আধুনিকতার একটা ভিন্ন পাঠ দরকার।

আধুনিকতার একটা ভিন্ন পাঠ দরকার। যেখান থেকে দালালি ফ্যাশনদুরস্ত হয়ে গেছে, সেই জায়গাটা খুঁজে বের করে অন্যপাঠের ব্যবস্থা করতে হবে। যেখান থেকে ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা এবং রাবীন্দ্রিকতা আদর্শ হিসেবে গৃহীত হল, যেখান থেকে বাঙালি প্রকাশ্যে নিজের আরাধ্যা কালীর নামে জয়ধ্বনি দিতে লজ্জা পেল, সেই ইতিহাসের মোড়ে ফিরে গিয়ে খুঁজতে হবে বিকল্প সম্ভাবনাদের। পশ্চিমের কাছে আত্মসমর্পণ যেখানে যেখানে হয়েছিল, এবং নাম পেয়েছিল বিশ্বমানবতা, সেই স্থানগুলো ফিরে দেখা খুব জরুরি।

সংস্কৃত কলেজে যখন সাংখ্যের বা আয়ুর্বেদের পঠনপাঠন বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে মেকলে’র শিক্ষানীতি অনুসরণ করে, সেই সময়ে খুঁজতে হবে, ভিন্নস্বর কেউ তুলেছেন কি না। রবীন্দ্রনাথ যখন জাতীয়তাবাদ মাত্রেই খারাপ, এরকম কম্বল বিধান দিচ্ছেন, সেসময় চিত্তরঞ্জন দাশ কয়েকটি খুব গুরুত্বপূর্ণ সমালোচনা করেছিলেন, এরপরে নারায়ণ পত্রিকাতে একটি দীর্ঘ যুদ্ধ চলেছিল। যাই হোক, যেহেতু রবীন্দ্রনাথ আমাদের বাঙালিদের উদারপন্থায় একটি মাইলফলক, যেহেতু তিনি রবীন্দ্রনাথ, ফলে তাঁর চ্যালেঞ্জাররাও অনেক বেশি উল্লেখযোগ্য, বঙ্কিম, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, ডি এল রায়, সরলা দেবী, চিত্তরঞ্জন দাশ, শরৎচন্দ্র – এরা সকলেই বিভিন্ন সময়ে মহারথী রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত।

মোদ্দা, আধুনিক বাঙালির একটা সহজ সরল ন্যারেটিভ আছে। সেখানে রামমোহন শুধুই হিরো, রামমোহন কমপ্রাদর নন। বিদ্যাসাগর শুধুই নায়ক, মেকলে’র এজেন্ট নন। রবীন্দ্রনাথ শুধুই প্রফেট, ইংরেজ পুলিসের প্রোপ্যাগ্যান্ডা পিস ঘরে বাইরে এবং চার অধ্যায় (গেওর্গ লুকাচের ভাষা ধার করলে) -এর লেখক নন। কমিউনিস্টরা এবং নকশালরা কেবলই নিঃস্বার্থ বিপ্লবী, যথাক্রমে ইংরেজ, রুশ, নেহরু এবং চীনের দালাল নন। কিংবা হিন্দুত্ববাদী শ্যামাপ্রসাদ কেবলই কাশ্মীরের জেলে নিহত শহীদ, তিনি আজীবন ইংরেজের এজেন্ট নন।

এই বর্ণান্ধ, একরৈখিক, শিশুসুলভ ন্যারেটিভ আঁকড়ে ধরে থাকলে এ জাতির গভীরতম অসুখের ডায়াগনোসিস সম্ভব নয়, একে বাঁচানো তো দূরস্থান।

Scroll to Top