিনি তার পুর্ন বয়ষে (বৃদ্ধ বয়ষে=৭৫ বছর) কাশ্মীরে দেহ রক্ষা করেন, সেই সব বৃতান্ত লেখা,  সযত্নে রক্ষিত একটি পুথি ওই গুম্ফার লামা  রাশিয়ান ভদ্রলোককে দেখান। রাশিয়ান ভদ্রলোক ঐ বৌদ্ধ গুহায় অনেকদিন থেকে সেই পুথির রাশিয়ান ভাষায় অনুবাদ করেন। সেই রাশিয়ান ভাষার বই প্রথমে জার্মান এবং পরে ইংরেজীতে লেখা হয়েছে। ইংরেজী ভার্ষান আবার নানা জনে লিখেছেন, যার একটি আমার কাছে আছে। নাম, “Jesus Lived in India’ – His Unknown life.

ইংরেজীতে যা পড়েছি, তা বিশ্বাস করলে, (বিশ্বাস না করার কারন নেই কিছু), অবাক হতে হয় এই কথা ভেবে যে, একজন মহাপুরুষের সত্য কাহিনী বিকৃত করে সারা পৃথিবীতে আজ ২০১৭ বছর ধরে কি মিথ্যার ঝুড়ি বলে বেড়ানো হচ্ছে।

দেখুন এবং পড়ুন সেই ইংরেজি বই এর একটি পাতা। “নাথ যোগী” সম্প্রদায়ের এক সুযোগ্য শিষ্য যীশুকে প্রকৃত পক্ষে “ছিনতাই” (Hijacked) করে নেওয়া হয়েছে। নাথ গুরু ‘চেতন নাথের শিষ্য’ আজ হয়ে গেছেন ‘খ্রীষ্টান’ দের ধর্ম গুরু। অথচ, যীশু সামান্য কয়েক বছর ছাড়া (জীবনের প্রথম ১২ বছর এবং  ৩০ বছর থেকে ক্রুশে বিদ্ধ করা অবধি) বাকী জীবন এই পুন্য ভুমি ভারতেই কাটিয়েছেন (৭৫ বছর বয়ষ অবধি )। তক্ষশীলাতে পাঠ নিয়েছেন, গুরু চেতন নাথের কাছে যোগ শিক্ষা করেছেন, বৌদ্ধ লামাদের কাছে বৌদ্ধ দর্শন শিখেছেন, পুরীর জগন্নাথ ধামে “ভক্তি বাদ “ শিখেছেন। নিজে কাশ্মীর এবং তার পার্শবর্তী এলাকায় “ভক্তি ভালোবাসার ধর্ম” প্রচার করেছেন। কাশ্মীরে তার কবর আজো বিদ্যমান। তিনি “ইশাই যোগী” নামে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু তার সমস্ত প্রমান নষ্ট হয়েছে জেহাদীদের দ্বারা এবং বিকৃত করা হয়েছে জেহাদীদের বৈমাত্রিয় ভাই খ্রীষ্টান দের দ্বারা।

যীশুর বানী বলে, যীশুর নামে সারা পৃথিবীতে যে গসপেল আজ প্রচার করা হয়, সেটি আসলে সেন্ট পলের লেখা। একে বলা হয় “Paulinism”. সেন্ট পল শিক্ষিত ছিলেন এবং প্রথম জীবনে ঘোরতর যীশু বিরোধী ছিলেন। ক্রুশে ৩ ঘন্টা রেখে দেবার পর তার দেহ নামিয়ে আনা হয় এবং যীশুর অনুগামীদের কাছে দেওয়া হয়। যীশুর দেহ এক গুহায় রেখে দেওয়া হয়েছিলো তারই নির্দেশে। নাথ যোগী চেতন নাথের কাছে যীশু যোগ শিক্ষা করেন বহুদিন। তিনি জানতেন, ৩ ঘন্টা ক্রুশে থাকলে কিছু রক্ত ঝরবে, তিনি হয়তো অজ্ঞান হয়ে যেতে পারবেন। যোগ সিদ্ধ শরীর শেষ হবে না। তিনদিন গুহার মধ্যে থেকে তিনি সুস্থ হন এবং ছদ্ধবেশে পলায়ন করেন ।রেখে যান তার রক্তমাখা চাদর টি। তিনি প্রথমে যান সিরিয়ার দামাস্কাসে। রাস্তায় গ্যালিলিতে তাকে কেউ কেউ চিনতে পারে। সে কথা বাইবেলে লেখা আছে। দামাস্কাসেও অনেকে যীশুকে ছদ্ধবেশে চিনেছিলো। সেই সংবাদ পেয়ে রাজা হেরোদ পলকে পাঠায় যীশুকে ফলো করতে এবং তার খবর দিতে। দামাস্কাসেই পলের সংগে যীশুর দেখা হয়। সেখানে গুপ্ত আস্তানায় দুজনের কথোপকথন হবার পর (প্রকৃত ধর্ম নিয়ে ) পল যীশুর শিষ্যত্ব নেন। যীশু তাকে বলেন, ‘যাও ফিরে যাও। আমি আর ওখানে যেতে পারি না। আমার কথা এবং  ঈশ্বরের বানী প্রচার করো”। সেই পল লেখেন তার মতো করে এবং সেখানে সংযোজন হয় পরবর্তী কালে লুক ইত্যাদির কথা। সেটাই “নিউ টেষ্টামেন্ট” এবং গসপেল, যা আজো চলছে।

পুরানো সিল্ক রুট ধরে যীশু চলে আসেন তার পরিচিত ভারতে, কাশ্মীরে। সেখানেই তিনি থাকেন তার জীবনের  শেষ দিন অবধি।  প্রচার করেন ভক্তি ধর্ম। সবাই তাকে “ইশাই যোগী” নামেই জানতো,কারন তার আসল নাম ছিলো ইশাই । যীশু তার মা মেরীকে ও ভারতে আনার চেষ্টা করেন। মা মেরী যীশুর শিষ্য পিটারের সংগে বর্তমান তুরষ্কের এক জঙ্গলে লুকিয়ে ছিলেন। যীশু তা জানতেন। (আমি ২০১২ সালে সেই গোপন আস্তানা দেখেছি, সেখানকার ছবিও আমার কাছে আছে)। আসার রাস্তায়  কাশ্মীরের কিছু আগেই পথশ্রম এবং ঠান্ডায় ‘মা মেরী’ র জীবনাবসন হয়। সেখানে তার কবর আজো আছে।

যীশুর জীবনের কাহিনী লুকানো হয়েছে,কারন তা না হলে গল্প কথা বানিয়ে দল ভারী করা যাবে না। সত্য কাহিনী শোনালে যীশুকে আর রোম বা অন্য পশ্চিমী জগতে ধরে রাখা যাবে না। তাই নানা গল্প লেখা হয়েছে।

নাথ যোগীদের একজন, বিহারের রাজগীরে বেশ কিছুদিন বাস করা এক যোগী, ভারতে যোগ ধর্মে দীক্ষিত এবং জগন্নাথ ধাম থেকে “ভক্তিবাদ” শেখা এক মহাপুরুষকে তাহলে এক ভারতীয় বৈদিক ধর্ম গুরু হিসেবে মানতে হয়। সেক্ষেত্রে, রোমের ভ্যাটীকানে কি করে আটকে রেখে সারা দুনিয়াময়  তার নামে ব্যাবসা করা যাবে???

******বি দ্রষ্টব্যঃ যেদিন নেতাজীর অন্তর্ধান রহস্য সত্য জানা যাবে সেদিন বোঝা যাবে কি করে একজন ‘ঈশ্বরের দুত” এর সারা জীবন গোপন আস্তানায় ‘গুমনামী বাবা’ হয়ে কাটাতে হয়। কি করে একজন জীবন্ত মানুষকে মৃত বলে ১৯৪৫ সাল থেকে ১৯৮৫ সাল অবধি লুকিয়ে থাকতে বাধ্য করা যায়। তার ব্যবহৃত চশমা, ঘড়ি, পিতা মাতার ছবি, এবং আরো বহু প্রমান থাকা স্বত্বেও তার সত্য ইতিহাস লেখার চেষ্টা করা হয় না।**** ক্ষমতা বড়ো বালাই, সেখানে মনুষ্যত্বের কোনো দাম নেই…