কুরানে বিজ্ঞান, না বিজ্ঞানে কুরান……..!!!

বিশ্বব্যাপী অমুসলিম অসৎ বিজ্ঞানী, ধান্দাবাজ ডাক্তার, দার্শনিকদের ভাড়া করা হয় অর্থের বিনিময়ে যারা কুরআনকে বিজ্ঞানসম্মত বলে দাবী করবেন। পশ্চিমা অনেক নামজাদা বিজ্ঞানীদের ফ্রি প্রথম শ্রেণীর বিমান টিকিট, ফাইভ স্টার হোটেলে রেখে, হাজার ডলারের বিনিময়ে বিভিন্ন বিজ্ঞান সেমিনার করার নামে তাদের মুখ দিয়ে বলানো হয় কুরআনের অনেক আয়াত আধুনিক বিজ্ঞানের সঙ্গে অনেকটাই মিলে যায়…। তবে সবাই যে অর্থের লোভে এই ধরণের মিথ্যাচার করেন তা নয়, অনেকেই প্রতারণার শিকার হন।

যেমন বিজ্ঞানী উইলিয়াম হেয় এ সম্পর্কে বলেছিলেন যে, তিনি জিদানীর ফাঁদে পা দিয়েছিলেন এবং পরে অন্যদের সাবধান করেছিলেন…। জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত ভ্রুণবিদ্যার বিশেষজ্ঞ জেরাল্ড গরিঙ্গার কুরআনে ভ্রুণ সম্পর্কে ১৪০০ বছর আগে আজকের আধুনিক বিজ্ঞানের কথাই লেখা আছে এই দাবীর জবাবে তিনি জিদানীর কমিশনকে বলেন কুরআন লেখার ১ হাজার বছর আগে গ্রীক দার্শনিক-বিজ্ঞানী এরিস্টটোলের ভ্রুণ সম্পর্কে যা বলেছিলেন সেটাই কুরআন গ্রহণ করেছিল। বলা প্রয়োজন বুকাইলিবাদের বিশ্বব্যাপী প্রচারণার কুশিলব শেখ আব্দুল মাজিদ জিদানী ওসামা বিন লাদেনের একজন অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। অন্যদিকে লাদেন বুকাইলিবাদের অন্যতম একজন ভক্ত ছিলেন। এই দুইজনের অর্থে বুকাইলিবাদের বিস্তার ঘটেছিল তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র অঞ্চলগুলোতে। বাংলাদেশের আলোচিত ফেইসবুকার তার ব্রাহ্মণ পদবী ও হিন্দু নাম নিয়ে এবং নিজেকে একজন কমিউনিস্ট দাবী করে দীর্ঘকাল ধরে মাদ্রাসা শিক্ষার সুফল, ইসলামী রাজনীতির প্রয়োজনীয়তা, হেফাজত ইসলামের মত রাজনৈতিক ইসলামী শক্তির পক্ষে কথা বলা এবং দেশের সেক্যুলার অংশকে আক্রমণ করে লিখে আসছে। একজন হিন্দু পরিচয়ের ব্যক্তির মুখে ইসলামের প্রশংসা ও কুরআনের শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ পেলে সেটা বিশেষভাবে প্রচার পায়। দেশের সেক্যুলার অংশ যখন সাম্প্রদায়িক নির্যাতন ও ধর্মীয় মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার তখন কোন ব্রাহ্মণ খোলসের হিন্দু যদি সেক্যুলারদেরই সাম্প্রদায়িকতা উত্থানের জন্য দায়ী করে এবং সেক্যুলারদের সেক্যুলাঙ্গার বলে খিস্তি করে সেটা দেশের অসাম্প্রদায়িক সেক্যুলার আন্দোলনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে সহায়তা করে।

একই সঙ্গে নিজেকে কমিউনিস্ট দাবী করে ইসলামী জিহাদীদের লেজুড়বৃত্তি করে বামধারাকে বিতর্কিত করাও এক ঢিলে দুই পাখি মারার মত কৌশল। মজার বিষয় হচ্ছে বুকাইলি বাইবেলকে অবৈজ্ঞানিক ও কুরআনকে বৈজ্ঞানিক দাবী করার পরও তার খ্রিস্টান ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ করেননি! বুকাইলি তার খ্রিস্টান ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ করেননি। একইভাবে বাংলাদেশের কথিত সেই ভট্টাচার্যও হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ করেননি। বরং এ ধরণের প্রশ্নে এই ভট্টাচার্য বুকাইলির মতই পিছলে চলে বান মাছের মতই!

তবে বুকাইলিবাদ চরমভাবে মার খাচ্ছে বিশ্বব্যাপী নাস্তিক ও সায়েন্টিসদের লেখালেখির ফলে। ফাঁস হয়ে যাচ্ছে কুরআনের বৈজ্ঞানিক দাবীগুলো। তাই বুকাইলিবাদ থেকে সরে এসে কয়েক বছর ধরে বিশ্বব্যাপী আলাদা ‘ইসলামী বিজ্ঞানের’ প্রচারণা শুরু হয়। সাম্প্রতি বাংলাদেশে আলোচিত পেইড ফেইসবুকার ভট্টাচার্য সেই ‘ইসলামী বিজ্ঞানের’ পক্ষে কথা বলা শুরু করেছেন। এই ফেইসবুক ভাড় ‘পশ্চিমা বিজ্ঞান’ ও ‘ইসলামী বিজ্ঞান’ নামের দুটো আলাদা বিজ্ঞান ঘোষণা করছে হুবহু ধর্ম জাতি গোষ্ঠির মত করে। বিজ্ঞান হচ্ছে লজিক বাল।

মধ্যাকর্ষণ শক্তির আবিস্কারকে যদি পশ্চিমা বিজ্ঞান বলে ধরতে হয় তাহলে ইসলামী বিজ্ঞান নিশ্চয় মধ্যাকর্ষণ শক্তিকে মান্য করবে না। সেটা ইসলামী বিজ্ঞান করতেই পারে কিন্তু তাতে তো মধ্যাকর্ষণ শক্তির মিথ্যে হয়ে যায় না। পাকিস্তানী নোবেলপ্রাপ্ত পদার্থবিজ্ঞানী ডঃ আব্দুস সালাম মুসলমানদের বিজ্ঞান নিয়ে ছাগলামী দেখে বিরক্ত হয়ে বলেছিলেন, ‘কেবলমাত্র একটি সার্বজনীন বিজ্ঞান রয়েছে; বৈজ্ঞানিক সমস্যা এবং পন্থাগুলো সবই আন্তর্জাতিক ও সার্বজনীন। যেহেতু হিন্দু বিজ্ঞান, ইহুদী বিজ্ঞান, কনফুসিয়াস বিজ্ঞান ও খ্রীষ্টান বিজ্ঞান বলে কিছু নেই সেহেতু ইসলামিক বিজ্ঞান বলে কিছু নেই’। কিন্তু একজন পর্দাথবিদের কথা শোনার চেয়ে জাকির নায়েকের মত কোন পেশাদার লেকচারের কথাই মুসলমানরা বেশি শোনে। আরো বেশি শোনে কোন খ্রিস্টান নামধারী ব্যক্তি যদি ইসলামের পক্ষে কোন কুসংস্কারকে সমর্থন করে। বাংলাদেশে এই হিন্দু ভট্টাচার্য দিনের পর দিন ইসলামী জিহাদী ও তাদের কার্যক্রমকে পরোক্ষভাবে সমর্থন করে লিখছে একটি কারণেই, বাংলাদেশের জনগণ যেন ১৪০০ বছর আগের পশ্চাৎপত ইসলামী ধ্যান ধারণায় আস্থা রাখে। ‘একজন হিন্দু হয়েও ইসলামের এত প্রশংসা করেন এবং কুরআনে বিজ্ঞান খুঁজে পান- তার মানে ইসলাম আসলেই সত্য ধর্ম- এটাই আন্তর্জাতিক ইসলাম প্রচারের জন্য একজন ভট্টাচার্যকে নির্বাচন করার অন্যতম ও একমাত্র কারণ।