প্রশ্নঃ মুজিব কি আদৌ সেকুলার ছিলেন?

প্রশ্নঃ মুজিব কি আদৌ সেকুলার ছিলেন?
উত্তরঃ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর মুজিব দেখলেন হিন্দু সম্পত্তির একাংশ মুসলিম লীগ আর বিহারীদের
ভোগে গেলেও আওয়ামী লীগের নেতা ও কর্মীরা হিন্দু সম্পত্তিতে ভাগ বসাতে পারেনি, যেহেতু বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্ব কালে পাকিস্তানি আমলে পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগ কখনও নিরঙ্কুশ ক্ষমতা লাভ করতে পারেনি।
শকুনের মত আওয়ামী লীগ নেতারা যাতে হিন্দু সম্পত্তিতে ভাগ বসাতে পারে সেজন্য মুজিব আইয়ুব আমলে করা বর্বর হিন্দু বিদ্বেষী শত্রু সম্পত্তি আইনকে অর্পিত সম্পত্তি আইন নাম দিয়ে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে পুনর্বহাল করে রাখলেন। পাক বাহিনীর হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত রমণা কালী মন্দিরের সম্পত্তি দখল করে সেখানে সোহরাওয়ার্দী পার্ক প্রতিষ্ঠা করে মুজিবই প্রথম হিন্দু মন্দির দখল করার অপসংস্কৃতি চালু করেন।
মুজিবকে বাংলাদেশের জনক ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রবর্তক বলা হলেও বাংলাদেশের স্বাধীনতায় মুজিবের অবদান গৌণ। শেখ মুজিবর রহমানের আত্মজীবনী অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে আমরা মুজিবের রাজনৈতিক দর্শনের কিছুটা পরিচয় পাই। রাজনৈতিক আদর্শের দিক দিয়ে মুজিব ছিলেন সোহরাওয়ার্দীর একনিষ্ঠ শিষ্য। মুজিব এবং সোহরাওয়ার্দীরা ‘৪৭ এর পার্টিশনের পূর্বকালে ছিলেন জিন্নার দ্বিজাতিতত্ত্বের মূল সমর্থক, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর যখন সেই প্যান ইসলামিক জাতীয়তাবাদ থেকে বেরিয়ে এসে মুজিব আর সোহরাওয়ার্দী ১৮০ ডিগ্রী ঘুরে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা
করেন তখন তা সন্দেহের উদ্রেক করে।
পার্টিশনের পূর্ব সময়ে ভারতীয় মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে উর্দু আর বাংলাভাষী মুসলিমরা শিক্ষা আর রাজনীতির দিক দিয়ে এগিয়েছিল। পাঞ্জাবীরা শিক্ষা দীক্ষায় বাঙালী মুসলিমদের চেয়ে এগিয়ে থাকলেও পাঞ্জাবী মুসলিমদের মধ্যে এক লিয়াকত আলী খান ছাড়া সর্বভারতীয় ইমেজ সম্পন্ন কোন নেতা ছিলেন না। তবে পাঞ্জাবীরা দৈহিক গঠন ও শারীরিক শক্তির দিক থেকে শক্তসমর্থ্ হয় বলে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে ও পরবর্তী কালে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীতে পাঞ্জাবীদের আধিপত্য বিরাজমান ছিল। তাই কায়েদে আজম জিন্না আর লিয়াকত আলী খানের পরবর্তী যুগে তাঁদের সুযোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে সোহরাওয়ার্দী, ভাসানী আর মুজিবদের ছিল দারুণ সুযোগ। যেহেতু পাকিস্তানে বাঙালী মুসলিমরা সংখ্যাগুরু ছিল তাই পাকিস্তানের ক্ষমতা দখলের সুযোগ পাঞ্জাবীদের চেয়ে বাঙালী
মুসলিমদেরই বেশী ছিল। কিন্তু বাঙালী মুসলিম
নেতাদের আশার গুড়ে বালি দেয় পাকিস্তানী
সেনাবাহিনী। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর অফিশিয়ালি
পাকিস্তান গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে থাকলেও মূলত:
পাকিস্তান ছিল একটা আমলাতান্ত্রিক রাষ্ট্র। গভর্নর
জেনারেলই ছিলেন পাকিস্তান রাষ্ট্রের মূল চালক।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পাকিস্তান সাংবিধানিকভাবে
সেকুলার রাষ্ট্র হবে না ইসলামিক রাষ্ট্র হবে এই দ্বন্দ্বের কারণে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার ৯ বছর পর পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান রচিত হয়। সাংবিধানিকভাবে
পাকিস্তান গণতন্ত্র হলেও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত হত
আমলতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়। বিভিন্ন শাসনতান্ত্রিক জটিলতা
আর মুসলীম লীগের অপশাসনের ফলে পাকিস্তানে সৃষ্ট রাজনৈতিক অস্থিতিশীলের মধ্যে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী পুরো পাকিস্তানের ক্ষমতা দখল করে নিল।
পাকিস্তানে সামরিক শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় সোহরাওয়ার্দী আর নাজিমুদ্দিনের মত মুজিবেরও
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন ধুলিসাৎ হয়ে গেল। পরবর্তী কালে ‘৭০ এর নির্বাচনে জয়লাভ করে মুজিব যখন পাকিস্তানের ক্ষমতার মসনদে বসার চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে যান তখন ক্ষমতালোভী পাঞ্জাবী সামরিক শাসকদের জন্য মুজিবের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়, বাস্তবায়িত আর হয় না।
আমার প্রশ্ন, ”যদি পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণে বাঙালী ক্ষিপ্ত না থাকত আর পাকিস্তানী শাসকরা যদি বাংলা ভাষাকে সমান মর্যাদা দিত তাহলে মুজিবর কি হঠাৎ ধর্মনিরপেক্ষ হয়ে উঠতেন? ইয়াহিয়া খান যদি মুজিবকে পাকিস্তানের ক্ষমতার মসনদে বসতে দিতেন, মুজিবকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মেনে নিতেন তবে মুজিব কি স্বাধীনতার ডাক দিতেন?”
মোটেই না, কারণ মুজিব ছিলেন একজন সুবিধাবাদী আর ক্ষমতালোভী রাজনীতিবিদ। তাঁর আদর্শ বলে কিছু
ছিল না। যে মুজিব পার্টিশনের পূর্বকালীন সময়ে হিন্দু মুসলিম ঐক্যকে অস্বীকার করে প্যান ইসলামিক চেতনা থেকে জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বকে সমর্থন করেছিলেন, ক্যালকাটা রায়টের সময় যে মুজিব কলকাতার রাস্তায় হিন্দুদের বিরুদ্ধে স্ট্রীট রায়টের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সেই
মুজিবই পরবর্তী কালে নিজ রাজনৈতিক স্বার্থে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির হোলসেলার সাজলেন।স্বাধীন বাংলাদেশে শেখ মুজিবই প্রথম ইসলাম ধর্মকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন, পরিত্যক্ত হিন্দু সম্পত্তি দখলের আইন করেন আর রমনা কালী মন্দিরের জায়গা দখল করে স্বাধীন বাংলাদেশে হিন্দুদের অঘোষিত দ্বিতীয়শ্রেণীর নাগরিক বানালেন। যে শেখ মুজিব চাপে পড়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ী উপজাতিদের বাঙালী হয়ে যেতে বলেছিলেন তিনি ইসলামী মৌলবাদিদের চাপে পড়লে বাঙালী হিন্দুদের মুসলিম হয়ে যেতে বলতেন। বর্তমানে বাংলাদেশে শেখ মুজিবের প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী লীগ আর মুজিব কন্যা হাসিনা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আছেন। যেখানে আওয়ামী লীগের আদর্শ গুরু শেখ মুজিব নিজেই সুবিধাবাদী ও ভণ্ড সেকুলার ছিলেন, সেই আওয়ামী লীগের কাছ
থেকে হিন্দুরা কী করে অসাম্প্রদায়িক নীতি আশা করতে পারে? তাই বাংলাদেশী হিন্দুদের কাছে আমার আবেদন, আওয়ামী লীগ আর শেখ মুজিবের মোহ
থেকে বেরিয়ে এসে পৃথক রাজনৈতিক প্লাটফর্ম
গড়ে তুলুন, এটাই সঠিক সময়!!!