সত্য বলতে হবে সত্যের মত করে। সত্যের কোন পোশাক থাকে না সে উলঙ্গ!

কাশ্মীর থেকে হিন্দু পন্ডিতরা উচ্ছেদ হয়েছে তার ৩০ বছর পূর্তি হলো এই ১৯ জানুয়ারি। কাশ্মীরী পন্ডিত ছাড়া বিশ্ব মানবতাবাদীদের এই বিষয়ে কোন সাড়াশব্দ পেলাম না। আমাদের ফেইসবুক বিশ্ব মানবতাবাদীদের কেউও কিছু লিখেনি। একরাতে কয়েক লক্ষ মানুষ নিজ জন্মভূমি, বাড়িঘর সহায়সম্বল ফেলে পালাতে বাধ্য হয়েছিলো। ভারতের অন্যত্র তাদের শরণার্থী জীবন বেছে নিতে হয়।

স্বাধীন ভারতে আজ ৩০ বছর তারা তাদের দেশ ছাড়া! একজন কাশ্মীরী পন্ডিতও এই ঘটনায় জঙ্গি হয়ে উঠেনি! হয়ে উঠেনি বিশেষ কোন ধর্ম সম্প্রদায়ের উপর বিদ্বেষময়। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ করাই নাকি ইসলামী জঙ্গিবাদ উত্থানের অন্যতম কারণ!

কি ঘটেছিলো ৩০ বছর আগে কাশ্মীরে? শীতের কনকনে রাতে যখন কাশ্মীরের পন্ডিতরা বাড়িতে বসে টিভি দেখছিলো তখন গোটা তল্লাটে শত শত মানুষ ‘আল্লাহ আকবর’ শ্লোগান দিয়ে পন্ডিতদের উদ্দেশ্যে বলতে থাকে, ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ আর ‘ভারতীয় কুকুররা ফিরে যাও’ । বিবিসির কাছে সেদিনের ঘটনার বর্ণনা করছিলেন এখন জয়পুরের একটা পন্ডিতদের ক্যাম্পে থাকা নমিতা কাউল, তিনি বলেন, ‘মসজিদ থেকে হাতিয়ার নিয়ে বেরিয়ে দলে দলে মানুষ আমাদের গলি-মহল্লা চারদিক থেকে ঘিরে ফেলল। বলা হল মেয়েরা থাকবে, কিন্তু পুরুষদের চলে যেতে হবে। দেওয়া হয়েছিল হত্যার হুমকিও। সেদিনের কথা ভাবলে আজও চোখ জলে ভিজে আসে, যে আমাদের জীবনে অমনটাও ঘটেছিল…’।
আশ্চর্য যে ভারতের মানবতাবাদী প্রগতিশীল ও বামপন্থিদের সেভাবে কাশ্মীরী পন্ডিতদের কথা বলতে দেখি না। তারা অন্তত নিজে থেকে এই প্রসঙ্গ তুলতে চায় না। চাড্ডিরা এই ঘটনা নিয়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক ঘৃণার রাজনীতি করবে বলেই আমাদের সবাইকে একটা জনগোষ্ঠির বিরুদ্ধে চলা মানবতা বিরোধী ঘটনার প্রতিবাদ করব না? দায়ীদের পরিচয় সামনে তুলে ধরব না? ভারতীয় বন্ধুরা, নিজের দেশে একটা ফিলিস্তিনী হয়ে রয়েছে সেদিকে চোখ নেই কিন্তু মধ্যপাচ্যের ইজরাইল দখলদারী নিয়ে আপনাদের ফেটে পড়ে!
সত্য বলতে হবে সত্যের মত করে। সত্যের কোন পোশাক থাকে না সে উলঙ্গ! বলতে হবে ভারতের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম রাজ্য থেকে মুসলিমদের সশস্ত্র জিহাদী এ্যাকশানে ৩০ বছর আগে কয়েক লক্ষ্য কাশ্মীরী পন্ডিত এক বস্ত্রে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলো। কাশ্মীরের রাজ্য সরকার থেকে কয়েকবার পন্ডিতদের ফিরে আসার কথা বলা হলেও আসল সত্য হচ্ছে প্রতিবেশী মুসলিমদের ভয়ে ও নিরাপত্তার শংকায় কোন পন্ডিত এই ৩০ বছরে নিজের জন্মভূমিতে ফিরতে পারেনি। কাশ্মীরের বিশেষ অধিকার বাতিল হওয়ায় আমাদের দুই বঙ্গের প্রগোতিশিলরা ক্ষুব্ধভাবে বলেছিলো এর মাধ্যমে ভারত ভাগের সূচনা হলো। বিশেষ সুবিধা বিলোপের পর কাশ্মীরে হিন্দু পন্ডিতরা ফিরতে পারবে, কাশ্মীরে অন্য ভারতীয়রা ব্যবসা বিনিয়োগ করতে পারবে তাতে মুসলমানরা ভারত ভাগের ডাক দিবে। কিন্তু এক রাতে কয়েক লক্ষ মানুষকে ঘর ছাড়া করলেও ভারতের অখন্ডতায় কোন দাগ পড়ে না? নিজ দেশে পরবাসী হয়ে থাকা একজন কাশ্মীরী পন্ডিতও ‘হরহর মহাদেব’ বলে কোন মুসলমানের উপর হিন্দু জিহাদ চালায় না! কিন্তু কাশ্মীরে সেনা তল্লাসী আর নজরদারীর কারণে কাশ্মীরী যুবকরা সব ‘জইশ-ই মুহাম্মদে’ নাম লেখায়! এই ধরণের লেইম যুক্তি আর কতকাল আওড়িয়ে একটা ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদকে ধর্ম থেকে আড়াল করে পার পাবেন? থাইল্যান্ডের মত টুরিস্ট দেশে গুটিকয়েক মুসলিম বসতির কারণে সেখানেও জিহাদের আগুন কেন জ্বলল? কি তাদের জ্বলা? সারা দুনিয়াতে তারাই একমাত্র নিপীড়িত! তারাই বঞ্চিত তাই আল্লাহ আকবর বলে বোমা মারতে হবে? শ্রীলংকা বার্মা কোথাও কেন মুসলিমরা আজ সন্দেহ মুক্ত নয়? কেন ভারতের একটা মুসলিম প্রধান প্রদেশে মুসলিমদের হাতে অন্য জাতি সম্প্রদায় দেশছাড়া হলো?